আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির হুঁশিয়ারিকে যে ভাবে নিচ্ছে সরকার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নতুন বছরকে রাজনৈতিক মহলে নির্বাচনের বছর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সব পক্ষ। তবে আগামী নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি থাকলেও ‘নির্বাচন পদ্ধতি’ নিয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।

আগের মতোই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এখন পর্যন্ত যে যার অবস্থানে অনড়। এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বেন না তারা।

অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০১৪ এর মতো কোনো নির্বাচন এবার হতে দেয়া হবে না। দুই দলের এমন অনড় অবস্থানে ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই সরকারবিরোধী প্রধান শক্তি বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানালেও সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যেও ক্ষমতাসীনরা অনেকটা একতরফাভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেন। আগামী জানুয়ারিতে এ সরকার তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবে।

গত নির্বাচন থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন পদ্ধতির বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। চরম বৈরী অবস্থানে থেকে দুই দলের নেতারা নিজেদের আগের অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে একে অপরকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সর্বশেষ মঙ্গলবার ছাত্রদলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের দল। আমরা নির্বাচন করব। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাইলেই রাখা যাবে না। বিএনপিকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এ সময় আবারও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান তিনি।’

সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এ সরকার ভোটে নির্বাচিত নয়। ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই ওদের অধীনে নির্বাচন হবে না।’ বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ সংসদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হবে না। এবার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে। বিএনপি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পার্টি। এটিকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়ের ভীতি থেকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে ব্ল্যাকমেইল করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে না। নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে। আর হেরে যাওয়ার ভয়ে খালেদা জিয়া জনগণকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করছেন।’

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটি আগের অবস্থানে অনড় থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে যাবে। নির্বাচন নিয়ে সংবিধানে যা বলা আছে, সরকার সেভাবেই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে। বিএনপির কোনো অসাংবিধানিক দাবি মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া বিএনপি যদি গতবারের ভুল পথে হাঁটে বা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে নিজেদের জড়ায়, তাহলে এর জবাব জনগণ ভোটের মাধ্যমে দেবে বলেও মনে করেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি নেত্রী দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন, মা-ছেলে মামলা থেকে বাঁচতে পারবেন না। তাদের সাজা হবেই। এজন্য নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা এমন রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সরকার তাদের সেই সুযোগ দেবে না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার ও আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে।

সরকারকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেওয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মধ্যে ইতিবাচক মেসেজ দেখছেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এমন কড়া কড়া কথা বলতে হয়; তিনি সেটাই করেছেন। খালেদা জিয়া নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। এর আগে তিনি বলেছেন নির্বাচনে আসবেন না, এবার তিনি বলেছেন তাদের বাইরে রাখতে চাইলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন।

এটা ইতিবাচক। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর হতে দেয়া হবে না খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের একটা সংবিধান আছে, সেখানে সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের বিষয়ে বলা আছে। সংবিধান সবাইকে মানতে হবে। কোনো বিশেষ দলের জন্য সংবিধান লঙ্ঘন করা যাবে না।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার এ হুঁশিয়ারিকে নতুন কিছু মনে করেন না আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আগেও এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ আর নতুন কী। আমরা তার এসব বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত নই। নির্বাচন নিয়ে আমাদের নেত্রী এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন।

আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সংবিধান থেকে একচুলও সরার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া আগের মতো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ বিএনপি পাবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন অনেক বেশি শক্তিশালী, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল। পাশাপাশি আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জনগণকে নিয়ে তাদের যে কোনো অপরাজনীতি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছি। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দাবি আদায়ের সাধ্য-সামর্থ্য কোনোটাই বিএনপির নেই বলেও মনে করেন সাবেক এই মন্ত্রী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর