ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন মনোনয়ন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৭
  • ৪৫১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন। এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নিজ দলেরই অনেক নেতা মাঠে সরব। ইতিমধ্যে তারাও তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর এই তালিকায় সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ যেমন আছেন, তেমনি আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এমএ আফজল, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল, আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুজ্জামান অপু, কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর এবং কটিয়াদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক তারিকুল মোস্তাক রানাও। আবার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের পদ থেকে অবসরে যাওয়া চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হকের নামও আছে সাধারণ মানুষের আলোচনায়। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘিরে যুদ্ধংদেহী অবস্থা চলছে আওয়ামী লীগে। তাদের ঘিরে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন নেতাকর্মীরা। এর প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও দলের সমর্থন পেতে লবিং-এ সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তারকা প্রার্থীদের বিপরীতে বিএনপিতে সেরকম হেভিওয়েট কাউকে প্রকাশ্যে নির্বাচনী তৎপরতায় এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। নিজ উপজেলাকেন্দ্রিক তৎপরতাতেই অনেকটা সীমিত রয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এই আসনের কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া দুই উপজেলা থেকেই বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়নের আশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য এসব প্রার্থীর মধ্যে ২০০১ ও ২০০৮ সালের দু’টি সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাজী মো. ইদ্রিস আলী ভূঞা, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর মেয়র মো. আক্তারুজ্জামান খোকন, জেলা বিএনপির দুই সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল ও আশফাক আহমেদ জুনু এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন নানাভাবে তাদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এই আসনের দুই উপজেলাতেই ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। এ অবস্থায় দুই প্রধান দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নের দৌড়ে কাকে ফেলে কে এগিয়ে যাবেন, তা দেখতে উন্মুখ হয়ে আছেন এ আসনের ভোটাররা।
১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-১ আসন এবং কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-২ আসন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে জেলার নির্বাচনী এলাকাকে পুনর্বিন্যাস করে ৭টির পরিবর্তে ৬টি সংসদীয় আসন করা হয়। এখন হোসেনপুর উপজেলাকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-১ এবং পাকুন্দিয়া উপজেলাকে কটিয়াদী উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন হিসেবে পুনর্বিন্যাস করা হয়।
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই বারের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি মনোযোগী রয়েছেন। তার এই সময়কালে এই আসনের দুই উপজেলা পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীর রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ নানা ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়। এছাড়া এলাকামুখী এই সংসদ সদস্য সপ্তাহের তিন দিন নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীর প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বোধন ও পরিদর্শন ছাড়াও গণসংযোগ, কুশল বিনিময় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে নিজ উপজেলা পাকুন্দিয়ায় দলের ভেতরে তাকে নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এমপিকে ঘিরে দলীয় কোন্দল, অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এমপি এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু’র পুরনো বিবাদে বেসামাল অন্তর্দ্বন্দ্বে ধুঁকছে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিবদমান দু’গ্রুপ একে অপরকে ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ। যে কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলার পরও নতুন কোনো কমিটি পাচ্ছে না দলটি। এমনকি নির্বিঘ্নে দলীয় সভা-সমাবেশ আয়োজন পর্যন্ত দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক সভা-সমাবেশ নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি। বিশেষ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ‘মাঠের নেতা’ হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুর ডাকা দলীয় সমাবেশ ও কর্মসূচি বানচাল হচ্ছে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞায়। এমপি পক্ষের ডাকা পাল্টা কর্মসূচিতে উপজেলা চেয়ারম্যান রেনুর কর্মসূচি পড়ছে ১৪৪ ধারার কবলে। সর্বশেষ গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেনুর ডাকা একটি কর্মী সমাবেশ ১৪৪ ধারার শিকার হয়ে পণ্ড হয়। রফিকুল ইসলাম রেনুও আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। ফলে বহুল আলোচিত সোহরাব-রেনু দ্বন্দ্ব এই আসনের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেই যাচ্ছে।
পাকুন্দিয়ায় দলে বিভক্তি বাড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়সহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। নেতাকর্মীদের নিয়েই চলেছি। দল ও সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত এমন দু’য়েকজন নেতার এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে সরকারের অর্জন ও উন্নয়নকে বিতর্কিত করতে তারা আমার বিরুদ্ধে এমন মনগড়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। মনোনয়ন প্রসঙ্গে এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, বিগত সময়ে আমি এলাকার উন্নয়ন ছাড়া অন্যকিছু ভাবিনি। আমি নিজের আখের গোছানোর জন্যও রাজনীতি করি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। তাই আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।
রফিকুল ইসলাম রেনু হাওর বার্তাকে বলেন, তৃণমূলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মধ্যে যাদের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও দলীয়ভাবে পারিবারিক ঐতিহ্য আছে, দলের প্রতি ত্যাগ আছে। তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে মনোনয়ন দেয়া উচিত।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এই আসনের দুই উপজেলা কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া চষে বেড়াচ্ছেন পুলিশের সাবেক আইজি, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ। তার আগাম এই প্রচারণা এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নূর মোহাম্মদ সমর্থকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই সাবেক এই পুলিশ প্রধান নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। মানবজমিন -এর সঙ্গে আলাপকালে নূর মোহাম্মদ নিজেও জানিয়েছেন, তার এই নির্বাচনী তৎপরতার বিষয়ে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, আমি জীবনে অনেক পেয়েছি, আমার আর কোনো আফসোস নেই। এখন আমি মানুষকে কিছু দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টা করার মানসিকতা থেকে আমি নির্বাচনী মাঠে নেমেছি। কেননা, কোনো অবস্থানে বা কোনো কাজের মধ্যে না থাকলে মানুষের জন্য কিছু করা যায় না। আমার মনে হয়েছে, সুযোগ পেলে মানুষের জন্য অনেক ভালো কিছু করতে পারবো।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এমএ আফজলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত ডা. মো. আবদুল মান্নান। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও মনোনয়নবঞ্চিত হন ১৯৮৬ সালের ৭ই মে ও ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এই রাজনীতিক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে আগামী নির্বাচনেও এ্যাডভোকেট এমএ আফজল দলীয় মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার। নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে তিনি আগের চেয়ে বেশি সরব রয়েছেন। আশায় বুক বাঁধছেন তার সমর্থক নেতাকর্মীরাও। এ্যাডভোকেট এমএ আফজল বলেন, দলের জন্য সারাজীবন কাজ করেছি, এখনো করছি। আমার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছি। তাদের ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-১ (পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর) ও ২০০৮ সালে পুনর্বিন্যস্ত কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী মো. ইদ্রিস আলী ভূঞা। আগামী নির্বাচনে আবারো তিনি প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিপরীতে রাজনীতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় ইদ্রিস আলী ভূঞা কতোটা সামর্থ্য দেখাতে পারবেন, সে আলোচনাও চলছে বিএনপির ভেতরে। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী) আসনে সর্বশেষ বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন টানা দু’বারের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। বিএনপি নির্বাচনে গেলে ‘বহিষ্কৃত’ এই নেতা আবারো প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা রয়েছে এই আসনের দুই উপজেলাতেই। অন্যদিকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন জেলা বিএনপির তিন সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, রুহুল আমিন আকিল ও আশফাক আহমেদ জুনু। তাদের মধ্যে এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র। রুহুল আমিন আকিল ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সর্বশেষ কমিটিতে শিল্পবিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আশফাক আহমেদ কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। অন্যদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। নিজের অনুসারী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বেশ জোরেশোরে এই আসনের দুই উপজেলাতেই চলছে তার আগাম নির্বাচনী তৎপরতা। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছেই।

মানবজমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন মনোনয়ন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ

আপডেট টাইম : ১২:৪৬:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন। এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নিজ দলেরই অনেক নেতা মাঠে সরব। ইতিমধ্যে তারাও তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীর এই তালিকায় সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ যেমন আছেন, তেমনি আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এমএ আফজল, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল, আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুজ্জামান অপু, কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর এবং কটিয়াদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক তারিকুল মোস্তাক রানাও। আবার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের পদ থেকে অবসরে যাওয়া চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হকের নামও আছে সাধারণ মানুষের আলোচনায়। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঘিরে যুদ্ধংদেহী অবস্থা চলছে আওয়ামী লীগে। তাদের ঘিরে দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন নেতাকর্মীরা। এর প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও দলের সমর্থন পেতে লবিং-এ সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তারকা প্রার্থীদের বিপরীতে বিএনপিতে সেরকম হেভিওয়েট কাউকে প্রকাশ্যে নির্বাচনী তৎপরতায় এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। নিজ উপজেলাকেন্দ্রিক তৎপরতাতেই অনেকটা সীমিত রয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এই আসনের কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া দুই উপজেলা থেকেই বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়নের আশায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য এসব প্রার্থীর মধ্যে ২০০১ ও ২০০৮ সালের দু’টি সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাজী মো. ইদ্রিস আলী ভূঞা, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর মেয়র মো. আক্তারুজ্জামান খোকন, জেলা বিএনপির দুই সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল ও আশফাক আহমেদ জুনু এবং জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন নানাভাবে তাদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এই আসনের দুই উপজেলাতেই ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। এ অবস্থায় দুই প্রধান দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নের দৌড়ে কাকে ফেলে কে এগিয়ে যাবেন, তা দেখতে উন্মুখ হয়ে আছেন এ আসনের ভোটাররা।
১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাকুন্দিয়া ও হোসেনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-১ আসন এবং কটিয়াদী উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল কিশোরগঞ্জ-২ আসন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে জেলার নির্বাচনী এলাকাকে পুনর্বিন্যাস করে ৭টির পরিবর্তে ৬টি সংসদীয় আসন করা হয়। এখন হোসেনপুর উপজেলাকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-১ এবং পাকুন্দিয়া উপজেলাকে কটিয়াদী উপজেলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ আসন হিসেবে পুনর্বিন্যাস করা হয়।
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই বারের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন। নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি মনোযোগী রয়েছেন। তার এই সময়কালে এই আসনের দুই উপজেলা পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীর রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ নানা ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়। এছাড়া এলাকামুখী এই সংসদ সদস্য সপ্তাহের তিন দিন নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় অবস্থান করেন। এই সময়ে তিনি পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীর প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বোধন ও পরিদর্শন ছাড়াও গণসংযোগ, কুশল বিনিময় ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে নিজ উপজেলা পাকুন্দিয়ায় দলের ভেতরে তাকে নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এমপিকে ঘিরে দলীয় কোন্দল, অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এমপি এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু’র পুরনো বিবাদে বেসামাল অন্তর্দ্বন্দ্বে ধুঁকছে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিবদমান দু’গ্রুপ একে অপরকে ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ। যে কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলার পরও নতুন কোনো কমিটি পাচ্ছে না দলটি। এমনকি নির্বিঘ্নে দলীয় সভা-সমাবেশ আয়োজন পর্যন্ত দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সাংগঠনিক সভা-সমাবেশ নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি। বিশেষ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ‘মাঠের নেতা’ হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুর ডাকা দলীয় সমাবেশ ও কর্মসূচি বানচাল হচ্ছে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞায়। এমপি পক্ষের ডাকা পাল্টা কর্মসূচিতে উপজেলা চেয়ারম্যান রেনুর কর্মসূচি পড়ছে ১৪৪ ধারার কবলে। সর্বশেষ গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রেনুর ডাকা একটি কর্মী সমাবেশ ১৪৪ ধারার শিকার হয়ে পণ্ড হয়। রফিকুল ইসলাম রেনুও আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। ফলে বহুল আলোচিত সোহরাব-রেনু দ্বন্দ্ব এই আসনের রাজনীতিতে অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেই যাচ্ছে।
