হালনাগাদ তথ্য না দেওয়া ইসিকে অগ্রাহ্য করে চলেছে অনেক দল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হালনাগাদ তথ্য না-দেওয়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের এই দুর্বলতার সুযোগে দলগুলো ইসিকে অগ্রাহ্য করে চলছে। এদিকে চল্লিশ দলের মধ্যে ১৪টি দল আবেদন না করেও ইসির কাছ থেকে সময় পেয়েছে।

গত ২১ ডিসেম্বর ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর হালনাগাদ তথ্য জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর পনের কার্যদিবস সময় দিয়ে চিঠি পাঠায় নির্বাচন কমিশন। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিসহ ২৩ দল সাংগঠনিক অবস্থা জানিয়ে তথ্য দেয়। জাতীয় পার্টিসহ তিনটি দল আরো সময় চেয়ে চিঠি দিলেও আওয়ামী লীগসহ ১৪টি দল ইসিকে এখনো তথ্য দেয়নি। কিন্তু এসব দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো হালনাগাদ তথ্য দিতে এক মাস সময় দিয়েছে ইসি।

এদিকে, গত ৩১ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টানা চার মাস আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সুশীল সমাজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, এনজিও কর্মী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে কমিশন। সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের মধ্যে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং সাবেক কমিশনাররা ইসিকে সক্ষমতা অর্জন এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনে দলীয়করণ যাতে কমানো যায় তার জন্য ইসিকে ক্ষমতা অর্জন ও প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। আর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পক্ষপাতিত্ব না করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সবার জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ নিশ্চিত না করতে পারলে আইন ভঙ্গের জন্য নির্বাচন কমিশন জাতির কাছে দায়ী থাকবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী বলেন, সবাই আগামীতে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছি। সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগ করার মতো সক্ষমতা রয়েছে তা ইসিকে প্রমাণ করতে হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, গত ৩১ অক্টোবর ৪০ রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়ে দলগুলোর বর্তমান সাংগঠনিক কার্যক্রমের তথ্য জানতে চায় কমিশন। দলগুলোকে দেওয়া চিঠি অনুযায়ী গত ২১ নভেম্বর পনের কার্যদিবস শেষ হয়। কিন্তু প্রায় দেড় ডজন দল সাংবিধানিক সংস্থার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল সময় চেয়ে আবেদন করেনি। তবে জাতীয় পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি আরো সময় বাড়াতে আবেদন করে।

হালনাগাদ তথ্য জমা না দেওয়া ১৪ দল হচ্ছে – ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, গণফোরাম, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

সূত্র মতে, হালনাগাদ তথ্য জমা না দেওয়া দলগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় কমিশন। সময় চেয়ে আবেদন করা দলগুলোকেই শুধু সময় দিতে সম্মত ছিল ইসি। পরে ক্ষমতাসীন দলের কথা বিবেচনা করে বাড়তি এক মাস সময় বাড়াতে ঐকমত্যে পৌঁছে কমিশন। এর আগে নিবন্ধিত দলগুলোকে হালনাগাদ তথ্যসহ দলীয় কার্যক্রম কমিশনকে অবহিত করতে মাত্র ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল।

জানতে চাইলে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, যারা সময় চেয়েছে এবং যারা চায়নি সবাইকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এসব দলের জন্য এটাই শেষ সুযোগ। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা তাদের দলীয় সাংগঠনিক অবস্থা তুলে ধরে তথ্য না দেয়, তাহলে ওই দলগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত দলগুলো বিধি-বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখার আইনানুগ দায় রয়েছে ইসির।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর এ পর্যন্ত ৪২টি দল নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়।

নিবন্ধন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলকে নিবন্ধিত করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সাবেক কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন। তাদের সময়ে ৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে ৪১টি দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে দুটি দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি; এগুলো হলো-বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর