ঢাকা ১০:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ব্রাজিলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বিকেলে জানাজা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ৩ দ. আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল পাকিস্তান ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আজও দুই গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ১ সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার

পৃথিবী জলবায়ু পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটিই বাঁচাতে হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৪০৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সব দেশেরই জাতীয় সমস্যা আছে। কারও যেমন অন্তর্ভুক্তির মারাত্মক সমস্যা আছে, কারও আছে প্রবৃদ্ধির ব্যয়বহুল ক্ষতি। সমস্যা সম্পর্কে সমাজের সম্যক জ্ঞান থাকতে হয়। আবার ব্যবস্থা গ্রহণের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থাকতে হয়। তা না হলে সমাধান আসে না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন একটি সামগ্রিক সমস্যা। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সম্যক জ্ঞান লাভ করেছেন এবং করণীয় সম্পর্কে মতৈক্যেও পৌঁছেছেন।

কিন্তু বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি বিস্তৃত সমর্থন সমাজ থেকে না পেলে এসব করণীয় বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমরা সবাই জানি, জলবায়ু পরিবর্তন বহুলাংশে শুরু হয়েছে আঠারো শতকের শেষ ভাগে। শিল্পায়নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। সেই থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়েই চলেছে।

বড় বিষয় হলো, জলবায়ু ইতিমধ্যে খুব খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। এটা সমাজের জন্য যেমন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, জীবনের জন্যও মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যারিবিয়ানে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে হারিকেনের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে বাতাসের গুণাগুণ উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিম্নাঞ্চলের অনেক শহরের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

জলবায়ুর আরও অবনতি ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপগুলো জরিপ করে অর্থনীতিবিদ জেফরি হিল তাঁর সাম্প্রতিক এন্ডেনজারড ইকোনমিজ বইয়ে দেখিয়েছেন, পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে। হিল একটা বিষয়ের সূত্রপাত করেছেন, তা হলো, আমাদের প্রাকৃতিক পৃথিবীর যে ক্ষতি—অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস—আমরা করেছি, এর প্রভাব গুরুতর। এই গুরুতর প্রভাব শুধু বাতাস ও পানির ওপরই পড়ছে না, আমাদের ব্যবসার ওপরও পড়ছে।

কারণ এসব ব্যবসা নির্ভর করে প্রাকৃতিক সুবিধা যেমন পরাগযোগ, পানির চক্র, সামুদ্রিক ও বন বাস্তুব্যবস্থা ও অন্যান্য সুবিধার ওপর। ফলে ‘প্রাকৃতিক পুঁজি’ সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা ব্যবসা খাতে পুঁজির মুনাফার হার বাড়াতে পারি। সব ক্ষেত্রে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পুঁজি ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাই। কিন্তু সেটা ‘সবুজ’ পরিবেশের ক্ষতি বা ধ্বংস সাধন করে নয়। একই সঙ্গে আমরা পরিবেশেরও উন্নতি চাই। কিন্তু সেটা উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছাড়া নয়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ও গণিতবিদ গ্রাসিএলা চিচিনিলনিস্কি মানবজাতির টিকে থাকার প্রশ্নে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, টিকে থাকতে হলে মানবজাতিকে অবশ্যই বায়ুমণ্ডলে জমা হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ করতে হবে। এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যেন কার্বন বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকে। এর খরচ মেটাতে চিচিনিলনিস্কি একটি বাজারের প্রস্তাব করেছেন।

সেখানে ধারণকৃত কার্বন বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হবে। আরেকটি সম্ভাব্য সমাধান হলো ‘সঞ্জীবনী কৃষি’, যা জীববিজ্ঞানী অ্যালান স্যাভরি সম্প্রতি পাটাগোনিয়ায় চালু করেছেন। যদি লাভজনক করা যায়, তাহলে এসব উদ্ভাবন বেসরকারি খাতে কার্বন ধারণে প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারে। এর পরিধি যেকোনো জাতীয় সরকারের চেয়ে বেশি হতে পারে। তবে সফলতা নির্ভর করবে ক্রমবর্ধমান জোগান এবং দাম পড়ে যাওয়ার সময়ও ‘কার্বন ফার্মিং’ লাভজনক থাকছে কি না, তার ওপর।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, শিল্পায়ন ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার মতো মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন নিশ্চিত করার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। যে কেউ হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বহু গবেষণার দিকে তাকিয়ে বলতে পারে যে আমরা এবার আয়েশ করতে পারি।

কী করতে হবে, তা বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যে ঠিক করে ফেলেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আবার এত অপক্ব নন। তাঁরা জানেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবে না। তাঁরা এ-ও জানেন, পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করবে সামাজিক কল্যাণকে মুনাফার লক্ষ্যে ব্যবহার করা যাবে কি না, তার ওপর।

সমস্যা হলো, অনেক মানুষ ধরে নেয় যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবারের নীতিনির্ধারকেরা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করবে। যেমন সব কোম্পানি তাদের কৃতকর্মের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য সামাজিক চাপে বা রাষ্ট্রের হুমকিতে ক্ষতিপূরণ দেবে।

আবার যেমন ধরে নেয় যে সব সরকার কার্বন নির্গমন কমাতে এবং ধীরে ধীরে নির্মূল করতে কার্বন কর বা ক্যাপ-অ্যান্ড-ট্রেড ব্যবস্থার প্রবর্তন করবে। উন্নয়ন যেন পরিবেশ ধ্বংস না করেআরেকটি সমস্যা হলো, অনেক পরিবেশগত ক্ষতি আছে, যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যেমন বেশির ভাগ কোম্পানি মনে করতে পারে যে তাদের দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সেন্ট্রাল আমেরিকায় রেইন ফরেস্ট করবে। কিন্তু দুনিয়ার জনসংখ্যা অনেক বেশি, আর তা বেড়েই চলেছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।

অর্থনীতিবিদ ডেনিস জে. স্নোয়ার কয়েক বছর আগে দেখিয়েছেন, পৃথকভাবে ব্যক্তিগত কাজকর্মও দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এসব কাজকর্ম হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন মাছ ধরা, কাঠ পুড়িয়ে রান্না করা, পানির কল ছেড়ে রাখা।

কিন্তু সরকার, সমাজ ও ব্যক্তি মানুষের চোখে তা ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত। এ রকম পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায় যেকোনো কর্মসূচি হতে হবে নৈতিক প্রবৃত্তিনির্ভর। যেমন শুধু করপোরেশনই নয়, সব মানুষকে আহ্বান জানাতে হবে তাদের সমস্ত পরার্থপরতা একত্র করার জন্য। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে তাদের দূষণের লাগাম টেনে ধরায় মনোযোগী হতে হবে।

আরও একটি সমস্যা হলো, অনেক দেশ এখনো শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ধরে নিলাম দুনিয়ার সব দেশ হয়তো দূষণের মাথাপিছু হার কমাবে। কিন্তু বিশ্বের যেসব দেশ শিল্পায়নের পর্যায়ে রয়েছে এবং তাদের চলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত যেভাবে চলছে, তা আবার বৈশ্বিক দূষণের গড় বাড়িয়ে দেবে। কার্বন নির্গমন সীমিত করতে হিলের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ অনুসরণ করতে চাইলে জনসংখ্যাগত এই প্রপঞ্চ স্পষ্টতই কঠিন অবস্থা তৈরি করবে।

আমাদের আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আর তা হলো, সব সরকারই কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে না। শক্তিশালী কোম্পানিগুলো সরকারের গৃহীত পরিবেশগত বাধ্যবাধকতাগুলো লঙ্ঘন করতে পারে। বিশেষ করে তারা যদি হয় আয় ও চাকরির প্রধান উৎস।

আরও বেশি সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন বেশির ভাগ গরিব মানুষ ধনী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন কোনো দেশে সরকার খুব বেশি কার্বন নির্গমন বা অন্যান্য দূষণ কমানোর জন্য প্রন্তুত নয়। কারণ, এতে তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ হবে না। এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বের ২০ শতাংশ মানুষ ৮০ শতাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করে। ফলে বেঁচে থাকার অধিকার একটি দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে পরিবেশ ধ্বংস করার অধিকারের চেয়ে বড়। যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের এসব বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

সব শেষে, ভবিষ্যতে মজুরি ও কর্মসংস্থানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বায়ু ও সৌরশিল্পে ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৭৭ হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছে। আবার কয়লাশিল্পে কর্মসংস্থান ক্রমাগত কমছে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ হিসেবে এটা কার্যকর নয়।

কারণ, নতুন শিল্পে যেসব কর্মী আসছেন, তাঁরা সাধারণত অন্যান্য শিল্প থেকে আসছেন। তাঁরা বিরাট বেকার জনগোষ্ঠী থেকে আসছেন না। বরং তাঁরা উচ্চপদের কর্মী। প্রতিটি নতুন শিল্পে সার্বিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে—এটা ভাবা বোকামি। তবে এ ব্যাপারে বলার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উপাত্ত আমাকে দেখতে হবে। তবে এই শিল্প যদি কালক্রমে পুঁজিনির্ভর হয়ে ওঠে, তাহলেও আমি অবাক হব না।

আমার দুশ্চিন্তা হলো, স্থিতিশীলতার নামে অনেক দেশের অর্থনীতি এরই মধ্যে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত। সবুজ অর্থনীতির নামে এগুলো আরও বেশি নিয়ন্ত্রিত হবে। তবে অনেক নিয়ন্ত্রণই প্রয়োজনীয়। কিন্তু পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টায় আমাদের সচেতন হতে হবে, যেন আমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো ধ্বংস না করি।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: খলিলউল্লাহ্। এডমান্ড এস ফেলপস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ব্রাজিলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত

পৃথিবী জলবায়ু পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটিই বাঁচাতে হবে

আপডেট টাইম : ০৩:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সব দেশেরই জাতীয় সমস্যা আছে। কারও যেমন অন্তর্ভুক্তির মারাত্মক সমস্যা আছে, কারও আছে প্রবৃদ্ধির ব্যয়বহুল ক্ষতি। সমস্যা সম্পর্কে সমাজের সম্যক জ্ঞান থাকতে হয়। আবার ব্যবস্থা গ্রহণের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থাকতে হয়। তা না হলে সমাধান আসে না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন একটি সামগ্রিক সমস্যা। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সম্যক জ্ঞান লাভ করেছেন এবং করণীয় সম্পর্কে মতৈক্যেও পৌঁছেছেন।

কিন্তু বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি বিস্তৃত সমর্থন সমাজ থেকে না পেলে এসব করণীয় বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমরা সবাই জানি, জলবায়ু পরিবর্তন বহুলাংশে শুরু হয়েছে আঠারো শতকের শেষ ভাগে। শিল্পায়নের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। সেই থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়েই চলেছে।

বড় বিষয় হলো, জলবায়ু ইতিমধ্যে খুব খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। এটা সমাজের জন্য যেমন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে, জীবনের জন্যও মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যারিবিয়ানে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে হারিকেনের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে বাতাসের গুণাগুণ উল্লেখযোগ্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিম্নাঞ্চলের অনেক শহরের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

জলবায়ুর আরও অবনতি ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপগুলো জরিপ করে অর্থনীতিবিদ জেফরি হিল তাঁর সাম্প্রতিক এন্ডেনজারড ইকোনমিজ বইয়ে দেখিয়েছেন, পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে। হিল একটা বিষয়ের সূত্রপাত করেছেন, তা হলো, আমাদের প্রাকৃতিক পৃথিবীর যে ক্ষতি—অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস—আমরা করেছি, এর প্রভাব গুরুতর। এই গুরুতর প্রভাব শুধু বাতাস ও পানির ওপরই পড়ছে না, আমাদের ব্যবসার ওপরও পড়ছে।

কারণ এসব ব্যবসা নির্ভর করে প্রাকৃতিক সুবিধা যেমন পরাগযোগ, পানির চক্র, সামুদ্রিক ও বন বাস্তুব্যবস্থা ও অন্যান্য সুবিধার ওপর। ফলে ‘প্রাকৃতিক পুঁজি’ সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা ব্যবসা খাতে পুঁজির মুনাফার হার বাড়াতে পারি। সব ক্ষেত্রে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এতে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পুঁজি ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাই। কিন্তু সেটা ‘সবুজ’ পরিবেশের ক্ষতি বা ধ্বংস সাধন করে নয়। একই সঙ্গে আমরা পরিবেশেরও উন্নতি চাই। কিন্তু সেটা উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছাড়া নয়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ও গণিতবিদ গ্রাসিএলা চিচিনিলনিস্কি মানবজাতির টিকে থাকার প্রশ্নে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, টিকে থাকতে হলে মানবজাতিকে অবশ্যই বায়ুমণ্ডলে জমা হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ করতে হবে। এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যেন কার্বন বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকে। এর খরচ মেটাতে চিচিনিলনিস্কি একটি বাজারের প্রস্তাব করেছেন।

সেখানে ধারণকৃত কার্বন বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হবে। আরেকটি সম্ভাব্য সমাধান হলো ‘সঞ্জীবনী কৃষি’, যা জীববিজ্ঞানী অ্যালান স্যাভরি সম্প্রতি পাটাগোনিয়ায় চালু করেছেন। যদি লাভজনক করা যায়, তাহলে এসব উদ্ভাবন বেসরকারি খাতে কার্বন ধারণে প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারে। এর পরিধি যেকোনো জাতীয় সরকারের চেয়ে বেশি হতে পারে। তবে সফলতা নির্ভর করবে ক্রমবর্ধমান জোগান এবং দাম পড়ে যাওয়ার সময়ও ‘কার্বন ফার্মিং’ লাভজনক থাকছে কি না, তার ওপর।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, শিল্পায়ন ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার মতো মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন নিশ্চিত করার মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। যে কেউ হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বহু গবেষণার দিকে তাকিয়ে বলতে পারে যে আমরা এবার আয়েশ করতে পারি।

কী করতে হবে, তা বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যে ঠিক করে ফেলেছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা আবার এত অপক্ব নন। তাঁরা জানেন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করবে না। তাঁরা এ-ও জানেন, পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করবে সামাজিক কল্যাণকে মুনাফার লক্ষ্যে ব্যবহার করা যাবে কি না, তার ওপর।

সমস্যা হলো, অনেক মানুষ ধরে নেয় যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবারের নীতিনির্ধারকেরা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করবে। যেমন সব কোম্পানি তাদের কৃতকর্মের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য সামাজিক চাপে বা রাষ্ট্রের হুমকিতে ক্ষতিপূরণ দেবে।

আবার যেমন ধরে নেয় যে সব সরকার কার্বন নির্গমন কমাতে এবং ধীরে ধীরে নির্মূল করতে কার্বন কর বা ক্যাপ-অ্যান্ড-ট্রেড ব্যবস্থার প্রবর্তন করবে। উন্নয়ন যেন পরিবেশ ধ্বংস না করেআরেকটি সমস্যা হলো, অনেক পরিবেশগত ক্ষতি আছে, যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যেমন বেশির ভাগ কোম্পানি মনে করতে পারে যে তাদের দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সেন্ট্রাল আমেরিকায় রেইন ফরেস্ট করবে। কিন্তু দুনিয়ার জনসংখ্যা অনেক বেশি, আর তা বেড়েই চলেছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।

অর্থনীতিবিদ ডেনিস জে. স্নোয়ার কয়েক বছর আগে দেখিয়েছেন, পৃথকভাবে ব্যক্তিগত কাজকর্মও দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এসব কাজকর্ম হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন মাছ ধরা, কাঠ পুড়িয়ে রান্না করা, পানির কল ছেড়ে রাখা।

কিন্তু সরকার, সমাজ ও ব্যক্তি মানুষের চোখে তা ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত। এ রকম পরিস্থিতিতে পরিবেশ রক্ষায় যেকোনো কর্মসূচি হতে হবে নৈতিক প্রবৃত্তিনির্ভর। যেমন শুধু করপোরেশনই নয়, সব মানুষকে আহ্বান জানাতে হবে তাদের সমস্ত পরার্থপরতা একত্র করার জন্য। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে তাদের দূষণের লাগাম টেনে ধরায় মনোযোগী হতে হবে।

আরও একটি সমস্যা হলো, অনেক দেশ এখনো শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ধরে নিলাম দুনিয়ার সব দেশ হয়তো দূষণের মাথাপিছু হার কমাবে। কিন্তু বিশ্বের যেসব দেশ শিল্পায়নের পর্যায়ে রয়েছে এবং তাদের চলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাত যেভাবে চলছে, তা আবার বৈশ্বিক দূষণের গড় বাড়িয়ে দেবে। কার্বন নির্গমন সীমিত করতে হিলের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ অনুসরণ করতে চাইলে জনসংখ্যাগত এই প্রপঞ্চ স্পষ্টতই কঠিন অবস্থা তৈরি করবে।

আমাদের আরেকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আর তা হলো, সব সরকারই কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে না। শক্তিশালী কোম্পানিগুলো সরকারের গৃহীত পরিবেশগত বাধ্যবাধকতাগুলো লঙ্ঘন করতে পারে। বিশেষ করে তারা যদি হয় আয় ও চাকরির প্রধান উৎস।

আরও বেশি সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন বেশির ভাগ গরিব মানুষ ধনী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন কোনো দেশে সরকার খুব বেশি কার্বন নির্গমন বা অন্যান্য দূষণ কমানোর জন্য প্রন্তুত নয়। কারণ, এতে তাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ হবে না। এক হিসাবে দেখা গেছে, বিশ্বের ২০ শতাংশ মানুষ ৮০ শতাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ করে। ফলে বেঁচে থাকার অধিকার একটি দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে পরিবেশ ধ্বংস করার অধিকারের চেয়ে বড়। যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের এসব বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

সব শেষে, ভবিষ্যতে মজুরি ও কর্মসংস্থানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বায়ু ও সৌরশিল্পে ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৭৭ হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছে। আবার কয়লাশিল্পে কর্মসংস্থান ক্রমাগত কমছে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ হিসেবে এটা কার্যকর নয়।

কারণ, নতুন শিল্পে যেসব কর্মী আসছেন, তাঁরা সাধারণত অন্যান্য শিল্প থেকে আসছেন। তাঁরা বিরাট বেকার জনগোষ্ঠী থেকে আসছেন না। বরং তাঁরা উচ্চপদের কর্মী। প্রতিটি নতুন শিল্পে সার্বিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে—এটা ভাবা বোকামি। তবে এ ব্যাপারে বলার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উপাত্ত আমাকে দেখতে হবে। তবে এই শিল্প যদি কালক্রমে পুঁজিনির্ভর হয়ে ওঠে, তাহলেও আমি অবাক হব না।

আমার দুশ্চিন্তা হলো, স্থিতিশীলতার নামে অনেক দেশের অর্থনীতি এরই মধ্যে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত। সবুজ অর্থনীতির নামে এগুলো আরও বেশি নিয়ন্ত্রিত হবে। তবে অনেক নিয়ন্ত্রণই প্রয়োজনীয়। কিন্তু পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টায় আমাদের সচেতন হতে হবে, যেন আমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলো ধ্বংস না করি।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: খলিলউল্লাহ্। এডমান্ড এস ফেলপস