রাস্তাঘাটে হিজড়াদের উৎপাত প্রায়ই দেখা যায়। অনেক সময় তাদের হাত থেকে বাঁচতে পকেট থেকে কিছু খসাতে হয়। আর না খসালে তো নিজের সম্মান রক্ষা করা দায় হয়ে পড়ে।
শহরে এরকম ঘটনা নতুন নয়। তবে নিরাপত্তা ভেঙে ব্যাংকে ঢুকে হিজড়ারা কখনও উৎপাত করেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও রবিবার রাজধানীর সাভারে ইস্টার্ন ব্যাংকের শাখায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
দুদিনের ছুটি শেষে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল ব্যাংকের কার্যক্রম। দুপুর ১২টার দিকে তৃতীয় লিঙ্গের জনা বিশেক সদস্য হানা দেয় ব্যাংকটিতে।
দু’হাতে তালি দিয়ে প্রথমে ব্যাংকটি ঘেরাও করে তারা। আশা হিজড়া নামে তাদের একজন নিরাপত্তা কর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে ব্যাংকটিতে ঢুকে দাবি করে মোটা অংকের অর্থ।
এদিন লেনদেন, টাকা উত্তোলন, জমা দেয়া সবই চলছিলো স্বাভাবিক নিয়মে। হঠাৎ ছন্দপতন। ওরা ঢুকে শুরু করলো অশ্রাব্য গালাগাল। কেউ শরীরের স্পর্শকাতর অংশ অনাবৃত করলো। কেউবা আক্রমণের ভঙ্গিতে তেড়ে গেলো ব্যাংকারদের দিকে। এমন সময় হিজড়া সর্দার সাফ জানিয়ে দিল, টাকা দিলেই রক্ষা।
তাণ্ডবে হতভম্ব ব্যাংকার থেকে শুরু করে ব্যাংকে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সবাই। এক রকম জিম্মি দশার মতো। কাউকে ঢুকতেও দিচ্ছে না, আবার কাউকে ব্যাংক থেকে বেরুতেও দিচ্ছে না। সবমিলিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।
ভুক্তভোগী এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকে হিসাব না থাকলে এক কথা। প্রতিটি টাকারই তো হিসাব দিতে হয় কড়ায় গণ্ডায়। ওরা হামলে পড়লো দলবেঁধে। তারপর যা ঘটলো তা বর্ণনা করার ভাষা জানা নেই আমার।
নিয়মিত একজন গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, টাকা উত্তোলন শেষ। ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাবো। ওমা, অসংখ্য হিজড়া দেখি ব্যাংকটির সামনে। বেরুতে দিচ্ছে না আমাদের।
এদিন হিজড়ারাই দখলে নেয় আবুল কাসেম সন্দীপ (সাবেক থানা রোড) সড়কে অবস্থিত ব্যাংকটির শাখা।
লেনদেন স্থগিত। হৈ চৈ শুনে দোতলা থেকে কর্মকর্তারাও ছুটে এসেছেন নিচে। এসে নিজেরাও হতভম্ব।
এক পর্যায়ে হিজড়ারা নানা স্লোগান দিয়ে তেড়ে যান ব্যাংকের অপারেশন ম্যানেজার খালেদ শামসের দিকে। তার সামনে উদোম হয়ে শুরু হয় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী। ভয়ে মুখ পাংশু হয়ে যার ম্যানেজারের।
এক পর্যায়ে প্রতিবাদের চেষ্টা করলেন। না, তাতেও হল না।
ব্যাংকটির শাখা প্রধান শাহনেওয়াজ কবির নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলেন। বোঝাতে চেষ্টা করলেন হিজড়াদের। না কোনও কিছুতেই মানানো গেল না তাদের।
এর মধ্যে হিজড়াদের আরেকটি পক্ষ চড়াও হলো অ্যাসোসিয়েট সেলস অ্যান্ড সার্ভিস ম্যানেজার সোহরাব হোসেনের দিকে।
হিজড়াদের অশ্লীল গালাগাল আর বিশ্রি অঙ্গভঙ্গীতে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম তার। এক পর্যায়ে শোরগোল ওঠে- ‘ম্যানেজার পুলিশে ফোন দিছে।’
মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। বল্গাহীন হয়ে ওঠে হিজড়ারা। ডাক দে তোর বাপরে। দেখি ওরা আমাগো কি করে, অশ্রাব্য ভাষায় খিস্তি খেউড় করে কেউ কেউ ব্যাংকের মধ্যেই শুরু করেন শরীর থেকে বস্ত্র বিসর্জন।
টাকা দে, দিবি না ক্যান-ইত্যাদি নানা দাবিতে গ্রাহকদের কাছেও সরব হিজড়াদের এক পক্ষ।
অবশেষে ঘণ্টা খানেকের দেনদরবারে দু’হাজার টাকা দেবার পর ব্যাংক ছাড়ে হিজড়ারা। স্বস্তি নেমে আসে ব্যাংকে।
ব্যাংকটির শাখা প্রধান শাহনেওয়াজ কবির শুভ্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, সাধারণত শিশু ভূমিষ্ট হবার পর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সেখানে গিয়ে উৎপাত করে। এটা শুনেছি। তবে গ্রাহকভরা ব্যাংকে এসে এভাবে তাণ্ডব চালাবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি।
বলতে পারেন গোটা পরিস্থিতিতে আমরা ভীষণভাবে বিব্রত, অপ্রস্তুত। পরে নিজেরাই টাকা তুলে ওদের বিদায় করলাম- যোগ করেন তিনি।
কেন এভাবে প্রথা ভেঙ্গে ব্যাংকে হানা দিলেন?
এ বিষয়ে আশা হিজড়া বলেন, এতো মানুষের প্যাট চলবো ক্যামনে। আশেপাশের সবাই টাকা দিচ্ছে। ব্যাংকে গেলাম। ওরা কয় কোনও টাকা দিবো না। ব্যস. চেইতা (ক্ষেপে) গেল অন্য হিজড়ারা।