হাওর বার্তা ডেস্কঃ পানিব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত শতবর্ষব্যাপী ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সেই সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে।
আজ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ (ডেল্টা) অঞ্চল বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রায় নদ-নদীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ফলে পানিসম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের পাশাপাশি জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলার শতবর্ষব্যাপী পরিকল্পনা হলো ডেল্টা প্ল্যান ২১০০।
জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি মৌসুমে দেশের ব্যাপক অঞ্চল প্লাবিত হয়। এই পানির ৯২ ভাগ আসে ভারত, চীনসহ উজানের দেশ থেকে। বাকিটা এই দেশের বৃষ্টিপাতের যোগফল। আবার গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় খরা। সঠিক নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং বন্যা, খরা ও আরো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ বারবার ক্ষতির শিকার হয়। এর সঙ্গে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ক্ষতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তাই ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সমস্যা বহুলাংশে কাটাতে পারে।
পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পানি ব্যবস্থাপনার ওপর। দেশ যখন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে যাচ্ছে, তখন এই উন্নয়নকে সামনে নিয়ে যেতে পানি সংকট সমস্যা জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতে পারে ।’
পানি সম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। এ প্ল্যান নিয়ে আমাদের সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেল্টা বাংলাদেশ, যার সঙ্গে বিশ্বের কারও তুলনা চলে না।’
বন্যায় বাংলাদেশে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবার গ্রীষ্মে দেখা দেয় খরা। মন্ত্রী বলেন, ‘এই উভয়মুখী সংকটে বাংলাদেশের মানুষ অপরিমেয় ক্ষতির শিকার হয়। এই সংকট থেকে উত্তরণে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এর যাবতীয় সামর্থ্য এখন বাংলাদেশের আছে। কেউ ভাবেনি পদ্মা সেতু হবে, পারমাণবিক কেন্দ্র হবে, মেট্রোরেল হবে। কিন্তু এটি এখন দৃশ্যমান।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ পরিকল্পনা। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সমস্যা বহুলাংশে কাটিয়ে উঠতে পারবে। শতবর্ষব্যাপী এই পরিকল্পনা ষাট বছর পরে হলেও শুরু হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. জামিলুর রেজা চোধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮০ ভাগ পানি নষ্ট হয়, মানে অন্যত্র চলে যায়। সেটা ধরে রাখতে হবে। এই পানি ধরে রাখতে তথা বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ডেল্টা প্ল্যান ভালো ভূমিকা রাখবে। এটা বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক বাধা আসবে, সেটা মোকাবেলা করেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা করার জন্য যে জনবল লাগবে সেটা এখন থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে।’
গোলটেবিল আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম।