হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিষযুক্ত ফল ও শাক-সবজি খেয়ে আমরা অনেকেই কঠিন রোগে ভুগছি। সে কারণে স্বাস্থ্যের জন্য বিষমুক্ত ফল ও শাক-সবজি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বাজারে বিষমুক্ত ফল ও শাক-সবজি পাওয়া অনেকটা কষ্টকর। বিষমুক্ত সেই ফল ক্রেতার হতে তুলে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাট বানিনগর গ্রামের চাষি নুরল হক। তিনি বিষমুক্ত ৩ জাতের থাই পেয়ারা চাষ করে সেই চেষ্টা শুরু করেছেন। নুরল হক তার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত সফলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পেয়ারা চাষি নুরল হক বলেন, ‘১৯৯৪ সালে বাড়ির সামনে সামান্য জমিতে নার্সারি দিয়ে কর্ম জীবন শুরু করি। নার্সারিতে ফল ও ফুলসহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা উৎপাদন করতে থাকি। আস্তে আস্তে গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে যায় আমার নার্সারির পরিচিতি। আমার নার্সারি থেকে চারা নিয়ে গিয়ে অনেকেই বাগান গড়ে তোলেন। কিন্তু আমার ভাগ্যের পরির্বতন ঘটে না।’
তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে ঢাকায় গিয়ে দেখতে পাই থাই পেয়ারা ২শ’ টাকা কেজি দরে কিনছে মানুষ। এ দৃশ্য দেখে আমার থাই পেয়ারার বাগান করার ইচ্ছে জাগে। সেই ইচ্ছা বাস্তবে রূপ দিতে চলে যাই কানসাটের থাই পেয়ারা বাগানে। সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজের নার্সারিতে চারা তৈরি করি। নিজের নার্সারির চারা দিয়ে পরীক্ষামূলক থাই পেয়ারার চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় স্থানীয় ধান চাষিদের জমি বছরে বিঘা প্রতি ১২ মণ ধানের বিনিময়ে লিজ নিয়ে থাই ৩ জাতের পেয়ারার বাগান তৈরি করি। ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে থাই ৩ পেয়ারার চাষ শুরু করি। এখন ৪০ বিঘা জমিতে রয়েছে ৬টি প্রজেক্ট। যার মধ্যে ৫টি প্রজেক্টই লিজ নেয়া জমিতে। এসব প্রজেক্টে দৈনিক ২৫০/৩২০ টাকা মজুরিতে ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন।’
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে নুরল হক বলেন, ‘তুলনামূলক একটু উঁচু জমিতে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুঁড়ে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে প্রতিটি গর্তে একটি করে থাই পোয়ারার বীজ/কলম চারা লাগাতে হয়। এরপর শুধুই পরিচর্যা। গাছে ফল এলে প্রতিটি পেয়ারা পলি ব্যাগে ঢেকে দিতে হয়। যার ফলে এ পেয়ারা হয় শতভাগ বিষমুক্ত। এতে শ্রমিক খরচ একটু বেশি হলেও বাজারে বিষমুক্ত ফলের চাহিদাও অনেক। তাই মুনাফা প্রচুর। একবার চারা রোপণ করলে আর প্রয়োজন পড়ে না। আর এ থাই ৩ জাতের পেয়ারা সারা বছর পাওয়া যায়। বছরে ৬টি প্রজেক্টের পেয়ারা বিক্রি হয় প্রায় ৩৫-৩৮ লাখ টাকা। চলতি বছরও ৩৫ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করি। এর মধ্যে খরচ বাদে আমার লাভ হয় ১৮ লাখ টাকা।’
নুরল হকের পেয়ারা বাগানের শ্রমিক জোহরা বেগম, রাধা রানী, ননিবালা, জোবেদা বেগম জানান, সারা বছর কাজের নিশ্চয়তা থাকায় কয়েক বছর ধরে নুরল হকের বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে নুরল হকের এ বিষমুক্ত পেয়ারা রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রাজধানীসহ সারাদেশেই যাচ্ছে। পেয়ারার মৌসুমে প্রতি মণ এক হাজার দুইশ’ টাকায় বিক্রি হলেও অন্যসময় প্রতি মণ চার হাজার টাকা দরে বিক্রি হয় থাই পেয়ারা। অভাবকে বিদায় দিয়ে বাগানের আয়ে মাত্র দুই বছরের বাড়ি গাড়ির মালিক হয়েছেন নুরল হক। বেকার যুবকদের প্রতি নুরল হকের আহ্বান, চাকরি বা বিদেশের দিকে না ঝুঁকে বাগান করে ভিনদেশের চেয়ে আপন ভুখণ্ডে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। শুধু বাগানই নয়, নার্সারিতে থাই ৩ জাতের পেয়ারার কলম ও বীজ চারা বিক্রি করেন তিনি। তার এ সাফল্য দেখে আশপাশের এলাকায়ও বাড়ছে থাই পেয়ারার বাগান। অনেকেই এগিয়ে আসছেন বিষমুক্ত পেয়ারা চাষে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিধু ভূষণ জানান, ব্যাগিং পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ শতভাগ বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। তাই এ পদ্ধতিতে চাষ বেশ লাভজনক। নুরল হকের সাফল্য দেখে দিন দিন বাড়ছে ফল চাষির সংখ্যা।