পাসের হার কমে যাওয়া শুভ কিছুর ইঙ্গিতঃড. সিদ্দিকুর রহমান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এবার উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং পাশের হার কমে যাওয়াকে আমি খারাপ মনে করছি না। বরং যে হারে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আর জিপিএ-ফাইভ বাড়ছিল তাতে আমরা অনেকেই শঙ্কিত ছিলাম। কারণ যারা জিপিএ-ফাইভ পাচ্ছে তাদের অনেকেই ঠিক জিপিএ-ফাইভ পাওয়ার যোগ্য না। তার মানে গণহারে পাস বা জিপিএ-ফাইভ ছিলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য চিন্তার এক কারণ। এখন এসবের হার কমাতে বোঝা যাচ্ছে, ফলাফলের প্রকৃত চিত্র আসতে শুরু করেছে।

এবার দেখা যাচ্ছে, যারা প্রকৃত মেধাবী তারাই জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে। তাই এই কমে যাওয়ার মধ্যে আমি শুভ কিছুই দেখতে পাচ্ছি। তবে আমি এটাও চাই সবাই পাস করুক। আমি আরেকটা কথা বলতে চাই, দেশের সবাই বিএ-এমএ পাশ করলে দেশে আপনি কৃষক পাবেন না। ড্রাইভার পাবেন না। কিন্তু এর মানে এই না সবার শিক্ষার দরকার নেই। সবার জন্য ক্লাস এইট পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাটাকে এমন করা হোক, যেন সমাজের একটি অংশ জীবনধারণের মতো শিক্ষা নিতে পারে। মেধাবীরা অবশ্যই উচ্চ শিক্ষা নিবে। অন্যদের কেউ ভোকেশনালে যাবে। কেউ কারিগরি সাইডে যাবে। ফার্নিচার তৈরি, ঘর তৈরি-এসব বিষয়ে ট্রেনিং করবে। যথাযথভাবে এ ধরনের বিষয়ে যারা শিক্ষা গ্রহণ করবে, তারা বিভিন্ন সেক্টরে অবশ্যই ভালো করবে।

এবার বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হার বেড়েছে। মাঝে একটা সময় গেছে বিজ্ঞান পড়ার লোক পাওয়া যেত না। এখন সেটা বাড়ছে। এটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আশার খবর। কারণ বিজ্ঞানশিক্ষায় এখনও আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তাই এই পাসের হারটা আমাদের দক্ষ প্রকৌশলী, দক্ষ চিকিৎসক অর্থাৎ এই ধরনের ক্ষেত্রে সুদক্ষ উচ্চশিক্ষিত লোকবল তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবে। এই ধারার জনবল আমাদের অনেক দরকার। কারণ আমাদের দেশে এখনও গার্মেন্টস, কনস্ট্রাকশন সাইটে বিদেশি প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদরা কাজ করেন।

আমরা দেখছি, প্রচুর ছেলেমেয়ে বিএ, এমএ, বিবিএ, এমবিএ করে বসে আছে। এই অবস্থায় আমাদের জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারে সেভাবে কাজ করা ঠিক হবে না। অনেক বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও দরকার নেই। এখন কারগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বাড়ানো দরকার। যেখান থেকে এক বছর বা দুই বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়েই কাজ পেয়ে যাবে। যে ছেলেটা এসএসসি বা এইচএসসিতে জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে। সে তার বাবার টাকার জোরে হয়তো বিবিএ, এমবিএ করে ফেলতে পারবে। কিন্তু সে ভালো কোনো কাজ পাবে না। আবার কোনো ছোট কাজও সে করবে না, কারণ সে শিক্ষিত। এই কারণে সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীরা একটা সময় হতাশায় পড়ে যায়। শিক্ষিত এই বেকার শ্রেণি এক সময় আর ভালো থাকতে পারে না। কেউ নেশাগ্রস্থ হয়, আবার কেউ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে নেমে যায়।

গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় জাতীয় পরীক্ষাগুলোতে মেয়েদের সাফল্য আমাদের জন্য সুখবর। এবারও এইচএসসিতে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অনেক দিক থেকে এগিয়ে আছে। এর ফলে আমাদের মেয়েরা সর্বস্তরে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এখনতো মেয়েরা বিমান চালাচ্ছে, পুলিশের চাকরি করছে, সিভিল সার্ভিসের নানা ক্ষেত্রের কাজে অবদান রাখছে। নারী শিক্ষিত হলে সন্তান সুশিক্ষিত হবে। আলোকিত পরিবার তৈরি করতে পারবে আমাদের মেয়েরা। তাদের ঈর্ষণীয় সাফল্যে আমি আনন্দিত।

লেখক: শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইআরের সাবেক পরিচালক

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর