ঢাকা ১১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত মদনে প্রাণিসম্পদের উদ্যোগে মোরগ ও ছাগলের খাদ্য বিতরণ ইটনায় সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত মদনে সংবাদ প্রকাশের পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গল বিদ্যালয় প্রাঙ্গন দখল করে ঘর নির্মাণ করছেন শিক্ষক রাজধানীতে পার্বত্য জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিপনী বিতান উদ্বোধন করেন: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে মদন উপজেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সায়েম সাধারণ সম্পাদক আরিফ মদনে ফের বয়রাহালা ব্রীজের এপ্রোচ দখল করে ঘর নির্মাণ মদনে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষককে হত্যার চেষ্টা

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত, বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০১৭
  • ২০৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গাজীপুর সিটির জয়দেবপুর থানার অংশবিশেষ ও টঙ্গী থানা এলাকা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ নির্বাচনী এলাকা। এই নির্বাচনী আসনের পুরো এলাকাই রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে সিটি নির্বাচনে মেয়র
প্রার্থীর ওপর নির্ভর করছে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন। মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে পারছেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা ইস্যুতেই ছুটে যাচ্ছেন তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি।
গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থিতা অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি হলেন- শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল। তবে আগামী নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান মনোনয়ন চাইতে পারেন।
অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দীন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. মাজহারুল আলম। এ ছাড়াও গত নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছেন এমন আরো কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তবে বিএনপির এম এ মান্নান ও হাসান সরকারের মধ্যে একজন মেয়র পদে নির্বাচন করলে অন্যজন সংসদে নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি।
এ ছাড়াও হেফজাতে ইসলামের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, জাসদের মহানগর সভাপতি রাশেদুল হাসন রানা, বাসদের আব্দুল কাইয়ুম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ মো. মাসুদুল আলম, সিপিবির মো. জিয়াউল কবির নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহিদ আহসান রাসেল ও বিএনপির হাসান উদ্দীন সরকার ছাড়াও এ আসনে আরো ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। তারা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কাজী মো. শাখাওয়াত উল্লাহ, বাসদের আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ডা. সৈয়দ আবু দাউদ মছনবী হায়দার, এলডিপির ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ মো. মাসুদুল আলম, সিপিবির মো. জিয়াউল কবির ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মুফতি নাসির উদ্দিন খান।
আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে তৎকালীন চারদলীয় জোট আমলে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যার পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হন তাঁর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এবং ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে জাহিদ আহসান রাসেল বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন। মূলত বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এই আসনে ভোটের ব্যবধান বিপুল ছিল। পিতা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হবার কারণে ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে রাসেলের পক্ষে আবেগের ভোট বেড়ে যায় প্রায় ৫০ হাজার। এর পরের সংসদ নির্বাচনেও জাহিদ আহসান রাসেল চারদলীয় জোট প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। গত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন জাহিদ আহসান রাসেল। আর এর আগের নির্বাচনে জাহিদ আহসান রাসেলকে এই নির্বাচনী এলাকা ছাড় দিতে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জেলা সদরের এই আসন ছেড়ে নির্বাচনে যান গাজীপুর-১ আসনে। আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর-২ এলাকার বাসিন্দা হয়েও গাজীপুর-১ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নির্বাচন করায় জাহিদ আহসান রাসেলের ভিতও তার আসনে আরো মজবুত হয়। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনে আহসান উল্লাহ মাস্টারের দুবার বিজয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের পর পর দুবার বিজয়ী হওয়ায় ও একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর এবারও রাসেলের মহাজোটের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। এই আসনে আওয়ামী লীগের আরো দু-একজন নেতা সংসদ সদস্য পদে পার্থী হবার মতো থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়তো শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ও তাঁর পরিবারের প্রতি সম্মান জানাতেই ছাড় দেয়া হবে জাহিদ আহসান রাসেলকে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেলের পিতা প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টারের প্রতি রয়েছে এলাকাবাসীর অগাধ ভালোবাসা। খুবই সহজ-সরল ভাবে বাবার ভালোবাসা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে মিশে যাবার গুণ রয়েছে রাসেলের। এসব মিলেই বলা যায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল অনেকটাই চূড়ান্ত।