ঢাকা ১০:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ব্রাজিলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বিকেলে জানাজা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ৩ দ. আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ল পাকিস্তান ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আজও দুই গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ১ সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সমঝোতায় সমতা বিধান প্রত্যাশিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘চিত্রা নদীর পারে’ নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্র আছে। তৌকির আহমেদ এবং আফসানা মিমি অভিনয় করেছেন। দেশভাগের সময় সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়, দেশভাগের পর বেশির ভাগ হিন্দু পরিবার ভারত চলে গেলেও আফসানা মিমির বাবার মতো কোনো কোনো পরিবার যে কোনোভাবে থেকে যেতে চেয়েছিলেন। পেশায় উকিল হওয়ায় স্থানীয় অনেক মুসলমান পরিবারের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্কও ছিল। সমাজে একটা অবস্থান ছিল। তাই তাদের বাড়িতে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি। চলে যাওয়া হিন্দু সমাজের লোকেরা এবং চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা লোকেরা নানাভাবে তাদের বোঝাতেন যেন তারাও দেশ ছাড়েন। কিন্তু মিমির বাবা (যতদূর মনে পড়ে অবিনাশ উকিল) দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেছিলেন: ‘তোমরা যাবে যাও, আমি এই দেশ-মাটি ছাড়ছি না’। কিন্তু সিনেমার শেষে আমরা দেখি, অবিনাশ বাবুর সেই বজ্রশপথ আর টিকে থাকেনি। তাকেও তল্পিতল্পা নিয়ে পরদেশে পাড়ি দিতে হয়েছে। ছবির গল্পে তার বাড়িতে হামলা করার কোনো ঘটনা দেখানো হয়নি। তারপরও তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এবং সত্য হলো এই, এভাবেও দেশছাড়া করা হয় অনেক মানুষকে; এভাবেও সংখ্যালঘুরা উচ্ছেদ হয়।

উদাহরণটি টানার উদ্দেশ্য হলো, এই গল্পের সঙ্গে রাখাইন থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের গল্পের মিল আছে। অর্থাৎ সেখানে গুলি ও আগুনের প্রকোপ কিছুটা কমলেও, বিতাড়নের নানা অস্ত্র এখনো মজুদ আছে। সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা এখন সেগুলো ব্যবহার করছে। ফলে, নাফ নদী বেয়ে নেমে আসা জনস্রোতে এখনো বন্ধ হয়নি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সমঝোতা বা ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ যারা করছেন, তাদের মাথায় এই বিষয়টি কাজ করছে কি না সে সন্দেহ তৈরি হওয়া অমূলক নয়। কারণ, যেদিন নেপিদোতে সমঝোতার শব্দাবলী লেখা হচ্ছে, সেদিন সকালেও টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে পা পড়েছে অন্তত শ’খানেক রোহিঙ্গার। আজও এসেছে, আগামীকালও আসবে বলেই অনুমান করা যায়।

এই অনুপ্রবেশের স্রোত বন্ধ না করে, এর ‘রুট কজ’ বা প্রকৃত কারণের কোনো ধরনের সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে, যারা বিরুদ্ধ পরিবেশ থেকে ধেয়ে এসেছে তাদের আবারো সেখানে যমের মুখে ঠেলে পাঠানোর তোড়জোড় কতটা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশ-বিদেশে নানাজন আর নানা সংগঠন ইতিমধ্যে সে প্রশ্ন তুলেছে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এর প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হওয়ার কথা জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে এটা মিয়ানমারের স্রেফ একটা ধোঁকাবাজি। এসব প্রশ্ন তোলা নিয়ে আবার কেউ ভেবে বসার কারণ নেই যে, এরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। বিষয়টা মোটেই তা নয়। বিষয় হলো, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেভাবে হওয়া দরকার সেভাবে হবে কি না?

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জরুরি হলো, এটি নিশ্চিত করা যে, এই রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে আর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে না। কিন্তু আসেম সম্মেলনের উসিলায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার গিয়ে যে সমঝোতা স্মারক সই করে এসেছেন তাতে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ বাদ দিলাম, বাংলাদেশের স্বার্থই বা কতটা রক্ষা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন পর আবার বলেছেন, এটি ঠিক সমঝোতাও নয়, একে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বলা যেতে পারে! আমার মনে হয় না কূটনীতির খেলায় এমন শব্দ আগে কোথাও শুনেছি!

সমঝোতা হোক অথবা অ্যারেঞ্জমেন্ট একটা কিছু তো হয়েছে। যা হয়েছে, সেখানে স্পষ্টতই বাংলাদেশ নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। মিয়ানমার তার চাওয়া পাওয়ার ষোলো আনা এই সমঝোতায় ভরে দিয়েছে। সমঝোতা স্মারকের কয়েকটি ঘোষণাতেই তা স্পষ্ট। যেমন ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসরণ করেই এবারের প্রত্যাবাসন হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত দরকারি কাগজপত্র দেখাতে হবে। ৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর পরে যারা এসেছে কেবল তারাই ফিরে যেতে পারবে। প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘরে নয়, নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে।

রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে এই সবকটি বিষয়েই বাংলাদেশের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। ১৯৯২-এর সমঝোতা চুক্তিকে এবার আদর্শ হিসেবে মানতে বাংলাদেশ রাজী নয়- এমনটা সরকারি কর্তাব্যক্তিদের তরফ থেকেও শোনা গেছে। বাস্তবতা হলো, ঐ চুক্তি অনুসরণের কোনো যৌক্তিকতা এখন আর নেই। কারণ, সেই সময়ের ঘটনা আর এখনকার ঘটনা এক নয়। এখন রাখাইনে পরিষ্কার গণহত্যা চালানো হয়েছে; বাড়িঘর, দোকানপাট নিশ্চিহ্ন করা হয়ছে; অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এটিকে জাতিগত নিধনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কোনোভাবেই ৯২’র প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। এবার রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে হলে কিছু শর্ত আরোপ করেই যাওয়া উচিত। যেমন, তাদের ঘরবাড়ি-জমিজমা ফেরতসহ পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান এবং রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ বিষয়গুলো আলেচিত সমঝোতা স্মারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি ৯২’র চুক্তির সঙ্গে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোনো একটি পক্ষকে যুক্ত করার কথা বলেছিল বাংলাদেশ, তাও এখানে আসেনি। এ সবই হয়েছে মিয়ানমারের ইচ্ছায়। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকারও করেছেন, মিয়ানমার চেয়েছে বলেই এমনটা হয়েছে!

রোহিঙ্গাদের কাগজপত্র দেখানোর বিষয়টিও বাংলাদেশের মেনে নেওয়ার কথা ছিল না। কারণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ফলে চলে আসা অনেক রোহিঙ্গার কাছেই কোনো প্রমাণপত্র নেই। সুতরাং এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে অর্ধেকেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারবে না। ২০১৬ সালে এবং এ বছর যারা এসেছে তাদের বাইরেও আগে থেকে ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে। এদের ফেরত পাঠানোটাও বাংলাদেশের জন্য জরুরি। জনবহুল বাংলাদেশ একটি রোহিঙ্গাকেও বিনা কারণে থাকতে দিতে পারে না। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি যত আলোচনা হয়েছে, সেগুলোতে এই বিষয়টিও জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, এবার সব রোহিঙ্গাকেই তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সমঝোতা স্মারকে তা নেই। অর্থাৎ আগের রোহিঙ্গারা চিরদিনের জন্য বাংলাদেশেই থাকবে তা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রকার মেনে এসেছেন।

সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি হলো- সমঝোতায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘর বা গ্রামে নয়, নেয়া হবে নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে। এক শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা আরেক শরণার্থী ক্যাম্পে যাবে! রোহিঙ্গারা কি বনের পশু যে, তাদের এক চিড়িয়াখানা থেকে আরেক চিড়িয়াখানায় নেয়া হবে? এই ধরনের শর্ত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নাগরিকত্বসহ চলাফেরাসহ অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে। রোহিঙ্গারা আগের মতোই নিগৃহীত হবে। এতে করে সেখানে আবারো সহিংসতা হতে পারে, তাদের ওপর নিপীড়ন নেমে আসতে পারে। তখন আবারো সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকবে রোহিঙ্গারা।

