আদিবাসী না উপজাতি : একটি পর্যালোচনা

বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালিত হচ্ছে আজ। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী জনগণকে ‘উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা সম্প্রদায়’ হিসেবে অভিহিত করেছে সরকার। সরকারি ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ তাদের মতো করে দিবসটি পালন করছে।

আদিবাসী নেতাদের মতে, বাংলাদেশে ৪৫টি জাতিসত্তার প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসী রয়েছে। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলের বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন। আদিবাসীদের দাবি এখন পর্যন্ত এড়িয়ে চলেছে সরকার।

আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র্র বোধিপ্রিয় লারমাও (সন্তু লারমা) জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্টে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ পালন করার পক্ষে। দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনেরও দাবি তার। তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘সংবিধানে আদিবাসীদের উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আদিবাসী জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণ নানামুখী শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে চলেছে। অব্যাহত শোষণ-বঞ্চনার কারণে তাদের আত্মপরিচয়, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সরকার কখনো রাষ্ট্রীভাবে আদিবাসী দিবস উদযাপন করেনি।’

সন্তু লারমার দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

অন্যদিকে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধ সরকারের। সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে দেশে আদিবাসীদের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বিভিন্ন সময় বিশেষ করে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ‘আদিবাসী’ শব্দটি বার বার ব্যবহার হয়ে থাকে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি সরকারি ঘোষণায় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান, আলোচনা ও টকশোতে ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহার পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আলোচনা ও টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের প্রতি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দটির ব্যবহার পরিহারের জন্য পূর্বেই সচেতন থাকতে অনুরোধ পর্যন্ত জানানো হয়েছে।

উইকিপিডিয়ায় প্রদত্ত তথ্য মতে, আদিবাসী জনগণকে প্রাথমিক দিকে প্রথম জাতি, পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, আদিম মানুষ, উপজাতি প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা হতো। আদিবাসী শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা ও তাদের অধিকার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক প্রচুর। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি।

সাধারণত কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অনুপ্রবেশকারী বা দখলদার জনগোষ্ঠীর আগমনের পূর্বে যারা বসবাস করত এবং এখনো করে; যাদের নিজস্ব আলাদা সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও মূল্যবোধ রয়েছে, যারা নিজেদের আলাদা সামষ্টিক সমাজ-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যারা সমাজে সংখ্যালঘু হিসেবে পরিগণিত, তারাই আদিবাসী। আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা একেবারেই অনুচিত, কারণ তারা কোন জাতির অংশ নয় যে তাদের উপজাতি বলা যাবে। বরং তারা নিজেরাই এক একটি আলাদা জাতি।

পাঁচটি মহাদেশে ৪০টির বেশি দেশে বসবাসরত প্রায় ৫,০০০ আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি। নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় যুগে যুগে এদের অনেকে প্রান্তিকায়িত, শোষিত, বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত হয়েছে এবং যখন এসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে তারা কথা বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা দমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের আলোচনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে এবং ১৯৯৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী বর্ষ’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক’ ঘোষণা করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্টকে ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়।

আদিবাসীদের অধিকার বিশেষ করে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিষয়টি অনেক রাষ্ট্রের কাছে স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ ওই সমস্ত দেশের জনগণের একটা বড় অংশই আদিবাসী। যেমন- কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, চীন, পাপুয়া নিউগিনি এবং অধিকাংশ লাতিন আমেরিকার দেশসমূহ। বাংলাদেশ সরকারের মতে ‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই’।

উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত আরেক তথ্য মতে, উপজাতি এমন জনগোষ্ঠীগুলোকে বুঝায় যারা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু নিজস্ব একটি আলাদা সংস্কৃতি গড়ে তুলেতে সমর্থ হয়েছে। মূলতঃ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে জাতি বা উপজাতি নির্দিষ্টকরণ হয়ে থাকে। উপজাতি বা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীসমূহ হচ্ছে- মগ, মুরং, মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, হাজং ইত্যাদি। বাংলাদেশে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর শীর্ষস্থানে রয়েছে চাকমা উপজাতির লোকজন।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র কিন্তু জনবহুল রাষ্ট্র। জনসংখ্যার অধিকাংশ বাঙালি হলেও অনেকগুলো উপজাতি গোত্রও রয়েছে। বাংলাদেশের উপজাতি জনগোষ্ঠির সিংহভাগ পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ, সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলে বসবাস করে। বিবিএস ১৯৮৪ সালের রিপোর্টে ২৪টি নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এবং মোট জনসংখ্যা ৮,৯৭,৮২৮ জন বলা হয়েছে। উপজাতিগুলো হলো- সাঁওতাল, ওঁরাও, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, রাজবংশী, কোঁচ, খাসিয়া, মনিপুরী, টিপরা, প্যাংখো, গারো, হাজং, মার্মা, চাকমা, তংচঙ্গা, চাক, সেন্দুজ, ম্রো, খিয়াং, বোম (বনজোগী), খামি, লুসাই (খুমি)।

