কয়েক মাস আগে কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে ‘একটি বাঙালী ভূতের গল্প’। অন্য ধরনের সিনেমাটিতে অভিনয় করে জয়া আহসান বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে কলকাতার নতুন সিনেমা ‘রাজকাহিনী’র ট্রেলার। যাতে দেখা গেছে জয়ার অভিনয় প্রতিভার এক ঝলক।
জয়ার বর্তমান ব্যস্ততা সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’ নিয়ে। সোমবার (২৪ আগস্ট) বিএফডিসিতে সিনেমাটির শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। শুটিংয়ের ফাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এ অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক মাসুম আওয়াল। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল—
সম্প্রতি ভারত থেকে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী ২’র শুটিং করে ফিরলেন।
ওখানে শুধুমাত্র চলচ্চিত্রের গানগুলোই শুটিং হয়েছে। কিছু সিকুয়েন্সের শুটিং হয়েছে। খুব সুন্দর ভিজুয়্যাল আশা করছি।
‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ ও সিক্যুয়ালে আপনার চরিত্রের পার্থক্য কী?
চরিত্রের পার্থক্য অবশ্যই আছে। এখানে শাকিব ক্রিকেটারের চরিত্রে ও আমি মডেল চরিত্রে অভিনয় করছি। মূলত ক্রিকেটার ও মডেলের প্রেম-ভালবাসার গল্প।
নতুন সিনেমাটি নিয়ে কতটা আশাবাদী।
আমি তো অনেক আশাবাদী। বড় বড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এখানে অভিনয় করেছেন। যে যার যার স্থানে ভাল করার চেষ্টা করেছেন। সাফি ভাইও তার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাকিটা আসলে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে।
সম্প্রতি কলকাতায় মুক্তি পেয়েছে ‘একটি বাঙালী ভূতের গল্প’। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ওখানকার সমালোচকরা চলচ্চিত্রটি ভীষণ পছন্দ করেছেন। আমার অভিনয়েরও ভাল ফিডব্যাক পেয়েছি। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয়েছে।
‘রাজকাহিনীর’ ট্রেলার প্রকাশ হল সপ্তাহখানেক আগে। ট্রেলারেই তো বেশ প্রশংসা পেল।
এই সিনেমার গল্পটি আসলে সবার জানা। একটি পতিতালয়ে ১১টি মেয়ে থাকে, তাদেরই একজন আমি। পতিতার চরিত্রে আমি আগেও অভিনয় করেছি। কিন্তু এখানে ১৯৪৭ সালের সেই সময়টাকে ধারণ করা হয়েছে। সেই সময়ের বাংলাদেশের মুসলিম মেয়ের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি।
বাংলাদেশে নতুন কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করতে যাচ্ছেন?
মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’-এ অভিনয় করব। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আরও একটা চলচ্চিত্রে কাজের কথা চলছে। এটার নাম এখনো ঠিক হয়নি। কিছুদিন পরে জানাতে পারব।
এক সময় রবীন্দ্র সঙ্গীতের চর্চা করতেন। আপনার একটা গানের স্কুলও ছিল। পরে ছোটপর্দায় নিয়মিত অভিনয় করেছেন। এখন তো শুধু চলচ্চিত্রেই দেখা যাচ্ছে!
শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে আমরা যারা কাজ করি, তাদের শুরু হয় গান-নাচ এমন নানা মাধ্যমের চর্চা করে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কোনো কিছুকে ঘিরেই আমার সবকিছু এই কথা বলব না। যখন যে কাজটা করি মনোযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করি। একটা কথাই বলতে চাই যতদিন বেঁচে আছি দর্শকদের জন্য কাজ করে যাব। আর সেটা অবশ্যই একজন স্টুডেন্ট হিসেবে। আমি কখনই শিক্ষক হতে চাই না।
যেহেতু নিয়মিত দুই বাংলায় অভিনয় করেছেন, প্রশ্নটা করাই যায়। কলকাতার ও ঢাকার চলচ্চিত্রের মাঝে কী পার্থক্য চোখে পড়ে?
ওদের কাজগুলো অনেক গোছানো হয়। আমাদের গোছানো নয়। আমাদের দেশে এখনো পেশাদারিত্ব কম। ওদের একটা সিনেমার প্রতিটা বিভাগেই আলাদা আলাদা লোক থাকে। যেমন; কস্টিউমের কথা ধরা যাক— আমাদের এখানে এখনো অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরই বেশিরভাগ সময় বিষয়টি ভাবতে হয়। যেটা কখনই উচিৎ নয়। তবে এ কথা সত্য আমাদের ফিল্মমেকারদের মধ্যে কাজের প্রেম ও সততা অনেক বেশি দেখা যায়। অনেক সময় অনেক ছবিই হয়ত ছবি হয়ে ওঠে না। তবে কাজের মধ্যে ভালবাসার ছাপটা স্পস্ট দেখা যায়।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে জানতে চাই। অভিনয়ে আপনার আইকন কারা?
অনেকেই। বাংলাদেশের সুবর্ণা মুস্তাফা, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শামীমা নাসরিন, চলচ্চিত্রের প্রবীন অভিনেত্রী যারা তাদের কম-বেশি সবার অভিনয়ই আমার ভাল লাগে। শাবানা আপার অভিনয়ও ভীষণ ভাল লাগে। সবার একটা নিজস্ব জায়গা আছে!
আপনার অভিনয়ের ক্ষেত্রেও নিজস্বতা ও ভিন্নতা আছে। যেটা দর্শকরা পছন্দ করে।
আমি জানি না। আমার কাছে নিজের অভিনয় বোরিং লাগে। এই কারণেই সব সময় নতুন নতুন চরিত্রের সন্ধানে থাকি। সব সময় ভাবি কোন ধরনের চরিত্রে কাজ করলে অভিনয়ে নতুন ডাইমেনশন আসবে।
এটা হয়ত আপনার বিনয় থেকে বলছেন। আমি বলতে চাচ্ছি এত এত চরিত্র ফুটিয়ে তোলার পেছনের পরিশ্রমের কথা।
প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই নতুন চরিত্রে অভিনয়ের পেছনে যে পরিশ্রম করেন আমিও সেটাই করি। আমাকে যদি বলা হয় এখন এই ঘরটা মুছতে হবে, আমি এই কাজটিই শতভাগ সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করব।
আপনার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ দিনের। তরুণদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ কী।
আমি নিজেকে এখনো নবীন মনে করি। পরামর্শ দেওয়ার মতো আমার সময় হয়নি। সবাইকে ঠেকেই শিখতে হবে। ধৈর্য্য ধরতে হবে। সমস্যা হল আমরা শিখি কিন্তু শিক্ষাটাকে কাজে লাগাই না।
চলচ্চিত্রে আপনার ক্যারিয়ারের বেশিদিনের নয়। খুব অল্প কাজ করেও দুইবার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তিনবার মিলেছে প্রথম আলো পুরস্কার। এটা ভাবতে কেমন লাগে?
দেখেন, পুরস্কারগুলো অবশ্যই বোনাস। পুরস্কার পাওয়ার জন্য আমি কখনই কোনো কাজই করিনি। আমরা কাছে আসলে অবাক লাগে আমার অভিনয় মানুষ দেখে! এটাই আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে।
সবশেষে ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
সবার দোয়া ও শুভকামনা আশা করি। আমার কাজের সমালোচনা করুক। দর্শকের ভালবাসায় আসলে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।