হবিগঞ্জের হাওরে বর্ষায় পথ চলার ভরসা নৌকাই। বর্ষা শুরু হতেই নৌকার উপর নির্ভর হয়ে পড়ে হাওরের মানুষ। বর্ষার পূর্বেই নৌকা প্রস্তুত শুরু হয়। এখন পুরো বর্ষা। আশপাশের বাড়ি ও হাটবাজারে যেতে নৌকাই হাওরবাসীর একমাত্র উপায়।
বর্ষায় হাওরের চারদিকেই অথই পানি। মাঝখানে ভাসছে ঘরবাড়ি। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। এসব বাড়ির প্রায় প্রতিটিতেই রয়েছে একাধিক নৌকা।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, মাধবপুর, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় রয়েছে বিশাল হাওর এলাকা। বর্ষা এলে এখানের বাসিন্দাদের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে নৌকা।
হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর দিকে জেলার ভাটি অঞ্চলে নৌ-যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র কালারডোবা নৌকাঘাট। এ নৌকাঘাটে আলাপ হয় নৌকার মাঝি জুয়েল বয়াতির সাথে। তিনি জানান, বর্ষার এ সময়ে খাল-বিল-নদীতে পানি থৈ থৈ। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এই ঘাটের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ রয়েছে।
বর্ষার ভরা মৌসুমে সারাদিন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর থাকে এ নৌকাঘাট। সকাল হতে না হতেই দূরদুরান্ত থেকে যাত্রী ও মালবাহী ইঞ্জিন নৌকাগুলো ঘাটে এসে ভিড়তে থাকে। আবার অপরাহ্নের দিকে সবগুলো নৌকাই যাত্রী ও মালামাল নিয়ে ঘাট ছেড়ে যায়।
বর্ষাকালে এখান থেকে জেলার ভাটি অঞ্চলের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানেও যাতায়াত করা যায়।
চলতি বছর আষাঢ় মাস পর্যন্ত হাওরে বর্ষার আশানুরূপ পানি না হওয়ায় স্বাভাবিক নৌ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা গোলায় সংরক্ষিত বোরো ধান জেলা সদরের নিকটবর্তী চাউল কল বা আড়তগুলোতে বাজারজাত করতে পারছিলেন না। কালারডোবা নৌকাঘাট হয়ে পড়েছিল প্রাণ চাঞ্চল্যহীন। কিন্তু চলতি মাসের প্রথমার্ধে নদী ও হাওরে বর্ষার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় নৌ চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরা প্রতিদিন নৌপথে শত শত মন ধান জেলা সদরে প্রেরণ করছেন।
ইঞ্জিন নৌকা ও ঘাট এলাকায় কর্মরত শ্রমিকেরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জনসাধারণও নৌকাযোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসা যাওয়া করছেন। অনেকেই আবার এখন হাওর এলাকায় নৌ-ভ্রমণে যাচ্ছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে খোয়াই নদীর ঝালবাড়ি খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কালারডোবা নৌকাঘাটের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। শরৎকাল আসতেই খাল-বিল ও হাওরের পানি শুকিয়ে নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় নৌকাঘাট এলাকা থেকে তৈরি অস্থায়ী দোকানগুলো সরিয়ে নেয়া হলে নৌকাঘাট এলাকায় নেমে আসে নিরবতা।
জেলার বাহুবল গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের রউয়াইল এলাকার বাসিন্দা শ্রীকান্ত সরকার বলেন, ‘বর্ষায় আমাদের চিন্তা নাই। বাড়ি নৌকা আছে।’