হাওর বার্তা ডেস্কঃ তোমার বাচ্চার কিছুই অ্যাইব না, অপারেশনের পর দেখবা খেলতে খেলতে বাড়ি যাব। এইতা অপারেশন কোন ব্যাপারই না, এহন আমার পোলারে ক্যাডা অ্যাইনা দিব। বারবার মূর্ছা যাচ্ছে আর জ্ঞান ফিরলেই বলছেন সিংগারদিঘী গ্রামের রানী আক্তার। শ্রীপুর উপজেলার সিংগারদিঘী দরিদ্র রানী-আল আমিন দম্পতির একমাত্র ছেলে রাফিক হাসান। চার মাস বয়সেই তাদের এই ফুটফুটে সন্তানকে হারাতে হয়েছে এক পল্লী ডাক্তারের অপারেশনের কারণে। গত শুক্রবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের শ্রীপুর চকপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে শিশুর বাবা বাদি হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত ঔষধ বিক্রেতা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, হাতুড়ে (পল্লী) ডাক্তার মো.আলম হোসেন। প্রায় ১০ বছর ধরে আলম ফার্মেসি নামে বিভিন্ন অপারেশন করে আসছে এই ডাক্তার। শুক্রবার উপজেলার সিংগারদিঘী গ্রামের আল আমিন তার চার মাসের শিশুর পিঠে টিউমার দেখাতে গিয়েছিল ওই ফার্মেসিতে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেছিল চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে তাই দরিদ্র বাবা রিকশা চালক শিশুকে নিয়ে আলমের কাছে যায় পরামর্শ করতে। ওই ডাক্তার দেখেই বলে এটা কোনো ব্যাপার না, চার হাজার টাকা দাও, আমি অপারেশন করে সব ঠিক করে দিচ্ছি। টাকা না থাকায় মাত্র এক হাজার টাকা জমায় অপারেশন শুরু করে ওই ডাক্তার। বাচ্চাকে ইনজেকশন দিয়ে অবশ করে টিউমার কাটা শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত থাকা শিশুটির মা রানী আক্তার বুঝতে পারে অবস্থা ভালো না। এক পর্যায় অধিক রক্তক্ষরণ দেখে ডাক্তারও ভয় পেয়ে যায়। পরে তাড়াতাড়ি একটি গাড়ি ডেকে শিশুটিকে অন্য হাসপাতালে পাঠায় ওই ডাক্তার। শিশুর বাবা আল আমিন ডাক্তারকে সাথে যেতে বললে সে পরে আসবে বলে কেটে পরে। মাওনা চৌরাস্তা আল হেরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। পরে ময়মনসিংহ নেওয়ার পথেই শিশুটি মারা যায়।
অভিযুক্ত ডাক্তার আলমের ফার্মেসি ও ফোন বন্ধ থাকায় তার বড় ভাই মো.আরজু জানায়, আলম দির্ঘীদিন যাবতই ডাক্তারী করে আসছে। আগে কখনও এমন ঘটনা হয়নি। তবে আলম তাকে জানিয়েছে শিশুটির অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে তাকে মাওনা পাঠানো হয়েছে। বিষষটি সে বুঝতে পারেনি কেনো এমন হলো।
শ্রীপুর থানার এসআই আবুল হাসান বলেন, এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অপারেশনের পর থেকে আলম পলাতক। তবে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।