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান। সেবার তিনি প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হন। মেয়র পদে বিজয়ী হবার পর নাশকতাসহ নানা অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ৩০টি মামলা। এসব মামলায় তিনি জেল খাটেন ২২ মাস। মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় তিনি মেয়রের দায়িত্বের বাইরে ছিলেন ২৮ মাস। ৯১ সালের নির্বাচনের পর তিনি এমপি ছাড়াও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মেয়র পদে প্রার্থী না হলে এই আসনে তিনিই হবেন আগামীতে বিএনপির প্রার্থী। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দীন সরকার। রাজনীতিতে, নির্বাচনে হাসান সরকারের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। টঙ্গী পৌরসভা চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। হাসান উদ্দীন সরকার আর জাহিদ আহসান রাসেল এ দুজনেরই বাসা শিল্প নগরী টঙ্গীতে। দুজনেরই টঙ্গীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রার্থী শ্রমিক নেতা সালাউদ্দীন সরকারের নানা অবদান রয়েছে বিএনপিতে। এ পর্যন্ত তিনি পৌরসভা, উপজেলা কিংবা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও বিএনপির রাজনীতিতে তারও রয়েছে আলাদা বলয়। টঙ্গীতে রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য। রয়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি। বিএনপিতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শিক্ষিত-ভদ্র এ প্রজন্মের নেতা ডা. মাজহারুল ইসলামসহ রয়েছেন আরো কয়েকজন। ইতিমধ্যে ডা. মাজহার ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নানাভাবে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
১৯৯৬ এর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন হাসান সরকার এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ মান্নান। ওই নির্বাচনে এই দুজনের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল শহীদ আহসান উল্লাহর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি। পরের দুটি নির্বাচনে তাদের মধ্যে ছিল বিদ্রোহী প্রার্থী, দলে ছিল প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব ও বিরোধ। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে নেতাদের মধ্যে সমন্বয় করে প্রার্থী বাছাই করা হলে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে কঠোর নির্বাচনী লড়াই হবে বলে ধারণা ভোটারদের।

ম জমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত, বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কে

আপডেট টাইম : ০৩:৩০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গাজীপুর সিটির জয়দেবপুর থানার অংশবিশেষ ও টঙ্গী থানা এলাকা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ নির্বাচনী এলাকা। এই নির্বাচনী আসনের পুরো এলাকাই রয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে সিটি নির্বাচনে মেয়র
প্রার্থীর ওপর নির্ভর করছে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন। মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিএনপি নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে যেতে পারছেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা নানা ইস্যুতেই ছুটে যাচ্ছেন তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি।
গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থিতা অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি হলেন- শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল। তবে আগামী নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান মনোনয়ন চাইতে পারেন।
অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, সিটি মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দীন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. মাজহারুল আলম। এ ছাড়াও গত নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছেন এমন আরো কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তবে বিএনপির এম এ মান্নান ও হাসান সরকারের মধ্যে একজন মেয়র পদে নির্বাচন করলে অন্যজন সংসদে নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি।
এ ছাড়াও হেফজাতে ইসলামের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, জাসদের মহানগর সভাপতি রাশেদুল হাসন রানা, বাসদের আব্দুল কাইয়ুম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ মো. মাসুদুল আলম, সিপিবির মো. জিয়াউল কবির নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহিদ আহসান রাসেল ও বিএনপির হাসান উদ্দীন সরকার ছাড়াও এ আসনে আরো ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। তারা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর কাজী মো. শাখাওয়াত উল্লাহ, বাসদের আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ডা. সৈয়দ আবু দাউদ মছনবী হায়দার, এলডিপির ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শেখ মো. মাসুদুল আলম, সিপিবির মো. জিয়াউল কবির ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মুফতি নাসির উদ্দিন খান।
আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারকে তৎকালীন চারদলীয় জোট আমলে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যার পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হন তাঁর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেল। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এবং ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে জাহিদ আহসান রাসেল বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন। মূলত বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এই আসনে ভোটের ব্যবধান বিপুল ছিল। পিতা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হবার কারণে ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে রাসেলের পক্ষে আবেগের ভোট বেড়ে যায় প্রায় ৫০ হাজার। এর পরের সংসদ নির্বাচনেও জাহিদ আহসান রাসেল চারদলীয় জোট প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। গত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন জাহিদ আহসান রাসেল। আর এর আগের নির্বাচনে জাহিদ আহসান রাসেলকে এই নির্বাচনী এলাকা ছাড় দিতে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জেলা সদরের এই আসন ছেড়ে নির্বাচনে যান গাজীপুর-১ আসনে। আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর-২ এলাকার বাসিন্দা হয়েও গাজীপুর-১ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নির্বাচন করায় জাহিদ আহসান রাসেলের ভিতও তার আসনে আরো মজবুত হয়। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনে আহসান উল্লাহ মাস্টারের দুবার বিজয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলের পর পর দুবার বিজয়ী হওয়ায় ও একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হওয়ার পর এবারও রাসেলের মহাজোটের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। এই আসনে আওয়ামী লীগের আরো দু-একজন নেতা সংসদ সদস্য পদে পার্থী হবার মতো থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়তো শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ও তাঁর পরিবারের প্রতি সম্মান জানাতেই ছাড় দেয়া হবে জাহিদ আহসান রাসেলকে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেলের পিতা প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টারের প্রতি রয়েছে এলাকাবাসীর অগাধ ভালোবাসা। খুবই সহজ-সরল ভাবে বাবার ভালোবাসা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে মিশে যাবার গুণ রয়েছে রাসেলের। এসব মিলেই বলা যায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল অনেকটাই চূড়ান্ত।
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান। সেবার তিনি প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হন। মেয়র পদে বিজয়ী হবার পর নাশকতাসহ নানা অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ৩০টি মামলা। এসব মামলায় তিনি জেল খাটেন ২২ মাস। মামলার কারণে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় তিনি মেয়রের দায়িত্বের বাইরে ছিলেন ২৮ মাস। ৯১ সালের নির্বাচনের পর তিনি এমপি ছাড়াও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মেয়র পদে প্রার্থী না হলে এই আসনে তিনিই হবেন আগামীতে বিএনপির প্রার্থী। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দীন সরকার। রাজনীতিতে, নির্বাচনে হাসান সরকারের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। টঙ্গী পৌরসভা চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। হাসান উদ্দীন সরকার আর জাহিদ আহসান রাসেল এ দুজনেরই বাসা শিল্প নগরী টঙ্গীতে। দুজনেরই টঙ্গীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রার্থী শ্রমিক নেতা সালাউদ্দীন সরকারের নানা অবদান রয়েছে বিএনপিতে। এ পর্যন্ত তিনি পৌরসভা, উপজেলা কিংবা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও বিএনপির রাজনীতিতে তারও রয়েছে আলাদা বলয়। টঙ্গীতে রয়েছে পারিবারিক ঐতিহ্য। রয়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি। বিএনপিতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শিক্ষিত-ভদ্র এ প্রজন্মের নেতা ডা. মাজহারুল ইসলামসহ রয়েছেন আরো কয়েকজন। ইতিমধ্যে ডা. মাজহার ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নানাভাবে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
১৯৯৬ এর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন হাসান সরকার এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এম এ মান্নান। ওই নির্বাচনে এই দুজনের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল শহীদ আহসান উল্লাহর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি। পরের দুটি নির্বাচনে তাদের মধ্যে ছিল বিদ্রোহী প্রার্থী, দলে ছিল প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব ও বিরোধ। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে নেতাদের মধ্যে সমন্বয় করে প্রার্থী বাছাই করা হলে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে কঠোর নির্বাচনী লড়াই হবে বলে ধারণা ভোটারদের।

ম জমিন