ঢাকা ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে এলেও চলবে না ডিপজল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৭
  • ৫০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকাই চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ৫১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ৯ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন। সম্প্রতি এই অভিনেতা দেশের চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। যার কিছু অংশ তুলে ধরেছেন তুহিন খান নিহাল।

আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থা কেমন?

আপনাদের দোয়ায় এখন মোটামুটি ভালো আছি। তবে অনেক দিন পর মিডিয়ার সামনে কথা বলছি। ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রয়েছি, ডিসেম্বরে আবারও সিঙ্গাপুর যেতে হবে।

অসুস্থতার মধ্যে সিনেমার কাজ করবেন কিভাবে?

আমি সিনেমাকে অনেক ভালোবাসি। যদি সুস্থ থাকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনেমায় কাজ করতে চাই। জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে আবারও সিনেমার কাজ শুরু করব। ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিটির কিছু কাজ বাকি আছে, পাশাপাশি নতুন আরো একটি ছবির কাজ শুরু করব।

এখন আপনার হাতে কোন কোন ছবি রয়েছে?

বাইরের একটি ছবি এবং আমার ব্যক্তিগত তিনটিসহ মোট চারটি ছবি রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই ছবিগুলোর কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে ‘কোটি টাকার কাবিন’ এবং ‘পাথরের কান্না’ উল্লেখযোগ্য। ছবিটি পরিচালনা করবেন ছটকু আহমেদ। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার ফাঁকে মেয়ে অলিজার সঙ্গে বসে এই ছবির গল্পটি ভেবেছি।

বর্তমান ফিল্মের পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার ধারণা জানতে চাই?

বর্তমান সময়ের মতো নোংরামি আগে সিনেমা শিল্পে ছিল না। এখন প্রচন্ড একঘেয়েমি চলছে। কেউ কেউ মনে করেন যেন বাংলাদেশের সব সিনেমা হল তাদের। এভাবে আর বেশি দিন চলবে না। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কাজ দেখাব। কারণ, এখন যারা সিনেমা বানাচ্ছে এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। কিভাবে সিনেমার উন্নয়ন হবে, কিভাবে দর্শক হলমুখী হবে-এসব নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। টাকা আছে তো সিনেমা বানাচ্ছে। এর বেশি কিছু তারা জানেও না, চায়ও না। ফলে এ শিল্পে তারা স্থিত হতে পারছে না।

নতুন শিল্পীদের সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

আমরা আগে একজনের শুটিং সেটে অন্যজন যেতাম। যার ফলে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক থাকত। আমরা সিনিয়রদের সম্মান করতাম এখনো করি। কিন্তু বর্তমান শিল্পীদের মধ্যে এই সম্মানবোধ নেই। আমরা এখনো কোনো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গেলে, হোক জুনিয়র কিংবা সিনিয়র- তাকে ইজ্জত দিই। তার কাজটা অনুসরণ করি। পরিচালক যা চান তার চেয়েও ভালো করার চেষ্টা করি। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের মধ্যে এই জিনিসটা নেই। যেমন বাংলাদেশের শাকিব খান, দুুপুরের আগে তো তিনি শুটিং সেটেই আসেন না। এতে জুনিয়ররা কী শিখবে ? এ ছাড়া অনেক সিনিয়র শিল্পীকে তার জন্য শুটিং সেটে অপেক্ষা করতে হয়। এটা এখন আর কেউ মানতে চান না। যার কারণেই শাকিব এখন বয়স্কদের তালিকায় চলে গেছেন। তাকে নিয়ে এখন অনেকেই কাজ করতে চাচ্ছেন না। তিনি মানুষকে অনেক কষ্ট দেন।

আমাদের সিনেমায় অনেক গুণী মানুষ রয়েছেন, তারা কি পারেন না নতুনদের পরামর্শ দিতে ?

নতুনদের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ তো নেই। কারণ তারা সিনেমা বানানোর পর আসে পরামর্শ নিতে। এর আগে তারা কখনো সিনিয়রদের কাছে যায় না। সামান্য চেষ্টাও করে না সিনিয়রদের কাছে যাওয়ার। তাদের ধারণা, টাকা আছে সিনেমা বানাব। কিন্তু রিলিজ দিয়ে কিছুটা বোঝে সিনেমা জিনিসটা কী ! তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এমনকি দ্বিতীয় ছবি যে বানাবে সেই আগ্রহও আর থাকে না।

এখন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন সংগঠনে বিভক্ত-এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আমি মনে করি, সিনেমা শিল্প পিছিয়ে পড়ার পেছনে এটিই একটি বড় ইস্যু। কারণ এখন প্রদর্শক, প্রযোজক ও পরিচালকরা নানা গ্রুপে বিভক্ত। এসব কারণেই আমাদের সিনেমা শিল্প স্থবির হয়ে পড়ছে।

এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী?

দেশে এখন নায়িকা নেই, যাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করব। দেশে কিছু তরুণ নায়ক রয়েছে। এদের নিয়ে কাজ করা যায়। নায়ক আছে নায়িকা নেই। ফলে আমাদের ছবি হচ্ছে না। আমরা আগে সিনেমা করতাম, ব্যবসাসফল হতো। কিন্তু এখন ব্যবসাসফল ছবি কমই হচ্ছে, কারণ একটি গ্রুপ সিনেমা হল ব্লক করে রেখেছে। সিনেমা রিলিজে হস্তক্ষেপ করছে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা দরকার। কারণ সিনেমার বাজারের কী অবস্থা সবাই আমরা জানি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলো কারো হাতে থাকতে পারে না। যার কারণে আজ ইন্ডাস্ট্রির এমন অবস্থা।

ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে রিলিজ হচ্ছে-আপনার মন্তব্য কী?

ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে এলেও চলবে না। কারণ আমাদের দেশের সংস্কৃতি আর ভারতীয় সংস্কৃতি এক নয়। চাইলেও কলকাতার সংস্কৃতি আমাদের দেশে আসবে না। দর্শক এই ছবিগুলো কখনো দেখে না।

আপনি ১০০ সিনেমা হল ডলবি সাউন্ড সিস্টেম করতে ঘোষণা দিয়েছিলেন?

আমি এখনো রাজি আছি। তবে এখন সিনেমা হলের পেছনে দৌড়ানোর সময় আমার আর নেই। আমি শিল্পী সমিতির নেতাদের বলেছিলাম-তোমরা বানাও, আমি সঙ্গে আছি। কিন্তু সরকার থেকে অন্তত ৫০টি মেশিন নিতে পারলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে এলেও চলবে না ডিপজল

আপডেট টাইম : ০৪:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকাই চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ৫১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ৯ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন। সম্প্রতি এই অভিনেতা দেশের চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। যার কিছু অংশ তুলে ধরেছেন তুহিন খান নিহাল।

আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থা কেমন?

আপনাদের দোয়ায় এখন মোটামুটি ভালো আছি। তবে অনেক দিন পর মিডিয়ার সামনে কথা বলছি। ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রয়েছি, ডিসেম্বরে আবারও সিঙ্গাপুর যেতে হবে।

অসুস্থতার মধ্যে সিনেমার কাজ করবেন কিভাবে?

আমি সিনেমাকে অনেক ভালোবাসি। যদি সুস্থ থাকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিনেমায় কাজ করতে চাই। জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে আবারও সিনেমার কাজ শুরু করব। ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিটির কিছু কাজ বাকি আছে, পাশাপাশি নতুন আরো একটি ছবির কাজ শুরু করব।

এখন আপনার হাতে কোন কোন ছবি রয়েছে?

বাইরের একটি ছবি এবং আমার ব্যক্তিগত তিনটিসহ মোট চারটি ছবি রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই ছবিগুলোর কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে ‘কোটি টাকার কাবিন’ এবং ‘পাথরের কান্না’ উল্লেখযোগ্য। ছবিটি পরিচালনা করবেন ছটকু আহমেদ। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার ফাঁকে মেয়ে অলিজার সঙ্গে বসে এই ছবির গল্পটি ভেবেছি।

বর্তমান ফিল্মের পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার ধারণা জানতে চাই?

বর্তমান সময়ের মতো নোংরামি আগে সিনেমা শিল্পে ছিল না। এখন প্রচন্ড একঘেয়েমি চলছে। কেউ কেউ মনে করেন যেন বাংলাদেশের সব সিনেমা হল তাদের। এভাবে আর বেশি দিন চলবে না। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কাজ দেখাব। কারণ, এখন যারা সিনেমা বানাচ্ছে এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। কিভাবে সিনেমার উন্নয়ন হবে, কিভাবে দর্শক হলমুখী হবে-এসব নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। টাকা আছে তো সিনেমা বানাচ্ছে। এর বেশি কিছু তারা জানেও না, চায়ও না। ফলে এ শিল্পে তারা স্থিত হতে পারছে না।

নতুন শিল্পীদের সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?

আমরা আগে একজনের শুটিং সেটে অন্যজন যেতাম। যার ফলে আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক থাকত। আমরা সিনিয়রদের সম্মান করতাম এখনো করি। কিন্তু বর্তমান শিল্পীদের মধ্যে এই সম্মানবোধ নেই। আমরা এখনো কোনো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গেলে, হোক জুনিয়র কিংবা সিনিয়র- তাকে ইজ্জত দিই। তার কাজটা অনুসরণ করি। পরিচালক যা চান তার চেয়েও ভালো করার চেষ্টা করি। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের মধ্যে এই জিনিসটা নেই। যেমন বাংলাদেশের শাকিব খান, দুুপুরের আগে তো তিনি শুটিং সেটেই আসেন না। এতে জুনিয়ররা কী শিখবে ? এ ছাড়া অনেক সিনিয়র শিল্পীকে তার জন্য শুটিং সেটে অপেক্ষা করতে হয়। এটা এখন আর কেউ মানতে চান না। যার কারণেই শাকিব এখন বয়স্কদের তালিকায় চলে গেছেন। তাকে নিয়ে এখন অনেকেই কাজ করতে চাচ্ছেন না। তিনি মানুষকে অনেক কষ্ট দেন।

আমাদের সিনেমায় অনেক গুণী মানুষ রয়েছেন, তারা কি পারেন না নতুনদের পরামর্শ দিতে ?

নতুনদের পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ তো নেই। কারণ তারা সিনেমা বানানোর পর আসে পরামর্শ নিতে। এর আগে তারা কখনো সিনিয়রদের কাছে যায় না। সামান্য চেষ্টাও করে না সিনিয়রদের কাছে যাওয়ার। তাদের ধারণা, টাকা আছে সিনেমা বানাব। কিন্তু রিলিজ দিয়ে কিছুটা বোঝে সিনেমা জিনিসটা কী ! তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এমনকি দ্বিতীয় ছবি যে বানাবে সেই আগ্রহও আর থাকে না।

এখন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন সংগঠনে বিভক্ত-এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আমি মনে করি, সিনেমা শিল্প পিছিয়ে পড়ার পেছনে এটিই একটি বড় ইস্যু। কারণ এখন প্রদর্শক, প্রযোজক ও পরিচালকরা নানা গ্রুপে বিভক্ত। এসব কারণেই আমাদের সিনেমা শিল্প স্থবির হয়ে পড়ছে।

এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী?

দেশে এখন নায়িকা নেই, যাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করব। দেশে কিছু তরুণ নায়ক রয়েছে। এদের নিয়ে কাজ করা যায়। নায়ক আছে নায়িকা নেই। ফলে আমাদের ছবি হচ্ছে না। আমরা আগে সিনেমা করতাম, ব্যবসাসফল হতো। কিন্তু এখন ব্যবসাসফল ছবি কমই হচ্ছে, কারণ একটি গ্রুপ সিনেমা হল ব্লক করে রেখেছে। সিনেমা রিলিজে হস্তক্ষেপ করছে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা দরকার। কারণ সিনেমার বাজারের কী অবস্থা সবাই আমরা জানি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলো কারো হাতে থাকতে পারে না। যার কারণে আজ ইন্ডাস্ট্রির এমন অবস্থা।

ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে রিলিজ হচ্ছে-আপনার মন্তব্য কী?

ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে এলেও চলবে না। কারণ আমাদের দেশের সংস্কৃতি আর ভারতীয় সংস্কৃতি এক নয়। চাইলেও কলকাতার সংস্কৃতি আমাদের দেশে আসবে না। দর্শক এই ছবিগুলো কখনো দেখে না।

আপনি ১০০ সিনেমা হল ডলবি সাউন্ড সিস্টেম করতে ঘোষণা দিয়েছিলেন?

আমি এখনো রাজি আছি। তবে এখন সিনেমা হলের পেছনে দৌড়ানোর সময় আমার আর নেই। আমি শিল্পী সমিতির নেতাদের বলেছিলাম-তোমরা বানাও, আমি সঙ্গে আছি। কিন্তু সরকার থেকে অন্তত ৫০টি মেশিন নিতে পারলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।