পক্ষান্তরে ১৯৯১ সালের রিপোর্টে ২৯টি নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মোট ১২,০৫,৯৭৮ জন মানুষের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলো হলো- বংশী, বোম, বুনা, চাক, চাকমা, কোঁচ, গারো, হাজং, হরিজন, খাসিয়া, খিয়াং, খুমি, লুসাই, মাহাতো, মারমা, মণিপুরি, মুন্ডা, মুরুং, ম্রো, পাহাড়িয়া, প্যাংখো, রাজবংশী, রাখাইন, সাঁওতাল, তংচঙ্গা, টিপরা, ত্রিপুরা, ওঁরাও, উরুয়া। লক্ষণীয় বিষয়, এতে প্রচুর তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। যেমন টিপরা ও ত্রিপুরা, ম্রো ও মুরুং, ওঁরাও ও উরুয়া একই নৃ তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র হলেও রিপোর্টে এদের আলাদা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বলা হয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে প্রচলিত ইংরেজি বানানে ভিন্ন রীতির কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুনা, হরিজন নামে আলাদা কোনো নৃ তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী নেই। কোঁচ জনগোষ্ঠীর বসবাসের মূল এলাকা উত্তরবঙ্গ হলেও এ বিভাগে কোঁচদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসংখ্যা কমেছে। অন্য ১৭ জেলায় বেড়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৭২ জন। তবে বাস্তব অবস্থার সঙ্গে এই হিসাবের মিল নেই। ফলে আদমশুমারির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১ প্রতিবেদনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘এথনিক পপুলেশন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭টি। এগুলো হচ্ছে: চাকমা (চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮), মারমা (দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪), ত্রিপুরা (এক লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮), ম্রো (৩৯ হাজার চারজন), তঞ্চ্যঙ্গা (৪৪ হাজার ২৫৪), বম (১২ হাজার ৪২৪), পাঙ্খুয়া (দুই হাজার ২৭৪), চাক (দুই হাজার ৮৩৫), খিয়াং (তিন হাজার ৮৯৯), খুমি (তিন হাজার ৩৬৯), লুসাই (৯৫৯), কোচ (১৬ হাজার ৯০৩), সাঁওতাল (এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২), ডালু (৮০৬), উসাই (৩৪৭), রাখাইন (১৩ হাজার ২৫৪), মণিপুরি (২৪,৬৯৫), গারো (৮৪ হাজার ৫৬৫), হাজং (নয় হাজার ১৬২), খাসিয়া (১১ হাজার ৬৯৭), মং (২৬৩), ওঁরাও (৮০ হাজার ৩৮৬), বর্মন (৫৩ হাজার ৭৯২), পাহাড়িয়া(পাঁচ হাজার ৯০৮), মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০), মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২) ও কোল (দুই হাজার ৮৪৩)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এইচ কে এস আরেফিন এর মতে, এক সময় পৃথিবীব্যাপী নৃ-বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা উপজাতি (ট্রাইবাল, অ্যাবওরিজিন) ধরনের শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু এসব শব্দের ব্যবহার বাতিল হওয়া দরকার। কারণ কেউ জাতি কেউ উপজাতি এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘উপজাতি শব্দ ব্যবহার করলে অনেকটাই অধিকারবঞ্চিত মনে হয়।’

তার মতে, আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করলে তার একটি রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। এ ক্ষেত্রে অধিকারের বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দেয়। আদিবাসী মানে তারা এই মাটিরই সন্তান।

পররাষ্ট্র ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতীতের মতো বর্তমান সরকারও মনে করে, বাংলাদেশে কিছু ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আছে, আদিবাসী নেই। এমনকি জাতিসংঘের আদিবাসীবিষয়ক ফোরামের বৈঠকে অংশ নিয়েও এমন বক্তব্য দিয়েছে সরকারের প্রতিনিধি। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের আদিবাসীবিষয়ক স্থায়ী ফোরামের (ইউএনপিএফআইআই) নবম অধিবেশনে বাংলাদেশ মিশনের এক কর্মকর্তা আলোচনায় অংশ নেন। লিখিত বক্তবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই। তবে পর্যবেক্ষক হিসেবে ফোরামের কার্যক্রমে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজাতি কিংবা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন বাস করে। তাদের বেশির ভাগের অবস্থান দেশের তিন পার্বত্য জেলায়।’

২০০৮ সালের ১৯ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চিঠিতে আদিবাসী বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই বছর ৯ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, দেশে কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আছে। কোনো আদিবাসী (ইনডিজেনাস পিপলস) নেই। চিঠিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার বাসিন্দাদের দুটি ভাগে ভাগ করা হয়- একটি উপজাতি এবং অন্যটি অ-উপজাতি (বাঙালি)।

চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় এর মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের ঘোষণা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আদিবাসী অধিকারের স্বীকৃতির বিষয়টি বিশেষ কোনো সুযোগ নয়। কারণ দেশের বিশেষ অঞ্চলের ওই সব মানুষ রাষ্ট্র গঠনে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়নি। অন্যদিকে বিশেষ প্রেক্ষাপটে তারা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। কাজেই তাদের সমান অধিকারের সুযোগ দিতে হলে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে করে সমান অধিকার চর্চার তারা সুযোগ পায়। ‘সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি নেই’ এ ব্যাপারে সন্তু লারমার সঙ্গে একমত হলেও দেবাশীষ রায় মনে করেন, দেশের বিভিন্ন আইনে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের স্বীকৃতি রয়েছে।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্মোধনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার উপজাতি সম্মোধনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু সরকার আদিবাসী সম্মোধন করলেই আমরা খুশি হতাম।’

আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(খ) বর্ণিত `আদিবাসী` সংজ্ঞাটি এ রকম- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিজয় কিংবা উপনিবেশ স্থাপনকালে এই দেশে কিংবা যে ভৌগোলিক ভূখ-ে দেশটি অবস্থিত সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীদের উত্তরাধিকারী হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে `আদিবাসী` বলে পরিগণিত এবং যারা তাদের আইনসংগত মর্যাদা নির্বিশেষে নিজেদের জাতীয় আচার ও কৃষ্টির পরিবর্তে ওই সময়কার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আচার ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপন করে।’

অন্যদিকে উপজাতি সম্পর্কে আইএলও কনভেনশন-১০৭ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ ১(ক) অংশে বলা হয়েছে- ‘স্বাধীন দেশসমূহের আদিবাসী এবং ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বেলায় যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা জাতীয় জনসমষ্টির অন্যান্য অংশের চেয়ে কম অগ্রসর এবং যাদের মর্যাদা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে তাদের নিজস্ব প্রথা কিংবা রীতি-নীতি অথবা বিশেষ আইন বা প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ আদিবাসী হলো `সন অব দি সয়েল`। আর উপজাতি হলো প্রধান জাতির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র জাতি।

`আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র ২০০৭` অনুসারে তাদের ৪৬টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি বা সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। তা ছাড়া ঘোষণাপত্রের ওপর সব সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বসম্মত সমর্থন নেই। এ কারণে বাংলাদেশ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্রের ওপর ভোট গ্রহণের সময় তারা ভোটদানে বিরত ছিল। তবে যেকোনো অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে সরকারের। সংবিধান অনুসারে, সরকারপ্রধান প্রধান মানবাধিকার চুক্তির প্রতি অনুগত এবং উপজাতিদের অধিকার সমর্থন করে আসছে।

আদিবাসী শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে যা হবে : মনে করা হচ্ছে, আদিবাসী শব্দটি সংবিধানে সংযোজিত হলে ২০০৭ সালের `আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র` মেনে নিতে হবে; যা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। কারণ, ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ-৪-এ আছে- `আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চর্চার বেলায়, তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে ও তাদের স্বশাসনের কার্যাবলির জন্য অর্থায়নের পন্থা এবং উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার রয়েছে।` অর্থাৎ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলে ও পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার খাগড়াছড়ির গ্যাস উত্তোলন করে অন্য জেলায় আনতে পারত না। কারণ সেখানকার স্বশাসিত আদিবাসী শাসক নিজেদের অর্থায়নের উৎস হিসেবে সেই খনিজ, বনজ ও অন্যান্য সম্পদ নিজেদের বলে চিন্তা করত।

আবার অনুচ্ছেদ-৩৬-এ আছে, `আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর, বিশেষত যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে, তাদের অন্য প্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রমসহ যোগাযোগ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখার ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।` রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকর সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। ঘোষণাপত্রের এই নির্দেশ কোনো সরকারই মেনে নিতে পারবে না। কারণ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে; যা ক্রমেই সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত করবে।

জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্রের শেষ অনুচ্ছেদ-৪৬-এ সবার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে এবং এই কাজটি মহাজোট সরকারের গত আমলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুসারে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সমতা, বৈষম্যহীনতা, সুশাসন এবং সরল বিশ্বাসের মূলনীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের একাধিক অনুচ্ছেদ অনুসারে, আদিবাসীদের কোনো অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য বিষয়ে বাঙালিদের মতো তাদেরও সমান সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে রাষ্ট্র। এর আরেক ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে, উপজাতিদের `আদিবাসী` হিসেবে চিহ্নিত করলে কোটা সুবিধা বাতিল অনিবার্য হয়ে পড়বে। ফলে তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বাঙালি-উপজাতি সম্পর্কের মধ্যে বিরূপ ধারণা জন্ম নিতে পারে। মনে রাখা দরকার, এই ঘোষণাপত্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ সব দেশে বিপুলসংখ্যক নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভোটদানে বিরত ছিল রাশিয়া, ভুটান, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইউক্রেন, কলম্বিয়াসহ অনেক দেশ। অনুপস্থিত ছিল আরো অনেক উন্নত দেশ।

