হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার চার ঘণ্টার মাথায় পদত্যাগ করেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। এরপর দশ মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনো শূন্য পড়ে আছে তার পদটি।
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফালু সক্রিয় না থাকলেও বিএনপিতে তার গুরুত্ব বেশ। নেতাকর্মীরাও সমীহ করেন তাকে।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন ফালু। প্রায় চার মাস পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় ফালুকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালায় সংস্থাটি। কিন্তু তাকে পায়নি দুদক। শোনা গেছে চিকিৎসার জন্য তিনি দেশের বাইরে।
গত গত ৭ আগস্ট দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর ঘোষিত কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় টেলিভিশন স্টেশন এনটিভির অন্যতম মালিক মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। তখন তিনি বিদেশ ছিলেন। কিন্তু কমিটি ঘোষণার চার ঘণ্টা পর পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। বিষয়টি তখন রাজনীতির মাঠে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করে।
পদত্যাগপত্রে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করায় খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফালু বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওই পদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
পদত্যাগের পর দেশে ফিরলেও কখনো তাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যায়নি। তবে কী কারণে পদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পদত্যাগ করলেন সেই প্রশ্ন এখনো নেতাকর্মীদের মনে।
স্পষ্ট কোনো উত্তর না পাওয়া গেলেও দলের বিভিন্ন সূত্রমতে, মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি করলেও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় নন। এ ক্ষেত্রে ভাইস-চেয়ারম্যান পদটি সরাসরি রাজনৈতিক। তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম মূল হওয়ার কারণে তিনি রাজনৈতিক সংগঠন থেকে দূরে থাকতে চান।
মোসাদ্দেক আলী এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ঢাকার একটি উপনির্বাচনে সংসদ সদস্যও হন তিনি।
গত ১৫ মে ফালুর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়। তার সম্পদ বিবরণীতে ফালু ১৪৭ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩৮ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। এই সম্পদের মধ্যে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৮ টাকার সম্পত্তি তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দুদকের দাবি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় অভিযোগও এনেছে দুদক।
অন্যদিকে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার করতে গত ৩০ মে তার রাজধানীর ওল্ড ডিওএইচএসের ৫ নম্বর রোডের ৬৮ নম্বর বাসায় যায় দুদকের একটি টিম। কিন্তু বাসাটি তালাবদ্ধ পান সংস্থাটির কর্মকর্তারা। পরে তারা ফিরে আসেন।
তবে তিনি কয়েক দিন আগে দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এনটিভির চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু।
মোসাদ্দেক আলী ফালুর পদত্যাগের এত দিনেও শূন্যপদ পূরণ না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এক নেতার এক পদ নীতি কার্যকর করায় অনেকে একাধিক পদ ছেড়েছেন। কয়কজন পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এখনো তার কোনোটাই পূরণ হয়নি। কবে হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। বিষয়টি পুরোপুরি চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের এ নিয়ে কথা বলাও মনে হয় যুক্তিযুক্ত হবে না। তবে দ্রুত শূন্যপদ পূরণ করা উচিত বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।