গণহত্যার শিকার একটি নৃ-গোষ্ঠীকে বিশ্ব সম্প্রদায় যখন অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, তখন এই ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়াটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য আগামীতে বহুমুখী ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে পাশ কাটানোর ফলে তাদের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হবে। আবার রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অঙ্গিকার আদায় না করে তাদের নিপীড়নকারীদের কাছেই, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্র নামের কারাগারে পাঠানো হলে, ভবিষ্যতে আবারো সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার শংকা থাকে। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকি তৈরি করবে। সুতরাং নেইপিদোতে সমঝোতার নামে যা কিছু হয়েছে তাকে অগ্রগতি বললে মিয়ানমার বলতে পারে, বাংলাদেশ নয়। তুলনা করলে দেখা যাবে, এখানে সব ক্ষেত্রেই মিয়ানমারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার জয় হয়েছে। দুটি দেশের মধ্যে এই ধরনের পারস্পরিক সমঝোতায় যে সমতা থাকার কথা, তা এখানে নেই। সংশ্লিষ্টদের এ কথা সবসময় মনে রাখা উচিত যে, সবকিছুতে তাড়াহুড়া বা নিজেদের মতকেই প্রাধান্য দেয়া ঠিক নয়। গোটা বাংলাদেশের যত বিশেষজ্ঞ আছেন, সাবেক কূটনীতিক আছেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক আছেন, কেউ এ ধরনের সমঝোতার পরামর্শ দেননি। একটি চুক্তি বা সমঝোতা খুব জরুরি ছিল ঠিক আছে। কিন্তু তা তো নিজেদের সব স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নয়। রোহিঙ্গাদের যদি আমরা জোর করেও ফেরত দিই, এটা কি খুব কল্যাণকর কিছু হবে বাংলাদেশের জন্য? এই সমস্যার প্রকৃত কারণগুলো দূর না করে কেবল ফেরত পাঠালেই কি সমস্যার সমাধান হবে? এ বিষয়গুলো ভাবার দরকার আছে।

বাংলাদেশের উচিত এ প্রসঙ্গে যতটা সম্ভব দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থায়ী সমাধানের দিকে মনোযোগী হওয়া। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে বাংলাদেশকে অবশ্যই বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট যেতে হবে। যদিও এখানে সবসময় একটা ঝুঁকি থাকেই, তথাপি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে যেমন তা এড়ানোর সুয়োগ আপনার থাকে না, তেমনি এই সংকটকেও এড়ানোর সুযোগ নেই। যদিও এই সমঝোতাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং এই সংকট সমাধান ইস্যু শেষ কথা নয়, এমনকি এই সমঝোতা মানা বাধ্যতামূলকও নয়, তবু এমন কিছুতে দু’দেশের মধ্যে ‘সমতা’ বিধান প্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে তা বেশি করে প্রত্যাশিত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এই সমঝোতা এমনিতেই টিকবে না। তবু সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরো সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে হবে। যখনই, যা কিছুই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক না কেন, তা যেন জনগণের প্রত্যাশা এবং দেশের স্বার্থ প্রতিফলিত করে। আর যেহেতু এবার ঘটনা অনেক বড়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববাসী, সেহেতু বিশ্ব সম্প্রদায়কে পাশে নিয়েই সংকট সমাধানের জন্য কাজ করা উচিত। কেবল একটি পরাশক্তির কথা শুনে সমস্যার প্রকৃত চেহারা ভুলে গিয়ে, গা বাঁচানো টাইপের পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য শুভ হবে না। ‘গণহত্যা’, ‘যুদ্ধাপরাধ’, ‘নাগরিকত্ব¡, ‘ঘরবাড়ি-জমিজমা’, ‘চলাফেরার অধিকার’, ‘শিক্ষার অধিকার’ রোহিঙ্গা সংকটে এই শব্দগুলোকে দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে হবে। এগুলোর বিষয়ে অন্ধ থেকে লাভ নেই। কেউ ‘গণহত্যা’ চালালে তাকে ‘গণহত্যাই’ বলতে হবে। এজন্য যদি অপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলতে হয় তাও করতে হবে।

প্রতিবেশী বলে, অমুক-তমুকের চাপ আছে বলে, সম্পর্র্ক নষ্ট হবে বলে, যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধকে ঢাকা দেয়ার চেষ্টায় সহযোগিতা করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, দুর্বৃত্ত সবসময় দুর্বৃত্ত; সবার জন্যেই দুর্বৃত্ত। আজ রোহিঙ্গারা এই দুর্বৃত্তদের শিকার হচ্ছে। পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে অন্য কেউ হবে। প্রতিবেশী হিসেবে ঝুঁকিটা বাংলাদেশেরও কম নয়!

লেখক: সাংবাদিক

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ব্রাজিলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী নিহত

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সমঝোতায় সমতা বিধান প্রত্যাশিত

আপডেট টাইম : ১২:২০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘চিত্রা নদীর পারে’ নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্র আছে। তৌকির আহমেদ এবং আফসানা মিমি অভিনয় করেছেন। দেশভাগের সময় সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়, দেশভাগের পর বেশির ভাগ হিন্দু পরিবার ভারত চলে গেলেও আফসানা মিমির বাবার মতো কোনো কোনো পরিবার যে কোনোভাবে থেকে যেতে চেয়েছিলেন। পেশায় উকিল হওয়ায় স্থানীয় অনেক মুসলমান পরিবারের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্কও ছিল। সমাজে একটা অবস্থান ছিল। তাই তাদের বাড়িতে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি। চলে যাওয়া হিন্দু সমাজের লোকেরা এবং চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকা লোকেরা নানাভাবে তাদের বোঝাতেন যেন তারাও দেশ ছাড়েন। কিন্তু মিমির বাবা (যতদূর মনে পড়ে অবিনাশ উকিল) দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেছিলেন: ‘তোমরা যাবে যাও, আমি এই দেশ-মাটি ছাড়ছি না’। কিন্তু সিনেমার শেষে আমরা দেখি, অবিনাশ বাবুর সেই বজ্রশপথ আর টিকে থাকেনি। তাকেও তল্পিতল্পা নিয়ে পরদেশে পাড়ি দিতে হয়েছে। ছবির গল্পে তার বাড়িতে হামলা করার কোনো ঘটনা দেখানো হয়নি। তারপরও তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এবং সত্য হলো এই, এভাবেও দেশছাড়া করা হয় অনেক মানুষকে; এভাবেও সংখ্যালঘুরা উচ্ছেদ হয়।

উদাহরণটি টানার উদ্দেশ্য হলো, এই গল্পের সঙ্গে রাখাইন থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের গল্পের মিল আছে। অর্থাৎ সেখানে গুলি ও আগুনের প্রকোপ কিছুটা কমলেও, বিতাড়নের নানা অস্ত্র এখনো মজুদ আছে। সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা এখন সেগুলো ব্যবহার করছে। ফলে, নাফ নদী বেয়ে নেমে আসা জনস্রোতে এখনো বন্ধ হয়নি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সমঝোতা বা ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ যারা করছেন, তাদের মাথায় এই বিষয়টি কাজ করছে কি না সে সন্দেহ তৈরি হওয়া অমূলক নয়। কারণ, যেদিন নেপিদোতে সমঝোতার শব্দাবলী লেখা হচ্ছে, সেদিন সকালেও টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে পা পড়েছে অন্তত শ’খানেক রোহিঙ্গার। আজও এসেছে, আগামীকালও আসবে বলেই অনুমান করা যায়।

এই অনুপ্রবেশের স্রোত বন্ধ না করে, এর ‘রুট কজ’ বা প্রকৃত কারণের কোনো ধরনের সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে, যারা বিরুদ্ধ পরিবেশ থেকে ধেয়ে এসেছে তাদের আবারো সেখানে যমের মুখে ঠেলে পাঠানোর তোড়জোড় কতটা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশ-বিদেশে নানাজন আর নানা সংগঠন ইতিমধ্যে সে প্রশ্ন তুলেছে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা এর প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হওয়ার কথা জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে এটা মিয়ানমারের স্রেফ একটা ধোঁকাবাজি। এসব প্রশ্ন তোলা নিয়ে আবার কেউ ভেবে বসার কারণ নেই যে, এরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। বিষয়টা মোটেই তা নয়। বিষয় হলো, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেভাবে হওয়া দরকার সেভাবে হবে কি না?

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জরুরি হলো, এটি নিশ্চিত করা যে, এই রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে আর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে না। কিন্তু আসেম সম্মেলনের উসিলায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার গিয়ে যে সমঝোতা স্মারক সই করে এসেছেন তাতে রোহিঙ্গাদের স্বার্থ বাদ দিলাম, বাংলাদেশের স্বার্থই বা কতটা রক্ষা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একদিন পর আবার বলেছেন, এটি ঠিক সমঝোতাও নয়, একে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বলা যেতে পারে! আমার মনে হয় না কূটনীতির খেলায় এমন শব্দ আগে কোথাও শুনেছি!

সমঝোতা হোক অথবা অ্যারেঞ্জমেন্ট একটা কিছু তো হয়েছে। যা হয়েছে, সেখানে স্পষ্টতই বাংলাদেশ নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। মিয়ানমার তার চাওয়া পাওয়ার ষোলো আনা এই সমঝোতায় ভরে দিয়েছে। সমঝোতা স্মারকের কয়েকটি ঘোষণাতেই তা স্পষ্ট। যেমন ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুসরণ করেই এবারের প্রত্যাবাসন হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত দরকারি কাগজপত্র দেখাতে হবে। ৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর পরে যারা এসেছে কেবল তারাই ফিরে যেতে পারবে। প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘরে নয়, নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে।

রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে এই সবকটি বিষয়েই বাংলাদেশের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। ১৯৯২-এর সমঝোতা চুক্তিকে এবার আদর্শ হিসেবে মানতে বাংলাদেশ রাজী নয়- এমনটা সরকারি কর্তাব্যক্তিদের তরফ থেকেও শোনা গেছে। বাস্তবতা হলো, ঐ চুক্তি অনুসরণের কোনো যৌক্তিকতা এখন আর নেই। কারণ, সেই সময়ের ঘটনা আর এখনকার ঘটনা এক নয়। এখন রাখাইনে পরিষ্কার গণহত্যা চালানো হয়েছে; বাড়িঘর, দোকানপাট নিশ্চিহ্ন করা হয়ছে; অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এটিকে জাতিগত নিধনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কোনোভাবেই ৯২’র প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। এবার রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে হলে কিছু শর্ত আরোপ করেই যাওয়া উচিত। যেমন, তাদের ঘরবাড়ি-জমিজমা ফেরতসহ পূর্ণ নাগরিকত্ব প্রদান এবং রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ বিষয়গুলো আলেচিত সমঝোতা স্মারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি ৯২’র চুক্তির সঙ্গে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোনো একটি পক্ষকে যুক্ত করার কথা বলেছিল বাংলাদেশ, তাও এখানে আসেনি। এ সবই হয়েছে মিয়ানমারের ইচ্ছায়। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকারও করেছেন, মিয়ানমার চেয়েছে বলেই এমনটা হয়েছে!

রোহিঙ্গাদের কাগজপত্র দেখানোর বিষয়টিও বাংলাদেশের মেনে নেওয়ার কথা ছিল না। কারণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ফলে চলে আসা অনেক রোহিঙ্গার কাছেই কোনো প্রমাণপত্র নেই। সুতরাং এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে অর্ধেকেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারবে না। ২০১৬ সালে এবং এ বছর যারা এসেছে তাদের বাইরেও আগে থেকে ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে। এদের ফেরত পাঠানোটাও বাংলাদেশের জন্য জরুরি। জনবহুল বাংলাদেশ একটি রোহিঙ্গাকেও বিনা কারণে থাকতে দিতে পারে না। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি যত আলোচনা হয়েছে, সেগুলোতে এই বিষয়টিও জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, এবার সব রোহিঙ্গাকেই তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সমঝোতা স্মারকে তা নেই। অর্থাৎ আগের রোহিঙ্গারা চিরদিনের জন্য বাংলাদেশেই থাকবে তা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রকার মেনে এসেছেন।

সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি হলো- সমঝোতায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘর বা গ্রামে নয়, নেয়া হবে নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে। এক শরণার্থী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা আরেক শরণার্থী ক্যাম্পে যাবে! রোহিঙ্গারা কি বনের পশু যে, তাদের এক চিড়িয়াখানা থেকে আরেক চিড়িয়াখানায় নেয়া হবে? এই ধরনের শর্ত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নাগরিকত্বসহ চলাফেরাসহ অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে। রোহিঙ্গারা আগের মতোই নিগৃহীত হবে। এতে করে সেখানে আবারো সহিংসতা হতে পারে, তাদের ওপর নিপীড়ন নেমে আসতে পারে। তখন আবারো সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকবে রোহিঙ্গারা।

গণহত্যার শিকার একটি নৃ-গোষ্ঠীকে বিশ্ব সম্প্রদায় যখন অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, তখন এই ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে কোনো প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়াটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য আগামীতে বহুমুখী ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে পাশ কাটানোর ফলে তাদের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হবে। আবার রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অঙ্গিকার আদায় না করে তাদের নিপীড়নকারীদের কাছেই, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্র নামের কারাগারে পাঠানো হলে, ভবিষ্যতে আবারো সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার শংকা থাকে। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকি তৈরি করবে। সুতরাং নেইপিদোতে সমঝোতার নামে যা কিছু হয়েছে তাকে অগ্রগতি বললে মিয়ানমার বলতে পারে, বাংলাদেশ নয়। তুলনা করলে দেখা যাবে, এখানে সব ক্ষেত্রেই মিয়ানমারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার জয় হয়েছে। দুটি দেশের মধ্যে এই ধরনের পারস্পরিক সমঝোতায় যে সমতা থাকার কথা, তা এখানে নেই। সংশ্লিষ্টদের এ কথা সবসময় মনে রাখা উচিত যে, সবকিছুতে তাড়াহুড়া বা নিজেদের মতকেই প্রাধান্য দেয়া ঠিক নয়। গোটা বাংলাদেশের যত বিশেষজ্ঞ আছেন, সাবেক কূটনীতিক আছেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক আছেন, কেউ এ ধরনের সমঝোতার পরামর্শ দেননি। একটি চুক্তি বা সমঝোতা খুব জরুরি ছিল ঠিক আছে। কিন্তু তা তো নিজেদের সব স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে নয়। রোহিঙ্গাদের যদি আমরা জোর করেও ফেরত দিই, এটা কি খুব কল্যাণকর কিছু হবে বাংলাদেশের জন্য? এই সমস্যার প্রকৃত কারণগুলো দূর না করে কেবল ফেরত পাঠালেই কি সমস্যার সমাধান হবে? এ বিষয়গুলো ভাবার দরকার আছে।

বাংলাদেশের উচিত এ প্রসঙ্গে যতটা সম্ভব দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থায়ী সমাধানের দিকে মনোযোগী হওয়া। সে ক্ষেত্রে মিয়ানমার যদি সহযোগিতা না করে তাহলে বাংলাদেশকে অবশ্যই বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট যেতে হবে। যদিও এখানে সবসময় একটা ঝুঁকি থাকেই, তথাপি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে যেমন তা এড়ানোর সুয়োগ আপনার থাকে না, তেমনি এই সংকটকেও এড়ানোর সুযোগ নেই। যদিও এই সমঝোতাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং এই সংকট সমাধান ইস্যু শেষ কথা নয়, এমনকি এই সমঝোতা মানা বাধ্যতামূলকও নয়, তবু এমন কিছুতে দু’দেশের মধ্যে ‘সমতা’ বিধান প্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে তা বেশি করে প্রত্যাশিত ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, এই সমঝোতা এমনিতেই টিকবে না। তবু সামনের দিনগুলোতে আমাদের আরো সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে হবে। যখনই, যা কিছুই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক না কেন, তা যেন জনগণের প্রত্যাশা এবং দেশের স্বার্থ প্রতিফলিত করে। আর যেহেতু এবার ঘটনা অনেক বড়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অভিযোগ তুলেছে বিশ্ববাসী, সেহেতু বিশ্ব সম্প্রদায়কে পাশে নিয়েই সংকট সমাধানের জন্য কাজ করা উচিত। কেবল একটি পরাশক্তির কথা শুনে সমস্যার প্রকৃত চেহারা ভুলে গিয়ে, গা বাঁচানো টাইপের পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য শুভ হবে না। ‘গণহত্যা’, ‘যুদ্ধাপরাধ’, ‘নাগরিকত্ব¡, ‘ঘরবাড়ি-জমিজমা’, ‘চলাফেরার অধিকার’, ‘শিক্ষার অধিকার’ রোহিঙ্গা সংকটে এই শব্দগুলোকে দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে হবে। এগুলোর বিষয়ে অন্ধ থেকে লাভ নেই। কেউ ‘গণহত্যা’ চালালে তাকে ‘গণহত্যাই’ বলতে হবে। এজন্য যদি অপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলতে হয় তাও করতে হবে।

প্রতিবেশী বলে, অমুক-তমুকের চাপ আছে বলে, সম্পর্র্ক নষ্ট হবে বলে, যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধকে ঢাকা দেয়ার চেষ্টায় সহযোগিতা করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, দুর্বৃত্ত সবসময় দুর্বৃত্ত; সবার জন্যেই দুর্বৃত্ত। আজ রোহিঙ্গারা এই দুর্বৃত্তদের শিকার হচ্ছে। পার পেয়ে গেলে ভবিষ্যতে অন্য কেউ হবে। প্রতিবেশী হিসেবে ঝুঁকিটা বাংলাদেশেরও কম নয়!

লেখক: সাংবাদিক