পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘এ দেশের কপিরাইট আইন অত্যন্ত দুর্বল। বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার পথকে অগ্রসর রোধে যারা অপরাধমূলক কাজ করেন, তারা প্রচলিত আইনে যেমন তেমনি কপিরাইট আইনের সুনির্দিষ্ট ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যান। সুতরাং এটির (আইন) সংস্কার জরুরী।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির আয়োজনে ‘পাইরেসি : বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সহজভাবে যে কোনো ব্যাপারে পুলিশকে দোষারোপ করি। পাইরেসি সম্পর্কিত মামলা যারা করতে আসেন তারা নিজেরাও যথেষ্ট সচেতন নন। ফলে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে দেরি হওয়ায় পুলিশের মামলা নিতে দেরি হয়। পাইরেসি সম্পর্কে লেখক, প্রকাশক ও সর্বসাধারণ সচেতন হলে সর্বক্ষেত্রেই সহজ হবে।’
এ সময় তিনি পাইরেসি রোধে সকল কার্যক্রমের সঙ্গে থাকবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আয়োজক সংস্থার সভাপতি ওসমান গণির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি এ্যাসোসিয়েশনের মহাপরিচালক আজিজুর রহমান। আলোচনা করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ও কপিরাইট বিশেষজ্ঞ মনজুরুর রহমান। অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘পাইরেসি সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে মোবাইল কোর্টের অধীনে আনার চেষ্টা চলছে। এতে করে আসামিকে দ্রুত শাস্তি দেওয়া সহজ হবে।’
আইটি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘যে সব অপরাধ চোখের সামনে হয় তা হয়তো রোধ করতে পারব কিংবা অল্প পরিসরে পারছি। কিন্তু ইন্টারনেট জগতে যে সব পাইরেসি হচ্ছে তা কি আমরা রোধ করতে পারব? শিগগিরই এ বিষয়ে গুরুত্ব না দিলে আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মতোই এর অবস্থা হবে।’
আলোচকের বক্তব্যে মনজুরুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের পাইরেসির নেপথ্যে রয়েছে পাইরেসি রোধ আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা। এর দূরীকরণ করতে হলে সেই অজ্ঞতা থেকে বের হয়ে লেখক, প্রকাশক ও প্রশাসনের নিরত আন্দোলন প্রয়োজন।’
বুক পাইরেসির আন্তর্জাতিক অবস্থা সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে কামরুল হাসান শায়ক বলেন, ‘পাইরেটেড বইয়ের কারণে ২০০৮ সালে পাকিস্তানের প্রকাশনা ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই ভাবে সোভিয়েত রাশিয়ার ক্ষতি ৪২ মিলিয়ন, থাইল্যান্ডের ক্ষতি ৩৭ মিলিয়ন, ইতালীতে ২০ মিলিয়ন, বাংলাদেশে ৮ মিলিয়ন ও চিলির ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
বাংলাদেশের যে সব স্থানে ব্যাপকভাবে বুক পাইরেসি হয় সে সব স্থানের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকার কেরানীগঞ্জ, নীলখেত, নিউমার্কেট, বাসাবো, ঢাকার বাইরে বগুড়ার সকল থানায়, কুষ্টিয়ায়, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট ও নওগাঁসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে পাইরেসি হয়।’
এ থেকে উত্তরণের জন্য কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বুক পাইরেসি বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রচলিত আইনের শাস্তির বিধান আরও কঠিন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। দেশী-বিদেশী প্রকাশকদের যৌথ প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। বাংলাদেশকে ইউনেস্কোর ফ্লোরেন্স এ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় আমদানিকৃত বইয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় কর প্রত্যাহার অথবা সীমিতকরণ করতে হবে। প্রশাসনিকভাবে পাইরেসিনির্ভর ওয়েবসাইটগুলোর প্রতি নজরদারিকরণ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পাইরেসিবিরোধী জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।’