প্রসঙ্গত, ভারতে বসবাসকারী একই সম্প্রদায়ভুক্ত উপজাতিদের সেখানকার সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি। সংবিধানে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামকে উপজাতি অধ্যুষিত রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তথা উপজাতিগুলোর উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রণীত `ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন, ১৯৫৭` (কনভেনশন নম্বর ১০৭)-এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী এবং ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আবার সংশোধিত `ইন্ডিজেনাস অ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৮৯` (কনভেনশন নম্বর ১৬৯) গ্রহণ করে। এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়। এখানে ট্রাইবাল বা সেমি-ট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনো জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি অধিবাসীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

আদিবাসী নয়, উপজাতি কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাহাড়িদের বঞ্চনা ও ভূমি বেদখল তৎপরতার দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর উদ্যোগ দিতে হবে। আদিবাসীর ভূমি অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে `আদিবাসী` হিসেবে নয়, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে এসব দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি সরকার গ্রহণ করবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রায় এক-দশমাংশ জুড়ে চট্টগ্রাম। পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভূসম্পদ এ দেশের অন্তর্গত রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এ সম্পদ ব্যবহার করে জনগণ দেশকে আরো অগ্রসর করতে পারে। কিন্তু সেখানে ক্রমাগত জাতিগত দ্বন্দ্ব, সংঘাত, অন্তঃকলহ ও বিরোধ, নেতৃত্বের টানাপড়েন ও রেষারেষি সাধারণ নিরীহ পার্বত্যবাসীর অশান্তির কারণ হয়েছে। অনগ্রসর, পিছিয়েপড়া ও দরিদ্র মানুষ অনিরাপদ, উদ্বিগ্ন থাকে। এসব সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও শান্তিপূর্ণ মনোভাবের প্রতিফলন তাতে ঘটেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এ শান্তিচুক্তি বেশ প্রশংসিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি, অ-উপজাতি ও স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অগ্রগতি, বিকাশ, নিরাপত্তা, শান্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়। বিভ্রান্তি ও অনিরাপত্তার আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসে যুবশক্তি, বিচ্যুত মানুষ। শান্তিচুক্তির আওতায় জাতীয় জীবনের সঙ্গে অগ্রগতির স্বার্থে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার অনুমোদিত হয়। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও ইতিবাচক উদ্যোগে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পার্বত্যবাসীর স্বার্থ উৎসাহিত হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওতায় জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চলের অধিগ্রহণ-হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। প্রতিটি পার্বত্য জেলার পাঁচ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন পার্বত্য জেলা পরিষদ` গঠিত হয়। পার্বত্য জনসংহতি নেতা সন্তু লারমাকে চেয়ারম্যান করে ২৫ সদস্যভিত্তিক অন্তর্বর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিষয় তিনটি পাবর্ত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর ও নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়েছে। ফিরে আসা উপজাতিদের পুনর্বাসন, অর্থায়ন ও পুলিশবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে। উপজাতীয়দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও চাকরির জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়। জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত হয় `ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল, ২০১০`। বর্তমানে উন্নয়ন কর্মকা-ের ৯১ ভাগ উপজাতীয়দের জন্য এবং অ-উপজাতীয়দের জন্য ৯০ ভাগ বরাদ্দ আছে।

পাহাড়িদের বঞ্চনা ও ভূমি বেদখল তৎপরতার দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর উদ্যোগ দিতে হবে। আদিবাসীর ভূমি অধিকার-সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে `আদিবাসী` হিসেবে নয়, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে এসব দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবি সরকার গ্রহণ করবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকারবিষয়ক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারত সরকারও `আদিবাসী`র স্বীকৃতি দেয়নি। `আদিবাসী` ধারণাটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগেই সরকার সম্মত হবে না। উপজাতি অথবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী উন্নয়নের জন্য গৃহীত কর্মকাণ্ড বিষয়ে তাদের মতামত ও অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আদিবাসী হিসেবে নয়, বরং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে যে অধিকার রয়েছে তা যাতে আরো পরিপূর্ণ মাত্রায় বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। সবাইকে মিলেমিশে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তির পক্ষে বসবাস করতে হবে। এটা পরীক্ষিত যে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সংঘাতকে আহ্বান করলে কোনো পক্ষেরই শান্তি আসবে না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর