ঢাকা ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পালং শাকের উপকারিতা জেনে নিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩২:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৬৬ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ পালং শাক কমবেশি প্রায় সবারই প্রিয়। সাধারণত শীতকালে পাওয়া যায় এই শাক। এই শাক রান্না করা ঝোল অনেকে স্যুপের মতো করে খায়। এই শাক ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়, রান্না করেও মাছের সঙ্গে খাওয়া যায় সহজেই। পালং শাক খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি রোগ-ব্যাধি সারাতেও এই শাকের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা।
পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।
অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পান। এই শাকের বীজও খুব উপকারী। এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়। পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও ভালো কাজ দেয়। পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। এই শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য। রক্ত বৃদ্ধিও করে। চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং মুখের লাবন্য বৃদ্ধি করে। পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।
পুষ্টি তালিকা : প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিন আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ২.৮ গ্রাম, অাঁশ আছে ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মি. গ্রাম, অ্যাসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মি. গ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে .০৮ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড থাকে ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, থায়ামিন আছে .০৩ মি. গ্রা। অতীতে বাজারে টক পালংও কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই শাকও ছিল খুবই উপকারী। শিশুদের জন্য পালং শাক বিশেষ উপকারী।
পালং শাক-এর উপকারিতা………
পালং শাক সারা পৃথিবীতেই অত্যন্ত সুপরিচিত একটি শাক। পালং শাক মূলত মধ্য দণি-পশ্চিম এশিয়ার একটি সবজি। পালং শাক একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা সাধারণত এক ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বর্ষার শেষে পালং শাকের চাষ করা হয় এবং শীতকালে শাক হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। পালং শাকের পাতা সবুজ এবং পাতার উপরের অংশ চওড়া। জৈব রাসায়নিক উপাদান পালং শাক অত্যন্ত পুষ্টিমানসমৃদ্ধ একটি শাক। প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে আছে ২৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইট্রেড ৩.৬ গ্রাম, আঁশ ৪.২ গ্রাম, চিনি ০.৪ গ্রাম, প্রোটিন ২.২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম-৯৪০০১৪ ইউনিট, বিটাকেরোটিন, ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম লিউটিন, জাঞ্ছিন ১২.১৯ মি. গ্রাম, ফোলেট (বি৯) ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ২৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন কে ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৯ মি. গ্রাম, আয়রন ২.৭ মি. গ্রাম।
কার্যকারিতা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে : পালং শাকে প্রচুর ফাভোনয়েড নামক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় তা শরীরের অক্সিডেশন প্রক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এন্টি ক্যান্সার : পালং শাকে ১৩ প্রকার ফাভোনয়েডস আছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। হৃদরোগ প্রতিরোধে : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ বিদ্যমান। এ ছাড়া এতে বিভিন্ন ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান, যা ফ্রি রেডিকেলের পরিমাণ কমায় এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়। এতে প্রচুর ভিটামিন বি১ থাকায় হৃৎপিণ্ডের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। গ্যাসট্রোইন্টেস্টাইনাল অ্যাকটিভিটি : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি এবং বিটা কেরোটিন থাকায় তা কোলেনের কোষগুলোকে রক্ষা করে।
