১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের (সাধারণ) মাসিক ভাতা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ঈদুল আযহার আগেই বর্ধিত এ ভাতা মুক্তিযোদ্ধারা পাচ্ছেন বলে দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান। তবে, খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি ঈদের আগে নিষ্পত্তি না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি বলে জানান তিনি। ফলে পূর্বের নির্ধারিত হারেই ভাতা পাবেন তারা।
দেশে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতাও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চারটি বিশেষ খেতাব প্রদান করা হয়। এর মধ্যে বীর শ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত ৭ জন, বীর উত্তম ৬৮ জন, বীর বিক্রম ১৭৫ জন এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ৪২৬ জন।
বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক সম্মানীভাতা হিসেবে ১২ হাজার, বীর উত্তম ১০ হাজার, বীর বিক্রম ৮ হাজার ও বীর প্রতীকরা ৬ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। আর সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা পাচ্ছেন ৫ হাজার টাকা করে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি অনেক আগে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই মধ্যে আবার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রায় চারগুণ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট।
এতে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্তদের ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার, বীর উত্তমদের ১০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার, বীর বিক্রমদের ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্তদের ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই ঈদ উৎসবে ভাতার সমপরিমাণ উৎসব বোনাসের কথাও প্রস্তাবে বলা হয়েছে। এ জন্য সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৫ কোটি ১৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। ট্রাস্টের সুপারিশযুক্ত এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করতে গত ২৩ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবকে (প্রশাসন) প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক (কল্যাণ), জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পরিচালক (প্রশাসন) ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হিসাব)। সদস্য সচিব দায়িত্ব পালন করবেন উপ-সচিব (বাজেট)। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিতে কমিটিকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএ হান্নান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা জেনারেল (সাধারণ) মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা (৫ হাজার থেকে) ৮ হাজার টাকা করেছি। আজকেই (১৩ সেপ্টেম্বর) ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রি থেকে ক্লিয়ারেন্স পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছিল, তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। আজকেই সবকিছু প্রস্তুত করছি। ঈদের আগেই এ অর্থছাড় করতে হবে। তারা (সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা) ঈদের আগেই বর্ধিত ভাতা পাবেন।’
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা কতদিন নাগাদ হচ্ছে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘খেতাবপ্রাপ্তদের আরেকটু সময় লাগবে। কারণ খেতাবপ্রাপ্তরা তো শুধু একা না। যুদ্ধাহত আছে, শহীদ পরিবার আছে। মন্ত্রণালয় থেকে একটা কমিটি করে দিয়েছি। ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রি থেকে একজন মেম্বর দেবে। মেম্বর দিলে মিটিং হবে। এরপর তা ফাইন্যান্সে (মিনিস্ট্রি) যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে তাদের (খেতাবপ্রাপ্ত) ভাতার বিষয়টি (বর্ধিত) ফাইনাল করতে পারব কি না, জানি না। অনেক প্রসিডিউর আছে। জেনারেল (সাধারণ) মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়টা নিয়েই কিন্তু অনেক দিন লেগেছে। সুতরাং ঈদের আগে না হলেও খেতাবপ্রাপ্তদের ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অতিদ্রুতই হবে, বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব।