ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের বানানো আচার-চানাচুর বিক্রি করতেন হিরো আলম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ৪২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বগুড়ার আশরাফুল আলম একজন স্বঘোষিত ‘হিরো’—হিরো আলম। প্রায় ৬০০ গানের ভিডিও বানিয়েছেন, মডেল নিজেই। এবার সত্যিই হিরো হয়েছেন তিনি। ১১ আগস্ট মুক্তি পাবে মঈন বিশ্বাসের ‘মার ছক্কা’। ছবির দুই নায়কের একজন আলম।

১০ বছর বয়সে কালুমামার সঙ্গে বগুড়ার মেরিনা সিনেমা হলে ছবি দেখতে যান আলম। কিন্তু গেটম্যান তাঁকে আটকে দেন। গেটম্যানের এক কথা, এত ছোট মানুষের সিনেমা দেখা যাবে না। মামার অনেক অনুরোধের পর ঢুকতে দিলেন। দেখলেন রুবেল অভিনীত ‘রক্ত নিশান’, সেদিনই আলমের মনে স্বপ্ন জাগে নায়ক হওয়ার। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে রুবেলের মতো মারপিটের অভিনয়-অভিনয় খেলা শুরু করলেন। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় সপ্তম শ্রেণিতেই পড়াশোনার পাট চুকে যায়। ধরতে হলো সংসারের হাল। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে মায়ের বানানো আচার-চানাচুর বিক্রি করতে শুরু করলেন। দিনশেষে মা আনোয়ারা বেগমের হাতে অর্জিত টাকা তুলে দিতেন। সন্ধ্যার পর এরুলিয়া বাজারে একটি সিডি ভাড়া দেওয়ার দোকানে বসতেন।

এভাবেই কেটে গেল তিন বছর। দোকানের মালিক শহীদুল ইসলাম একদিন আলমকে জানালেন, তিনি মালয়েশিয়া চলে যাবেন। মালপত্র বিক্রি করে দিতে চান। দোকানে ছিল একটা সাদাকালো টেলিভিশন আর ১০০টি সিডি, ছিল কিছু ভিসিআরের ক্যাসেটও। মায়ের সঙ্গে

আলাপ করে ১৬ হাজার টাকায় দোকানের সব মালপত্র কিনে নিলেন আলম। সিডির দোকানেই ভালো আয়-রোজগার হচ্ছিল। আচার-চানাচুর বিক্রি বাদ দিয়ে দিলেন। ঠিক তখনই আলমের মনে উঁকি দিল মেরিনা সিনেমা হলের ভেতর জেগে ওঠা স্বপ্নটা। একবার চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?

টাকা-পয়সা খরচ করে একটা কমেডি গানের ভিডিওতে মডেল হলেন। এলাকায় ভিডিওর সিডি ছড়িয়ে গেল। আলম মনে মনে বেশ খুশি, কারণ টিভিপর্দায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের অনেকেই খুশি নয়। স্মৃতি রোমন্থন করে আলম বলেন, ‘গ্রামের লোকজন আমাকে গালি দিতে লাগল, কেন জোকার হলাম। অনেক মুরব্বি ভিডিওটা দেখে মজা পেলেও বললেন, জোকার হয়ে লাভ নেই। চিন্তা করলাম টাকা যেহেতু খরচ করব, আমি হিরোই হব। ’

স্থানীয় এক এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজ এলাকায় ডিশ সংযোগের ব্যবসা শুরু করলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গানের মিউজিক ভিডিও বানান। মডেল হন নিজেই। ডিশে সেই গান প্রচার করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিউজিক ভিডিও করেছেন।

গত বছর হুট করেই ফেসবুকে আলমের কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেই ভিডিও কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও হৈচৈ বাঁধিয়ে দেন আলম। গত বছর গুগলে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি খুঁজেছে মানুষ। আলমের এই জনপ্রিয়তা নজরে আসে চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও। ঢাকার কয়েকজন উঠতি নির্মাতা তাঁকে নিয়ে কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এরই মধ্যে পরিচয় হয় রোহান নামের একজন তরুণ অভিনেতার সঙ্গে। যিনি একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। প্যারালাল চরিত্রে আরেকজন নায়ক দরকার। আলমকে নিয়ে কাকরাইলে পরিচালক মঈন বিশ্বাসের অফিসে যান রোহান। মঈন বলেন, ‘আমিও তার নাম শুনেছি। ভাবলাম একটা সুযোগ দিয়েই দেখি। ’

‘মার ছক্কা’ দিয়েই আশরাফুল আলমের ‘হিরো’ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আলম বলেন, ‘প্রথম যখন মিউজিক ভিডিও বানাই তখন কেউই আমার সঙ্গে মডেল হতে চাইত না। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তাদের নিতাম। এখন অনেকেই আমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ চায়। সিনেমার পর্দায় নায়কের মারামারি দেখে একদিন অবাক হয়েছিলাম, এখন আমি নিজে নায়ক হয়ে মারামারি করেছি, লোকে সেটা দেখবে। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ’

ঠিক ১৮ বছর পর আলমের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। ‘মার ছক্কা’য় আলমের নায়িকা রাবিনা বৃষ্টি। শুধু মারপিট নয়, ভক্তরা আলমকে ছবির দুটি গানে নায়িকার সঙ্গে নাচতে-গাইতেও দেখবে।

আলমের বয়স এখন ২৮। বিয়ে করেছেন বগুড়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার সুমিকে। দুই সন্তান তাঁদের—মেয়ে আঁখি আক্তার আলোর বয়স পাঁচ, ছেলে আবির হোসেনের বয়স তিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মায়ের বানানো আচার-চানাচুর বিক্রি করতেন হিরো আলম