প্রদাহনাশক হিসেবে : বাত ব্যথা, অস্টিওপোরোসিস, মাইগ্রেশন, মাথাব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসেবে পালং শাক কাজ করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে : পালং শাক স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর। চক্ষুরোগ দূর করতে : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন এ লিউটিন থাকায় নিয়মিত পালং শাক খেলে রাতকানা রোগ ও চোখে ছানি পড়া প্রতিরোধ করে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে : পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাসিকজনিত ব্যথা : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি মাসিকজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় : প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি গর্ভবতী মহিলাদের রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের স্তন্য দুগ্ধ বাড়াতে সহায়তা করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে : পালং শাকে বিভিন্ন প্রকার ক্ষারীয় উপাদান থাকায় এটা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে : পালং শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সি থাকায় দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রস্তাবের সমস্যা দূর করতে : পালং শাক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির প্রদাহ দূর করে। শ্বাসনালীর সমস্যায় : ব্রঙ্কোডায়ালেটর হিসেবে কাজ করে, ফলে ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
পালংকে বলা হয় শীতকালীন শাক-সবজির মধ্যে শাকের রাজা। বর্ষার শেষে পালং শাকের চাষ শুরু হয় এবং শীতকালে তা বাজারে পাওয়া যায়। সুলভে পাওয়া সুস্বাদু এই শাকের রয়েছে নানা ধরণের কঠিন রোগ সারানোর কার্যকরী গুণ। চলুন আজ জেনে নেই হাতের কাছে পাওয়া পালং শাকের অজানা কিছু গুণ সম্পর্কে…
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে আছে ২৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইট্রেড ৩.৬ গ্রাম, আঁশ ৪.২ গ্রাম, চিনি ০.৪ গ্রাম, প্রোটিন ২.২ গ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম-৯৪০০১৪ ইউনিট, বিটাকেরোটিন, ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম লিউটিন, ফোলেট (বি৯) ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ২৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন কে ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৯ মি. গ্রাম, আয়রন ২.৭ মি. গ্রাম।
১. পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং বিটা কেরোটিন থাকায় তা কোলনের কোষগুলোকে রক্ষা করে।
২. বাতের ব্যথা, অস্টিওপোরোসিস, মাইগ্রেশন, মাথাব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসেবে পালং শাক কাজ করে।
৩. পালং শাক স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর।
৪. পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন ‘সি’ থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৫. পালং শাক পেট পরিষ্কার রাখতে অপরিহার্য। তাছাড়া রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়।
৬. কিডনিতে পাথর থাকলে, তা গুড়ো করতে সাহায্য করে। দেহ ঠাণ্ডা ও স্নিগ্ধ রাখে পালং শাক।
৭. অনেকের মেদবৃদ্ধি ও দুর্বলতায় হাঁফ ধরে, তারা পালং পাতার রস খেলে উপকার পাবেন। পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৮. পালং শাকে ১৩ প্রকার ফাভোনয়েডস আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
৯. পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি মাসিকজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
১০. পালং শাক দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
১১. ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পালং শাক খুব উপকারী।
সতর্কতা
পালং শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে তাদের।
পালং শাক মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যস্পৃহা এবং ক্ষুধাবোধ কমাতে সাহায্য করে। আর এর মধ্য দিয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে পালং শাক।
নতুন এক গবেষণায় পালং শাকের এ গুণের কথা উঠে এসেছে। পালং শাকে রয়েছে থাইলোকোয়েড নামের একটি উপাদান। মানব দেহে খাবার গ্রহণের পর যে পরিতৃপ্তির সৃষ্টি হয় তা দেখা দেয় বিশেষ হরমোনের কারণে।  থাইলোকোয়েড এমন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া, চর্বি হজমের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। দুইয়ে মিলে খাদ্যস্পৃহা এবং ক্ষুধাবোধ উভয়ই কমে। এ সংক্রান্ত গবেষণা  নিবন্ধ জার্নাল অব দ্যা আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয়েছে।
আমেরিকার লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পেনিনংটন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এ গবেষণা চালিয়েছে। এ কাজে জড়িত অন্যতম গবেষক ফ্রাংক এল  গ্রিনওয়ে বলেন, খাদ্যস্পৃহা এবং ক্ষুধাবোধ কমাতে সাহায্য করে থাইলোকোয়েড। তাই উচ্চরক্ত চাপ এবং অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে থাইলোকোয়েড।
এখানে অবশ্য একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ্য করা প্রয়োজন আর তা হলো, চিকিৎসক যদি কোনো কারণ আপনাকে পালং শাক খেতে নিষেধ করে থাকেন তা হলে এটি পড়ে তা খেতে যাবেন না। আসলে গবেষণা সংক্রান্ত এ সব খবর কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। তাই খাদ্য বা চিকিৎসা গবেষণা সংক্রান্ত কোনো খবর পড়েই তা পালন করতে মেতে উঠবেন না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করবেন। না হলে মারাত্মক বিপদ দেখা দিতে পারে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পালং শাকের উপকারিতা জেনে নিন

