গাজীপুর সিটি: এবারও আজমতের প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গাজীপুরে গত সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন টঙ্গী পৌরসভার দীর্ঘদিনের মেয়র অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছিলেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী  উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। অনেক নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও জাহাঙ্গীরের ছায়া নির্বাচনজুড়ে তাড়া করেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে। মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক এবারও মনোনয়ন দৌড়ে আজমতের জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রথম নির্বাচনের পর চার বছর পার হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এই সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনের আগাম হাওয়া। ভোটার ও এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টাঙ্গানো হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিলবোর্ড, ব্যানার। কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে সরব। আর দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে বর্তমান মেয়র বিএনপির বলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা বেশি।

রাজনৈতিক আলোচনায় ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের  সভাপতি আজমত উল্লা খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া  মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিটির প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরন ও মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল মনোনয়ন চাইবেন।

দলীয় বিবেচনায় মেয়র প্রার্থীদের ভোট হবে বলে এই নির্বাচনে জয়-পরাজয় এই সিটি এলাকায় প্রধান দুই দলের  জনমতের জরিপ হয়ে যাবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী। আর এ কারণে সিটি নির্বাচন আগামী সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই প্রার্থী মনোনয়নে ভুল যাতে না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

গাজীপুরে বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে।  তবে গত নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।

সেবারের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে গেলেও এর একটা নেতিবাচক প্রভাব ফলাফলে পড়েছিল বলে নেতাকর্মীদের ধারণা। কেননা তৃণমূলে বেশ জনপ্রিয় জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন না পাওয়া কিংবা তার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়াটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তার সমর্থক-অনুসারীরা। যদিও জাহাঙ্গীর তখন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি নির্বাচন থকে সরে দাঁড়ান।

এবার জাহাঙ্গীর আলম মনে করছেন, দলীয় হাইকমা-ের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার মূল্যায়ন করবে দল।  তবে আজমত উল্লাহ খান আশা করছেন, রাজনীতিতে তার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা আর স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে বিবেচনায় নেবে দল। অবশ্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী চার নেতাই নিজেদের মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে আশাবাদী। তাদের সমর্থকরাও নানা মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের সমর্থকরা জানান, তিনি দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। দলে তার অবস্থান ও ত্যাগ, দুঃসময়ে দলকে সুসংহত করা, দলীয় সিদ্ধান্তে দলের প্রতি আনুগত্য তাকে এগিয়ে রাখবে। টঙ্গী পৌরসভায় বারবার নির্বাচিত মেয়র আজমত উল্লা খানকে এবারও মূল্যায়ন করা হবে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে।

গত নির্বাচনে মেয়র পদে হেরে গেলেও আজমত উল্লাহ দলকে আরো সুসংহত করতে নির্বাচনের পর সব সময়ই রাজনীতির মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান তার সমর্থকরা।

তবে দলীয় সূত্রমতে, গাজীপুরে আজমত উল্লা খান ও জাহাঙ্গীর আলম দুজনই আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় মেয়র প্রার্থী। তাদের মধ্য থেকে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে কে পাবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর।

অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের জানান, ‘এত বড় সিটি করপোরেশন পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মেয়রের প্রয়োজন। এসব চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। ’

গত নির্বাচনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মেয়র পদে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া জাহাঙ্গীর আলম  এবার কয়েক মাস আগে থেকে নির্বাচনী মাঠ গোছাতে কাজ করছেন। তিনি নগরে দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি ওয়ার্ডভিত্তিক নিজস্ব বলয় তৈরির চেষ্টা করছেন বলে জানান তার সমর্থকরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গত নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কথায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। এবার এর মূল্যায়ন হিসেবে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

এদিকে মেয়র মান্নানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুর রহমান কিরণ আর কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে মেয়র পদে নির্বাচন করে নগরবাসীর সেবা করতে চান। প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ‘আর কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে চাই না। দলীয় মনোয়ন পেলে এবার মেয়র পদে নির্বাচন করব।’

আওয়ামী লীগে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান সরকার রাসেল বলেন, ‘নগরবাসী চাচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে যেন কোনো দলাদলি না হয়। সে কারণে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই।’

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কর্মী-সমর্থক ও কাউন্সিলররা। তাদের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নুরুল ইসলাম নূরু। গতবার আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন। এবারও দলের সমর্থন চাইবেন। তবে নিজের চেয়ে বেশি চিন্তিত দলের মেয়র প্রদপ্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘মেয়র পদে নমিনেশন ভুল হলে নির্বাচনী ফল কী হয় বলা যায় না। আর এর প্রভাব পড়বে গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় এলাকায়।’

সিটি করপোরেশনের গত  নির্বাচনের পর ২২ মাস কারাগারে ছিলেন নির্বাচিত মেয়র। মেয়রের চেয়ারের বাইরে ছিলেন ২৮ মাস। আরো বেশ কয়েক মাস কেটেছে সাময়িক বরখাস্তের পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র আর নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে টানাটানিসহ নানা কারণে। মেয়র এম এ মান্নান কারাগারে ও সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক ও বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড করলেও যানজট, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় নাজেহাল নবগঠিত এ নগরবাসী।

এবার নির্বাচনে এটাকে কাজে লাগাতে চান আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পরিকল্পিত নগর হিসেবে গাজীপুরকে দেখার আগ্রহ ছিল নগরবাসীর। নির্বাচনের চার বছর পূরণ হলেও নগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৩০ লাখ লোকের প্রত্যাশা পূরণের জায়গা একেবারেই ফাঁকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর