ত্রিদেশীয় সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিউইদের ছুড়ে দেওয়া ২৭১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তামিম-সাব্বির-মুশফিক ও রিয়াদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
এদিন প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৭০ রান করে কিউইরা। ২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই ছক্কায় হাঁকিয়ে দারুণ সূচনা করেন ওপেনার তামিম ইকবাল। যাতে রেকর্ড হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম বলে ছক্কা মারা রেকর্ড ছিল না। কিন্তু তা তামিম করে দেখান ডাবলিনে।
তবে প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই গোল্ডেন ডাক মারেন সৌম্য সরকার। প্যাটেলের করা বলে ক্যাচ তুলে দেন অ্যান্ডারসনের হাতে। শূন্য রাতে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ ওপেনার।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে হাল ধরেন তামিম ও সাব্বির। দুজনই এক পর্যায়ে ফিফটি পূর্ণ করেন। যা ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের ৩৬তম ও সাব্বিরের ৫ম ফিফটি।
দুজনেই ভালো আগাচ্ছিলেন। তবে হঠাতই ছন্দপতন। সান্টনারকে সীমানার বাইরে পাঠানোর জন্য হাঁকালেন ব্যাট। কিন্তু না, তালুবন্দী হলেন বেনেটের হাতে। ৮০ বলে ৬৫ রানে সাজঘরে ফেরেন তামিম। যার মধ্যে ছিল ছয়টি চার ও একটি ছক্কার মার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তামিম-সাব্বির যোগ করেন ১৩৬ রান।
তামিমের বিদায়ে পর ভুলবুঝাবুঝিতে রান আউট হন সেট ব্যাটসমস্যান সাব্বির রহমান। সান্টনারের বলে মোসাদ্দেক ব্যাট হাঁকিয়ে খানিকটা দৌড় দিয়েও ফিরে আসেন ক্রিজে। তবে অপর প্রান্তে থাকা সাব্বির চলে আসেন মোসাদ্দেকের প্রান্তে। অনায়াসে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন নিল ব্রুম।
৮৩ বলে ৯ চারে ৬৫ রান করে ফেরেন সাব্বির। যার মধ্যে ছক্কা ছিল না। তবে ছিল নয়টি বাউন্ডারি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাব্বিরের এটি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। আগেরটি ছিল অপরাজিত ৬৪ রান।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। ১৩ বলে ১০ রান করে প্যাটেলে বলে এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি। বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ৩ উইকেটে ১৬০ রান।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে আশা জাগিয়েছিলেন মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। দুজনে যোগ করেন ৩৯ রান। কিন্তু এরপরই ফাঁদে পড়েন সাকিব আল হাসান। লাফিয়ে ওঠা বেনেটের বল সীমান ছাড়া করতে গিয়ে সান্টনারের হাতে বন্দী সাকিব। ৩২ বলে দুই চারে ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ব্যাট করছেন মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৪৫ রানের জুটি। ৪৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রিয়াদ। ৪৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক।
টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ডাবলিনে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে নিউজিল্যান্ড। এদিন বাংলাদেশের বোলিংয়ে শুরুটা ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে দলে ফেরা নাসির শুরুতেই হতাশ করেছেন। মাশরাফির করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে স্কোয়ার লেগে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার টম লাথাম।
আয়ত্তের মধ্যে থাকা ক্যাচটি লুফে নিতে পারেননি নাসির। হতাশা বাড়ায় টাইগার শিবিরে। লাথাম তখন রানের খাতাই খুলতে পারেনি।
এরপর অবশ্য প্রথম উইকেট তুলে নিয়ে টাইগার শিবিরে স্বস্তি এনে দেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কিউই ওপেনার লুক রঞ্চি। ৫ বলে দুই রান করেন রঞ্চি। নিউজিল্যান্ডের দলীয় রান তখন ২৩।
শূন্য রানে জীবন পাওয়া টম লাথাম এক পর্যায়ে পৌঁছান অর্ধশতকে। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ৫১ বলে করেন ফিফটি। ওই রানেই ফিরতে পারতেন বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
মোসাদ্দেক হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। নন স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান নিল ব্রুমের জন্য মাঝে খানিকটা সময়ের জন্য বল চলে যায় বোলারের দৃষ্টির আড়ালে। চেষ্টা করেও হাতে জমাতে পারেননি মোসাদ্দেক।
প্রথম ক্যাচ মিসের খেসারত পুষিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নাসির। ২৬.৫ ওভারে তার করা বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন ব্রুম। তবে তা নিতে পারেননি সৌম্য সরকার।
তবে সেই নাসিরই ফেরান ব্রুমকে। ২৮.১ ওভারে নাসিরের করা বলে স্কোয়ারে লেগে ক্যাচ দেন ব্রুম। তা লুফে নেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি। পরে বল ছুড়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন ম্যাশ। ৭৬ বলে ৭ চারে ৬৩ রান করে ফেরেন ব্রুম।
ব্রুমের বিদায়ের পর জ্বলে উঠে বাংলাদেশের বোলাররা। দলীয় ১৬৭ রানের মাথায় বিদায় নেন অধিনায়ক লাথাম। ব্যক্তিগত ৮৪ রানে তিনি নাসির হোসেনের বলে বোল্ড। দলীয় ২০৮ রানের মাথায় অ্যান্ডারসনকে ফেরান সাকিব আল হাসান। ২৪ রান করা অ্যান্ডারসন ক্যাচ তুলে দেন রিয়াদের হাতে।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নিশামও। ১০ বলে ৬ রান করে তিনি মাশরাফির বলে তালুবন্দি হন রিয়াদের। দলীয় স্কোর তখন ২২৪। এক রান যোগ হতেই সান্টনারকে বোল্ড করেন সাকিব আল হাসান। ৬ বলে শূন্য রানে ফেরেন সান্টনার। পরের ওভারেই আউট মুনরো। এবার মাশরাফির বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেন ১ রান করা মুনরো। তিন রানের ব্যবধানে তিন উইকেট ফেলে দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে চেপে ধরে বাংলাদেশ।
শেষের দিকে হেনরিকে বোল্ড করেন রুবেল হোসেন। ১৪ বলে ৫ রান করেন হেনরি। নিউজিল্যান্ডের আরও একটি উইকেট পড়তে পারত। ৫০তম ওভারে রুবেলের করা তৃতীয় বলে লং অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন রস টেইলর। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি, সাকিব ও নাসির দুটি, মুস্তাফিজ ও রুবেল একটি করে উইকেট লাভ করেন।