আমি জানি আমার এই লিখা অনেকের পছন্দ হবে না । আবার অনেকেই বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করে আমায় বিব্রত করার চেষ্টা করতেও দ্বিধান্বিত হবেন না , তবু আমাকে যে বলতেই হবে … আর যে চুপ থাকতে পারছিনা কি করবো বলুন ! না হলে যে বিবেক আমায় ছাড়বে কেন … ??
আমি নিজে বঙ্গবন্ধুর ভক্ত এটা আশা করি কম বেশী সবাই জানেন , তাই বলে দল কানা! সেটা ভাবলে কিঞ্চিত ভুল হবে । আমি সত্যির পথে আছি এবং আজীবন থাকতে চাই আর সে কারনেই যার যতো টুকু দোষ আমি তা বলতে ভঁয় করিনা । তাই আসুন আগে নিজেদের ভুল গুলো জানি ……।
ছাত্রলীগ এর আপাদমস্তক সবাই যে একেবারে ধোঁয়া তুলশী তা কিন্তু নয় । বরং অতি উৎসাহী কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধুর সৈনিকের বেশ ধরে দেশের অনেক জাগায় নানা ধরণের অপকর্ম ইতোমধ্যে করেছে এবং এখনো করে চলছে সেটা যে কতোখানি সত্যি তা বোধ করি পাগলেও বুঝে । আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কে মনে প্রানে ধারণ করি বলে অতি উৎসাহী সেই মানুষ গুলোর মিথ্যে প্রশংসা করবো এটা ভাবার যেমন কারণ নেই , আবার ঠিক উল্টো দিকে ছাত্রলীগের ভালো মানুষ গুলোর বিপক্ষে থাকবো তাও নয় । ছাত্রলীগ যে আওয়ামী লীগের ইয়ং ভার্সন এটা আজ কাল অনেক চেতনা ব্যাবসায়ীরা ভুলে যেতে বসেছেন । অবশ্য তার কিছু কারণ ও আজকাল সবাই মোটামুটি জানেন তাই এই ব্যাপারে আর আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষ না ই গেলাম । সেটা বলবেন টিভি টকশো’ র পণ্ডিতগণ ।
আমি আসি আমার নীড়ে … গণজাগরণে … হুম পুরনো কিছু কথা না তুল্লে যে আজ আর হচ্ছে না । সংগত কারণেই কিছু পুরনো কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্ল্যেখ আমাকে করতেই হবে তা নাহলে আমার তথ্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আর সেটা আমি নিজেই মানতে পারবো না তাহলে সবাই মানবে এই আশা আমি করবো কি করে ?
গণজাগরণ মঞ্চের শুরুর কথা সবাই জানেন তাই অই দিকে আর যাচ্ছিনা । ইমরান এইচ এর উত্থান ও সবাই জানেন । কিন্তু শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কম্যান্ড যে সেই আন্দোলনের কতোখানি ভুমিকা রেখেছিল সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না, অথবা কিছু মানুষ জানলেও শুধু ক্যামেরার সামনে বড় বড় কথা বলতে দেখেন নি বলে ভুলেই গেছেন । ওখানে এইচ রা যেমন ফেম চেয়েছেন জনগণ ও তাঁদের নিরাশ করেননি প্রাণ উজার করা ভালোবাসা আর আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন তেমন ভাবেই । কিন্তু কথায় বলে না “ডোবার ব্যাঙ পুকুরে গেলে খেই হারিয়ে ফেলে ” সেখানে ও ঠিক তাই হয়েছিল তাও সবাই দেখেছেন । গ্রুপ থেকে প্রকৃত সহ যোদ্ধাদের ছাঁটাই করেছেন নিজের অস্তিত্ব কে মজবুত করার স্বার্থে ।
শুরুর কিছু দিন পর থেকেই ধান্দাবাজিটা চলছিল ভেতরে ভেতরে কিন্তু এতই চতুরতার সাথে সে কাজ গুলো করছিলেন যে বাহিরে থেকে বুঝতে পারবে সে সাধ্য কারো নেই । কিন্তু এই ছাত্রলীগের কিছু ভালো পোলাপান সেটা ধরে ফেলেছিল । আর তখন থেকেই এই ছাত্রলীগের প্রতি ইমরান এইচ গ্রুপের মনে মনে রাগ জমছিল , কিন্তু ছাত্র লীগ আর আওয়ামীলীগ যে এক ই ঘরের দুই সন্তান তা তো ওরা জানে ই যার প্রমাণ তোফায়েল আহমেদের মঞ্চে যাওয়ার পরের ঘটনা গুলো মনে করলেই বুঝতে পারবেন । কিন্তু পরক্ষনেই যখন টের পেলো ইউনিভার্সিটি এলাকায় ছাত্রলীগ এর সাথে ঝামেলা করে তেমন সুবিধা করতে পারবেনা । এদিকে দেশের মূল ক্ষমতায় স্বয়ং আওয়ামীলীগ সরকার তখন আবার নিজেরা নিজেরা এসেই উপরে উপরে ঝামেলা মিটানোর ভান করলো আর হ্যাঁ গণজাগরণ মঞ্চের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কম্যান্ড মানে আমাদের গ্রুপ ১০০ শতাংশ আওয়ামী লীগ আমাদের মধ্যে কোন বাম/পাম নেই শুধুই “জয় বঙ্গবন্ধু” গ্রুপ ।
তখন আমাদের মঞ্চ থেকে জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান উচ্চারিত হওয়ায় আমাদের মাইক খুলে নিয়ে গিয়েছিল নানান অজুহাত দেখিয়ে আর আমরাও যুদ্ধ নয় শান্তির কথা চিন্তা করে চুপ থেকেছি । কারন আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল যে কোন মূল্যে আন্দোলনের ঐক্য ধরে রাখতে হবে । এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রজন্ম তাই করেছি । তার পরেও শুনতাম মেহেদী কে ইমরান এটা সে টা বলেছে কিন্তু আমি বরাবরই মেহেদী কে বুঝিয়েছি বাদ দাও ওর কথায় অতো পাত্তা দেওয়ার কিছু নাই আমরা যা কোরতে এসেছি তাই করবো , এবং সেটা ই করেছি । এদিকে মাসের পর মাস গড়াতে থাকে আর ইমরান এইচ বড় নেতা বনে যায় … সেই সাথে তার ব্যাবসা ও রমরমা হয়ে ওঠে এদিকে অর্থ বৃদ্ধির সাথে সাথে তার গ্রুপের সদস্য ও পরিবর্তন হতে থাকে । এদিকে মেহেদী বা আমাদের মধ্যে কেউ ওদের সাথে কোন রকম বিবাদে না জড়িয়ে চুপ হয়ে যাই আর আমাদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালাতে থাকি । আমরা আওয়ামী লীগ এর সবাই কে আমাদের অংশে রাখি এবং যাতে জামাত / শিবির বা ওদের দোসরদের মধ্যে কেউ এসে মুল মঞ্চ সহ আসে পাশে কেউ কোন রকম ঝামেলা বাধাতে না পারে সে দিকে সতর্ক পাহারা দিতে বলি ।
ততদিনে চেতনা ব্যাবসায়ী বিভিন্ন মহল এসে যুক্ত হয় ইমরান এর সাথে ঝাপিয়ে পরে আন্দোলনের নামে চান্দাবাজির ধান্দায় , বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প পতিদের কাছে নামে বেনামে টাকা চেয়ে টেলিফোন যেতে থাকে । যে টাকা দিতে অসম্মতি জানায় তাঁকে রাজাকার উপাধি দিয়ে মঞ্চ থেকে শ্লোগান দেওয়া হবে বলেও হুমকি দিতে থাকে । আর সে সময় আসলেই গন জোয়ার দেখে অনেকেই সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে যায় , পাছে তার নামের আগে রাজাকার নামক শব্দটা না জুড়ে যায় সেই ভয়ে তাঁরা টাকা বিলাতে থাকে । তবে হ্যাঁ অই টাকার সব ই যে ইমরান এর কাছে গেছে তা কিন্তু নয় , বরং পাশে পাশে যে সব সুবধাভোগী গ্রুপ ঘুরত তাঁদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যেতো । আর এইচ তখন নেতা হলেও এতো বিচক্ষনতা কই যে সব দিক একা সামাল দিতে পারবে ? তাই হরি লুটের মালের মতো যে যেভাবে পেরেছে কামিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু প্রকৃত যারা সত্যিকারের আন্দোলনকে ভালোবেসে ওখানে দিন রাত পরে থাকতো তাঁরাও বাইরের এসব ধান্দা সম্পর্কে একেবারেই ধোঁয়ার মধ্যে ছিল । কারন ওরা তো সত্যিকারের দেশপ্রেমী তাই ধান্দার দিকে খেয়াল ও ছিল না ।
তখন ই একদিন এইচ দের গ্রুপের একজন জাতীয় সংসদের এম পি দের ক্যাফেটরিয়ায় বসে এক মন্ত্রীর পি এস এর সাথে টাকা পয়সা সম্পর্কিত গল্প করছিল । তখন অধিবেশন চলছিল আর আমিও আমার কাজ সেরে ওখানে চা খেতে ঢুকেছি কিন্তু পাশে বসা একজন কে গণজাগরণ বিষয় কথা বলতে শুনে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পরে গেলো অই ধান্দাবাজের সাথে । ওমনি আমায় দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে মন্ত্রীর পি এস কে আমায় দেখিয়ে বলল “ঐক্য আপা কে জিজ্ঞাসা করে দেখুন আমারা দিন রাত কতো কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে ওখানে আন্দোলন করছি শুধুই সরকারের স্বার্থে ” । আর যায় কই সাথে সাথে আমি উত্তর দিলাম ” ভাই বলুন সরকারের স্বার্থে নয় দেশকে ভালোবেসে আর সরকার আমাদের আন্দোলনের সাথে আছে, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এটা আমাদের প্লাস পয়েন্ট ।”
তখনি আমি রুদ্র সাইফুল নামের এক আন্দোলন এর সৈনিক এর কাছে গল্প শুনেছিলাম ওদের মধ্যে কে যেন একজন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি থাকার মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে ধান্দা করেছে ( তবে হ্যাঁ রুদ্র সাইফুলের কথার সত্যতা আমি নিশ্চিত কোরতে পারবো না কারন ওটা আমি নিজে কনফার্ম নয় ) ।
এদিকে সাধারণ কর্মীরা কিন্তু সত্যি খেয়ে না খেয়ে এমনকি ৩/৪ দিন এক নাগারে না ঘুমিয়েও রাস্তায় পরে ছিল গোসল আর বাথ রুম সার তো কখনো বারডেম হাঁসপাতালে , কখনো বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল এ আবার কেউ কেউ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন হলে , চারুকলায় , আবার কখনো শাহাবাগ থানায় ও । আর তথাকথিত নেতা আর কিছু চামণ্ডা তখন থাকতেন রূপসী বাংলা হোটেলের বিলাশ বহুল রাজকীয় কামরায় । কিন্তু মাঝে মধ্যেই ওখানে পেট পূর্তি খেয়ে এসেও তাঁরা আন্দলনের পোলাপানদের সাথেও অভুক্তের অভিনয় তা ভালোই করতেন সবার সাথে বসে নিজে খাবার ভাগ করে খাইয়েছেন । আর চেহারায় রাতজাগা ভাব বুঝানোর জন্য ও নাকি কি সব পদ্ধতি আছে সে সব করতেন এটা অবশ্য ডাক্তার ভালো জানেন ।
আর তখন আমাদের আন্দোলনের সমর্থন জানাতে জাতীয় সংসদের শুধু মন্ত্রী , এম পি নয় বরং সেক্রেটারি , এডিশনাল সেক্রেটারি , জয়েন সেক্রেটারি, ডেপুটি সেক্রেটারি সহ মাননীয় স্পীকার , ডেপুটি স্পীকার এর প্রতিনিধিগণ প্রায় প্রতিদিন ই জেতেন আমাদের মানসিক সহানুভুতি যোগাতে বাংলাদেশ টেলিভিশন এর ডিজি সাহেব নাকি ঘুমাতেই পারতেন না আমাদের আন্দোলন এর সবাই কে এক নজর না দেখতে পারলে। আর তখন সে সময়ের সংসদের ডেপুটি স্পীকার মহোদয়ের নিজের একটা সংগঠনের নিজস্ব প্যান্ডেল ও সেখানে চলছিল যেখান থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি ওর স্যালাইন বিস্কিট সহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করা হতো যার যোগান দিতেন ডেপুটি স্পীকার মহোদয় ।
আন্দোলন যখন মানুষের হৃদয়ের অংশ হয়ে উঠেছে ওদিকে ধান্দাবাজ রা তখন নিজের আখের গুছানর কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে সরকারের মদদ আর সহানুভূতির আড়ালে । বিভিন্ন টিভি চ্যানেল গুলো কিন্তু সে খবর আপনাদের দিতে পারেনি কারন তখন তাঁরাও ছিল স্রোতের সাথে মিশে এইচ এর প্রচারনায় ব্যাস্ত । ……… আজ এটুকুই কাল আবার লিখবো … এম্নিতে পুরানো প্যাঁচাল আর ভালো লাগবে না কিন্তু ভেতরের সত্যি গুলো না জানলে সবাই সরকার / আওয়ামীলীগ বা ছাত্র লীগ কে শুধু ভুল বুঝে যাবেন , তাই বাধ্য হয়ে কিছুটা জানাতেই আমি মুখ খুলেছি …।। সাথে থাকুন আরও আছে …… কেউ কেউ হয়তো বলবেন এই গুলা তো জানি নতুন কিছু বলুন তাঁদের বলছি নতুন ও আছে একটু অপেক্ষা করুন …
লেখিকা: সাংবাদিক
(চলবে…)