হাওর বার্তা ডেস্কঃ নড়াইল জেলায় সরিষা ক্ষেত থেকে চলতি বছর দুইশ টনের বেশি মধু সংগ্রহ করা হবে। সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করায় ক্ষেতে সরিষার ফলনও বেড়ে গেছে। অল্প খরচে এ চাষ করতে পারায় দিন দিন মধু চাষে দিকে ঝুঁকছে এলাকার কৃষকেরা।
অল্প বিনিয়োগে ভালো লাভ, উপযুক্ত পরিবেশসহ চাষের অনুকূল নানা অবস্থার কারণে নড়াইলে মৌচাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে বর্তমানে মৌ খামারির সংখ্যা প্রায় ৮৬ জন। যে সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। দেশ-বিদেশে মধুর বাজার সম্প্রসারিত না হওয়ায় মধুর উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। মৌ শিল্পের বিকাশে সরকারি উদ্যোগের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সদর উপজেলার চিলগাছা রগুনাথপুর গ্রামের সাবেক প্রশিকা কর্মী বাবুল শেখ বলেন, ২০০১ সালের প্রথম দিকে এ অঞ্চলে প্রথম মৌচাষ শুরু করেন। বাবুল শেখের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মৌ চাষে এগিয়ে আসেন। সেই থেকে এ অঞ্চলে বেড়ে চলেছে মৌচাষির সংখ্যা। বাবুল শেখের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকেন এখানকার মৌ চাষিরা। বর্তমানে যেখানে (রগুনাথপুর গ্রামে) মৌচাষির সংখ্যা পঞ্চাশের কাছাকাছি। শুধু এই গ্রামেই বছরে ১শ টনের বেশি মধু উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য কোটি টাকা।
নড়াইল জেলা মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার মোল্লা বলেন, মধু আহরণের মৌসুম নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। এ ছয় মাসে মৌ খামার নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটতে হয় মৌ চাষিদের। যেখানেই দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ জুড়ে সরিষা, মুশুরি, খেসাড়ি, তিল, তিসি, ধোনে ফুল সহ নানা ফুলের হাতছানি সেখানেই মধু আহরণে আস্তানা গাড়েন মৌ চাষিরা।
নভেম্বরে সরিষা, মুশুরি, খেসারি, ধনে ফুলসহ বিভিন্ন রবি ফসলে ফুল এলে নড়াইল ও এর পার্শ্ববর্তী মাগুরা ও ফরিদপুর জেলায় মধু সংগ্রহ শুরু করেন তারা। লিচু ফুল থেকে মধু আহরণ করতে গাজীপুর, পাবনা, যশোরেও চলে যায় তারা। এভাবে সর্বশেষ মে মাসে সুন্দরবনে গেওয়া, গরান, খলিষা, বাইন, কেওড়া ফুলের মধু আহরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মধু সংগ্রহের মৌসুম।
প্রতিটি চাষি এ মৌসুমে সরিষা ক্ষেত থেকে গড়ে প্রায় তিন মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ করে। বর্তমানে চলছে সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহের মৌশুম আর চলতি বছরে সরিষা ক্ষেত থেকে ২’শ মেট্টিকটন মধু সংগ্রহ করা হবে বলে জানান তিনি।
রঘুনাথপুর এলাকার মৌচাষি আনিসুর মিজান জানান, রৌদ্র উজ্জল আবহাওয়ায় ভরা মৌসুমে প্রতিটি বড় মৌবাক্স থেকে (৯ ফ্রেম বিশিষ্ট) থেকে ৬/৭দিন অন্তর ৩৫/৪০কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এবং ছোট বাক্স থেকে ১৮/২০ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। উৎপাদিত মধু মৌ চাষিরা ঢাকার বনফুল, এপি, স্কয়ার কোম্পানিসহ স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। প্রতি টন মধুর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা।
নড়াইল জেলা বিসিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, গত বছর সরিষা ক্ষেত থেকে মৌ চাষিরা প্রায় ২৫০ মেট্রিকটন মধু সংগ্রহ করেছে। চলতি বছরে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে মাত্র দুশো মেট্রিকটন। আশা করছি চলতি মৌসুমে সরিষা ক্ষেত থেকে দুশো মেট্রিক টনের বেশি মধু উৎপাদন হবে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে বিসিক এ মৌ চাষিদের একীভূত করে আধুনিক প্রযুক্তিতে মৌচাষ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে ৭০ জন মৌচাষির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জেলায় মৌচাষিদের উন্নয়নের জন্য ৬ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চাষিদের মাঝে দুই লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তাদেরকে মৌ বাক্সসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবারহ করে নতুন নতুন মৌ চাষি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মধু বাজারজাতকরণের জন্য বিসিকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশের সাথে আলোচোনা করেছেন।
তিনি আশা করেন অল্প দিনের মধ্যে মৌচাষিরা তাদের উৎপাদিত মুধুর ন্যায্য মূল্য পাবেন।