ঢাকা ১২:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫০ পয়সা আয় করা সেই মহিলার আয় এখন দিনে ২ লাখ টাকা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৭
  • ৩৫১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, একসময় দিনের শেষে মাত্র ৫০ পয়সা নিয়ে ঘরে ফিরতেন। অথচ এখন দিনে ২ লাখ টাকা উপার্জন করেন। মাঝখানে কেটে গেছে অন্তত ৩১টি বছর। তিনি হলেন ভারতীয় নারী প্যাট্রিসিয়া নারায়ণন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার চমক এখানেই শেষ নয়, ৩১ বছর পূর্বে তিনি মেরিনা বিচে ঘুরে ঘুরে খাবার বেচতেন, আজ তিনিই বহু বড় বড় রেস্তোরাঁর মালিক!

প্যাট্রিসিয়া মা-বাবার অমতে বিয়ে করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি। বিয়ের ভাঙ্গলেও তাকে ক্ষমা করতে পারেননি তাঁর বাবা-মা। তাই বাপের বাড়িতে ফেরার পথও বন্ধ হয়ে যায়। লড়াইটা আসলে শুরু হয় সেখান থেকেই।

প্যাট্রিসিয়া একা নন, সঙ্গে তার দুই সন্তান। তিনটে পেটের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কী করবেন তিনি? পেটের দায়ে আচার বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন প্যাট্রিসিয়া। সঙ্গে জ্যাম, স্কোয়াশও বানাতেন। সেখান থেকেই তিনি একটা হাতে ঠেলা গাড়ি ঠেলতেন। সেই গাড়ি ঠেলেই তিনি রোজ চলে যেতেন মেরিনা বিচে। তাতে তিনি রাখতেন নানা খাবার-দাবার। এমনকি চা-কফিও।

প্যাট্রিসিয়ার এখনও মনে পড়ে, প্রথম দিন মাত্র এককাপ কফি বিক্রি হয়েছিল। লাভ হয়েছিলো আটআনা। হতাশ না হয়ে পরদিন আবারও তিনি যান বিক্রি করতে। সেই আটাআনা এক সময় আড়াই হাজারে যেতে সময় লাগলো না।

মেরিনা বিচে আলাপ এক ব্যক্তির সঙ্গে। প্রতিদিন প্রাতভ্রমণে আসতেন তিনি। ওই ব্যক্তিই প্রথম অফার দেন একটি ক্যান্টিন চালানোর জন্য। ‘বস্তি পরিষ্কার বোর্ড’-এর নিজস্ব ক্যান্টিন ছিল সেটি। তিনি সেই বোর্ডের চেয়ারম্যানও। এককথায় প্রস্তাব লুফে নেন প্যাট্রিসিয়া। তারপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

২০০৪ সালে জোর ধাক্কা খান তিনি। দুর্ঘটনায় মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে বেশ খানিকটা দুর্বল করে তোলে। অবাক হয়েছিলেন তিনি, কারণ তার মেয়ে-জামাইয়ের মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলো তার মুখের উপর অ্যাম্বুল্যান্স চালক। শেষপর্যন্ত এক ব্যক্তির গাড়িতে মৃতদেহ তুলতে হয়েছিল তাকে।

প্যাট্রিসিয়া ওই ঘটনার পরেই ঠিক করেন যে, তিনি অ্যাম্বুল্যান্স কিনবেন। যাতে তাঁর মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা আর কারও না হয় কখনও। ঠিক তাই কিনেও ফেলেন।

প্যাট্রিসিয়া ক্রমেই বোঝেন, যন্ত্রণা জীবনের একটি অঙ্গ। যন্ত্রণাকে আঁকড়ে এগিয়ে চলা বড়ই কঠিন কাজ। ক্রমে শোক কাটিয়ে ওঠেন তিনি। মাঝে কয়েকটা বছর বসে গিয়ে, আবার শুরু করেন দেন ব্যবসা। খুললেন নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ ‘সন্দীপা’, মেয়ের স্মৃতি নিয়ে। তার সঙ্গে নিলেন ছেলেকেও।

হসপিটালিটি সেক্টরে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যায় প্যাট্রিসিয়ার রেস্তোরাঁ। বর্তমানে শুধু চেন্নাইতেই তাঁর রেস্তোরাঁর ১৪টি আউটলেট রয়েছে! আর লাভ? প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ টাকা। ২০১০ সালে FICCI-এর দেওয়া পুরস্কারও পেয়েছেন প্যাট্রিসিয়া।

সফল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী প্যাট্রিসিয়ার বক্তব্য হলো, মেরিনা বিচই এখন আমার বিজনেস স্কুল। সেখান থেকেই আমার ব্যবসার পাঠ শেখা হয়েছে। আর সেটিই আমার এমবিএ। এখন তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী। অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কেও যে কোনো অসাধ্য সাধন করতে পারেন প্যাট্রিসিয়া নারায়ণনই তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৫০ পয়সা আয় করা সেই মহিলার আয় এখন দিনে ২ লাখ টাকা

আপডেট টাইম : ০৭:৪১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, একসময় দিনের শেষে মাত্র ৫০ পয়সা নিয়ে ঘরে ফিরতেন। অথচ এখন দিনে ২ লাখ টাকা উপার্জন করেন। মাঝখানে কেটে গেছে অন্তত ৩১টি বছর। তিনি হলেন ভারতীয় নারী প্যাট্রিসিয়া নারায়ণন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার চমক এখানেই শেষ নয়, ৩১ বছর পূর্বে তিনি মেরিনা বিচে ঘুরে ঘুরে খাবার বেচতেন, আজ তিনিই বহু বড় বড় রেস্তোরাঁর মালিক!

প্যাট্রিসিয়া মা-বাবার অমতে বিয়ে করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি। বিয়ের ভাঙ্গলেও তাকে ক্ষমা করতে পারেননি তাঁর বাবা-মা। তাই বাপের বাড়িতে ফেরার পথও বন্ধ হয়ে যায়। লড়াইটা আসলে শুরু হয় সেখান থেকেই।

প্যাট্রিসিয়া একা নন, সঙ্গে তার দুই সন্তান। তিনটে পেটের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কী করবেন তিনি? পেটের দায়ে আচার বানিয়ে বিক্রি শুরু করলেন প্যাট্রিসিয়া। সঙ্গে জ্যাম, স্কোয়াশও বানাতেন। সেখান থেকেই তিনি একটা হাতে ঠেলা গাড়ি ঠেলতেন। সেই গাড়ি ঠেলেই তিনি রোজ চলে যেতেন মেরিনা বিচে। তাতে তিনি রাখতেন নানা খাবার-দাবার। এমনকি চা-কফিও।

প্যাট্রিসিয়ার এখনও মনে পড়ে, প্রথম দিন মাত্র এককাপ কফি বিক্রি হয়েছিল। লাভ হয়েছিলো আটআনা। হতাশ না হয়ে পরদিন আবারও তিনি যান বিক্রি করতে। সেই আটাআনা এক সময় আড়াই হাজারে যেতে সময় লাগলো না।

মেরিনা বিচে আলাপ এক ব্যক্তির সঙ্গে। প্রতিদিন প্রাতভ্রমণে আসতেন তিনি। ওই ব্যক্তিই প্রথম অফার দেন একটি ক্যান্টিন চালানোর জন্য। ‘বস্তি পরিষ্কার বোর্ড’-এর নিজস্ব ক্যান্টিন ছিল সেটি। তিনি সেই বোর্ডের চেয়ারম্যানও। এককথায় প্রস্তাব লুফে নেন প্যাট্রিসিয়া। তারপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

২০০৪ সালে জোর ধাক্কা খান তিনি। দুর্ঘটনায় মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে বেশ খানিকটা দুর্বল করে তোলে। অবাক হয়েছিলেন তিনি, কারণ তার মেয়ে-জামাইয়ের মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছিলো তার মুখের উপর অ্যাম্বুল্যান্স চালক। শেষপর্যন্ত এক ব্যক্তির গাড়িতে মৃতদেহ তুলতে হয়েছিল তাকে।

প্যাট্রিসিয়া ওই ঘটনার পরেই ঠিক করেন যে, তিনি অ্যাম্বুল্যান্স কিনবেন। যাতে তাঁর মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা আর কারও না হয় কখনও। ঠিক তাই কিনেও ফেলেন।

প্যাট্রিসিয়া ক্রমেই বোঝেন, যন্ত্রণা জীবনের একটি অঙ্গ। যন্ত্রণাকে আঁকড়ে এগিয়ে চলা বড়ই কঠিন কাজ। ক্রমে শোক কাটিয়ে ওঠেন তিনি। মাঝে কয়েকটা বছর বসে গিয়ে, আবার শুরু করেন দেন ব্যবসা। খুললেন নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ ‘সন্দীপা’, মেয়ের স্মৃতি নিয়ে। তার সঙ্গে নিলেন ছেলেকেও।

হসপিটালিটি সেক্টরে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যায় প্যাট্রিসিয়ার রেস্তোরাঁ। বর্তমানে শুধু চেন্নাইতেই তাঁর রেস্তোরাঁর ১৪টি আউটলেট রয়েছে! আর লাভ? প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ টাকা। ২০১০ সালে FICCI-এর দেওয়া পুরস্কারও পেয়েছেন প্যাট্রিসিয়া।

সফল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী প্যাট্রিসিয়ার বক্তব্য হলো, মেরিনা বিচই এখন আমার বিজনেস স্কুল। সেখান থেকেই আমার ব্যবসার পাঠ শেখা হয়েছে। আর সেটিই আমার এমবিএ। এখন তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী। অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কেও যে কোনো অসাধ্য সাধন করতে পারেন প্যাট্রিসিয়া নারায়ণনই তার জ্বলন্ত উদাহরণ।