হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোজার ঈদ যখন দেশের বাইরে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন কোথায় ঈদ উদযাপন করব, সেটা নিয়ে একধরনের সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করতে লাগল। একে তো প্রথমবারের মতো স্ত্রীসহ ভ্রমণ, দ্বিতীয়ত অনেক সাধের পাওয়া এক সপ্তাহ ছুটিটাকে কাজে লাগাতেই হবে। যেহেতু ব্যবসায়িক কাজে ভারত আমি প্রায়ই যাতায়াত করি এবং ভারতের বেশ কিছু জায়গাতেই আমি গিয়েছি তাই ভারত ভ্রমণ আমার কাছে খুব বিশেষ কিছু নয়। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল আমার। তবে, স্ত্রী যখন এসব বাদ দিয়ে কাশ্মির ভ্রমণের কথা বলল, তখন আমি রাজি হয়ে গেলাম।
কারণ, ভারত যাওয়ার ভিসা প্রক্রিয়া একদম সহজ করে ফেলাতে লাখ লাখ বাংলাদেশি ঈদ উপলক্ষে ভারত অভিমুখে ছুটছে। খবর পাচ্ছিলাম, কলকাতার নিউমার্কেট বাংলাদেশি ক্রেতায় ভরপুর। বাংলাদেশি মিডিয়ায় খবর বের হলো- এবারে বাংলাদেশের ঈদ বাজারের জৌলুশ হারিয়েছে ভারতগামী ক্রেতার কারণে। মনে মনে ভাবলাম-হতেও পারে। কারণ, কোনো এক পল্লী এলাকা থেকে সস্তা শ্রমের কল্যাণে ৫০০ টাকার পণ্য কিনে এনে আড়ংয়ের মতো ব্র্যান্ড যদি ৫০০০ টাকায় বিক্রি করে, তবে এর প্রভাব একদিন না একদিন পড়বেই। এবার থেকেই বোধহয় শুরু হলো। আশা করি-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এবারের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভোক্তাদের সন্তুষ্টির দিকে নজর দেবেন।
যাই হোক, লোকসানের প্রহর গোনা বাংলাদেশ বিমান ভারত অভিমুখী যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে কিছু পয়সা ইনকাম করতে চাইল। ঢাকা-কলকাতা অভিমুখে শিডিউলবিহীন একটা স্পেশাল ফ্লাইট চালু করল। ২৩ জুন, ২০১৭। সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলাদেশ বিমানের সেই স্পেশাল ফ্লাইটের যাত্রী হয়ে আমরা দুই জন কলকাতার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। এক ঘণ্টা চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে কাটানোর পর এবার সরাসরি কলকাতা।
কলকাতায় একদিন:-
কলকাতায় পৌঁছলাম বেলা একটায়। কল্লোলিনী কলকাতায় অবস্থান শুধুমাত্র এক রাতের জন্য। কারণ ২৪ জুন সকাল সাড়ে ছটায় দিল্লি হয়ে কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের ফ্লাইট আমাদের জেট এয়ারলাইন্সে। তাই কলকাতায় কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বাংলাদেশি ট্যুরিস্টদের আবশ্যিক গন্তব্য কলকাতা নিউমার্কেট সংলগ্ন মারকুইস স্ট্রিটে গেলাম ট্যাক্সি দিয়ে।
ডিকে ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে উঠলাম। ঈদের আর মাত্র তিনদিন বাকি। কিন্তু রাস্তাঘাটে বাংলাদেশি ট্যুরিস্টদের তেমন ভিড় লক্ষ্য করলাম না। ব্যাপার কি? আমি তো অবাক। পত্রিকায় শুনলাম এত বাংলাদেশি কলকাতা এসেছে শপিং করতে। আর আজ তেমন ভিড় নেই কেন? হোটেলের একজন কর্মী বললেন, ‘দাদা, যারা শপিং করতে এসেছিলো তারা অলরেডি শপিং করে চলে গেছে। আর যারা ঈদের ছুটি কাটাতে আসবে তারা আসতে শুরু করবে ঈদের পরের দিন থেকে। তাই, মাঝখানের ২/৩ দিন বাংলাদেশি পর্যটক কম থাকবে।’
হোটেলে ব্যাগ রেখে কলকাতা শহর দর্শনে বের হলাম ট্যাক্সি নিয়ে। কিন্তু তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। নিউমার্কেট থেকে গাড়ি পার্ক স্ট্রিটের দিকে যাত্রা শুরু করে ঐতিহ্যবাহী রেড রোডে গেলাম। এপাশে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ,আরেকটু সামনের দিকে বিশ্ব ক্রিকেটের নন্দন কানন ইডেন গার্ডেন। তারপর বিদ্যাসাগর সেতু পার হয়ে ওপারের হাওড়া জেলা। বৃষ্টি চলতেই লাগল। যেহেতু কলকাতায় আমাদের কোনো প্ল্যান নেই,তাই আবার মনোরম হাওড়া ব্রিজ হয়ে কলেজ স্ট্রিটে গেলাম। কফি হাউসে কতক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে এলাম মারকুইস স্ট্রিটের হোটেলে।
ভোরবলোয় এয়ারপোর্টে:-
২৪ জুন সকালবেলা। আজকে থেকে আমাদের প্রকৃত ভ্রমণ শুরু। একেবারে ব্যাক-প্যাক ট্রাভেলার নয় যদিও, ট্রলি একটা ছিল সাথে। সহধর্মিনীর প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। সে তো একেবারে উত্তেজনায় থরথর। নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ছটায় দিল্লির উদ্দেশে রওয়ানা দিল জেট এয়ারলাইন্সের সুপরিসর বিমান। দুই ঘণ্টা পর সাড়ে আটটায় দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করলাম আমরা।
দিল্লি এয়ারপোর্ট যে এত বিশাল হতে পারে তা আমার কল্পনাতেও ছিল না। ডমেস্টিক ডিপার্টচার থেকে ইন্টারন্যাশনাল লাউঞ্জে যেতে বাস সার্ভিস চালু আছে। এক টার্মিনাল টার্মিনাল থেকে আরেক টার্মিনালের দুরত্ব কোনো জায়গায় ১৫ কিলোমিটারের মতোও আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে দিল্লি এয়ারপোর্ট পুরোটা দেখতে পারলেও একটা ভ্রমণকাহিনির স্বাদ হয়ে যাবে। দুনিয়ার সমস্ত ব্র্যান্ডশপগুলো দিল্লি এয়ারপোর্টে হাজির। লাইব্রেরি থেকে শুরু করে খাবারের অজস্র দোকান, প্রসাধন থেকে পোশাক-কী নেই দিল্লি এয়ারপোর্টে?
নিখুঁতভাবে কার্পেটগুলো বিছান। শ্রীনগর যাওয়ার ফ্লাইট আরো তিন ঘণ্টা পরে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম-এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দিল্লি শহরে একটু ঘুরব। কিন্তু এয়ারপোর্টের বিশালতা দেখে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম-কিভাবে বের হবো আর কীভাবে আমাদের শ্রীনগরগামী ফ্লাইটের গেট নাম্বার ১৬ তে আবার ফেরত আসব? তার চেয়ে এয়ারপোর্টেই সময় কাটানোর ভালো ব্যবস্থা আছে। তাই, দিল্লী এয়ারপোর্ট ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।
চলবে…