ঢাকা ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

সকাল-সন্ধ্যা ঈদের নামাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:০১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭
  • ৩৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ   ফিরনি পায়েস, মাঠে গিয়ে নামাজ, পরিচিতদের সঙ্গে নতুন সাজে শুভেচ্ছা বিনিময়, একই মানুষ। সবকিছুকে নতুনভাবে সাজিয়ে একটা নতুনত্ব আনার চেষ্টা, “উদ্দেশ্য সম্ভবত মন আর পরিবেশকে রিস্টার্ট দেওয়া”।

ঈদ এমন ই হয়। ঈদকে এভাবে ব্যাখ্যা করা অনেকটা পানি দেখতে কেন কক্সবাজার যেতে হবে সেই প্রশ্নের সমান। ঈদ সাধারণ হোক কিংবা অসাধারণ হোক, ঈদ জীবনে বারবার আসুক।

ঈদের আনন্দটা শুরু হয়েছিল সেই শৈশবে, তবে ঈদেরও আগে বুঝেছি শবে বরাত, শবে কদর, হালুয়া, রুটি গোশত, নামাজ, সারা রাত কান্না করে ভাগ্য পরিবর্তন, আত্মীয়স্বজনের ভিড়, সবাই মিলে চাচ্চুদের বাসায় যাওয়া, অনেক খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

উৎসব উদযাপনের এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে আমি বেশ পরিচিত। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সেই ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বাড়িতে অনেক মেহমান।

সাধারণত ঈদের জামায়াতের পরেই আত্মীয়দের ভিড় বাড়তে থাকে, তবে সেবার ঈদে একটু আগেই লোকজনের সমাগম দেখা যাচ্ছিল। নাকি আমিই দেরি করে উঠেছিলাম!

নামাজ কি শেষ? তাহলে তো সবার গায়ে নতুন পোশাক থাকত, কিছু বাচ্চাদের ছাড়া কারও গায়েই নতুন পোশাক দেখছি না। শবে কদরের রাতে মামি, নানু, আম্মু সবাই একসঙ্গে কান্নাকাটি করে, তসবি পড়ে, মাঝে মধ্যে পাশের বাসার মহিলারাও আসে একসঙ্গে ইবাদত করার জন্য, আজও সবাই জড়ো হয়েছে। তবে আজ জড়ো হয়ে সবাই কাঁদছে না, কেউ কেউ কাঁদছে, ড্রয়িংরুমে অনেক বাচ্চারা খেলাধুলা করছে, ওরা সবাই ঈদগাহে যাওয়ার জন্য রেডি।

ঈদ উপলক্ষেই বোধ হয় হাসানের মা বাসায় এসেছেন। তিনি হাসান আর আমাকে একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়ে আসতে বলায় আমার ভেতরে একটা খচখচ শুরু হলো। হাসানকে তো আমার সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয় না। নানু আমাকে গোসল
করানোর জন্য নিয়ে গেল, নানু আজ বেশ যত্ন করে গোসল করাচ্ছে, করাবেই তো, ঈদের দিন বলে কথা। অন্যান্য দিন হলে নিজেই গোসল করতাম।

নামাজ শেষে শান্ত ঈদগাহে লোকজন কুশল বিনিময় আর কোলাকুলি তে মেতে উঠল, সবার মতো আমরা ছোটরাও কোলাকুলি করলাম। বাসায় সবাই আগের মতোই আছে, মেহমান বেড়েছে, তাদের সামনে খাবার দেওয়া হচ্ছে, যারা খাবার দিচ্ছেন তারা অনেকেই প্রতিবেশী, কেউ কেউ অপরিচিত, মেহমানরা সবাই আলোচনারত। বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই কারও মধ্যে, অপরিচিত একজন আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করল।

আমিও তাৎক্ষণিক তাকে সালাম করলাম, তিনি কিঞ্চিৎ হাসার চেষ্টা করলেন, তিনি বোধ হয় হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। পাঁচ শ টাকা সেলামি দিলেন, এত! পাঁচ শ টাকা সেলামি হাসান ছাড়া কেউ এ যাবৎ চোখে দেখেনি। হাসানের মামা কাতার থাকে, তিনি একবার ওকে পাঁচ শ টাকা দিয়েছিলেন, যাক বেশ ভালোভাবেই শুরু হলো।