আপডেট টাইম : ০৪:৩২:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৮
হাওর বার্তা ডেস্কঃ পালং শাক কমবেশি প্রায় সবারই প্রিয়। সাধারণত শীতকালে পাওয়া যায় এই শাক। এই শাক রান্না করা ঝোল অনেকে স্যুপের মতো করে খায়। এই শাক ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়, রান্না করেও মাছের সঙ্গে খাওয়া যায় সহজেই। পালং শাক খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি রোগ-ব্যাধি সারাতেও এই শাকের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা।
পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে।
অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পান। এই শাকের বীজও খুব উপকারী। এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়। পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও ভালো কাজ দেয়। পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। এই শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য। রক্ত বৃদ্ধিও করে। চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং মুখের লাবন্য বৃদ্ধি করে। পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।
পুষ্টি তালিকা : প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিন আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ২.৮ গ্রাম, অাঁশ আছে ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মি. গ্রাম, অ্যাসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মি. গ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে .০৮ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড থাকে ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, থায়ামিন আছে .০৩ মি. গ্রা। অতীতে বাজারে টক পালংও কিনতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই শাকও ছিল খুবই উপকারী। শিশুদের জন্য পালং শাক বিশেষ উপকারী।
পালং শাক-এর উপকারিতা………
পালং শাক সারা পৃথিবীতেই অত্যন্ত সুপরিচিত একটি শাক। পালং শাক মূলত মধ্য দণি-পশ্চিম এশিয়ার একটি সবজি। পালং শাক একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা সাধারণত এক ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বর্ষার শেষে পালং শাকের চাষ করা হয় এবং শীতকালে শাক হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। পালং শাকের পাতা সবুজ এবং পাতার উপরের অংশ চওড়া। জৈব রাসায়নিক উপাদান পালং শাক অত্যন্ত পুষ্টিমানসমৃদ্ধ একটি শাক। প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে আছে ২৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইট্রেড ৩.৬ গ্রাম, আঁশ ৪.২ গ্রাম, চিনি ০.৪ গ্রাম, প্রোটিন ২.২ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম-৯৪০০১৪ ইউনিট, বিটাকেরোটিন, ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম লিউটিন, জাঞ্ছিন ১২.১৯ মি. গ্রাম, ফোলেট (বি৯) ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ২৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন কে ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৯ মি. গ্রাম, আয়রন ২.৭ মি. গ্রাম।
কার্যকারিতা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে : পালং শাকে প্রচুর ফাভোনয়েড নামক এন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় তা শরীরের অক্সিডেশন প্রক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এন্টি ক্যান্সার : পালং শাকে ১৩ প্রকার ফাভোনয়েডস আছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। হৃদরোগ প্রতিরোধে : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ বিদ্যমান। এ ছাড়া এতে বিভিন্ন ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান, যা ফ্রি রেডিকেলের পরিমাণ কমায় এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়। এতে প্রচুর ভিটামিন বি১ থাকায় হৃৎপিণ্ডের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। গ্যাসট্রোইন্টেস্টাইনাল অ্যাকটিভিটি : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি এবং বিটা কেরোটিন থাকায় তা কোলেনের কোষগুলোকে রক্ষা করে।
প্রদাহনাশক হিসেবে : বাত ব্যথা, অস্টিওপোরোসিস, মাইগ্রেশন, মাথাব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসেবে পালং শাক কাজ করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে : পালং শাক স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর। চক্ষুরোগ দূর করতে : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন এ লিউটিন থাকায় নিয়মিত পালং শাক খেলে রাতকানা রোগ ও চোখে ছানি পড়া প্রতিরোধ করে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে : পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাসিকজনিত ব্যথা : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি মাসিকজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় : প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি গর্ভবতী মহিলাদের রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের স্তন্য দুগ্ধ বাড়াতে সহায়তা করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে : পালং শাকে বিভিন্ন প্রকার ক্ষারীয় উপাদান থাকায় এটা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধে : পালং শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন সি থাকায় দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রস্তাবের সমস্যা দূর করতে : পালং শাক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির প্রদাহ দূর করে। শ্বাসনালীর সমস্যায় : ব্রঙ্কোডায়ালেটর হিসেবে কাজ করে, ফলে ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
পালংকে বলা হয় শীতকালীন শাক-সবজির মধ্যে শাকের রাজা। বর্ষার শেষে পালং শাকের চাষ শুরু হয় এবং শীতকালে তা বাজারে পাওয়া যায়। সুলভে পাওয়া সুস্বাদু এই শাকের রয়েছে নানা ধরণের কঠিন রোগ সারানোর কার্যকরী গুণ। চলুন আজ জেনে নেই হাতের কাছে পাওয়া পালং শাকের অজানা কিছু গুণ সম্পর্কে…
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে আছে ২৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, কার্বোহাইট্রেড ৩.৬ গ্রাম, আঁশ ৪.২ গ্রাম, চিনি ০.৪ গ্রাম, প্রোটিন ২.২ গ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ ৪৬৯ মাইক্রোগ্রাম-৯৪০০১৪ ইউনিট, বিটাকেরোটিন, ৫৬২৬ মাইক্রোগ্রাম লিউটিন, ফোলেট (বি৯) ১৯৬ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ২৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন কে ৪৬৩ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৯ মি. গ্রাম, আয়রন ২.৭ মি. গ্রাম।
১. পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং বিটা কেরোটিন থাকায় তা কোলনের কোষগুলোকে রক্ষা করে।
২. বাতের ব্যথা, অস্টিওপোরোসিস, মাইগ্রেশন, মাথাব্যথা দূর করতে প্রদাহনাশক হিসেবে পালং শাক কাজ করে।
৩. পালং শাক স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকর।
৪. পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন ‘সি’ থাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৫. পালং শাক পেট পরিষ্কার রাখতে অপরিহার্য। তাছাড়া রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে, দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায়।
৬. কিডনিতে পাথর থাকলে, তা গুড়ো করতে সাহায্য করে। দেহ ঠাণ্ডা ও স্নিগ্ধ রাখে পালং শাক।
৭. অনেকের মেদবৃদ্ধি ও দুর্বলতায় হাঁফ ধরে, তারা পালং পাতার রস খেলে উপকার পাবেন। পালং শাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৮. পালং শাকে ১৩ প্রকার ফাভোনয়েডস আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
৯. পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় এটি মাসিকজনিত সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
১০. পালং শাক দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
১১. ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পালং শাক খুব উপকারী।
সতর্কতা
পালং শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে তাদের।
পালং শাক মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যস্পৃহা এবং ক্ষুধাবোধ কমাতে সাহায্য করে। আর এর মধ্য দিয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে পালং শাক।
নতুন এক গবেষণায় পালং শাকের এ গুণের কথা উঠে এসেছে। পালং শাকে রয়েছে থাইলোকোয়েড নামের একটি উপাদান। মানব দেহে খাবার গ্রহণের পর যে পরিতৃপ্তির সৃষ্টি হয় তা দেখা দেয় বিশেষ হরমোনের কারণে।  থাইলোকোয়েড এমন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া, চর্বি হজমের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। দুইয়ে মিলে খাদ্যস্পৃহা এবং ক্ষুধাবোধ উভয়ই কমে। এ সংক্রান্ত গবেষণা  নিবন্ধ জার্নাল অব দ্যা আমেরিকান কলেজ অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয়েছে।
আমেরিকার লুজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের পেনিনংটন বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এ গবেষণা চালিয়েছে। এ কাজে জড়িত অন্যতম গবেষক ফ্রাংক এল  গ্রিনওয়ে বলেন, খাদ্যস্পৃহা এবং ক্ষুধাবোধ কমাতে সাহায্য করে থাইলোকোয়েড। তাই উচ্চরক্ত চাপ এবং অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে থাইলোকোয়েড।
এখানে অবশ্য একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ্য করা প্রয়োজন আর তা হলো, চিকিৎসক যদি কোনো কারণ আপনাকে পালং শাক খেতে নিষেধ করে থাকেন তা হলে এটি পড়ে তা খেতে যাবেন না। আসলে গবেষণা সংক্রান্ত এ সব খবর কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। তাই খাদ্য বা চিকিৎসা গবেষণা সংক্রান্ত কোনো খবর পড়েই তা পালন করতে মেতে উঠবেন না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করবেন। না হলে মারাত্মক বিপদ দেখা দিতে পারে।