একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধরী, কাদের মোল্লা, কামরুজ্জামানসহ আরো কয়েকজনের। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন রাজাকার শিরোমনি গোলাম আযম। কিন্তু গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলের নিশ্চিত করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র।
পূর্বপশ্চিমকে সূত্রটি জানিয়েছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করতে যুদ্ধাপরাধীরা ছেলে-মেয়েরা ব্যাপকভাবে ষড়যন্ত্র করতে পারে। এ লক্ষ্যে সরকার বেশ আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও তার স্ত্রীকে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া গোলাম আযমের ২ নাতনীর ওপরও দৃষ্টি রাখা হয়েছে। যদিও গোলাম আযমের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় আবদুল্লাহিল আমান আল আযমীকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জামায়েতের আরেক সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর চার ছেলে এবং দুই মেয়েসহ মোট ছয় সন্তাননের সবাইকে গোয়ন্দা নজরদারিতে আনা সম্ভব হয়নি। কারণ তাদের কয়েকজন বিদেশে রয়েছে। তবে দেশে অবস্থানরত সবার ওপরই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিজামীর সন্তানদের মধ্যে সবার বড় মেয়ে মোহসিনা ফাতেমা। তিনি পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। আর মোহসিনা ফাতেমার স্বামী সাইফুল্লাহ মানসুর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিটিভির সংবাদ পাঠক ছিলেন। তবে মহাজোট সরকার ক্ষমাতায় আসার পর তিনি আর সুবিধা করতে পারেননি। বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
বড় ছেলে ড. নাকিবুর রহমান পড়ালেখা করেছেন মালয়েশিয়ার আন্তজার্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ করোলিনা ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই আছেন তিনি। তবে দূরে থাকলেও দেশ বা দেশের রাজনীতি নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে সর্বদাই ব্যস্ত তিনি ।
দ্বিতীয় ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। রাবেয়া ভূঁইয়া একাডেমীতে আইন বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে লন্ডন গিয়ে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ ছাড়া নিজামীর এই ছেলে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকেও কামিল পাশ করেছেন। ছেলেদের মধ্যে কেবল নাজিব মোমেনই দেশে অবস্থান করছেন। তিনি বর্তমানে হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
ডা. নাইমুর রহমান খালেদ। তিনি নিজামীর তৃতীয় ছেলে। পড়াশোনা করেছেন পাকিস্থানের একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে অস্টেলিয়ায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। চিকিৎসা সেবায় তিনি বেশ মনযোগী হওয়ায় দেশ বা দেশের রাজনীতি নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই তার।
ছোট ছেলে নাদিম তালহা মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়ালেখা করছেন। নিজামীর এই ছেলেই কেবল ছাত্রজীবনে রয়েছেন। তবে এখনো ছাত্র হলেও ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমে রয়েছে তার ব্যাপক বিরোধিতা। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে ট্রাইব্যুনালবিরোধী বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান তিনি।
ছোট মেয়ে খাদিজা পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে লন্ডনের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ছোট মেয়ের স্বামী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম। তিনি এক সময় শিবিরের সেক্রেটারি ছিলেন। নজরুল ইসলাম বর্তমানে লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
নিজামীর স্ত্রী সামসুন্নাহার নিজামীও পিছিয়ে নেই। তিনি গুলশানে অবস্থিত ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে জামায়াতের নারী শাখার নেত্রীও তিনি।
নিজামীর পরিবারের প্রায় সবাই বিদেশে অবস্থান করছে শুধু তার স্ত্রী ছাড়া। তাই এ পরিবারটি কি ধরণের ষড়যন্ত্র করতে পারে তা নিয়ে বেশ জোরে শোরেই মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। তবে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, দুই ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং তার ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। মাত্র কয়েকমাস আগে দীর্ঘ ৮ মাস অপহৃত থাকার পর হুম্মাম কাদের চৌধুরী বাসায় ফিরে আসেন।
জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান, তিন ছেলে আলী আহমেদ তাজজীদ, আলী আহমেদ তাহকীক ও আলী আহমেদ মাবরুর এবং মেযে তামরীনকেও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
মূলত, দেশ বিরোধী কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে যেন তারা ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেদিন বিবেচনায় তাদের প্রতি এ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।