আপডেট টাইম : ১১:১৯:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বগুড়ার আশরাফুল আলম একজন স্বঘোষিত ‘হিরো’—হিরো আলম। প্রায় ৬০০ গানের ভিডিও বানিয়েছেন, মডেল নিজেই। এবার সত্যিই হিরো হয়েছেন তিনি। ১১ আগস্ট মুক্তি পাবে মঈন বিশ্বাসের ‘মার ছক্কা’। ছবির দুই নায়কের একজন আলম।

১০ বছর বয়সে কালুমামার সঙ্গে বগুড়ার মেরিনা সিনেমা হলে ছবি দেখতে যান আলম। কিন্তু গেটম্যান তাঁকে আটকে দেন। গেটম্যানের এক কথা, এত ছোট মানুষের সিনেমা দেখা যাবে না। মামার অনেক অনুরোধের পর ঢুকতে দিলেন। দেখলেন রুবেল অভিনীত ‘রক্ত নিশান’, সেদিনই আলমের মনে স্বপ্ন জাগে নায়ক হওয়ার। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে রুবেলের মতো মারপিটের অভিনয়-অভিনয় খেলা শুরু করলেন। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় সপ্তম শ্রেণিতেই পড়াশোনার পাট চুকে যায়। ধরতে হলো সংসারের হাল। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে মায়ের বানানো আচার-চানাচুর বিক্রি করতে শুরু করলেন। দিনশেষে মা আনোয়ারা বেগমের হাতে অর্জিত টাকা তুলে দিতেন। সন্ধ্যার পর এরুলিয়া বাজারে একটি সিডি ভাড়া দেওয়ার দোকানে বসতেন।

এভাবেই কেটে গেল তিন বছর। দোকানের মালিক শহীদুল ইসলাম একদিন আলমকে জানালেন, তিনি মালয়েশিয়া চলে যাবেন। মালপত্র বিক্রি করে দিতে চান। দোকানে ছিল একটা সাদাকালো টেলিভিশন আর ১০০টি সিডি, ছিল কিছু ভিসিআরের ক্যাসেটও। মায়ের সঙ্গে

আলাপ করে ১৬ হাজার টাকায় দোকানের সব মালপত্র কিনে নিলেন আলম। সিডির দোকানেই ভালো আয়-রোজগার হচ্ছিল। আচার-চানাচুর বিক্রি বাদ দিয়ে দিলেন। ঠিক তখনই আলমের মনে উঁকি দিল মেরিনা সিনেমা হলের ভেতর জেগে ওঠা স্বপ্নটা। একবার চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?

টাকা-পয়সা খরচ করে একটা কমেডি গানের ভিডিওতে মডেল হলেন। এলাকায় ভিডিওর সিডি ছড়িয়ে গেল। আলম মনে মনে বেশ খুশি, কারণ টিভিপর্দায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামের অনেকেই খুশি নয়। স্মৃতি রোমন্থন করে আলম বলেন, ‘গ্রামের লোকজন আমাকে গালি দিতে লাগল, কেন জোকার হলাম। অনেক মুরব্বি ভিডিওটা দেখে মজা পেলেও বললেন, জোকার হয়ে লাভ নেই। চিন্তা করলাম টাকা যেহেতু খরচ করব, আমি হিরোই হব। ’

স্থানীয় এক এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজ এলাকায় ডিশ সংযোগের ব্যবসা শুরু করলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গানের মিউজিক ভিডিও বানান। মডেল হন নিজেই। ডিশে সেই গান প্রচার করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিউজিক ভিডিও করেছেন।

গত বছর হুট করেই ফেসবুকে আলমের কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। সেই ভিডিও কেবল বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও হৈচৈ বাঁধিয়ে দেন আলম। গত বছর গুগলে তাঁকেই সবচেয়ে বেশি খুঁজেছে মানুষ। আলমের এই জনপ্রিয়তা নজরে আসে চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও। ঢাকার কয়েকজন উঠতি নির্মাতা তাঁকে নিয়ে কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এরই মধ্যে পরিচয় হয় রোহান নামের একজন তরুণ অভিনেতার সঙ্গে। যিনি একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। প্যারালাল চরিত্রে আরেকজন নায়ক দরকার। আলমকে নিয়ে কাকরাইলে পরিচালক মঈন বিশ্বাসের অফিসে যান রোহান। মঈন বলেন, ‘আমিও তার নাম শুনেছি। ভাবলাম একটা সুযোগ দিয়েই দেখি। ’

‘মার ছক্কা’ দিয়েই আশরাফুল আলমের ‘হিরো’ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আলম বলেন, ‘প্রথম যখন মিউজিক ভিডিও বানাই তখন কেউই আমার সঙ্গে মডেল হতে চাইত না। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তাদের নিতাম। এখন অনেকেই আমার সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ চায়। সিনেমার পর্দায় নায়কের মারামারি দেখে একদিন অবাক হয়েছিলাম, এখন আমি নিজে নায়ক হয়ে মারামারি করেছি, লোকে সেটা দেখবে। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ’

ঠিক ১৮ বছর পর আলমের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। ‘মার ছক্কা’য় আলমের নায়িকা রাবিনা বৃষ্টি। শুধু মারপিট নয়, ভক্তরা আলমকে ছবির দুটি গানে নায়িকার সঙ্গে নাচতে-গাইতেও দেখবে।

আলমের বয়স এখন ২৮। বিয়ে করেছেন বগুড়ার মেয়ে সাদিয়া আক্তার সুমিকে। দুই সন্তান তাঁদের—মেয়ে আঁখি আক্তার আলোর বয়স পাঁচ, ছেলে আবির হোসেনের বয়স তিন।