গত ২৯ বছর ধরে নৈসর্গিক দৃশ্য খুঁজে বেড়াচ্ছি”, বলেন ব্যার্ন্ড৷ ‘‘আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার ভিত্তি হল আবহাওয়ার পূর্বাভাস; পরিষ্কার আকাশ, সুন্দর আলো৷ কিন্তু ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময় প্রকৃতির নাটকীয় দিকটাও দেখেছি – আর তার ছবি তুলেছি৷ সেই সব গুরুগম্ভীর, রহস্যময়, বিষাদমলিন মুহূর্তের ছবি নানা সম্পাদকীয় বিভাগকেও পাঠিয়েছি৷ কিন্তু তারা সবাই মাথা নেড়ে বলেছে, না, ও সব ছবি চলবে না৷ সকলের শুধু সুন্দর ছবি চাই৷”
অন্ধকারে আলো অথচ অন্ধকারই আলোকে ফুটিয়ে তোলে৷ অন্ধকারের একটা নিজস্ব রূপ আছে – যেমন আল্পস পর্বতমালার মঁ ব্লঁ পর্বতশিখরের ল্য গ্রঁদ শোরাস – আলো-আঁধারিতে ভীতিময়৷ রিচেল-এর বিষয়বস্তু হলো তাই: আঁধার, প্রকৃতির নাটকীয় রূপ, যেমন শেক্সপিয়ারের নাটকে পাওয়া যায়৷ আমি শুধু বাভেরিয়ার এই পাহাড়ি এলাকাতেই সাত-আটবার ঝড়বৃষ্টির পিছনে দৌড়েছি – বাড়ির কার্নিশের নীচে কিংবা ঝোপঝাড়ের নীচে দাঁড়িয়ে – কিন্তু কোনো ভালো ছবি তুলতে পারিনি”, শোনালেন ব্যার্ন্ড৷‘‘তারপরে আসে কখেল হ্রদের উপর সেই চূড়ান্ত কালবৈশাখি, কোনোরকম বৃষ্টি ছাড়াই৷ অথচ এখানেই আমার বাস৷ আর এখানেই আমি আমার সেরা বজ্র-বিদ্যুতের ছবিগুলো তুলতে পেরেছি৷ তবে বহুবছর সময় লেগেছে৷”
পর্বতারোহী এবং আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি পাহাড় চেনেন; গেছেন হিমালয় থেকে পাটাগোনিয়ার লোফোটেন পর্বতমালা অবধি সর্বত্র৷ আবার খুব কাছেই: অস্ট্রিয়ার ও্যটসটাল উপত্যকায়৷ হিমবাহের গহ্বরের মধ্যে ঢুকে দেখা, সেখানে কী আছে ও তার ছবি তোলা ৷ কেননা এ এমন একটি বস্তু, যা উপে যাবে, হারিয়ে যাবে; আল্পস পর্বতমালার হিমবাহগুলির দিন ফুরিয়ে আসছে৷
পাহাড়ের ডাক ব্যার্ন্ড বলেন, ‘‘অধিকাংশ মানুষ বা পর্বতারোহী ম্যাটারহর্ন, গ্রোসগ্লকনার-এর মতো সুবিখ্যাত চুড়োগুলোর দিকে দৌড়ান, যাদের নাম সবাই চেনে৷ যাতে পরে অফিসে গিয়ে বড়গলা করে বলা যায়, ‘আমি ম্যাটারহর্নে চড়েছিলাম৷’ যত নির্জন পাহাড়, ততো গভীর সেই অনুভূতি৷ চড়া ঠিক ততটাই কঠিন, উচ্চতাও এক, তবুও…৷”
ব্যার্ন্ড রিচেল-এর ছবির বইটির নাম ‘‘ডার্ক মাউন্টেন্স”, ‘আঁধার পাহাড়’৷ ক্ষণভঙ্গুর, স্বল্পস্থায়ী৷ এংগাডিন-তে শেষ ঝড় যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে; সুইজারল্যান্ডের গ্রিন্ডেলভাল্ড হিমবাহ; যা কিছু ভগ্ন, রিক্ত, আহত, তাই যেন ব্যার্ন্ড রিচেলের ক্যামেরায় ধরা পড়ে৷ ডার্ক মাউন্টেন্স বইটিতে তার অন্য দিক, তার অন্ধকার দিকটিকেও দেখা যায় – যেন পাহাড়ের অন্য মুখ৷-ডয়েচেভেলে