হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী আর মাত্র ৩ দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণ কাজের সময়সীমা শেষ হবে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত জেলার অন্যতম বড় হাওর জামালগঞ্জের হালি ও মহালিয়া হাওরের ১০ টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। গতকাল শনিবার দিনভর সরেজমিনে হালি ও মহালিয়ার হাওরের বাঁধ পরিদর্শনে এই পরিস্থিতি দেখা গেছে। তবে এই হাওরের একমাত্র ১২ নং প্রকল্পের কাজ শেষ করেছেন মজিুবর রহমান।
হালির হাওরের বেহেলী ইউনিয়নের হরিপুর থেকে কালীবাড়ি ভাঙা পর্যন্ত এই বৃহৎ বাঁধের মাঝ অংশে কিছু স্থানে মাটি ফেলেছেন ৫৮ নং পিআইসি সভাপতি রফিকুল ইসলাম। বাঁধের এই অংশে প্রস্তুতি নিলেও কাজ শুরু করেননি ৯২ নং পিআইসির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। অবশ্য তার ছেলের দাবি তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। মাটি কাছে এনে রাখা হচ্ছে। তবে কোন ধরনের প্রস্তুতিই নেননি ৯১ নং পিআইসির সভাপতি বিনয় তালুকদার।
কবে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু ও শেষ হবে তা জানেন না হাওরেরর উপকারভোগী কৃষকেরা। যদিও সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ পিআইসির সভাপতির দাবি তারা কাজ শুরু করবেন এবং দ্রুত শেষ করবেন।
যেসব প্রকল্পের বাঁধের কাজ শুরু হয়নি সেগুলো হল- হালির হাওরের উপ প্রকল্প নং-৯১, প্রকল্প বরাদ্দ ১৭,২২৩১৯ টাকা। পিআইসি সভাপতি বিনয় তালুকদার। বিনয় তালুকদারের কথা বলতে চাইলে প্রকল্প এলাকায় পাওয়া যায়নি। কালীবাড়ি বাঁধের পিআইসির সভাপতি মিহির লাল রায় জানান, বিনয় তালুকদার এক্সেভেটর আনতে গেছেন। তবে প্রকল্পের বন পরিস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন বিনয় তালুকদার জামালগঞ্জে আছেন।
৯২ নং উপ প্রকল্পটি সুন্দরপুর জলমহালের কাছে, এই প্রকল্পের বরাদ্দ ২৪, ৯৫৭১৩ টাকা, পিআইসির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি কাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।
প্রকল্পে অবস্থানরত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম মনি জানিয়েছেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁরা বরাদ্দ পেয়েছেন। তাই কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তাদেরকে আরও কিছুদিন সময় দিতে হবে। দূর থেকে মাটি এনে মূল বাঁধের কাছে এনে রাখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই বাঁধের উপর ফেলা হবে।
উপ প্রকল্প নং-৫৮ (এই প্রকল্পের একটি অংশে কিছু মাটি ফেলা হয়েছে) পিআইসি সভাপতি রফিকুল ইসলাম, প্রকল্প বরাদ্দ ২৩,৮৩,৬১৬ টাকা। এই প্রকল্পটির অবস্থান কালীবাড়ি ভাঙার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাজ দুইটি অংশে, একটির কাজ করেছি। অন্যটির মাটি দূর থেকে কাছে আনা হচ্ছে। খুব শিঘ্রই বাঁধের উপর মাটি ফেলা হবে। উপ প্রকল্প নং- ৮৫, বরাদ্দ ৯,৯৫,০৬৮ টাকা, পিআইসির সভাপতি ইজাজুল হক। এই প্রকল্পটি মাহমুদপুর গ্রামের কাছের উত্তরের খালে। গ্রামের দিকে কয়েকশ ফুট মাটি ফেলার পর কোন কাজ করা হয়নি। খালটি এখনও বন্ধ করা হয়নি। এখনও ধীর গতিতে পানি নামছে। এই প্রকল্পের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তবে পিআইসি সভাপতিকে বাঁধ এলাকায় পাওয়া যায়নি।
উপ প্রকল্প নং- ৯৫,প্রকল্প বরাদ্দ-৮,৮১,৩৪৭ টাকা, পিআইসি সভাপতি প্রসেন চন্দ্র তালুকদার। এই প্রকল্পটি মদনাকান্দি গ্রামের কাছে। এখন বাঁধের উপর মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়নি। একই হাওরের উপ প্রকল্প নং-৯৭, প্রকল্প বরাদ্দ ১২,০২,১৯১ টাকা, পিআইসি সভাপতি আক্তার হোসেন। এই প্রকল্পটি আলীপুর গ্রামের কাছে। আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, মাত্র কয়েকদিন কার্যাদেশ পেয়েছেন তিনি। খুব শিঘ্রই কাজ শুরু করবেন।
উপ প্রকল্প নং-৮৩, বরাদ্দ ২১,০০৬৪ টাকা, পিআইসি সভাপতি জামাল হোসেন। এই প্রকল্পের বাঁধে মাটি ফেলার জন্য প্রস্তুতি চলছে। দূর থেকে মাটি এনে কাছে রাখা হচ্ছে, তবে শুক্রবার পর্যন্ত কোন মাটি ফেলা হয়নি। প্রকল্প এলাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া হালির হাওরের আওতাধীন তাহিরপুর গ্রামের শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পৈন্ডুপ গ্রামের সামনে ও উত্তর দিকের নদীর তীরের বাঁধে কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এই প্রকল্পের পিআইসি সভাপতি আঙ্গুর মিয়া। শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সরকার জানিয়েছেন, এই অংশটি অন্য একটি বাঁধের সাথে সংযুক্ত। মূল বাঁধে কাজ করছেন পিআইসি।
এছাড়া হালির হাওরের পাশ্ববর্তী মহালিয়া হাওরের হিজলা গ্রামের উত্তর দিকের ৮৭ নং উপ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি। এই প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা ২৩,৯৩৬৯৫, পিআইসির সভাপতি ভানু চক্রবর্তী। এই হাওরের হিজলা গ্রামের দক্ষিণ দিকের ৯৮ নং উপ প্রকল্পের বাঁধে মাটি ফেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে বাঁধের উপর মাটি দেয়া হয়নি। এই প্রকল্পের বরাদ্দ ২৩, ২৫৩০৯ টাকা। পিআইসির সভাপতি হরিধন সরকার। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান বলেন, ‘সব পিআইসি কাজ একসাথে শেষ করার চেষ্টা করছেন। তাই মাটি কাটার মেশিন সংকট দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র বিনয় তালুকদারের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। অন্য প্রকল্পগুলোর বাঁধের উপর মাটি ফেলা না হলেও মাটি কাছে এনে রেখেছেন পিআইসি। আমরা সবাইকে তাগিদ দিচ্ছি দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য। মাহমুদপুরের খালটি বন্ধ করতে স্থানীয় কৃষকরা বাঁধা দিচ্ছেন।