লাখ টাকার মসলা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাঁচতে হলে খেতে হয়, খেতে হলে রাঁধতে হয়, আর রাঁধতে হলে লাগে নানান রকমের মসলা। রান্না মজা আর সুস্বাদু করতে মসলার জুড়ি মেলা ভার। সব সময় ব্যবহার করার মসলার দাম কম, হাতের নাগালের মধ্যেই। কিন্তু কিছু মসলা আছে বিলাসী, খুব সৌখিন। রান্না ছাড়া যার ব্যবহার প্রায় দেখাই যায় না। কারণ আকাশ ছোঁয়া দাম। পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল এরকমই এক মসলার নাম হলো ‘জাফরান’।

খাবারের স্বাদ গন্ধ বাড়ানোই নয়, জাফরানের রয়েছে মেলা রকম ভেষজ গুণ। বিষণ্ণতা, নিম্ন রক্তচাপ, ত্বক এবং চুল নরম করতে সাহায্য করে জাফরান। মোঘল দরবারের শাহী হেঁশেল ঘুরে সারা পৃথিবীতে এর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ৪০০ বছর আগে। মরক্কো থেকে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জায়গায় মানুষ খাবার তৈরিতে জাফরান ব্যবহার করে। কাশ্মিরীদের খুব প্রিয় এক খাবার আছে, যা পশ্চিমে যাকে রিজোটো মিলানিস বলে ডাকা হয়। এ খাবার রাধতে হলে জাফরান লাগবেই লাগবে। পাশাপাশি রান্না সম্পর্কিত নানান উপকরণ তৈরি, ওষুধ শিল্পে এবং প্রসাধনী তৈরিতেও জাফরান ব্যবহার করা হয়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের খাঁটি কাশ্মিরি জাফরান ৫ গ্রাম বিক্রি হয় তেরোশো থেকে দুই হাজার রুপিতে। ৫ গ্রাম দুই হাজার রূপি হিসেবে ১ কেজি জাফরানের দাম পড়ে চার লাখ রুপি। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রায়। সত্যিই, চোখ কপালে ওঠার মতই দাম। এছাড়াও ইরানি, পাকিস্তানি ও আরবি জাফরান অঞ্চলভেদে আরও বেশি দামের হয়।

প্রশ্ন হলো এই জাফরান জিনিসটা কি?

জাফরান মূলত একটা বিরলজন্মা ফুলের কেশর। উপযোগী আবহাওয়া না পেলে এ ফুল ফোটে না। তাই পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গাতেই জাফরান হয় না। খুব অল্প কিছু জায়গার আবহাওয়া জাফরান চাষের উপযোগী। যেমন কাশ্মিরের আবহাওয়া জাফরান জন্মানোর জন্য ভীষণ রকম উপযোগী। তাই কাশ্মিরও খুবই বিখ্যাত তার সুগন্ধি দুর্লভ জাফরানের জন্য।

জাফরানের ঐতিহাসিক নানান ব্যবহার

১. প্রাচীন মিশরের রানী ক্লিওপেট্রা তার গোসলের চৌবাচ্চায় দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে তাতে ডুব দিয়ে গোসল করতেন।

২. আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট যুদ্ধের পর জাফরান দিয়ে ক্ষতস্থান ধুতেন। তাছাড়া তিনি জাফরান চা পান করতেন।

৩. স্প্যানিশদের সৌখিন খাবারে, ইরানের পোলাও-কোর্মায় এবং ভারতের শাহী ঘরানার প্রায় সব পদেই জাফরানের ব্যবহার ছিল।

৪. প্রাচীনকাল থেকেই মেয়েদের ঋতুস্রাবের সমস্যা, বিষণ্নতা, হাঁপানি এবং যৌন রোগের চিকিৎসার জন্য প্রচলিত ওষুধ হিসেবে জাফরান ব্যবহার করা হয়।

আসল জাফরান চিনবেন কি করে?

১. জাফরান দেখতে সুতার মত, যার পেছনের প্রান্ত ছেঁড়া।

২. প্রকৃত জাফরানের রং গভীর লাল রঙের হয়, যাকে পানিতে ভেজালে পানি বাঙ্গি-হলুদ রঙের হয়ে যায়।

৩. প্রকৃত জাফরানের সামান্য সুবাস এবং স্বাদ আছে।

৪. এর থেকে সামান্য ফল এবং ফুলের গন্ধ পাওয়া যাবে।

৫. জাফরান একই সময়ে মিষ্টি এবং তিতা স্বাদের হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর