ঢাকা ০৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণে সব তথ্য প্রমাণ পেয়েছি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০১৭
  • ২৮২ বার

মেডিক্যালের ফরেনসিক প্রতিবেদনে যাই আসুক না কেন, রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ঘটনা প্রমাণের জন্য পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আইনগতভাবেই আসামিদের ধর্ষক হিসাবে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার তরুণী ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত নাঈম আশরাফের নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনও এখন পুলিশের হাতে। ইতিমধ্যেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ধর্ষণের মামলায় জব্দ করা সব আলামতের প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুই তরুণীর ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘মেডিক্যালে ধর্ষণের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে মোটেও ভাবছি না। কারণ আমরা আগেও বলেছি ধর্ষণের অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখনও বলছি, ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণের জন্য যেসব তথ্য প্রমাণ দরকার তার সবই পেয়েছি। এছাড়া আমরা সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছি। এখন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাই আদালতের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যেও মিল পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে রয়েছে, যার মাধ্যমে মামলার তদন্তের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের ঘটনার আলামত ধরা পড়েছে। এছাড়া এক্সপার্টদের সুপারিশেও বিষয়টির সত্যতা উঠে এসেছে। তাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক প্রতিবেদন নিয়ে মোটেই বিচলিত নন পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার দীর্ঘদিন পর দুই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যাবে না—এটা আমরা আগেই জানতাম। বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেই নিশ্চিত হয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে ওই দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হননি। তিনি আরও বলেন, এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া সব আসামি ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও তাদের হাতে আছে। কাজেই বিচার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই আসামিদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এর আগে মামলায় জব্দ করা বিভিন্ন আলামতের পরীক্ষা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-র পরীক্ষাগারে। ধর্ষণের শিকার একজন শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত পোষাক ও ধর্ষণে জড়িত মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিমের নমুনা ডিএনএ টেস্টের ম্যাচিং রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ৬টি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। রেইনট্রি হোটেল থেকে জব্দ করা সিসিটিভি সার্ভার মেশিন ও হোটেলে অবস্থানের নথিপত্রও তারা পরীক্ষা করে ধর্ষণের অভিযোগ নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ঘটনার এক মাস ১০ দিন পর ভিকটিমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে আসেন। কিন্তু, দেরিতে আসায় ইনজুরির তেমন কোনও চিহ্ন ও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘তবে তারা ধর্ষিত হয়েছেন কিনা সে ব্যাপারেও কিছু বলবো না। আমরা প্রতিবেদনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।’ বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে ডা. সোহেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।

গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। ঘটনার এক মাস ৭ দিন পর গত ৬ মে তারা বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলার পাঁচ আসামি সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, বিল্লাল ও রহমত আলীকে ঢাকা, সিলেট ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আসামিরা আদালতে ঘটনায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণে সব তথ্য প্রমাণ পেয়েছি

আপডেট টাইম : ১২:১৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০১৭

মেডিক্যালের ফরেনসিক প্রতিবেদনে যাই আসুক না কেন, রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ঘটনা প্রমাণের জন্য পুলিশের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আইনগতভাবেই আসামিদের ধর্ষক হিসাবে শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার তরুণী ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত নাঈম আশরাফের নমুনার ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনও এখন পুলিশের হাতে। ইতিমধ্যেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ধর্ষণের মামলায় জব্দ করা সব আলামতের প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুই তরুণীর ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘মেডিক্যালে ধর্ষণের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে মোটেও ভাবছি না। কারণ আমরা আগেও বলেছি ধর্ষণের অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখনও বলছি, ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণের জন্য যেসব তথ্য প্রমাণ দরকার তার সবই পেয়েছি। এছাড়া আমরা সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছি। এখন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাই আদালতের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যেও মিল পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে রয়েছে, যার মাধ্যমে মামলার তদন্তের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের ঘটনার আলামত ধরা পড়েছে। এছাড়া এক্সপার্টদের সুপারিশেও বিষয়টির সত্যতা উঠে এসেছে। তাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক প্রতিবেদন নিয়ে মোটেই বিচলিত নন পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

তদন্তকারী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার দীর্ঘদিন পর দুই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যাবে না—এটা আমরা আগেই জানতাম। বিষয়টি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেই নিশ্চিত হয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে ওই দুই তরুণী ধর্ষণের শিকার হননি। তিনি আরও বলেন, এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া সব আসামি ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও তাদের হাতে আছে। কাজেই বিচার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই আসামিদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এর আগে মামলায় জব্দ করা বিভিন্ন আলামতের পরীক্ষা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-র পরীক্ষাগারে। ধর্ষণের শিকার একজন শিক্ষার্থীর ব্যবহৃত পোষাক ও ধর্ষণে জড়িত মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিমের নমুনা ডিএনএ টেস্টের ম্যাচিং রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া আসামিদের কাছ থেকে জব্দ করা ৬টি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। রেইনট্রি হোটেল থেকে জব্দ করা সিসিটিভি সার্ভার মেশিন ও হোটেলে অবস্থানের নথিপত্রও তারা পরীক্ষা করে ধর্ষণের অভিযোগ নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ঘটনার এক মাস ১০ দিন পর ভিকটিমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে আসেন। কিন্তু, দেরিতে আসায় ইনজুরির তেমন কোনও চিহ্ন ও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘তবে তারা ধর্ষিত হয়েছেন কিনা সে ব্যাপারেও কিছু বলবো না। আমরা প্রতিবেদনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।’ বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে ডা. সোহেল মাহমুদ গণমাধ্যমকে এ কথা জানান।

গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। ঘটনার এক মাস ৭ দিন পর গত ৬ মে তারা বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলার পাঁচ আসামি সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, বিল্লাল ও রহমত আলীকে ঢাকা, সিলেট ও মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আসামিরা আদালতে ঘটনায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।