ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের জলাবদ্ধতায় বিপর্যয় আসন্ন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪১:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • ৪৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কন্যা সুন্দর আলোয় এখন বিয়ের কনে দেখা হয় না হাওরে। বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে অনেক আগেই। বিজলী বাতির ছোঁয়ায় দিবা রাত্রির ফারাক এখন বোঝা কঠিন হবার কথা ছিলো। তবে হাওরে এই কথা এখনো অবান্তর! এখানে কখনোই বিদ্যুৎ যায় না বলে অনেকেই মজা করেন। কারণ বিদ্যুৎ মশাই মাঝে মাঝে উঁকি দিতে আসেন হাওরবাসীকে জানান দিতে যে, এখানেও বিদ্যুৎ আছে। তবে কনের বাপের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, এটা হতে পারে না! মান সম্মানের ব্যাপার।

কিছু প্রশ্ন করি আপনাকে:

১. বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত ও পিছিয়ে পরা জনপদের নাম কি?

২. কোথায় ডাক্তার সাহেব নিজের পোস্টিং দেখতে চান না?

৩. শিক্ষায় পশ্চাৎপদ অঞ্চলের নাম বলুন?

৪. যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক কোন অঞ্চলে?

৫. অপুষ্টির শিকার হয়ে খর্বাকৃতির সন্তান জন্ম নিচ্ছে কোথায়?

সকল প্রশ্নের একমাত্র ও সরল উত্তর হাওর। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলার প্রায় ৩৪টি উপজেলায় বিস্তৃত ৪১১টি ছোট বড় হাওর নিয়ে আমাদের ভাটি এলাকা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের প্রায় ৮০০০ বর্গমাইল, অর্থাৎ প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। ষোল কোটির এক অষ্টমাংশ অর্থাৎ দুই কোটি মানুষের আবাস এই হাওর এলাকায়।

হাওর একটি বিচিত্র এলাকা। দেশের অন্য যে কোনো এলাকা থেকে এটা সম্পূর্ণরূপে আলাদা। এখানকার ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, যানবাহন সব কিছুই ব্যতিক্রম। প্রায় চার মাস এই বিপুল অঞ্চল পানিতে নিমগ্ন থাকে।

হাওর এলাকা জীববৈচিত্রে ভরপুর। এখানে বেশ কিছু ব্যতিক্রমধর্মী উদ্ভিদ দেখা যায়, যেমন: হিজল, তমাল, করচ, ভুই ডুমুর, জল ডুমুর, বরুণ, হোগলা, নল খাগড়া, বনতুলসী, বলুয়া ইত্যাদি। এছাড়া হাওরে প্রচুর শাপলা, শালুক, ঢ্যাপ ইত্যাদি জলজ গুল্ম আছে প্রচুর পরিমাণে।

হাওর দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের মৎস্য প্রজননের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। এখানে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া শিং, মাগুর, পুঁটি, বোয়াল, বাইম, টাকি, প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। দেশের মোট মৎস্য সম্পদের প্রায় ২৫ ভাগ মৎস্যের যোগান দেয় হাওর। এছাড়া দেশের মোট গবাদি পশুর ২২ শতাংশ আসে এখান থেকে।

আমাদের হাওর এখন পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতি এখন শিল্প কারখানার মজুর তথা শ্রম নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। হাওরের তরুণেরা এখন চোখ রাখছেন প্রবাসে কিংবা নগরে। রেমিটেন্সের কাঁচা অর্থে ফুলে ফেপে উঠছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। কিন্তু হাওর যে হারিয়ে ফেলছে তার স্বকীয়তা, তার কি দেখার কেউ নেই?

মূলত কৃষি ও মৎস্য আহরণ এই হাওরের দুটি প্রধান পেশা। গেল বছরের আগাম পানি চলে আশায় গোটা হাওর অঞ্চলে ধান উৎপাদন ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। কৃষকের কান্নার নোনা জলে স্ফিত হয়েছে হাওরের জলরাশি। সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় মৎস্য সম্পদের ব্যাপক মড়ক ছিলো অপ্রত্যাশিত এবং অবর্ণনীয়। এ বছর যুক্ত হয়েছে আরেকটি নতুন সমস্যা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ভাটির পানি নেমে যায়নি বিভিন্ন জায়গা থেকে ফলে কৃষক তার বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। তাই এবারো হয়তো কৃষক বঞ্চিত হবেন…

প্রকৃতির সাথে হাওরের নিবিড় বোঝাপড়ার মধ্যে একটা বড়সড় ঝামেলা বেঁধে গেছে সম্প্রতি। অপরিকল্পিত উন্নয়ন এর জন্য দায়ী বলে আমার মনে হয়। পানি পথ শুকিয়ে গেলে হাওরের বুক চিরে তৈরি হয়েছে সড়ক। এই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করেছে উন্নত। অনেক পরিবেশবিদ মনে করছেন পলি জমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই আভুরা সড়ক। প্রকৃতি কোনো প্রকার ইন্টারভেনশন পছন্দ করে না, হাওরে এই বক্তব্য প্রমাণিত হলো আবারো। এর ফলশ্রুতিতে এখন হাওর ও নদীতে পানির উচ্চতা সম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ফলে হাওরে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে ভৈরব বাজারের কাছে কালনি নদীর মোহনায় ড্রেজিং করা হচ্ছে এই ধারনা থেকে, হয়তো এতে হাওরে আটকে থাকা পানি নেমে যাবে। তবে কোন ধারনার ভিত্তিতে এই উদ্যোগের সূত্রপাত, তা জানা যায় নি। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন সময়ের দাবি। কোনো প্রকারের হাতুড়ে চিকিৎসা হবে হাওরকে মৃত্যুর কোলে সোপর্দ করার শামিল।

Sluice gate/Regulator নির্মাণ করা হয় মূলত পানির চলার পথকে একটি কাঠামোতে পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ৮০ শতাংশ বর্তমানে অকার্যকর বলে উল্লেখ করেছেন ডক্টর আইনুল নিশাত। দেশের স্বনামধন্য এই পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন এই তথ্য। তদারককারী সংস্থার দিকে এই অব্যবস্থাপনার দায় তিনি চাপিয়েছেন।

তবে আমি হাওরের গণমানুষের সাথে কথা বলে জেনেছি, তারাও ভাবছেন পলি জমেছে হাওরের বুকে। নদী ও হাওরের সঙ্গমস্থলে পলি জমে মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত নদীতে ড্রেজিং করা হলেও হাওরে এমন উদ্যোগ কখনোই দেখা যায়নি। নদ নদী শুকিয়ে গেছে কোথায়। প্রসস্থ নদী হয়েছে সরু। সেই সাথে হাওর অঞ্চলে অসংখ খাল বিল এখন বিপুপ্ত প্রায়। তাই হাওরের পানি নদী ও খালে সংকুলান না হওয়ায় আগেই চলে আসছে ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যাশিত উৎপাদন থেকে। আর পানি নেমে যাবার রাস্তা সঙ্কুচিত হওয়ায় এখন নামতেও পারছে না নির্ধারিত সময়ে ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

হাওর অঞ্চলে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তা এবার হয়নি। তার উপর উত্তরবঙ্গে বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। মোটা চাল গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি এখন বাংলাদেশে। খাদ্যে উদ্বৃত্ত বাংলাদেশ বাধ্য হয়েছে অনেক বছর পর চাল আমদানি করতে। এখনো হাওর অঞ্চলে সরকার খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু রেখেছে সীমিত পরিসরে হলেও। এর চাপ পড়ছে গোটা অর্থনীতি ও খাদ্য মজুদে।

আমরা হাওরবাসী কখনো ত্রাণ নেবো হাত পেতে স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু তাই হয়েছে এবার। আমাদের হাওরের জীবন ও ঋদ্ধ সংস্কৃতি এখন বিপন্ন। হাওরের সহজ সরল গণমানুষের স্রোত এখন তপ্ত নগরীর রাজপথে। কৃষাণির কোমল হাত রক্তাক্ত হচ্ছে শিল্পের সূচে…

হাওর অঞ্চল একটি বিশেষায়িত অঞ্চল। আমাদের জন্য ভাবতে হবে বিকল্প পদ্ধতিতে। মাটি ও পানির মানুষ আমরা, আমাদের মতোই থাকতে চাই। আমাদের নিয়ে অনতিবিলম্বে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হউক। হাওরের অমিত সম্ভাবনা এভাবে ধ্বংস করে দেবেন না।

সূত্রঃ ঢাকাটাইমস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরের জলাবদ্ধতায় বিপর্যয় আসন্ন

আপডেট টাইম : ১২:৪১:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কন্যা সুন্দর আলোয় এখন বিয়ের কনে দেখা হয় না হাওরে। বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে অনেক আগেই। বিজলী বাতির ছোঁয়ায় দিবা রাত্রির ফারাক এখন বোঝা কঠিন হবার কথা ছিলো। তবে হাওরে এই কথা এখনো অবান্তর! এখানে কখনোই বিদ্যুৎ যায় না বলে অনেকেই মজা করেন। কারণ বিদ্যুৎ মশাই মাঝে মাঝে উঁকি দিতে আসেন হাওরবাসীকে জানান দিতে যে, এখানেও বিদ্যুৎ আছে। তবে কনের বাপের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, এটা হতে পারে না! মান সম্মানের ব্যাপার।

কিছু প্রশ্ন করি আপনাকে:

১. বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত ও পিছিয়ে পরা জনপদের নাম কি?

২. কোথায় ডাক্তার সাহেব নিজের পোস্টিং দেখতে চান না?

৩. শিক্ষায় পশ্চাৎপদ অঞ্চলের নাম বলুন?

৪. যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক কোন অঞ্চলে?

৫. অপুষ্টির শিকার হয়ে খর্বাকৃতির সন্তান জন্ম নিচ্ছে কোথায়?

সকল প্রশ্নের একমাত্র ও সরল উত্তর হাওর। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলার প্রায় ৩৪টি উপজেলায় বিস্তৃত ৪১১টি ছোট বড় হাওর নিয়ে আমাদের ভাটি এলাকা। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের প্রায় ৮০০০ বর্গমাইল, অর্থাৎ প্রায় ৭ ভাগের এক ভাগ। ষোল কোটির এক অষ্টমাংশ অর্থাৎ দুই কোটি মানুষের আবাস এই হাওর এলাকায়।

হাওর একটি বিচিত্র এলাকা। দেশের অন্য যে কোনো এলাকা থেকে এটা সম্পূর্ণরূপে আলাদা। এখানকার ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, যানবাহন সব কিছুই ব্যতিক্রম। প্রায় চার মাস এই বিপুল অঞ্চল পানিতে নিমগ্ন থাকে।

হাওর এলাকা জীববৈচিত্রে ভরপুর। এখানে বেশ কিছু ব্যতিক্রমধর্মী উদ্ভিদ দেখা যায়, যেমন: হিজল, তমাল, করচ, ভুই ডুমুর, জল ডুমুর, বরুণ, হোগলা, নল খাগড়া, বনতুলসী, বলুয়া ইত্যাদি। এছাড়া হাওরে প্রচুর শাপলা, শালুক, ঢ্যাপ ইত্যাদি জলজ গুল্ম আছে প্রচুর পরিমাণে।

হাওর দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের মৎস্য প্রজননের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে। এখানে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া শিং, মাগুর, পুঁটি, বোয়াল, বাইম, টাকি, প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। দেশের মোট মৎস্য সম্পদের প্রায় ২৫ ভাগ মৎস্যের যোগান দেয় হাওর। এছাড়া দেশের মোট গবাদি পশুর ২২ শতাংশ আসে এখান থেকে।

আমাদের হাওর এখন পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতি এখন শিল্প কারখানার মজুর তথা শ্রম নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। হাওরের তরুণেরা এখন চোখ রাখছেন প্রবাসে কিংবা নগরে। রেমিটেন্সের কাঁচা অর্থে ফুলে ফেপে উঠছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। কিন্তু হাওর যে হারিয়ে ফেলছে তার স্বকীয়তা, তার কি দেখার কেউ নেই?

মূলত কৃষি ও মৎস্য আহরণ এই হাওরের দুটি প্রধান পেশা। গেল বছরের আগাম পানি চলে আশায় গোটা হাওর অঞ্চলে ধান উৎপাদন ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। কৃষকের কান্নার নোনা জলে স্ফিত হয়েছে হাওরের জলরাশি। সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় মৎস্য সম্পদের ব্যাপক মড়ক ছিলো অপ্রত্যাশিত এবং অবর্ণনীয়। এ বছর যুক্ত হয়েছে আরেকটি নতুন সমস্যা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও ভাটির পানি নেমে যায়নি বিভিন্ন জায়গা থেকে ফলে কৃষক তার বীজতলা তৈরি করতে পারেনি। তাই এবারো হয়তো কৃষক বঞ্চিত হবেন…

প্রকৃতির সাথে হাওরের নিবিড় বোঝাপড়ার মধ্যে একটা বড়সড় ঝামেলা বেঁধে গেছে সম্প্রতি। অপরিকল্পিত উন্নয়ন এর জন্য দায়ী বলে আমার মনে হয়। পানি পথ শুকিয়ে গেলে হাওরের বুক চিরে তৈরি হয়েছে সড়ক। এই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করেছে উন্নত। অনেক পরিবেশবিদ মনে করছেন পলি জমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই আভুরা সড়ক। প্রকৃতি কোনো প্রকার ইন্টারভেনশন পছন্দ করে না, হাওরে এই বক্তব্য প্রমাণিত হলো আবারো। এর ফলশ্রুতিতে এখন হাওর ও নদীতে পানির উচ্চতা সম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে ফলে হাওরে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে ভৈরব বাজারের কাছে কালনি নদীর মোহনায় ড্রেজিং করা হচ্ছে এই ধারনা থেকে, হয়তো এতে হাওরে আটকে থাকা পানি নেমে যাবে। তবে কোন ধারনার ভিত্তিতে এই উদ্যোগের সূত্রপাত, তা জানা যায় নি। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন সময়ের দাবি। কোনো প্রকারের হাতুড়ে চিকিৎসা হবে হাওরকে মৃত্যুর কোলে সোপর্দ করার শামিল।

Sluice gate/Regulator নির্মাণ করা হয় মূলত পানির চলার পথকে একটি কাঠামোতে পরিচালনা করার জন্য। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ৮০ শতাংশ বর্তমানে অকার্যকর বলে উল্লেখ করেছেন ডক্টর আইনুল নিশাত। দেশের স্বনামধন্য এই পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন এই তথ্য। তদারককারী সংস্থার দিকে এই অব্যবস্থাপনার দায় তিনি চাপিয়েছেন।

তবে আমি হাওরের গণমানুষের সাথে কথা বলে জেনেছি, তারাও ভাবছেন পলি জমেছে হাওরের বুকে। নদী ও হাওরের সঙ্গমস্থলে পলি জমে মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত নদীতে ড্রেজিং করা হলেও হাওরে এমন উদ্যোগ কখনোই দেখা যায়নি। নদ নদী শুকিয়ে গেছে কোথায়। প্রসস্থ নদী হয়েছে সরু। সেই সাথে হাওর অঞ্চলে অসংখ খাল বিল এখন বিপুপ্ত প্রায়। তাই হাওরের পানি নদী ও খালে সংকুলান না হওয়ায় আগেই চলে আসছে ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যাশিত উৎপাদন থেকে। আর পানি নেমে যাবার রাস্তা সঙ্কুচিত হওয়ায় এখন নামতেও পারছে না নির্ধারিত সময়ে ফলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

হাওর অঞ্চলে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তা এবার হয়নি। তার উপর উত্তরবঙ্গে বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। মোটা চাল গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি এখন বাংলাদেশে। খাদ্যে উদ্বৃত্ত বাংলাদেশ বাধ্য হয়েছে অনেক বছর পর চাল আমদানি করতে। এখনো হাওর অঞ্চলে সরকার খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু রেখেছে সীমিত পরিসরে হলেও। এর চাপ পড়ছে গোটা অর্থনীতি ও খাদ্য মজুদে।

আমরা হাওরবাসী কখনো ত্রাণ নেবো হাত পেতে স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু তাই হয়েছে এবার। আমাদের হাওরের জীবন ও ঋদ্ধ সংস্কৃতি এখন বিপন্ন। হাওরের সহজ সরল গণমানুষের স্রোত এখন তপ্ত নগরীর রাজপথে। কৃষাণির কোমল হাত রক্তাক্ত হচ্ছে শিল্পের সূচে…

হাওর অঞ্চল একটি বিশেষায়িত অঞ্চল। আমাদের জন্য ভাবতে হবে বিকল্প পদ্ধতিতে। মাটি ও পানির মানুষ আমরা, আমাদের মতোই থাকতে চাই। আমাদের নিয়ে অনতিবিলম্বে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হউক। হাওরের অমিত সম্ভাবনা এভাবে ধ্বংস করে দেবেন না।

সূত্রঃ ঢাকাটাইমস