শ্রম আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার। বছরে দুটি উৎসব ভাতার বিধান রেখে এই আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে ভাতার পরিমাণ মূল মজুরির বেশি হবে না। বুধবার বিধিমালার গেজেট জারি করা হয়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের আয়ের শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ দিয়ে মালিক-শ্রমিকদের জন্য একটি তহবিল গঠনের কথাও বলা হয়েছে বিধিমালায়। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মিকাইল শিপার বুধবার শ্রম আইনের বিধিমালার গেজেট জারি হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, আশা করি শ্রম আইন বাস্তবায়নে আর কোন বাধা থাকবে না। সব ধরণের জটিলতার অবসান হবে।’
উৎসব ভাতার বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, এক বছর চাকরিকাল পূরণ করেছেন এমন শ্রমিকরা বছরে দুটি উৎসব ভাতা পাবেন। তবে তা মূল মজুরির বেশি হবে না। বিধিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে ১৯টি অধ্যায় রয়েছে। বিধি রয়েছে ৩৬৭টি। বিধিতে তফসিল সাতটি।
নিরাপত্তা কমিটি বাধ্যতামূলক
বিধিমালায় ৫০ জনের বেশি শ্রমিক থাকা কারখানার জন্য সেফটি কমিটি (নিরাপত্তা কমিটি) গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কমিটি শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে। কমিটির সর্বনিম্ন সদস্য ছয় ও সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা হবে ১২ জন। এতে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা থাকবেন।
আউটসোর্সিং কম্পানিতে নিবন্ধন নিতে হবে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল সরবরাহ করা কম্পানিগুলোতে শ্রম আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে বলে শ্রম আইনের বিধিমালায় বলা হয়েছে।
রপ্তানিমুখী শিল্পের আয়ের ০.০৩% দিয়ে তহবিল
বিধিমালায় বলা হয়েছে, শতভাগ রফতানিমুখী শিল্পের ক্রেতা ও মালিকদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠিত হবে। এ ধরণের শিল্পের প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্ত মোট অর্থের শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ এ তদবিলে বাধ্যতামূলকভাবে দেবেন। এছাড়া সরকার, মালিক, ক্রেতাসহ যে কেউ এ তহবিলে অনুদান দিতে পারবেন।
এ তহবিল পরিচালনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পরিচালনা বার্ড থাকবে। তহবিল দুটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দুইভাগে বিভক্ত হবে। তহবিলের ৫০ ভাগ অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণ হিসাব ও বাকি ৫০ ভাগ আপদকালীন হিসাবে জমা হবে। শ্রমিক কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পরিবার কল্যাণ তহবিল থেকে তিন লাখ ও কর্মস্থলের বাইরে মারা গেছে দুই লাখ টাকা পাবে।
আর্থিক সংকটে শ্রমিকদের পাওয়া পরিশোধে আপদকালীন হিসাব থেকে মালিকদের কিভাবে সহায়তা দেওয়া হবে তা বিধিমালা উল্লেখ করা হয়েছে। বিধিমালায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন ও সংগঠন করা, ভবনের নিরাপত্তাসহ শিল্পের সার্বিক বিষয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
২০০৬ সালে শ্রম আইন প্রণয়ন করা হলেও আইনটি বাস্তবায়নে সংশোধনী আনার পূর্ব পর্যন্ত সাড়ে ৭ বছরে কোন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আইনটি সংশোধিত হওয়ার পর তা বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি সামনে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স) সুবিধা স্থগিত হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধিত) আইন, ২০১৩’ পাস হয়। পোশাক ক্রেতাদের শর্তানুযায়ী জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে শ্রম আইন বাস্তবায়নে বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়ে। সেই তাগিদ থেকেই সাড়ে সাত বছরে বিধিমালা প্রণয়ন করা না হলেও আইন সংশোধনের পর জোরেশোরে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে কিছুতেই বিধিমালাটি আলোর মুখ দেখছিল না।
সংশোধিত শ্রম আইনের বাস্তবায়ন বিধিমালা প্রণয়নে দুটি কমিটি গঠন করা হয় ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে। মূল কমিটির প্রধান করা হয় শ্রম সচিব মিকাইল শিপারকে। উপসচিব মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে রয়েছে পাঁচ সদস্যের উপকমিটি। বিধিমালার খসড়া তৈরি করতেই কমিটি অনেক সময় নেয়। বিধিমালার প্রাথমিক খসড়া তৈরি করার পর মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মতামত নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা।