প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই আহমেদ কামালের খোঁজ রাখে না কেউ। রাজধানীর ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ৪০২ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের এই ছোট ভাই। জিয়াউর রহমানের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র তিনিই বেঁচে আছেন। ৬৮ বছর বয়সী আহমেদ কামাল উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ নানা রোগে আক্রান্ত। অভিমানী কামাল সাধারণত গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেন না। অবশ্য গতকাল বিকালে দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে অল্পবিস্তর কথা হয় তার। তখনই কথার ঝাঁপি খুলে দেন তিনি। স্বল্পভাষী আহমেদ কামাল অনেকটা আক্ষেপের সঙ্গেই বলেন, ‘বিএনপি আজ জিয়ার আদর্শে নেই। এই প্রজন্মের তরুণদেরই শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। জিয়ার আদর্শ আজ বেঁচে থাকলে দেশে ঘুষ, দুর্নীতি কিংবা দুঃশাসন থাকত না। জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত বিএনপি। তরুণরাই এখন ভরসা।’ ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশ আজ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ চলছে না। আইনের শাসন ও গণতন্ত্রে ফিরে যেতে হলে জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।’
২৫ জুলাই আহমেদ কামালকে ইব্রাহীম কার্ডিয়াকের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। এর আগে অসুস্থ বোধ করলে তিনি মনোয়ারা হাসপাতালে ২৩ জুলাই ভর্তি হন। তিনি এখন ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। গতকাল তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই সুস্থবোধ করছেন বলে জানান তিনি। দু-এক দিনের মধ্যেই তার বাসায় ফেরার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আহমেদ কামাল বলেন, ‘এখন আমি কিছুটা সুস্থবোধ করছি। দেশবাসীর দোয়া চাই। সুস্থ হলে আমি দেশের সেবায় নিজেকে সমর্পণ করব।’ অকৃতদার আহমেদ কামাল রাজধানীর বাসাবো থানাসংলগ্ন একটি বাসায় একাকী জীবনযাপন করেন। ব্যাচেলর জীবনকেই স্বাচ্ছন্দ্যময় মনে করেন তিনি। ওই বাসার ঠিকানাও কাউকে দিতে চান না। চাকরিজীবনে সৎ ও দেশপ্রেমিক ছিলেন আহমেদ কামাল। বাসাবোয় তার ভাতিজা শরিফুল ইসলাম ডন ও তার বন্ধু মনজুরুল ইসলাম নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন। গতকালও হাসপাতালে দেখা যায় তাদের। তারা আহমেদ কামালের চিকিৎসাসহ সব কিছুরই তদারকি করছেন। এ ছাড়া সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল গতকালও আহমেদ কামালকে দেখতে হাসপাতালে যান। অসুস্থ কামালের পাশে দীর্ঘ সময় বসে তার চিকিৎসার খোঁজখবরও নেন।
এ প্রসঙ্গে মনজুরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত আহমেদ কামালের চিকিৎসা বাবদ ইব্রাহীম কার্ডিয়াকে ৭৯ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। এ ছাড়া মনোয়ারা হাসপাতালে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো বকেয়া পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত এসব টাকার কোনো সুরাহা হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে বিএনপি নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেখে আসেন আহমেদ কামালকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামও বারডেমে ভর্তি। একসঙ্গে ২৭ জুলাই অসুস্থ হয়ে বারডেমের বিপরীত পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিএনপির এ দুই নেতাকে দেখতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ আহমেদ কামালের খোঁজখবরও নেন বলে জানা গেছে। আহমেদ কামাল বলেন, ‘দেশে সুস্থ রাজনীতির জন্য তরুণ নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতেই হবে। দেশের উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। বর্তমানে যেভাবে দেশ চলছে তাও মঙ্গলজনক নয়। এভাবেও একটি দেশ চলতে পারে না।’ নিজের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান আহমেদ কামাল। সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন আর জিয়া পরিবারের কেউ আহমেদ কামালের খোঁজখবর নেন না। আগে মাঝেমধ্যে তারেক রহমান খোঁজখবর রাখলেও লন্ডনে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ নেই আহমেদ কামালের সঙ্গে। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও নেই তার কোনো যোগাযোগ। বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাক্সক্ষীরাই এখন আহমেদ কামালের ভরসা। জিয়াউর রহমানের ছোট ভাই সর্বশেষ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ডিরেক্টর ছিলেন। সেখান থেকে অবসরে যাওয়ার পর ঢাকায় একাকী জীবন বেছে নেন। অবশ্য অনেকটা অভিমানেই জিয়া পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না তিনি। জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকেও তার খোঁজখবর নেওয়া হয় না বলে তার দেখভালের দায়িত্বে থাকা একজন অভিযোগ করেন। এতে অবশ্য আহমেদ কামালের কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানান তিনি। বিএনপির নেতারাও জিয়াউর রহমানের ভাইয়ের খোঁজখবর রাখেন না। অসুখে-বিসুখে কেউ তার পাশে দাঁড়ান না। কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন- জানতে চাইলে অনেক নেতাই বলেন, জানি না। গত মার্চের শেষের দিকে জিয়াউর রহমানের সেজ ভাই খলিলুর রহমান বাবুল (৭১) ওয়াশিংটনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাবুলকে ওয়াশিংটনেই দাফন করা হয়।