দিনটা বোধয় ভালোই যাবে, সত্যি সত্যিই অন্যান্য ঈদের থেকে কয়েকগুণ বেশি সেলামি পেয়ে গেলাম, অন্যান্য ঈদে হাসানই সব থেকে বেশি সেলামি পায়, কিন্তু এবার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে সর্বমোট ১৭৫০ টাকা সেলামি তুললাম। এত লোকজনের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকতে ভাল্লাগেনা। তাই বাইরে বেড়িয়ে হাঁটছি।

দুপুরবেলা বোধ হয় খালামনিদের বাসায় দাওয়াত, অথচ খালামণি খালু দুজনকেই দেখে এলাম আমাদের বাসায়। পকেটে এতগুলো টাকা, কাউকে না দেখালে তো হচ্ছে না। একটা চিপস কিনে খেতে খেতে যাচ্ছিলাম রাফির বাসায়, পথেই পেয়ে গেলাম রাফি, চয়ন, সজিব কে।

অমনি শুরু হলো ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, আজকে সব জিনিসেরই ডবল দাম নিচ্ছে, দিচ্ছিলাম ও, প্রচুর খরচা করলাম। আব্বু যদি বাসায় থাকত, তাহলেই হয়তো বলত টাকাগুলো জমিয়ে রাখো, সারা দিন অনেক ঘুরে প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় বাসায় গেলাম। বাসায় ঢুকতে পারলাম না, এর মধ্যেই দেখা গেল অনেকজন বাসা থেকে বেড়িয়ে ঈদগাহ মাঠের দিকে যাচ্ছে, খালু আমাকেও সঙ্গে আসতে বললেন।

ঈদগাহে আবার নামাজের আয়োজন করা হয়েছে বেশ ভিড়ের মধ্যেও লোকজন আমাকে সামনে যাওয়ার জন্য পথ করে দিচ্ছিল। সকালে এমনটা হয়নি। একজন আমাকে দেখিয়ে বলল “এইডা পোলা” আরেকজন আবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, এমন অদ্ভুত আচরণে আমি অভ্যস্ত নই। আর ঈদের নামাজ দুইবার এর আগে কখনোই পড়িনি। বিরক্তিকর লাগছিল। আমি আর সামনে এগোলাম না, পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে গেলাম।

কারেন্ট নেই, মাইক্রোফোন ছাড়াই সামনের কয়েকজন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, পেছন থেকে কথাগুলো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আরে অদ্ভুত তো, সকালে তো শুধু ইমাম সাহেবই কথা বলছিলেন, আর এখন দেখছি মুসল্লিরা কথা বলছেন, ইমাম চুপ। না এবার ইমাম ও বলছেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শুরু হলো অদ্ভুত নামাজ।

কোনো মাথা নোয়ানো নয়, ঝোকানো নয়, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ডানে বামে সালাম ফেরানো হলো। শান্ত ঈদগাহ আবার গমগম করছে। তবে এবার কেউ কোলাকুলি করছে না। অধিকাংশ লোকজনই বেশ ব্যস্ত। আমি অপেক্ষা না করে বাসায় চলে এলাম।

বাসার অবস্থা আগের মতো নেই। অনেক দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল এই বাসায় ব্যাপক কান্নাকাটি চলছে। এলাকার মহিলারা প্রায় সবাই এখন আমাদের বাসায়, সবাই কাঁদছে। কারও কারও কাঁদার ভঙ্গি বেশ হাস্যকর। আর বড়রা কাঁদলে এমনিতেই হাস্যকর লাগে। কিন্তু কাঁদার কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

এর মধ্যে চাচী এসে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ” দেখছস আব্বা, বাপরে শ্যাষ দেহাডা দেখছস? ” আম্মুকে দেখলাম নানুর কোলে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছে, তার চুল পোশাক এলোমেলো, চোখের কোনায় শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

সকাল-সন্ধ্যা ঈদের নামাজ

আপডেট টাইম : ০৮:০১:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ   ফিরনি পায়েস, মাঠে গিয়ে নামাজ, পরিচিতদের সঙ্গে নতুন সাজে শুভেচ্ছা বিনিময়, একই মানুষ। সবকিছুকে নতুনভাবে সাজিয়ে একটা নতুনত্ব আনার চেষ্টা, “উদ্দেশ্য সম্ভবত মন আর পরিবেশকে রিস্টার্ট দেওয়া”।

ঈদ এমন ই হয়। ঈদকে এভাবে ব্যাখ্যা করা অনেকটা পানি দেখতে কেন কক্সবাজার যেতে হবে সেই প্রশ্নের সমান। ঈদ সাধারণ হোক কিংবা অসাধারণ হোক, ঈদ জীবনে বারবার আসুক।

ঈদের আনন্দটা শুরু হয়েছিল সেই শৈশবে, তবে ঈদেরও আগে বুঝেছি শবে বরাত, শবে কদর, হালুয়া, রুটি গোশত, নামাজ, সারা রাত কান্না করে ভাগ্য পরিবর্তন, আত্মীয়স্বজনের ভিড়, সবাই মিলে চাচ্চুদের বাসায় যাওয়া, অনেক খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

উৎসব উদযাপনের এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে আমি বেশ পরিচিত। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সেই ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বাড়িতে অনেক মেহমান।

সাধারণত ঈদের জামায়াতের পরেই আত্মীয়দের ভিড় বাড়তে থাকে, তবে সেবার ঈদে একটু আগেই লোকজনের সমাগম দেখা যাচ্ছিল। নাকি আমিই দেরি করে উঠেছিলাম!

নামাজ কি শেষ? তাহলে তো সবার গায়ে নতুন পোশাক থাকত, কিছু বাচ্চাদের ছাড়া কারও গায়েই নতুন পোশাক দেখছি না। শবে কদরের রাতে মামি, নানু, আম্মু সবাই একসঙ্গে কান্নাকাটি করে, তসবি পড়ে, মাঝে মধ্যে পাশের বাসার মহিলারাও আসে একসঙ্গে ইবাদত করার জন্য, আজও সবাই জড়ো হয়েছে। তবে আজ জড়ো হয়ে সবাই কাঁদছে না, কেউ কেউ কাঁদছে, ড্রয়িংরুমে অনেক বাচ্চারা খেলাধুলা করছে, ওরা সবাই ঈদগাহে যাওয়ার জন্য রেডি।

ঈদ উপলক্ষেই বোধ হয় হাসানের মা বাসায় এসেছেন। তিনি হাসান আর আমাকে একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়ে আসতে বলায় আমার ভেতরে একটা খচখচ শুরু হলো। হাসানকে তো আমার সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয় না। নানু আমাকে গোসল
করানোর জন্য নিয়ে গেল, নানু আজ বেশ যত্ন করে গোসল করাচ্ছে, করাবেই তো, ঈদের দিন বলে কথা। অন্যান্য দিন হলে নিজেই গোসল করতাম।

নামাজ শেষে শান্ত ঈদগাহে লোকজন কুশল বিনিময় আর কোলাকুলি তে মেতে উঠল, সবার মতো আমরা ছোটরাও কোলাকুলি করলাম। বাসায় সবাই আগের মতোই আছে, মেহমান বেড়েছে, তাদের সামনে খাবার দেওয়া হচ্ছে, যারা খাবার দিচ্ছেন তারা অনেকেই প্রতিবেশী, কেউ কেউ অপরিচিত, মেহমানরা সবাই আলোচনারত। বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই কারও মধ্যে, অপরিচিত একজন আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করল।

আমিও তাৎক্ষণিক তাকে সালাম করলাম, তিনি কিঞ্চিৎ হাসার চেষ্টা করলেন, তিনি বোধ হয় হঠাৎ আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। পাঁচ শ টাকা সেলামি দিলেন, এত! পাঁচ শ টাকা সেলামি হাসান ছাড়া কেউ এ যাবৎ চোখে দেখেনি। হাসানের মামা কাতার থাকে, তিনি একবার ওকে পাঁচ শ টাকা দিয়েছিলেন, যাক বেশ ভালোভাবেই শুরু হলো।

