হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে আসেন হাবীব-উন-নবী খান সোহেল। পরে সভাপতি হয়ে ২০০০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে করা হয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক দল বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন সোহেল।
২০১৪ সালের নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর ঢাকা মহনগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দিযে যে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়, সোহেলকে তার সদস্যসচিব করেন দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই থেকে নিজের কাঁধে গুরুত্বপূর্ণ তিন পদের ভার। গত বছরের ৬ আগস্ট বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন সোহেল। সবশেষ গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগ করে নতুন কমিটি দেন খালেদা জিয়া। ঢাকা দক্ষিণে সভাপতি করা হয় সোহেলকে।
সম্প্রতি বেইলী রোডে নিজের বাসায় দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার বোরহান উদ্দিন।
এই রমজান মাসে কী নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে?
সোহেল: রমজানে আসলে ইফতার অনুষ্ঠান নিয়েই আমাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এর বাইরে আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। তবে ইফতারের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। সবার সুখ-দুঃখ জানার সুযোগ পাচ্ছি।
ঢাকা মহানগরে আগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। আপনারা কবে নাগাদ শুরু করবেন?
সোহেল: জনগণের প্রত্যাশা অনেক। আশা করি ভালো কিছু হবে। আগামী দিনের কর্মকৌশল কী হবে, সব হয়তো বলব না। তবে আমাদের ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি দেয়া হয়েছে। বাকিটা ঈদের পরপরই গুছিয়ে ফেলব। এরপরই আমরা ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটিতে হাত দেব। দল গুছিয়ে আমাদের সামনে যেসব জাতীয় ইস্যু আছে, বিশেষ করে সামনে নির্বাচন আছে, সেটাই থাকবে সামনের দিকে। সরকার কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করতে চায়- যদি জনগণের প্রত্যাশার বাইরে ষড়যন্ত্র, পাতানো নির্বাচন করতে চায়, তাহলে জনগণের দাবি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে হবে।
আপনাদের কমিটিতে কাদের আনা হবে?
সোহেল: বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে মাঠে ছিলেন, চলমান পরিস্থিতির মধ্যে মাঠে থেকে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন, তারাই নেতৃত্বে আসবে। তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।
গত আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রচলিত আছে।
সোহেল: আমরা সরকারকে বাধ্য করতে পারিনি, এটা ঠিক। কিন্তু জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলাম বলেই তারা (সরকার) একদলীয় নির্বাচনে যায়নি। আন্দোলনের সফলতা এখানেই। এ ছাড়া সরকার জনগণের প্রত্যাশার বাইরে নির্বাচন করেছে বলে জনগণ সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আর বর্তমানে যে সরকার আছে, তারা নিজেদের নির্বাচিত দাবি করলেও বাস্তবতা কিন্তু তা নয়। এরা প্রশাসননির্ভর। এদের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই।
আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। যে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নেই, সেখানে বিএনপির অংশগ্রহণ অতীতেও ছিল না, ভবিষ্যতেও তেমন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।
সরকার বলছে সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে।
সোহেল: এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। তারপরও সরকার গায়ের জোরে নির্বাচন করবে, এটা কিন্তু মামাবাড়ির আবদার না। দেশ কারো নিজস্ব সম্পত্তি না। ১৬ কোটি মানুষের। জনগণ যেভাবে নির্বাচন চায় সেভাবে নির্বাচন হবে। এরপরও যারা জোর করে এখনো ক্ষমতায় আছে, আগামীতেও আসতে চায়, তাদের একদিন কঠিন বিচারের মুখোমুখি হবে। তাদের যে কী পরিণতি হবে এখনো এরা কল্পনা করতে পারছে না।
কিন্তু তার আগে তো জনগণের ভোটে বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে হবে।
সোহেল: আজকে পর্যন্ত আমাদের যে সাংগঠনিক অবস্থা, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে।
ঢাকার নেতাকর্মীরা আন্দোলনে থাকেন না- তৃণমূলের এমন অভিযোগ আছে। আপনি এটি কীভাবে দেখেন?
সোহেল: হ্যাঁ, এমন অভিযোগ আছে। কিন্তু যে ধরনের দমন-পীড়ন ঢাকার নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে গেছে, এখনো চলছে সেটাও সবাইকে বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার এখানে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। পৃথিবীর কোথাও বিরোধী দলের মিছিল দেখামাত্র গুলি করার ইতিহাস আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের নিপীড়নের মধ্যে আমরা আন্দোলনে পুরোপুরি সফল হব না, তা নয়। আমরা অবশ্যই সফল হব। হয়তো একটু সময় লাগবে।
সত্যের বিজয় অনিবার্য। কোনো অত্যাচারী জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে টিকে থাকতে পারেনি। এরাও পারবে না। ইনশাল্লাহ শিগগিরই চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে। অত্যাচারীরা বিচারের সম্মুখীন হবে।
বিএনপিতে নির্বাচনের প্রস্তুতির খবর শোনা যাচ্ছে। ঢাকার আসনগুলোতে প্রার্থী তালিকা তৈরি করছেন কি?
সোহেল: কে কোথা থেকে নির্বাচন করবেন সেটা দলের বিবেচনায় আছে। কাজেই এগুলো এখন আমরা মাথায় আনছি না। কিন্তু আমাদের মূল চিন্তা সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবি আদায় করা। দাবি আদায়ের পরদিনই নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুত বিএনপি।
অনেকে বলছেন, চেয়ারপারসনের পছন্দের কারণেই একই সময়ে আপনি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।
সোহেল: আমাকে যখন যে পদ দেয়া হয়েছে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। সফল হয়েছি না ব্যর্থ হয়েছি, সেটা দল মূল্যায়ন করবে। আর চেয়ারপারসন দলের সব নেতাকর্মীকে পছন্দ করেন। সবাইকে সমানভাবে ভালোবাসেন তিনি। দল পরিচালনা করতে গিয়ে কাকে দিয়ে কোন কাজ হবে সেই সিদ্ধান্ত চেয়ারপারসন দেন। আমাকে কোনো দায়িত্বে রাখলেও খুশি, না রাখলে অখুশি না। তবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়।
সামনের দিনগুলোতে দল ও নেতাকর্মীদের নিয়ে কী ভাবছেন?
সোহেল: বিএনপির নেতাকর্মীসহ ১৬ কোটি মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন সামনে এগোনোর পালা। জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে সরকার। সেই রকম একটি পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শিগগির জনগণকে নিয়ে আমরা বিজয় মিছিল করব।