ঢাকা ০৬:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

বাংলাদেশের বিপদ, বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৬:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭
  • ৪০৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা ‘দীর্ঘস্থায়ী’ হতে পারে বলে শুরু থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের মুখেও আমরা তা শুনেছি। কিন্তু এখন দিনে দিনে এই ভয় জোরালো হচ্ছে যে এই সমস্যা না আবার ‘স্থায়ী’ রূপ পেয়ে বসে! মুখে যা-ই বলুক, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত নেওয়ার কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ যে দেশটির নেই, তা এখন পরিষ্কার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের নীতি ও বহু বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নেওয়া উদ্যোগগুলো বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, তারা যা করেছে, ভেবেচিন্তে ও হিসাব-নিকাশ করেই করেছে। তাদের লক্ষ্য রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করা এবং সেই কাজটি তারা প্রায় গুটিয়ে এনেছে। গত ২৫ আগস্টের পর তারা যা শুরু করেছে, তাকে আসলে রাখাইনকে রোহিঙ্গামুক্ত করার চূড়ান্ত ধাপ হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে। এত উদ্যোগ-আয়োজন করে যে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করা হচ্ছে, তাদের আবার এমনি এমনি মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে, এমন আশার মধ্যে স্পষ্টতই বোকামি রয়েছে। বাংলাদেশ সম্ভবত শুধু দুরূহ নয়, কার্যত সমাধানের অযোগ্য এক বিপদের মধ্যে পড়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের যথেষ্ট সমালোচনা হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর যা হয়েছে ও হচ্ছে, তাকে জাতিসংঘের মহাসচিব জাতিগত শোধনের কেতাবি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। কিন্তু মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার জন্য এসব খুব কার্যকর কিছু বলে মনে হচ্ছে না। দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তা পাওয়া গেল গত সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তরফে। মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইইউ দেশগুলোতে সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ২৮টি ইউরোপীয় দেশে মিয়ানমারের জেনারেলরা যেতে পারবেন না। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই ছিল, তা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ২০ কোটি ডলারের একটি ঋণ স্থগিত করেছে। আমরা অবশ্য এত কিছুর পরও মিয়ানমার থেকে চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করছি।
তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থগিত করা কতটুকু কাজে দেবে, তা এক বড় প্রশ্ন। কারণ, এই দেশটি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়েই কয়েক যুগ কাটিয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে ঠিকই কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনা সহ্য করার দীর্ঘদিনের যে ‘ঐতিহ্য’ দেশটির রয়েছে, তাতে মিয়ানমারকে কাবু করা সহজ কিছু বলে মনে হয় না।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের এই হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা এবং এ ব্যাপারে ভারত, চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। এই দেশগুলোর পক্ষে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই অঞ্চলের ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশ, দেশগুলোর নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগ ১ হাজার ৮৫৩ কোটি ডলার ছুঁয়েছে। ভারতের বর্তমান বিনিয়োগ এর ধারেকাছে না হলেও তারা সেখানে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। চীন বা ভারতের যেকোনো একটি দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে গেলে দেশটি অন্য দেশটির দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। ফলে এমন ঝুঁকি চীন বা ভারত কেউই নেবে না। অন্যদিকে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে রাশিয়ার তেমন ভূমিকা নেই। মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এখন পর্যন্ত স্রেফ ব্যবসার। মিয়ানমারকে চটিয়ে তারা সেখানে ব্যবসার সুযোগ হারানোর বিপদ ডেকে আনবে কোন দুঃখে!
বাংলাদেশ তাহলে কী করবে? লাখ দশেক শরণার্থীর চাপ বয়ে যেতে হবে? রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও আর্থিক কিছু সহায়তা দিয়েই বিশ্বসম্প্রদায় তাদের দায় সারবে? রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে চলেছে, তার প্রতিকারের কোনো দায় কি বিশ্বসম্প্রদায়ের নেই? রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে নিরাপদে থাকা নিশ্চিত করতে কার্যকর কিছুই করা যাবে না?
খুব বেশি বছর আগের কথা নয়। নব্বইয়ের দশকে বলকান অঞ্চলে ও রুয়ান্ডায় যে নৃশংসতা ঘটে, তা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশ্বসম্প্রদায়ের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে কি না, সেই আলোচনা সামনে চলে আসে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনান সাধারণ পরিষদে পেশ করা তাঁর বার্ষিক প্রতিবেদনে ‘আগামী শতকে মানুষের নিরাপত্তা ও হস্তক্ষেপ’ প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। সদস্যদেশগুলোর প্রতি তিনি ‘মানবাধিকার সনদ ও মানবাধিকার রক্ষায় অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার’ আহ্বান জানান। পরের বছর ২০০০ সালের প্রতিবেদনে তিনি একই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘মানবিক কারণে হস্তক্ষেপ যদি কোনো দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর অগ্রহণযোগ্য আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে আমরা রুয়ান্ডা ও সেব্রনিৎসায় চরম ও সংঘবদ্ধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব; যেখানে সাধারণ মানবতার প্রতিটি বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
একদিকে মানবাধিকার রক্ষার দায়, অন্যদিকে একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন—এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক সে সময় খুব জোরদার হয়ে ওঠে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কানাডা সরকারের নেতৃত্বে তখন একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল; ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন ইন্টারভেনশন অ্যান্ড স্টেট সভরেনটি। সংক্ষেপে আইসিআইএসএস। ২০০১ সালে এই কমিশন তাদের প্রতিবেদন ‘দ্য রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ প্রকাশ করে। পরে এই প্রতিবেদনের দুটি ধারা ২০০৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গ্রহণ করে। ওই ধারা দুটিতে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত শুদ্ধি অভিযান ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ—এই চার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই অপরাধগুলো দূর করার দায়িত্ব প্রথমত সংশ্লিষ্ট দেশের। কিন্তু দেশটি যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এ ব্যাপারে জাতিসংঘের নেওয়া উদ্যোগের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা করার দায় বিশ্বসম্প্রদায়ের রয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ এবং প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপেরও বিধান রয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকার ও এর সেনাবাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ‘দ্য রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’-এর নীতি অনুযায়ী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে মিয়ানমার সরকারের। মিয়ানমার সরকার যেহেতু তা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে, তাই এই জনগোষ্ঠীকে রক্ষার দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে দায়টি কাঁধে নেয়, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতময় স্থানে জাতিসংঘ ও এর শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আক্রান্ত জাতিগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেওয়ার অনেক নজির আছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছেন, সেখানে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির কথা রয়েছে। তেমন কিছু যদি করতে হয়, তবে তা আসলে এই ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’-এর আওতায়ই করতে হবে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমেই উদ্যোগ নিতে হবে। রাশিয়ায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) বৈঠকেও গত মঙ্গলবার রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে এবং এ নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তবে এ ধরনের কিছু কার্যকর করতে হলে বিশ্বসম্প্রদায়কে কাছে পেতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সম্ভাবনা কতটুকু?
জাতিসংঘের অধীনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ করতে হলে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস করাতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর বিষয়টি রয়েছে, তাই চীন ও রাশিয়ার অবস্থান ও ভূমিকা এখানেও গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের ব্যাপারে দেশ দুটির যে অবস্থান এখন পর্যন্ত টের পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো প্রস্তাবে তাদের ভেটো দেওয়াই স্বাভাবিক। ফলে ‘নিরাপদ অঞ্চলের’ ব্যাপারে বাংলাদেশ খুব আশাবাদী হতে পারে, এমন বাস্তবতা কিন্তু এখনো নেই।
এদিকে রোহিঙ্গারা আসছেই। তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা যে এখনো ঘটেই চলেছে, তা পরিষ্কার। রোহিঙ্গাদের বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জাতি। ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ নীতি যদি কোনো জাতির পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়, বিশ্বসম্প্রদায় যখন তাদের রক্ষায় কাজের কাজ কিছু করতে না পারে, তখন তাদের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জাতি না বলে আর উপায় কী! মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের প্রশংসা পেয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ত্রাণ সহায়তা আসছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি এখন অনেকটা এমন হয়ে যাচ্ছে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসবে, এখানে থাকবে এবং বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করে যাবে। আর এতেই যেন বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্ব শেষ!
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জাতির ভার বাংলাদেশের ওপর চেপে বসেছে। ‘দীর্ঘ মেয়াদে’ যে ভার বইতে হবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, তা এখন ‘স্থায়ী’ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। অথচ এই ভার বহনের অবস্থা বা সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ‘রেসপনসিবিলিটি’ বা দায়িত্ব বাংলাদেশ নিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করা ও তাদের ওপর মানবতাবিরোধী যে অপরাধ ঘটে চলেছে, তার বিহিত করার দায়িত্ব বিশ্বসম্প্রদায়ের। কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া মিয়ানমার টলবে না। ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’-এর আওতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে বিশ্বসম্প্রদায়কে সংগঠিত করাই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

বাংলাদেশের বিপদ, বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়

আপডেট টাইম : ০৫:০৬:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা ‘দীর্ঘস্থায়ী’ হতে পারে বলে শুরু থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের মুখেও আমরা তা শুনেছি। কিন্তু এখন দিনে দিনে এই ভয় জোরালো হচ্ছে যে এই সমস্যা না আবার ‘স্থায়ী’ রূপ পেয়ে বসে! মুখে যা-ই বলুক, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত নেওয়ার কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ যে দেশটির নেই, তা এখন পরিষ্কার। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের নীতি ও বহু বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নেওয়া উদ্যোগগুলো বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, তারা যা করেছে, ভেবেচিন্তে ও হিসাব-নিকাশ করেই করেছে। তাদের লক্ষ্য রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করা এবং সেই কাজটি তারা প্রায় গুটিয়ে এনেছে। গত ২৫ আগস্টের পর তারা যা শুরু করেছে, তাকে আসলে রাখাইনকে রোহিঙ্গামুক্ত করার চূড়ান্ত ধাপ হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে। এত উদ্যোগ-আয়োজন করে যে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করা হচ্ছে, তাদের আবার এমনি এমনি মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে, এমন আশার মধ্যে স্পষ্টতই বোকামি রয়েছে। বাংলাদেশ সম্ভবত শুধু দুরূহ নয়, কার্যত সমাধানের অযোগ্য এক বিপদের মধ্যে পড়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের যথেষ্ট সমালোচনা হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর যা হয়েছে ও হচ্ছে, তাকে জাতিসংঘের মহাসচিব জাতিগত শোধনের কেতাবি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। কিন্তু মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার জন্য এসব খুব কার্যকর কিছু বলে মনে হচ্ছে না। দেশটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তা পাওয়া গেল গত সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তরফে। মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইইউ দেশগুলোতে সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ২৮টি ইউরোপীয় দেশে মিয়ানমারের জেনারেলরা যেতে পারবেন না। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই ছিল, তা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ২০ কোটি ডলারের একটি ঋণ স্থগিত করেছে। আমরা অবশ্য এত কিছুর পরও মিয়ানমার থেকে চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করছি।
তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নেওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থগিত করা কতটুকু কাজে দেবে, তা এক বড় প্রশ্ন। কারণ, এই দেশটি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়েই কয়েক যুগ কাটিয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে ঠিকই কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনা সহ্য করার দীর্ঘদিনের যে ‘ঐতিহ্য’ দেশটির রয়েছে, তাতে মিয়ানমারকে কাবু করা সহজ কিছু বলে মনে হয় না।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের এই হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা এবং এ ব্যাপারে ভারত, চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা–সমালোচনা হয়েছে। এই দেশগুলোর পক্ষে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই অঞ্চলের ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশ, দেশগুলোর নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগ ১ হাজার ৮৫৩ কোটি ডলার ছুঁয়েছে। ভারতের বর্তমান বিনিয়োগ এর ধারেকাছে না হলেও তারা সেখানে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। চীন বা ভারতের যেকোনো একটি দেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে গেলে দেশটি অন্য দেশটির দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। ফলে এমন ঝুঁকি চীন বা ভারত কেউই নেবে না। অন্যদিকে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে রাশিয়ার তেমন ভূমিকা নেই। মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এখন পর্যন্ত স্রেফ ব্যবসার। মিয়ানমারকে চটিয়ে তারা সেখানে ব্যবসার সুযোগ হারানোর বিপদ ডেকে আনবে কোন দুঃখে!
বাংলাদেশ তাহলে কী করবে? লাখ দশেক শরণার্থীর চাপ বয়ে যেতে হবে? রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও আর্থিক কিছু সহায়তা দিয়েই বিশ্বসম্প্রদায় তাদের দায় সারবে? রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে চলেছে, তার প্রতিকারের কোনো দায় কি বিশ্বসম্প্রদায়ের নেই? রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমিতে নিরাপদে থাকা নিশ্চিত করতে কার্যকর কিছুই করা যাবে না?
খুব বেশি বছর আগের কথা নয়। নব্বইয়ের দশকে বলকান অঞ্চলে ও রুয়ান্ডায় যে নৃশংসতা ঘটে, তা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশ্বসম্প্রদায়ের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে কি না, সেই আলোচনা সামনে চলে আসে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনান সাধারণ পরিষদে পেশ করা তাঁর বার্ষিক প্রতিবেদনে ‘আগামী শতকে মানুষের নিরাপত্তা ও হস্তক্ষেপ’ প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। সদস্যদেশগুলোর প্রতি তিনি ‘মানবাধিকার সনদ ও মানবাধিকার রক্ষায় অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার’ আহ্বান জানান। পরের বছর ২০০০ সালের প্রতিবেদনে তিনি একই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘মানবিক কারণে হস্তক্ষেপ যদি কোনো দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর অগ্রহণযোগ্য আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে আমরা রুয়ান্ডা ও সেব্রনিৎসায় চরম ও সংঘবদ্ধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব; যেখানে সাধারণ মানবতার প্রতিটি বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
একদিকে মানবাধিকার রক্ষার দায়, অন্যদিকে একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন—এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক সে সময় খুব জোরদার হয়ে ওঠে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কানাডা সরকারের নেতৃত্বে তখন একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল; ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন ইন্টারভেনশন অ্যান্ড স্টেট সভরেনটি। সংক্ষেপে আইসিআইএসএস। ২০০১ সালে এই কমিশন তাদের প্রতিবেদন ‘দ্য রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ প্রকাশ করে। পরে এই প্রতিবেদনের দুটি ধারা ২০০৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গ্রহণ করে। ওই ধারা দুটিতে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত শুদ্ধি অভিযান ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ—এই চার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই অপরাধগুলো দূর করার দায়িত্ব প্রথমত সংশ্লিষ্ট দেশের। কিন্তু দেশটি যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এ ব্যাপারে জাতিসংঘের নেওয়া উদ্যোগের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা করার দায় বিশ্বসম্প্রদায়ের রয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ এবং প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপেরও বিধান রয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকার ও এর সেনাবাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ‘দ্য রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’-এর নীতি অনুযায়ী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে মিয়ানমার সরকারের। মিয়ানমার সরকার যেহেতু তা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে, তাই এই জনগোষ্ঠীকে রক্ষার দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে দায়টি কাঁধে নেয়, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতময় স্থানে জাতিসংঘ ও এর শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আক্রান্ত জাতিগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেওয়ার অনেক নজির আছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব রেখেছেন, সেখানে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরির কথা রয়েছে। তেমন কিছু যদি করতে হয়, তবে তা আসলে এই ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’-এর আওতায়ই করতে হবে এবং জাতিসংঘের মাধ্যমেই উদ্যোগ নিতে হবে। রাশিয়ায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) বৈঠকেও গত মঙ্গলবার রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে এবং এ নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তবে এ ধরনের কিছু কার্যকর করতে হলে বিশ্বসম্প্রদায়কে কাছে পেতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সম্ভাবনা কতটুকু?
জাতিসংঘের অধীনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ করতে হলে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস করাতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর বিষয়টি রয়েছে, তাই চীন ও রাশিয়ার অবস্থান ও ভূমিকা এখানেও গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের ব্যাপারে দেশ দুটির যে অবস্থান এখন পর্যন্ত টের পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো প্রস্তাবে তাদের ভেটো দেওয়াই স্বাভাবিক। ফলে ‘নিরাপদ অঞ্চলের’ ব্যাপারে বাংলাদেশ খুব আশাবাদী হতে পারে, এমন বাস্তবতা কিন্তু এখনো নেই।
এদিকে রোহিঙ্গারা আসছেই। তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা যে এখনো ঘটেই চলেছে, তা পরিষ্কার। রোহিঙ্গাদের বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জাতি। ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ নীতি যদি কোনো জাতির পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়, বিশ্বসম্প্রদায় যখন তাদের রক্ষায় কাজের কাজ কিছু করতে না পারে, তখন তাদের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জাতি না বলে আর উপায় কী! মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের প্রশংসা পেয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ত্রাণ সহায়তা আসছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি এখন অনেকটা এমন হয়ে যাচ্ছে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসবে, এখানে থাকবে এবং বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করে যাবে। আর এতেই যেন বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্ব শেষ!
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত জাতির ভার বাংলাদেশের ওপর চেপে বসেছে। ‘দীর্ঘ মেয়াদে’ যে ভার বইতে হবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, তা এখন ‘স্থায়ী’ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। অথচ এই ভার বহনের অবস্থা বা সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ‘রেসপনসিবিলিটি’ বা দায়িত্ব বাংলাদেশ নিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা নিশ্চিত করা ও তাদের ওপর মানবতাবিরোধী যে অপরাধ ঘটে চলেছে, তার বিহিত করার দায়িত্ব বিশ্বসম্প্রদায়ের। কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া মিয়ানমার টলবে না। ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’-এর আওতায় রোহিঙ্গা প্রশ্নে বিশ্বসম্প্রদায়কে সংগঠিত করাই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।