ঢাকা ১০:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে বাঁধ সংস্কারে বিপুল বরাদ্দে ‘আনন্দে আত্মহারা’ পিআইসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৭:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ ২০১৮
  • ২৯২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মোটা অঙ্কের বরাদ্দ পেয়ে ‘আনন্দে আত্মহারা’ নেত্রকোনার হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিরা (পিআইসি)। বিগত বছরে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য এমন বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ পায়নি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর এবার বরাদ্দ ১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এর মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ৩৬৪ টাকা। তবে গত কয়েক বছরের বরাদ্দে জেলায় যেভাবে কাজ হয়েছিল এবার তিনগুণ বরাদ্দেও একই গতিতে কাজ হয়েছে। সময়সীমা দুই দফা বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ। কাজে অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে।

খালিয়াজুরী কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর ইসলাম জানান, খালিয়াজুরীর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৪৫টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রাক্কলন অনুযায়ী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ও ১৫ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার মেয়াদেও ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁশের চাটাই দেওয়া, দূর্বা ঘাস লাগানো এখনো হয়নি। কিন্তু পিআইসিরা বলছে, ২৮ মার্চ কাজের মেয়াদ শেষ, তাদের কাজও শেষ। শফিকুর জানান, অনেক অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করে পাউবোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাওরের নদীতে জোয়ার এসেছে। আবারও ফসলহানির আশঙ্কা করছে কৃষকরা। দায়সারা কাজ করে পিআইসির অনেক সভাপতিই ফুলেফেঁপে উঠেছেন। কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ করছেন, কেউ নতুন মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই কথা জানিয়েছেন বাঁধ মনিটরিং কমিটির সদস্যরাও।

খালিয়াজুরী বাঁধ নির্মাণ মনিটরিং কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ‘বাঁধের কাজ দুই মেয়াদেও এখনো কিছু বাকি আছে। ড্রেজিংয়ের কাজ, বাঁশ চাটাইয়ের কাজ ও বাঁধের গ্যাপের অনেক কাজ বাকি আছে।’

তেলাপায়া বাঁধের পিআইসির সভাপতি কবিন্দ্র চন্দ্র সরকার মোবাইল ফোনে জানান, তাঁর প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ১১.১৬ কিলোমিটার। বরাদ্দ ২৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। বাঁধের অন্য কাজ সম্পন্ন হলেও বাঁশের চাটাই, দূর্বা ঘাস লাগাননি। তবে তিনি বিল তুলে নিয়েছেন। শোনা যায় এ কাজে অনেক লাভ হয়েছে, নতুন গাড়িও কিনেছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে বলে এসব কথা! এখনো তিন লাখ টাকা লেবারের পাওনা আছে। তারা বাড়ি এসে বসে থাকে।’

নগর ইউনিয়নের পিআইসির সভাপতি বাবলু চৌধুরী বলেন, তিনি কাজ সঠিকভাবে করেছেন। তবে কিছু কাজ এবং লেবারের অনেক টাকা বাকি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের জমি আছে। আত্মীয়স্বজনদের জমি আছে। এর পরও কেউ যদি বলে গাড়ি-বাড়ি করেছি তাহলে কী আর বলব।’

খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জব্বার বলেন, ‘পিআইসির বেশির ভাগ কমিটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিজস্ব লোকজন নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও পাউবোর এসওর (সাবডিভিশনাল অফিসার) যোগসাজশে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা বাদ দিয়ে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। পানি আসতে শুরু করলে এ সমস্ত বাঁধ কোনো কাজেই আসবে না।’ গত বছরের ১৩ মার্চ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা থেকে শুরু হয় আগাম বন্যা আর পাহাড়ি ঢল। এই আকস্মিক ঢল মোহনগঞ্জের চর হাঁইজদা বেড়িবাঁধের জালালের কুড় এলাকায় প্রথম আঘাত হানে। কয়েক ঘণ্টায়ই তলিয়ে যায় ডিঙ্গাপুতা হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওর ও খালিয়াজুরীর সর্ববৃহৎ বাঁধ কীর্তনখোলা বাঁধ। খালিয়াজুরী কৃষি বিভাগ সূত্রমতে, এতে ক্ষতি হয় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল। ডিঙ্গাপুতা হাওরের কৃষক মজিদ মিয়া এবার তিন একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াটার ওয়াবদা (পাউবো) আর পিআইসি এবার কী বাঁধ দিয়েছে তার ধার ধারি না। এবার সব আল্লার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এবারও যেই লাউ সেই কদু।’

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আবদুল্লাহ আল-মামুন বাবু বলেন, ‘প্রায় সব বাঁধেই মাটি ফেলানোর কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কারকাজ প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে বাঁধের মাটি লেবেল করার কাজ। বিলও আটকে রেখেছি। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এখন আর কোনো বাঁধ নেই। অকালবন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা কম।’ নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। আর এখন কাজের তদারকি করে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট এসও। তবে সংস্কারকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি। ৭০-৮০ শতাংশ কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে বাঁধ সংস্কারে বিপুল বরাদ্দে ‘আনন্দে আত্মহারা’ পিআইসি

