ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের শাক সবজির ও ফলমূলের উপকারীতা জেনে নিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৬:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৪৩১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত আমাদের নানা দু:খ-কষ্টের কারণ হলেও সাথে নিয়ে আসে হরেক রকমের খাদ্য, শাক ও ফলমূল, যা আমাদের মওসুমি রোগবালাই প্রতিরোধ করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। আমরা জানি, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রোগের আগমন ঘটে। কিন্তু আল্লাহ এতই মেহেরবান যে, ওইসব মওসুমি রোগ প্রতিরোধের জন্য হরেক রকম শাক ও ফলমূলও দান করেন, যাতে তার প্রিয় বান্দারা ওইসব শাক ও ফলমূল খেয়ে সুস্থ থাকতে পারে ।

কিন্তু যারা এসব শাক ও ফলমূল না খেয়ে অন্য কিছু খায় তারা নানা রোগের শিকার হয়। আসুন আমরা জেনে নিই কী কী শাক ও ফলমূল খেলে শীতে সুস্থ থাকতে পারি। প্রথমে প্রধান প্রধান শাকের কথা বলা যাক। শীতে আমরা পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, আরো নানা শাক দেখতে পাই। এগুলো শুধু দেখতে সুন্দর নয়, খেতেও ভালো এবং উপকারী। যেমন পালংশাকের কথাই ধরা যাক। বলা হয় শাকের রাজা পালংশাক। স্বাদে গন্ধে ভরপুর।

পালংশাক : পালংশাকের অনেক গুণ আমাদের শরীরের ভেতর নানা কারণে কিডনি বা গলবাডারে যে পাথর হয়, পালংশাক শরীরে ঢুকে সেটাকে গলিয়ে বের করে দেয়। ফুসফুসের রোগেও পালংশাক খুবই উপকারী। এ ছাড়া পেটের অসুখ, অন্ত্রের রোগ ইত্যাদি সারাতে পালংশাক অত্যন্ত উপকারী। টমেটোকে বাদ দিলে শাকের মধ্যে পালংশাকের মতো শক্তিবর্ধক আর কোনো শাক নেই বললেই চলে।

জন্ডিস রোগেও পালংশাক উপকারী। পালংশাক রক্তবর্ধকই নয়, রক্তশুদ্ধিতেও উপকারী। অস্থি মজবুত করে। জীবনীশক্তি বাড়ায়। শিশুদের জন্য পালংশাক উপকারী। পালংশাক প্রস্রাব বাড়ায়, যে প্রস্রাবের সাথে শরীরের অনেক রোগ বেরিয়ে যায়। শ্বাসকষ্ট হ্রাস করে। পিত্ত ঠান্ডা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেটে জমে থাকা মল বের করে দেয়। পালংশাকে ভিটামিন ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ও ‘ই’ রয়েছে। আরো আছে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন ও লৌহ।

লালশাক : লালশাক অতি জনপ্রিয়। সারা বছর পাওয়া যায়। দামে সস্তা ও সহজলভ্য। টবে লালশাক বুনে খাওয়া যায়। লালশাক দুই প্রকার । এক প্রকার লালশাক দেখতে লাল হলেও এর পাতা আঙুলে চটকালে লাল রঙ হয় না। এই জাত খুব উপকারী নয়। যে লালশাক রান্নার পর ভাত মাখালে ভাত লাল হয়ে যায় ওই লালশাক উপকারী এবং এই লালশাক শরীরের হিমোগেবিন বৃদ্ধি করে। তবে লালশাক সবাই হজম করতে পারে না। তাড়াতাড়ি হজম হয় না। এর প্রধান গুণ হলো, শরীরে হিমোগেবিন বৃদ্ধি করে।

মুলাশাক : কচি মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এ শাক সহজে হজম হয়। মুলাশাক ত্রিদোষ নাশক। যথা-বায়ু,পিত্ত ও কফনাশক। তবে উত্তমরূপে সেদ্ধ করে না খেলে উল্টো ফল ফলে । অর্থাৎ শরীর গরম হয়। পেটে গ্যাস হতে পারে।

হেলেঞ্চা শাক : হেলেঞ্চা শাক সাধারণত পুকুর, বিল ও বাঁওড়ে হয়। সবাই এ শাক পছন্দ করে না। কারণ স্বাদে সামান্য তিক্ত বা তিতা। হেলেঞ্চা শাক পিত্তনাশ করে। যাদের হাত-পা জ্বালা করে বা লিভারের সমস্যা আছে, তারা কাচা হেলেঞ্চা বেটে রস খেলে উপকার হয়। আবার ভর্তা বা রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে ভাজি করলে এর উপকারিতা থাকে না।

থানকুনিপাতা : গ্রামদেশে মাঠে ঘাটে সর্বত্র পাওয়া যায় এবং থানকুনিপাতা খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ মতে, থানকুনিপাতা সপ্ত ধাতুর উপকার করে। সপ্ত ধাতু বলতে-রস, মেদ, মজ্জা, রক্ত, মাংস, অস্থি ও বীর্যকে বোঝায়। বিশেষভাবে পেটের সর্বপ্রকার সমস্যা থানকুনিপাতা অমোঘ ওষুধ। কবিরাজ বলেন, থানকুনিপাতা দীর্ঘ জীবন দান করে। কাশি, অর্শ, লিভারের অসুখ, জন্ডিস, প্রস্রাবের সমস্যা, কৃমি, অজীর্ণ প্রভৃতি ভালো হয়।

থানকুনিপাতা ভালো করে ধুয়ে, বেটে তাতে রসুন, জোয়ান, কাঁচামরিচ, গোলমরিচ, সামান্য লবণ, কয়েক ফোঁটা খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে মেখে গরম ভাতের সাথে খেলে পেটে যত বর্জ্য সব বেরিয়ে যায়। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। আমাশয় হলে থানকুনিপাতা ছেচে রস করে খেলে ভালো হয়।

কমলা : শীতের প্রধান ফল হলো কমলা। কমলাকে শীতের ফলের রাজা বলা যায়। গুণে ও মানে এর তুলনা নেই। কমলা বিভিন্ন জাত, প্রকার ও আকৃতির হয়। আমাদের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আগ পর্যন্ত সিলেটের কমলা বাংলাদেশের কমলার চাহিদা পূরণ করত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী এসব কমলার বাগানে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর আবার সিলেট, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় প্রভৃতি জায়গায় কমলার চাষ হচ্ছে। কমলা অত্যন্ত ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ ফল।

যা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার ভিটামিন ‘সি’-এর ঘাটতি পূরণে সমান এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শীতকালে রোজ সকালে নাশতা শেষে এক কাপ কমলার রস রোগ প্রতিরোধে ধন্বন্তরী। যারা হৃদরোগী তাদের জন্য কমলার রস খুবই উপকারী। যেসব লোক অপুষ্টিতে ভুগছে তারা এই শীতকালে প্রতিদিন একটা কমলা খেলে অপুষ্টি দূর হবে। সদ্য রোগমুক্ত ও প্রসবকারিণী মা দৈনিক একটা কমলা খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ সবল হয়ে উঠবে।

কমলা কেনার সময় সবাই মিষ্টি কমলা খোঁজেন। কিন্তু কবিরাজ বলেন, মিষ্টির চেয়ে ঈষৎ টক কমলা বেশি উপকারী। মাথার যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠলে কমলার রসের সঙ্গে সামান্য ঘৃত মিশিয়ে চোখের দুই পাশের রগে লাগালে মাথার যন্ত্রণা দূর হবে। কমলা হিস্টিরিয়া রোগনাশক।

সফেদা : সফেদা দেখতে অসুন্দর গাবের মতো, কিন্তু এমন সুমিষ্ট ও স্বাদগন্ধযুক্ত ফল বোধ হয় আর বাংলাদেশে নেই। এই ফসেদা নানা গুণে সমৃদ্ধ। অপুষ্টি, পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি, হার্টের দুর্বলতা, বার্ধক্যে, মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা পাকা সফেতা খেলে সমাধান হয়। ডালিম -বেদানা : ডালিম ও বেদনা দুই রকম হলেও জাত এক। ডালিম বিশ্বের সর্বত্র পাওয়া যায়। বেদানা সর্বত্র হয় না।

ডালিমের ভেতরের দানা সাদা এবং বেদানা দানা লাল টক্টকে । হিন্দুশাস্ত্রে তিন প্রকার ডালিমের উল্লেখ পাওয়া যায়। যথা-মধুর ডালিম, কষায় ডালিম, টক ডালিম। মধুর ডালিম যার দানা লাল অধিক উপকারী এবং রসাল। অধিক গর্ভস্রাব আমাশয়, হৃদরোগ, লিভার বৃদ্ধি, অনিদ্রা, অজীর্ণ, রক্তপিত্ত, অরুচি, ক্রিমি, শ্বেতপ্রদর, মেধা হ্রাস প্রভৃতি সমস্যায় কবিরাজের পরামর্শে ব্যবহার করলে উপকার হয়।

কুল : শীতের আরেক জনপ্রিয় ফল কুল। কুল নানা জাতের হয়। যেমন-নারকেল কুল, বিবি কুল, আপেল কুল, বাদাম কুল প্রভৃতি। সব কুলই জনপ্রিয় ও উপকারী। অর্শের যন্ত্রণা, বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড় বা দংশন, ফোড়া হৃদরোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, প্রদর, রক্ত আমাশয়, মাথাব্যথা-প্রভৃতি সমস্যা কুল, কুলের পাতা, ছাল সমাধান করতে পারে।
কামরাঙা : কামরাঙা একটি সুন্দর ফল।

এর পাঁচটি ধার থাকে। এ ফল দুই জাতের- যথা মিষ্টি ও টক কামরাঙা। বড় ও ছোট দুই প্রকার পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই খাওয়া চলে। সালাদ করে ভাতের সঙ্গেও খাওয়া যায়। পুরাতন জ্বর, লিভার ব্যথা, অরুচি, প্রভৃতি সমস্যায় কামরাঙা উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীতের শাক সবজির ও ফলমূলের উপকারীতা জেনে নিন

আপডেট টাইম : ০৩:০৬:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত আমাদের নানা দু:খ-কষ্টের কারণ হলেও সাথে নিয়ে আসে হরেক রকমের খাদ্য, শাক ও ফলমূল, যা আমাদের মওসুমি রোগবালাই প্রতিরোধ করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। আমরা জানি, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রোগের আগমন ঘটে। কিন্তু আল্লাহ এতই মেহেরবান যে, ওইসব মওসুমি রোগ প্রতিরোধের জন্য হরেক রকম শাক ও ফলমূলও দান করেন, যাতে তার প্রিয় বান্দারা ওইসব শাক ও ফলমূল খেয়ে সুস্থ থাকতে পারে ।

কিন্তু যারা এসব শাক ও ফলমূল না খেয়ে অন্য কিছু খায় তারা নানা রোগের শিকার হয়। আসুন আমরা জেনে নিই কী কী শাক ও ফলমূল খেলে শীতে সুস্থ থাকতে পারি। প্রথমে প্রধান প্রধান শাকের কথা বলা যাক। শীতে আমরা পালংশাক, লালশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, আরো নানা শাক দেখতে পাই। এগুলো শুধু দেখতে সুন্দর নয়, খেতেও ভালো এবং উপকারী। যেমন পালংশাকের কথাই ধরা যাক। বলা হয় শাকের রাজা পালংশাক। স্বাদে গন্ধে ভরপুর।

পালংশাক : পালংশাকের অনেক গুণ আমাদের শরীরের ভেতর নানা কারণে কিডনি বা গলবাডারে যে পাথর হয়, পালংশাক শরীরে ঢুকে সেটাকে গলিয়ে বের করে দেয়। ফুসফুসের রোগেও পালংশাক খুবই উপকারী। এ ছাড়া পেটের অসুখ, অন্ত্রের রোগ ইত্যাদি সারাতে পালংশাক অত্যন্ত উপকারী। টমেটোকে বাদ দিলে শাকের মধ্যে পালংশাকের মতো শক্তিবর্ধক আর কোনো শাক নেই বললেই চলে।

জন্ডিস রোগেও পালংশাক উপকারী। পালংশাক রক্তবর্ধকই নয়, রক্তশুদ্ধিতেও উপকারী। অস্থি মজবুত করে। জীবনীশক্তি বাড়ায়। শিশুদের জন্য পালংশাক উপকারী। পালংশাক প্রস্রাব বাড়ায়, যে প্রস্রাবের সাথে শরীরের অনেক রোগ বেরিয়ে যায়। শ্বাসকষ্ট হ্রাস করে। পিত্ত ঠান্ডা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেটে জমে থাকা মল বের করে দেয়। পালংশাকে ভিটামিন ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ও ‘ই’ রয়েছে। আরো আছে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন ও লৌহ।

লালশাক : লালশাক অতি জনপ্রিয়। সারা বছর পাওয়া যায়। দামে সস্তা ও সহজলভ্য। টবে লালশাক বুনে খাওয়া যায়। লালশাক দুই প্রকার । এক প্রকার লালশাক দেখতে লাল হলেও এর পাতা আঙুলে চটকালে লাল রঙ হয় না। এই জাত খুব উপকারী নয়। যে লালশাক রান্নার পর ভাত মাখালে ভাত লাল হয়ে যায় ওই লালশাক উপকারী এবং এই লালশাক শরীরের হিমোগেবিন বৃদ্ধি করে। তবে লালশাক সবাই হজম করতে পারে না। তাড়াতাড়ি হজম হয় না। এর প্রধান গুণ হলো, শরীরে হিমোগেবিন বৃদ্ধি করে।

মুলাশাক : কচি মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এ শাক সহজে হজম হয়। মুলাশাক ত্রিদোষ নাশক। যথা-বায়ু,পিত্ত ও কফনাশক। তবে উত্তমরূপে সেদ্ধ করে না খেলে উল্টো ফল ফলে । অর্থাৎ শরীর গরম হয়। পেটে গ্যাস হতে পারে।

হেলেঞ্চা শাক : হেলেঞ্চা শাক সাধারণত পুকুর, বিল ও বাঁওড়ে হয়। সবাই এ শাক পছন্দ করে না। কারণ স্বাদে সামান্য তিক্ত বা তিতা। হেলেঞ্চা শাক পিত্তনাশ করে। যাদের হাত-পা জ্বালা করে বা লিভারের সমস্যা আছে, তারা কাচা হেলেঞ্চা বেটে রস খেলে উপকার হয়। আবার ভর্তা বা রান্না করেও খাওয়া যায়। তবে ভাজি করলে এর উপকারিতা থাকে না।

থানকুনিপাতা : গ্রামদেশে মাঠে ঘাটে সর্বত্র পাওয়া যায় এবং থানকুনিপাতা খুবই উপকারী। আয়ুর্বেদ মতে, থানকুনিপাতা সপ্ত ধাতুর উপকার করে। সপ্ত ধাতু বলতে-রস, মেদ, মজ্জা, রক্ত, মাংস, অস্থি ও বীর্যকে বোঝায়। বিশেষভাবে পেটের সর্বপ্রকার সমস্যা থানকুনিপাতা অমোঘ ওষুধ। কবিরাজ বলেন, থানকুনিপাতা দীর্ঘ জীবন দান করে। কাশি, অর্শ, লিভারের অসুখ, জন্ডিস, প্রস্রাবের সমস্যা, কৃমি, অজীর্ণ প্রভৃতি ভালো হয়।

থানকুনিপাতা ভালো করে ধুয়ে, বেটে তাতে রসুন, জোয়ান, কাঁচামরিচ, গোলমরিচ, সামান্য লবণ, কয়েক ফোঁটা খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে মেখে গরম ভাতের সাথে খেলে পেটে যত বর্জ্য সব বেরিয়ে যায়। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। আমাশয় হলে থানকুনিপাতা ছেচে রস করে খেলে ভালো হয়।

কমলা : শীতের প্রধান ফল হলো কমলা। কমলাকে শীতের ফলের রাজা বলা যায়। গুণে ও মানে এর তুলনা নেই। কমলা বিভিন্ন জাত, প্রকার ও আকৃতির হয়। আমাদের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আগ পর্যন্ত সিলেটের কমলা বাংলাদেশের কমলার চাহিদা পূরণ করত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী এসব কমলার বাগানে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর আবার সিলেট, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় প্রভৃতি জায়গায় কমলার চাষ হচ্ছে। কমলা অত্যন্ত ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ ফল।

যা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার ভিটামিন ‘সি’-এর ঘাটতি পূরণে সমান এবং রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শীতকালে রোজ সকালে নাশতা শেষে এক কাপ কমলার রস রোগ প্রতিরোধে ধন্বন্তরী। যারা হৃদরোগী তাদের জন্য কমলার রস খুবই উপকারী। যেসব লোক অপুষ্টিতে ভুগছে তারা এই শীতকালে প্রতিদিন একটা কমলা খেলে অপুষ্টি দূর হবে। সদ্য রোগমুক্ত ও প্রসবকারিণী মা দৈনিক একটা কমলা খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ সবল হয়ে উঠবে।

কমলা কেনার সময় সবাই মিষ্টি কমলা খোঁজেন। কিন্তু কবিরাজ বলেন, মিষ্টির চেয়ে ঈষৎ টক কমলা বেশি উপকারী। মাথার যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠলে কমলার রসের সঙ্গে সামান্য ঘৃত মিশিয়ে চোখের দুই পাশের রগে লাগালে মাথার যন্ত্রণা দূর হবে। কমলা হিস্টিরিয়া রোগনাশক।

সফেদা : সফেদা দেখতে অসুন্দর গাবের মতো, কিন্তু এমন সুমিষ্ট ও স্বাদগন্ধযুক্ত ফল বোধ হয় আর বাংলাদেশে নেই। এই ফসেদা নানা গুণে সমৃদ্ধ। অপুষ্টি, পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি, হার্টের দুর্বলতা, বার্ধক্যে, মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা পাকা সফেতা খেলে সমাধান হয়। ডালিম -বেদানা : ডালিম ও বেদনা দুই রকম হলেও জাত এক। ডালিম বিশ্বের সর্বত্র পাওয়া যায়। বেদানা সর্বত্র হয় না।

ডালিমের ভেতরের দানা সাদা এবং বেদানা দানা লাল টক্টকে । হিন্দুশাস্ত্রে তিন প্রকার ডালিমের উল্লেখ পাওয়া যায়। যথা-মধুর ডালিম, কষায় ডালিম, টক ডালিম। মধুর ডালিম যার দানা লাল অধিক উপকারী এবং রসাল। অধিক গর্ভস্রাব আমাশয়, হৃদরোগ, লিভার বৃদ্ধি, অনিদ্রা, অজীর্ণ, রক্তপিত্ত, অরুচি, ক্রিমি, শ্বেতপ্রদর, মেধা হ্রাস প্রভৃতি সমস্যায় কবিরাজের পরামর্শে ব্যবহার করলে উপকার হয়।

কুল : শীতের আরেক জনপ্রিয় ফল কুল। কুল নানা জাতের হয়। যেমন-নারকেল কুল, বিবি কুল, আপেল কুল, বাদাম কুল প্রভৃতি। সব কুলই জনপ্রিয় ও উপকারী। অর্শের যন্ত্রণা, বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড় বা দংশন, ফোড়া হৃদরোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, প্রদর, রক্ত আমাশয়, মাথাব্যথা-প্রভৃতি সমস্যা কুল, কুলের পাতা, ছাল সমাধান করতে পারে।
কামরাঙা : কামরাঙা একটি সুন্দর ফল।

এর পাঁচটি ধার থাকে। এ ফল দুই জাতের- যথা মিষ্টি ও টক কামরাঙা। বড় ও ছোট দুই প্রকার পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই খাওয়া চলে। সালাদ করে ভাতের সঙ্গেও খাওয়া যায়। পুরাতন জ্বর, লিভার ব্যথা, অরুচি, প্রভৃতি সমস্যায় কামরাঙা উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।