হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাকার অভাবে বোনের লাশের সাথে তিন দিন কাটিয়েছেন নীলমণি ধাড়া নামের এক ভাই। ৭০ বছর বয়সী নীলমনি ধাড়া বোনের লাশ নিয়ে মেঝেতে বসে ছিলেন। পরে মৃতদেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেন।
শেষ পর্যন্ত গতকাল পুলিশের হস্তক্ষেপে মৃতদেহ সৎকার হয়। মৃতদেহ সৎকার না করে কয়েকদিন ধরে কেন রেখে দিলেন এ বিষয়ে নীলমণিবাবু জানান, বোনের মৃতদেহ সৎকারের টাকা তার কাছে ছিল না। উলুবেড়িয়ার ময়রাপড়ার এই ঘটনা যেন কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের কথা মনে করিয়ে দিল। সেখানেও বোনের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ধরে দেহ রেখে দিয়েছিলেন তার ভাই।
ভারতের হাওরার ময়রাপাড়ায় দুই বোনের সঙ্গে থাকতেন নীলমণিবাবু। কেউই বিয়ে করেননি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনই উচ্চশিক্ষিত। নীলমণিবাবু এক সময় বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে অ্যানাটমির অধ্যাপক ছিলেন। নীলমণিবাবু জানান, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোলমালের জের ধরে ২০০৬ সালে তার চাকরি চলে যায়। ফলে পেনশন এবং অবসরকালীন ভাতা কিছুই পাননি তিনি। ফলে সংসারে আর্থিক অনটন ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েকদিন আগে করবীদেবীকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান নীলমণিবাবু। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে সেখানে মারা যান করবীদেবী। পরদিন সকালে বোনের মরদেহ নিয়ে নীলমণিবাবু বাড়িতে এলেও দেহের সৎকার করাতে পারেননি। প্রতিবেশীরা দেহ সৎকারের করার কথা বললে তিনি জানান, তার কাছে টাকা নেই। প্রতিবেশীরা সৎকারের জন্য চাঁদা তুলে দিতে চাইলে বৃদ্ধ জানান, তিনি কারও সাহায্য নেবেন না। শুধু তাই নয়, জোর করে কেউ দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করলে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেন।
পুলিশ এলেও প্রথমে তাদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন নীলমণিবাবু। শেষ পর্যন্ত তাকে বুঝিয়ে পুলিশ বাড়িতে ঢোকে। পুলিশ জানায়, দোতলার ঘরের মেঝেতে চাদর পেতে শোয়ানো ছিল করবীদেবীর দেহ। পাশের ঘরে ছিলেন আর এক বোন পূরবীদেবী। যদিও করবীদেবীর দেহ তিনদিন ধরে আটকে রাখা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। এর পর স্থানীয় একটি ক্লাবের সহায়তায় দেহ উদ্ধার করে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বোনের মুখাগ্নি করেন নীলমণিবাবুই। সৎকারের খরচ দিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আর্থিক কষ্টে ছিল পরিবারটি। নীলমণিবাবুর উপার্জন বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু কারও কাছে কোনও সাহায্যও চাইতেন না তিনি। কিছু জমিজমা থাকলেও সে সব বিক্রি করে কোনওমতে তাদের চলছিল। টাকার অভাবে না সারানোর ফলে দোতলা বাড়িটিও ভগ্নপ্রায়। তিন ভাইবোন কারও সঙ্গে মেলামেশাও করতেন না।