হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রাম থেকে অপহরণের ১১দিন পর শিশু আরজিনাকে রংপুরে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উদ্ধারের পর শিশুটিকে থানায় না নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপহরণকারীদের নাম গোপন করতে স্থানীয় এক ইউপি এ কৌশল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীসহ তিন জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।
শিশুটির বাবার অভিযোগ, ‘অপহরণকারী আয়শা চক্র ওই পুলিশ কর্মকর্তার অসুস্থ ছেলের কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্যই তার মেয়েকে অপহরণ করেছিল।’ তবে পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে অসুস্থ কি না তা জানা যায়নি।
আরজিনার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের হাজিপাড়া হলেও কুড়িগ্রামে নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত।
গত ৬ আগস্ট শিশু আরজিনা কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের রুপার খামার গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়। পরদিন ৭ আগস্ট শিশুটির নানা মমিজ উদ্দিন উলিপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
১৮ আগস্ট রাত আটটার দিকে খবর পেয়ে ধরনীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ফুলু রংপুর শহরের মুন্সীপাড়াস্থ পুলিশের এসআই আবু বক্করের ভাড়া বাসা ‘ক্ষণিকালয়’ থেকে আরজিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। কিন্তু শিশুটিকে থানায় হস্তান্তর না করে নিজের কাছে রেখে দেন।
পরদিন এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ধরনীবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জড়ো হয়। উপস্থিত লোকজন চেয়ারম্যানের কাছে অপহরণকারীদের প্রকৃত পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তাদের পরিচয় গোপন রেখে শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেন এবং দ্রুত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
শিশু উদ্ধারের ছয় দিন পরও ওই চেয়ারম্যান অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় তার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তবে শিশু আরজিনা অপহরণকারীদের নাম পরিবারের কাছে ফাঁস করে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও আরজিনার পরিবারের লোকজন গত মঙ্গলবার উলিপুর থানায় মামলা করতে যায়। কিন্তু পুলিশ এ ঘটনার সাথে একজন এসআই ও তার স্ত্রীর সংশ্লিষ্টতার কারণে অপহরণ মামলা নিতে কালক্ষেপণ করতে থাকে।
পরে তারা বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানানো হয়। এরপর গত মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ মামলা রেকর্ড করে আজ বুধবার সকাল ১০ টার দিকে শিশুটির জবানবন্দি রেকর্ড করতে কুড়িগ্রাম আদালতে পাঠায়।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অপহরণের সাথে জড়িত নাজমার স্বামী গোবিন্দগঞ্জ থানায় কর্মরত এসআই আবু বক্কর মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য শিশুটির পরিবারকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।
ধরনীবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ফুলু শিশুটিকে উদ্ধার করে নিজ হেফাজতে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।’
এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ওই মেয়েকে তিনি কাজের মেয়ে হিসেবে বাসায় রাখেন। তবে তার হারানো বিষয়ে জিডি হয়েছে এটা তিনি জানতেন না। কারণ তিনি রংপুরে থাকেন না। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানায় আছেন। ফলে রংপুরের বাসার সব খবর তার জানা নাই।
তবে কীভাবে শিশুটি তার বাসায় এলো সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসকে আব্দুল্লা আল সাইদ বলেন, ‘এ ঘটনায় অপহরণ মামলা হয়েছে।অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।