ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের বেরিবাঁধকে নিয়ে রাস্তার স্বপ্ন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৪:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মার্চ ২০১৮
  • ৩৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাইকাপন পশ্চিমপাড়ার গ্রামের সাধারণ কৃষক আবদুল গফুর আর বুরহান উদ্দিন উদ্দিন। স্ত্রী সন্তান আর অসহায়ত্বকে সাথে নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ঘর বাঁধেন ৮ বছর হবে। চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট কিছুই নেই তার। ‘বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও’ নীতিতে তিনি চলছেন আট বছর। গতবছর তার চোখের সামনে বাড়ির উপর দিয়ে নদীর পানি উপচে হাওর তলিয়ে গেছে। সেই সাথে তলিয়ে গেছে তাদের শত স্বপ্নও। আর তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলার প্রায় ৮০টি বাঁধের কাজ হয়েছে বা হচ্ছে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে কাজ হচ্ছে ২০টি বেরিবাঁধের। এমনই একটি বেরিবাঁধ চলে গেছে কৃষক শফি মিয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে। এখন তারা স্বপ্ন দেখছেন, এ বাঁধের উপর দিয়ে একদিন পাকা রাস্তা হবে। বড় না হোক ছোট ছোট যান চলবে। এ স্বপ্ন যে শুধু কৃষক আবদুল গফুর আর বুরহান উদ্দিনের একার তা কিন্তু নয়, এ স্বপ্ন এখন দেখার হাওর পাড়ের আসামপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া ও সাদিকুর রহমান মাসুমদেরও। এ স্বপ্ন এখন কাদিপুরের পূর্ব বীরগাঁওয়ের দক্ষিণপাড়া লিকসন আহমদ, দরগাপাশার হরিনগরের রুবেল আহমদেরও।

এলাকার সাধারণ মানুষ জানান, তারা কখনো এমনটি স্বপ্নেও চিন্তা করেননি যে সরকার এতো উঁচু আর প্রস্থ করে নদীর পাড় আর হাওরের মাঝখান দিয়ে বাঁধ দিবেন। এসব বাঁধ দেখলে বাঁধ মনে হয় না, মনে হয় যেনো রাস্তা। তাই তারা এখন এসব বাঁধের উপর দিয়ে রাস্তা হবে এমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তারা মনে করেন, যেহেতু সুন্দর করে এখন হেঁটে চলার ব্যবস্থা হয়েছে সেহেতু একদিন না একদিন এসব বাঁধ-রাস্তা দিয়ে যানও চলবে। এই স্বপ্ন এখন তাদের মনে উঁকি দিচ্ছে। তারা জানান, এমন উঁচু ও প্রস্থ বাঁধ হওযায় ভুমিহীন মানুষেরা বাঁধে এসে বাড়ি তৈরি করবে। আবাসভূমি বাড়বে। মানুষ চলাচল বাড়লে রাস্তা এমনিতেই হবে। পাকা রাস্তা না হোক বর্ষায় কাদা মাড়িয়ে হলেও তো হেঁটে চলাচল করা যাবে। এটাও তো আমাদের জন্য অনেক পাওনা।

বিল্লাল হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমরা সরকারের উপর খুব খুশি। এখন আমরা স্বপ্ন দেখছি সরকার আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া বেরিবাঁধকে এখন আস্তে আস্তে রাস্তা করে দেবেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সদস্য ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলীপ তালুকদার বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে বাঁধ হাওরের মাঝখান দিয়ে হয়েছে তা যদি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি তাহলে অবশ্যই এসব বাঁধ একদিন রাস্তা হবে। ছাত্রছাত্রীরা এ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চড়ে স্কুলে যাবে।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের রাজনৈতিক সহকারী হাসনাত হোসেন জানান, ‘আমাদের জন্য এটি একটি বাড়তি সুবিধা এই যে, এসব অনেক বাঁধ শুধুমাত্র বেরিবাঁধই নয়, গ্রামীণ রাস্তাও। সরকারের কাছ থেকে এতো রাস্তার অনুমোদন আনা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এবার আমরা তা পেয়েছি। প্রতিমন্ত্রী মান্নান মহোদয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের সাথে আলাপও করেছেন। যেনো কাচা রাস্তার মাটি স্থায়ী হলে পাকা করণ প্রকল্প তৈরি করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের বেরিবাঁধকে নিয়ে রাস্তার স্বপ্ন

আপডেট টাইম : ০৩:২৪:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মার্চ ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাইকাপন পশ্চিমপাড়ার গ্রামের সাধারণ কৃষক আবদুল গফুর আর বুরহান উদ্দিন উদ্দিন। স্ত্রী সন্তান আর অসহায়ত্বকে সাথে নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ঘর বাঁধেন ৮ বছর হবে। চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট কিছুই নেই তার। ‘বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও’ নীতিতে তিনি চলছেন আট বছর। গতবছর তার চোখের সামনে বাড়ির উপর দিয়ে নদীর পানি উপচে হাওর তলিয়ে গেছে। সেই সাথে তলিয়ে গেছে তাদের শত স্বপ্নও। আর তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে জেলার প্রায় ৮০টি বাঁধের কাজ হয়েছে বা হচ্ছে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে কাজ হচ্ছে ২০টি বেরিবাঁধের। এমনই একটি বেরিবাঁধ চলে গেছে কৃষক শফি মিয়ার বাড়ির সামনে দিয়ে। এখন তারা স্বপ্ন দেখছেন, এ বাঁধের উপর দিয়ে একদিন পাকা রাস্তা হবে। বড় না হোক ছোট ছোট যান চলবে। এ স্বপ্ন যে শুধু কৃষক আবদুল গফুর আর বুরহান উদ্দিনের একার তা কিন্তু নয়, এ স্বপ্ন এখন দেখার হাওর পাড়ের আসামপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া ও সাদিকুর রহমান মাসুমদেরও। এ স্বপ্ন এখন কাদিপুরের পূর্ব বীরগাঁওয়ের দক্ষিণপাড়া লিকসন আহমদ, দরগাপাশার হরিনগরের রুবেল আহমদেরও।

এলাকার সাধারণ মানুষ জানান, তারা কখনো এমনটি স্বপ্নেও চিন্তা করেননি যে সরকার এতো উঁচু আর প্রস্থ করে নদীর পাড় আর হাওরের মাঝখান দিয়ে বাঁধ দিবেন। এসব বাঁধ দেখলে বাঁধ মনে হয় না, মনে হয় যেনো রাস্তা। তাই তারা এখন এসব বাঁধের উপর দিয়ে রাস্তা হবে এমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। তারা মনে করেন, যেহেতু সুন্দর করে এখন হেঁটে চলার ব্যবস্থা হয়েছে সেহেতু একদিন না একদিন এসব বাঁধ-রাস্তা দিয়ে যানও চলবে। এই স্বপ্ন এখন তাদের মনে উঁকি দিচ্ছে। তারা জানান, এমন উঁচু ও প্রস্থ বাঁধ হওযায় ভুমিহীন মানুষেরা বাঁধে এসে বাড়ি তৈরি করবে। আবাসভূমি বাড়বে। মানুষ চলাচল বাড়লে রাস্তা এমনিতেই হবে। পাকা রাস্তা না হোক বর্ষায় কাদা মাড়িয়ে হলেও তো হেঁটে চলাচল করা যাবে। এটাও তো আমাদের জন্য অনেক পাওনা।

বিল্লাল হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমরা সরকারের উপর খুব খুশি। এখন আমরা স্বপ্ন দেখছি সরকার আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া বেরিবাঁধকে এখন আস্তে আস্তে রাস্তা করে দেবেন। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সদস্য ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলীপ তালুকদার বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে বাঁধ হাওরের মাঝখান দিয়ে হয়েছে তা যদি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি তাহলে অবশ্যই এসব বাঁধ একদিন রাস্তা হবে। ছাত্রছাত্রীরা এ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চড়ে স্কুলে যাবে।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের রাজনৈতিক সহকারী হাসনাত হোসেন জানান, ‘আমাদের জন্য এটি একটি বাড়তি সুবিধা এই যে, এসব অনেক বাঁধ শুধুমাত্র বেরিবাঁধই নয়, গ্রামীণ রাস্তাও। সরকারের কাছ থেকে এতো রাস্তার অনুমোদন আনা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এবার আমরা তা পেয়েছি। প্রতিমন্ত্রী মান্নান মহোদয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের সাথে আলাপও করেছেন। যেনো কাচা রাস্তার মাটি স্থায়ী হলে পাকা করণ প্রকল্প তৈরি করা হয়।