দিনটা বোধয় ভালোই যাবে, সত্যি সত্যিই অন্যান্য ঈদের থেকে কয়েকগুণ বেশি সেলামি পেয়ে গেলাম, অন্যান্য ঈদে হাসানই সব থেকে বেশি সেলামি পায়, কিন্তু এবার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে সর্বমোট ১৭৫০ টাকা সেলামি তুললাম। এত লোকজনের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকতে ভাল্লাগেনা। তাই বাইরে বেড়িয়ে হাঁটছি।

দুপুরবেলা বোধ হয় খালামনিদের বাসায় দাওয়াত, অথচ খালামণি খালু দুজনকেই দেখে এলাম আমাদের বাসায়। পকেটে এতগুলো টাকা, কাউকে না দেখালে তো হচ্ছে না। একটা চিপস কিনে খেতে খেতে যাচ্ছিলাম রাফির বাসায়, পথেই পেয়ে গেলাম রাফি, চয়ন, সজিব কে।

অমনি শুরু হলো ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, আজকে সব জিনিসেরই ডবল দাম নিচ্ছে, দিচ্ছিলাম ও, প্রচুর খরচা করলাম। আব্বু যদি বাসায় থাকত, তাহলেই হয়তো বলত টাকাগুলো জমিয়ে রাখো, সারা দিন অনেক ঘুরে প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় বাসায় গেলাম। বাসায় ঢুকতে পারলাম না, এর মধ্যেই দেখা গেল অনেকজন বাসা থেকে বেড়িয়ে ঈদগাহ মাঠের দিকে যাচ্ছে, খালু আমাকেও সঙ্গে আসতে বললেন।

ঈদগাহে আবার নামাজের আয়োজন করা হয়েছে বেশ ভিড়ের মধ্যেও লোকজন আমাকে সামনে যাওয়ার জন্য পথ করে দিচ্ছিল। সকালে এমনটা হয়নি। একজন আমাকে দেখিয়ে বলল “এইডা পোলা” আরেকজন আবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, এমন অদ্ভুত আচরণে আমি অভ্যস্ত নই। আর ঈদের নামাজ দুইবার এর আগে কখনোই পড়িনি। বিরক্তিকর লাগছিল। আমি আর সামনে এগোলাম না, পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে গেলাম।

কারেন্ট নেই, মাইক্রোফোন ছাড়াই সামনের কয়েকজন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, পেছন থেকে কথাগুলো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আরে অদ্ভুত তো, সকালে তো শুধু ইমাম সাহেবই কথা বলছিলেন, আর এখন দেখছি মুসল্লিরা কথা বলছেন, ইমাম চুপ। না এবার ইমাম ও বলছেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শুরু হলো অদ্ভুত নামাজ।

কোনো মাথা নোয়ানো নয়, ঝোকানো নয়, শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ডানে বামে সালাম ফেরানো হলো। শান্ত ঈদগাহ আবার গমগম করছে। তবে এবার কেউ কোলাকুলি করছে না। অধিকাংশ লোকজনই বেশ ব্যস্ত। আমি অপেক্ষা না করে বাসায় চলে এলাম।

বাসার অবস্থা আগের মতো নেই। অনেক দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল এই বাসায় ব্যাপক কান্নাকাটি চলছে। এলাকার মহিলারা প্রায় সবাই এখন আমাদের বাসায়, সবাই কাঁদছে। কারও কারও কাঁদার ভঙ্গি বেশ হাস্যকর। আর বড়রা কাঁদলে এমনিতেই হাস্যকর লাগে। কিন্তু কাঁদার কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।

এর মধ্যে চাচী এসে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ” দেখছস আব্বা, বাপরে শ্যাষ দেহাডা দেখছস? ” আম্মুকে দেখলাম নানুর কোলে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছে, তার চুল পোশাক এলোমেলো, চোখের কোনায় শুকিয়ে যাওয়া পানির দাগ।