পাকুন্দিয়ায় দলে বিভক্তি বাড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়সহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। নেতাকর্মীদের নিয়েই চলেছি। দল ও সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ন করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত এমন দু’য়েকজন নেতার এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে সরকারের অর্জন ও উন্নয়নকে বিতর্কিত করতে তারা আমার বিরুদ্ধে এমন মনগড়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। মনোনয়ন প্রসঙ্গে এ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, বিগত সময়ে আমি এলাকার উন্নয়ন ছাড়া অন্যকিছু ভাবিনি। আমি নিজের আখের গোছানোর জন্যও রাজনীতি করি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। তাই আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।
রফিকুল ইসলাম রেনু হাওর বার্তাকে বলেন, তৃণমূলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মধ্যে যাদের দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও দলীয়ভাবে পারিবারিক ঐতিহ্য আছে, দলের প্রতি ত্যাগ আছে। তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে মনোনয়ন দেয়া উচিত।
এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এই আসনের দুই উপজেলা কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া চষে বেড়াচ্ছেন পুলিশের সাবেক আইজি, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ। তার আগাম এই প্রচারণা এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নূর মোহাম্মদ সমর্থকেরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই সাবেক এই পুলিশ প্রধান নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। মানবজমিন -এর সঙ্গে আলাপকালে নূর মোহাম্মদ নিজেও জানিয়েছেন, তার এই নির্বাচনী তৎপরতার বিষয়ে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, আমি জীবনে অনেক পেয়েছি, আমার আর কোনো আফসোস নেই। এখন আমি মানুষকে কিছু দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টা করার মানসিকতা থেকে আমি নির্বাচনী মাঠে নেমেছি। কেননা, কোনো অবস্থানে বা কোনো কাজের মধ্যে না থাকলে মানুষের জন্য কিছু করা যায় না। আমার মনে হয়েছে, সুযোগ পেলে মানুষের জন্য অনেক ভালো কিছু করতে পারবো।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এমএ আফজলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত ডা. মো. আবদুল মান্নান। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও মনোনয়নবঞ্চিত হন ১৯৮৬ সালের ৭ই মে ও ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এই রাজনীতিক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে আগামী নির্বাচনেও এ্যাডভোকেট এমএ আফজল দলীয় মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার। নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে তিনি আগের চেয়ে বেশি সরব রয়েছেন। আশায় বুক বাঁধছেন তার সমর্থক নেতাকর্মীরাও। এ্যাডভোকেট এমএ আফজল বলেন, দলের জন্য সারাজীবন কাজ করেছি, এখনো করছি। আমার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিয়েছি। তাদের ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-১ (পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর) ও ২০০৮ সালে পুনর্বিন্যস্ত কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজী মো. ইদ্রিস আলী ভূঞা। আগামী নির্বাচনে আবারো তিনি প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিপরীতে রাজনীতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় ইদ্রিস আলী ভূঞা কতোটা সামর্থ্য দেখাতে পারবেন, সে আলোচনাও চলছে বিএনপির ভেতরে। এছাড়া ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী) আসনে সর্বশেষ বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন টানা দু’বারের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। বিএনপি নির্বাচনে গেলে ‘বহিষ্কৃত’ এই নেতা আবারো প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা রয়েছে এই আসনের দুই উপজেলাতেই। অন্যদিকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন জেলা বিএনপির তিন সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, রুহুল আমিন আকিল ও আশফাক আহমেদ জুনু। তাদের মধ্যে এ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র। রুহুল আমিন আকিল ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সর্বশেষ কমিটিতে শিল্পবিষয়ক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। আশফাক আহমেদ কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। অন্যদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। নিজের অনুসারী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বেশ জোরেশোরে এই আসনের দুই উপজেলাতেই চলছে তার আগাম নির্বাচনী তৎপরতা। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ ক্রমশ বাড়ছেই।

মানবজমিন