হাওর বার্তা ডেস্কঃ হ্যালো ভাই, আসা যাবে। কবে আসবেন। কালকে সকালে। কোনো অসুবিধা হবে না তো। আরে না রে ভাই। ট্যাকেল দেয়ার জন্য মাসে হাজার হাজার টাকা খরচ করি।
আর অ্যাপার্টমেন্ট বাসা। এখানে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে কাজ করি। গেস্ট হিসাবে আসবেন। কে কি বলবে। নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। এভাবেই কথা হয় সুবিধাভোগী আর ফ্ল্যাট ডেটিংয়ের সার্ভিসম্যানের এক সদস্যের।
দরকষাকষি করে একপর্যায়ে নিশ্চিত হয়ে যায় অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ব্যবস্থা। হালে পাল্টেছে ডেটিংয়ের ধরন। এক সময় পার্কে জমতো ডেটিং। বাদাম, বুট, ঝাল মুড়ি খেয়েই সময় পার করত প্রেমিক জুটি।
ইদানীং অনেক প্রেমিক জুটির ফ্ল্যাটমুখী ডেটিংয়ে আগ্রহ বেড়েছে। বিনোদন স্পট বা ডেটিং স্পটগুলোতে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের হয়রানি ও লোকলজ্জা থেকে আড়াল থাকতে এমনটাই করছে বলে জানিয়েছে অনেক প্রেমিক জুটি।
তবে সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন অন্যকথা, সামাজিক অবক্ষয়ের সঙ্গে ইন্টারনেটের ভয়াবহতা ও মাদকের ভয়াল ছোবলেই তরুণ-তরুণীরা বেছে নিয়েছে এমন পথ।
রাজধানীর শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অনুফা ও রিয়াদ (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকে তাদের মধ্যে পরিচয় ও সখ্য গড়ে ওঠে। দু’জনই অভিজাত ঘরের সন্তান। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরে বেড়াতেন পার্কে, রিসোর্টে ও রেস্তরাঁয়। তাদের বন্ধুরাও অনেকেই বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডা দিত।
তাদেরই এক বন্ধু তার বান্ধবীকে নিয়ে প্রায়ই উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করত। কাটাতো বেশ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত। সে তার অন্য বন্ধুদের খুব মজা করে এসব কথা শেয়ার করতো। তাই রিয়াদেরও ইচ্ছে হয় অনুফাকে নিয়ে ফ্ল্যাট ডেটিংয়ের। বন্ধুর সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে রিয়াদ তখন অনুফাকে রাজি করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। অনেকটা জোর করেই তাকে রাজি করায় রিয়াদ।
বন্ধুর সেই চেনা ফ্ল্যাটে একদিন হয়ে যায় রিয়াদ আর অনুফার ডেটিং। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই যাওয়া হয় তাদের। শুধু অনুফা, রিয়াদ আর তার বান্ধবী নয় ফ্ল্যাটমুখী ডেটিংয়ে ঝুঁকছে আরো অনেকেই। আর এই প্রেমিক জুটিদের অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে অনেকেই কামাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর অনেক এলাকাতেই এখন ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক ডেটিং হয়। ঘণ্টা অথবা দিন চুক্তিতে এসব ফ্ল্যাটের কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়। রাজধানীর শাহজাহানপুর, বাসাবো, মালিবাগ, বনশ্রী, রামপুরা, মিরপুর, উত্তরা, শেওড়া, কাজিপাড়া, সেগুনবাগিচা, পান্থপথ, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, তেজকুনিপাড়া, মগবাজার, কালশি, গুলশান-বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে এ ধরনের ডেটিং।
বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন এলাকার এসব ফ্ল্যাটে একজন নিয়ন্ত্রণকারী থাকেন। তার আবার শহরের বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা নেটওয়ার্ক থাকে। বিভিন্ন মার্কেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তারা একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে মোবাইল নম্বর প্রচার করে। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটের প্রচারণা ও গেস্ট সংগ্রহের কাজ করে মামুন হোসাইন। মামুন বলে, আমরা মূলত দুই ধরনের ব্যবসা করে থাকি।
প্রথমত, যারা বান্ধবী নিয়ে ডেটিং করার স্থান খোঁজে পায় না তাদেরকে আমরা টাকার বিনিময়ে সার্ভিস দিয়ে থাকি। এর বাইরে আমাদের কাছে কিছু নারী আছে। কেউ চাইলে সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিই। মামুন বলেন, শুধু ফ্ল্যাট ডেটিং করতে হলে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। পুরো দিন থাকলে ২ হাজার আর ঘণ্টা হিসাবে থাকলে ৫০০ টাকা করে লাগে। নিয়মিত যারা আসে তাদের বেলায় কিছুটা ছাড় দেয়া হয়।
ফ্ল্যাটমুখী ডেটিংয়ের খারাপ প্রভাবও কম নয়। বিশেষ করে তরুণীদের ঝুঁকি বেশি। কারণ, অনেক সময় প্রেমিকের কথা রাখার জন্য ফ্ল্যাট ডেটিংয়ে রাজি হয় অনেক তরুণী। তার শেষটা অনেক সময় সুখকর হয় না। প্রেমিকের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক তরুণী সর্বস্ব খোয়াচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা।
বড় ভাইয়ের বন্ধুর সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন শান্তনা (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী। বেশ ভালোই কেটেছিল কয়েক বছর। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এই চার বছরে দু’জন আলাদা থাকলেও পরিচিত অনেক ফ্ল্যাটে গিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছেন একাধিকবার।
শান্তনার পরিবার থেকে বিয়ের কথা উঠলে সে চাপ দিতে থাকে সোহানকে। কিন্তু সোহান বিষয়টি আমলে না নিয়ে শান্তনার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখে। একসময় শান্তনার সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। উপায়ান্তর না পেয়ে শান্তনা তার পরিবারকে জানায়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে সোহানের সঙ্গে আলোচনা করলে সে শান্তনাকে বিয়ে করতে অপারগতা দেখায়।