আপডেট টাইম : ০৪:১৭:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মোটা অঙ্কের বরাদ্দ পেয়ে ‘আনন্দে আত্মহারা’ নেত্রকোনার হাওর রক্ষা বাঁধের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিরা (পিআইসি)। বিগত বছরে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য এমন বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ পায়নি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর এবার বরাদ্দ ১৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এর মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ৩৬৪ টাকা। তবে গত কয়েক বছরের বরাদ্দে জেলায় যেভাবে কাজ হয়েছিল এবার তিনগুণ বরাদ্দেও একই গতিতে কাজ হয়েছে। সময়সীমা দুই দফা বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ। কাজে অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে।

খালিয়াজুরী কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর ইসলাম জানান, খালিয়াজুরীর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ৪৫টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রাক্কলন অনুযায়ী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ও ১৫ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার মেয়াদেও ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁশের চাটাই দেওয়া, দূর্বা ঘাস লাগানো এখনো হয়নি। কিন্তু পিআইসিরা বলছে, ২৮ মার্চ কাজের মেয়াদ শেষ, তাদের কাজও শেষ। শফিকুর জানান, অনেক অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করে পাউবোর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকা লুটপাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাওরের নদীতে জোয়ার এসেছে। আবারও ফসলহানির আশঙ্কা করছে কৃষকরা। দায়সারা কাজ করে পিআইসির অনেক সভাপতিই ফুলেফেঁপে উঠেছেন। কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ করছেন, কেউ নতুন মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই কথা জানিয়েছেন বাঁধ মনিটরিং কমিটির সদস্যরাও।

খালিয়াজুরী বাঁধ নির্মাণ মনিটরিং কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ‘বাঁধের কাজ দুই মেয়াদেও এখনো কিছু বাকি আছে। ড্রেজিংয়ের কাজ, বাঁশ চাটাইয়ের কাজ ও বাঁধের গ্যাপের অনেক কাজ বাকি আছে।’

তেলাপায়া বাঁধের পিআইসির সভাপতি কবিন্দ্র চন্দ্র সরকার মোবাইল ফোনে জানান, তাঁর প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ১১.১৬ কিলোমিটার। বরাদ্দ ২৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। বাঁধের অন্য কাজ সম্পন্ন হলেও বাঁশের চাটাই, দূর্বা ঘাস লাগাননি। তবে তিনি বিল তুলে নিয়েছেন। শোনা যায় এ কাজে অনেক লাভ হয়েছে, নতুন গাড়িও কিনেছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে বলে এসব কথা! এখনো তিন লাখ টাকা লেবারের পাওনা আছে। তারা বাড়ি এসে বসে থাকে।’

নগর ইউনিয়নের পিআইসির সভাপতি বাবলু চৌধুরী বলেন, তিনি কাজ সঠিকভাবে করেছেন। তবে কিছু কাজ এবং লেবারের অনেক টাকা বাকি আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের জমি আছে। আত্মীয়স্বজনদের জমি আছে। এর পরও কেউ যদি বলে গাড়ি-বাড়ি করেছি তাহলে কী আর বলব।’

খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জব্বার বলেন, ‘পিআইসির বেশির ভাগ কমিটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিজস্ব লোকজন নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও পাউবোর এসওর (সাবডিভিশনাল অফিসার) যোগসাজশে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা বাদ দিয়ে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। পানি আসতে শুরু করলে এ সমস্ত বাঁধ কোনো কাজেই আসবে না।’ গত বছরের ১৩ মার্চ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা থেকে শুরু হয় আগাম বন্যা আর পাহাড়ি ঢল। এই আকস্মিক ঢল মোহনগঞ্জের চর হাঁইজদা বেড়িবাঁধের জালালের কুড় এলাকায় প্রথম আঘাত হানে। কয়েক ঘণ্টায়ই তলিয়ে যায় ডিঙ্গাপুতা হাওরসহ বেশ কয়েকটি হাওর ও খালিয়াজুরীর সর্ববৃহৎ বাঁধ কীর্তনখোলা বাঁধ। খালিয়াজুরী কৃষি বিভাগ সূত্রমতে, এতে ক্ষতি হয় প্রায় ২১ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল। ডিঙ্গাপুতা হাওরের কৃষক মজিদ মিয়া এবার তিন একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াটার ওয়াবদা (পাউবো) আর পিআইসি এবার কী বাঁধ দিয়েছে তার ধার ধারি না। এবার সব আল্লার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এবারও যেই লাউ সেই কদু।’

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আবদুল্লাহ আল-মামুন বাবু বলেন, ‘প্রায় সব বাঁধেই মাটি ফেলানোর কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কারকাজ প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে বাঁধের মাটি লেবেল করার কাজ। বিলও আটকে রেখেছি। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এখন আর কোনো বাঁধ নেই। অকালবন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা কম।’ নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। আর এখন কাজের তদারকি করে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট এসও। তবে সংস্কারকাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি। ৭০-৮০ শতাংশ কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