নিজাম (নেত্রকোণা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোণা মদন উপজেলায় শাহ আলম নামের এক মানবতার ফেরিওয়ালার আগমন ঘটেছে। এই মানবতার ফেরিওয়ালা আর কেউ নন তিনি মদন উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহ আলম মিয়া।
২০২৩ সালের ১৫ মে মদন উপজেলায় তাঁর যোগদানের পর বদলে গেছে মদন উপজেলার চিত্র। উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র উপজেলা পরিষদ চত্বর সৌন্দর্য বর্ধনে গুণীজনদের নিকট হতে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে জাতীয় দিবসগুলো পালন হচ্ছে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ও ভিন্ন অ্যামেজে। যা মদন উপজেলাবাসী গত এক-দেড় যুগেও দেখেনি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ২৫ মার্চ (অপারেশন চার্জ লাইট) ও তিন দিন ব্যাপি পহেলা বৈশাখ উৎযাপন সব চেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন।
রমজানে “এসো সরল পথে” ব্যানারে হাম-নাথ, ইসলামী সংগীত ও কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আলেম সমাজে প্রচুর সাড়া পড়ে। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসন এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
চারণ কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে তিনি ঘরে তুলেন “জলময়ূর”। তাদের নিয়ে প্রায়শই মেতে উঠেন সাহিত্য আড্ডায়। আলোচনার প্রাণ বিন্দুতে থাকে হাওর অঞ্চলের সংস্কৃতি এবং কবি, সাহিত্যক, গীতিকার, সুরকার ও বিভিন্ন শিল্পীর ইতিকথা। প্রয়াতদের লেখা সাহিত্য, কবিতা, ছড়া, গান ও গজল নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই “জয়ময়ূর” এর মূল উদ্দেশ্য।
উপজেলার যুব সমাজকে নিয়ে গড়ে তুলেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন “ইয়ত নেটওয়ার্ক”। বিভিন্ন দুর্যোগ ও আপদকালীন সময়ে এ সংগঠনের সদস্যরা সেচ্ছায় সেবা দিতে বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রমাণও তারা রেখেছে।
সমাজে পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজরা সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে “ত্রিনয়ন” নামের সংগঠন গড়ে তুলেন। সেলাই প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলার চেষ্টা করছেন। তারা যেনো আত্মসম্মান নিয়ে সমাজে বসবাস করতে তা এ সংগঠনের মূল প্রতিপাদ্য।
উপজেলার হাঁসকামারীদের জন্য অর্থাৎ কুঠুরীকোণা গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য “কুঠুরীকোণা মডেল” নামের প্রকল্প গ্রহন করেন। কামারীদের পরিচয়পত্র অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকেই কামারী হিসেবে আইডিকার্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়াও মাদকমুক্ত যুবসমাজ গড়তে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে শীতকালীন ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ও মিনি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। যুব সমাজকে ইভটিজিং, নেশা ও মাদক থেকে দূরে রাখার লক্ষ্যেই এ ধরনের টুর্নামেন্টের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন।
হাতে একটু সময় পেলে ছুটে যান গ্রাম-গঞ্জে হাওর বাসীর পাশে। কখনো নৌকা মাঝির সাথে খাবার খাওয়া আবার কখনো চাষির সঙ্গে মিলেমিশে হালচাষ করা। রাতের আঁধারে ছুটে চলেন শীতবস্ত্র হীন পানে, তাদের শীতবস্ত্র উপহার দিয়ে তৃপ্তিবোধে নীড়ে ফিরেন তিনি।
বৈশাখ তাপদাহে যখন রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। ঠিক তখনই তিনি খাবার সেলাইন ও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন হাওর পানে কৃষকের মিষ্টি হাঁসি দেখবেন বলে। এ যেনো শতবছরের চিরচেনা হাওর জনপদের তিনি পরম আত্মার আত্মীয়।
যেখানেই দুর্ভোগ দুর্যোগ সেখানই শাহ আলম হাজির। গ্রাম্য বিরোধ নিরসন থেকে শুরু করে অবৈধ যাত্রা পালা ও জোয়ার আসর বন্ধে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ডুলি, কুলি, চালক, মজুর, হুজুর, মুছি-ধোবা সর্ব শ্রেণির প্রিয় মানুষ। তিনি সৃজন ও সৃষ্টিতে বিশ্বাসী এক মানুষ।
রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণ অর্থাৎ সরকারের সকল উন্নয়ন মূলক কাজ-কর্ম নিয়মিত বিরামহীন ভাবে পরিদর্শন করেন। সব কিছুতেই চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ মাধ্যমে সমাধান করেন। সর্বোপরি মদন উপজেলা বাসী কর্মবীর মানবতার ফেরিওয়ালা পেয়েছে।
মদন প্রেসক্লাব সভাপতি আল-মাহবোব আলম (আল-আমিন) বলেন, মোঃ শাহ আলম মিয়া আমাদের উপজেলায় যোগদানের পর উপজেলার চিত্রটাই বদলে গেছে। অল্প কথায় বলতে গেলে তিনি রুচিশীল, সৃজন ও সৃষ্টিশীল কর্মবীর মানুষ। সত্যি বলতে তিনি এক ডায়নামিক অফিসার।