হাওর বার্তা ডেস্কঃ জগন্নাথপুরে নলুয়া হাওরে হামহামি খাল খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খাল খনন কাজে ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজ না করে বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটের চেষ্টা করছে। নাম মাত্র খনন কাজ করে খাল থেকে সামান্য মাটি উত্তোলন করে খালের পাড়ে মাটি স্তুুপ করে রাখা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির পানিতে ওই মাটিগুলো আবার খালে চলে যাবে। এতে করে সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছু হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষকরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয় সুত্র জানায়, উদয়ন ট্রেডার্স সিলেট নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানুয়ারি মাসে জগন্নাথপুর উপজেলার তিনটি খালে খনন কাজের দায়িত্ব পায়। ৩০ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। খালগুলো হচ্ছে ভুরাখালি খালের আড়াই কিলোমিটার, মনাইখালি খালের ২ কিলোমিটার অংশ ও বেতাউকা খালের ৩ কিলোমিটার অংশ। তিনটি খালে সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশ খনন কাজের জন্য ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে নলুয়ার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ভুরাখালি স্লুইস গেটের সামনের খাল থেকে মাটি তুলে খালের এক পাশে মাটি স্তুুপ করে রাখা হয়েছে। একই ভাবে মনাইখালি খাল থেকে মাটি তুলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বেতাউকা খালে এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে খাল থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। খননকাজ চলাকালে ঠিকাদার ও পাউবোর কোন লোককে পাওয়া যায়নি।
এসময় হাওরে কথা হয় হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক দিলওয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, খাল খননের কাজ সরেজমিনে ঘুরে দেখে মনে হচ্ছে খাল খননের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে খাল খননের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এখন নাম মাত্র খনন কাজ করে সরকারের অর্থ অপচয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব খনন কাজ পাউবোর কোন কর্মকর্তা তদারকি করছেন না। ফলে নামমাত্র কাজ হচ্ছে। বিষয়টি তিনি জগন্নাথপুরে ইউএনওকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন।
ভুরাখালি গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, হাওরের ফসলক্ষায় জলাবদ্ধতা সংকট নিরসলে র্দীঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল। যার প্রেক্ষিতে এবার হামহামি খালে খনন কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সামান্য পরিমাণে মাটি তোলে ওই মাটি স্তুুপ করে খালের একপাড়ে রাখা হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই মাটিগুলো খালের মধ্যে পড়ে যাবে। যে কারণে উপকৃত হবে না কৃষকরা।
খাল খনন কাজের দায়িত্বে থাকা উদয়ন ট্রেডার্স এর পরিচালক সৈয়দ সুমন আহমদ জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ করেছি। ভুরাখালি ও মনাইখালি খাল খনন কাজ শেষ হয়েছে। বেতাউকা খাল খনন কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন,কার্যাদেশ অনুযায়ী মাটি যেভাবে রাখার কথা আমি সেভাবে রেখেছি। বৃষ্টি হলে মাটি খালে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি কর্মকর্তারা জানেন।
জগন্নাথপুরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, কৃষকরা খাল খনন কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। আমি খাল খনন কাজ দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা পাউবোর সুনামগঞ্জ দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য জানাব।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, কাজ দেখে বিল পরিশোধ করা হবে। এখনো ঠিকাদারকে কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। সঠিকভাবে কাজ না হলে বিল দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, বোরো ফসল মৌসুমে জলাবদ্ধতা সংকট দূর করতে পানি সম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশে জগন্নাথপুর উপজেলার তিনটি খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়।