ঢাকা ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষ্ণচূড়ার লালে ছেয়ে গেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০১৭
  • ৪১০ বার

জেলায় চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। এই সময়টায় পথে প্রান্তরে এখন ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য্য।

কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তোর ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। বসন্ত শেষে ও গ্রীষ্মে রোদের দাহের মধ্যেও আনন্দ দেয় কৃষ্ণচূড়া।

এর নাম নিয়ে স্থানীয় অনেকেরই ধারণা, রাধা ও কৃষ্ণের সঙ্গে নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হয়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। গাছের বৈজ্ঞানিক নাম উবষড়হরী ৎবমরধ।এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ।

কৃষ্ণচূড়া বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালের তথ্য -উপাত্ত মারফত জানা যায়, সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশ্বস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭/৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট।

বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। যেমন, দক্ষিণ ফ্লোরিডায় – জুনে, আরব আমিরাতে – সেপ্টেম্বরে, ক্যারাবিয়ানে – মে থেকে সেপ্টেম্বর, ভারতে – এপ্রিল থেকে জুন, অস্ট্রেলিয়ায় – ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় এখন লালে লাল হয়ে ফুটে আছে এই ফুল। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরত্ব বহন করে। শখের বশে এ গাছের কদর থাকলেও; এর কাঠ তুলনামূলক দামী না হওয়া এবং ভালো কোন ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে আগ্রহ অনেক কম। বৃক্ষনিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে রঙিন এই গাছ। এক সময় এগাছ হারিয়ে যাওয়ার শংকায় পরিবেশবাদীরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশী করে কৃষ্ণচুড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষ্ণচূড়ার লালে ছেয়ে গেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি

আপডেট টাইম : ১১:০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০১৭

জেলায় চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। এই সময়টায় পথে প্রান্তরে এখন ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রোদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে মেখে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি; সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য্য।

কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়। লাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে কালেভদ্রে। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছ উঁচু। অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তোর ঘটায়। তিন রঙেরই ফুল ফোটে প্রায় একই সময়ে। বসন্ত শেষে ও গ্রীষ্মে রোদের দাহের মধ্যেও আনন্দ দেয় কৃষ্ণচূড়া।

এর নাম নিয়ে স্থানীয় অনেকেরই ধারণা, রাধা ও কৃষ্ণের সঙ্গে নাম মিলিয়ে এ বৃক্ষের নাম হয়েছে কৃষ্ণচূড়া। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হয়।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। গাছের বৈজ্ঞানিক নাম উবষড়হরী ৎবমরধ।এটি ঋধনধপবধব পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ।

কৃষ্ণচূড়া বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালের তথ্য -উপাত্ত মারফত জানা যায়, সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশ্বস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭/৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট।

বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। যেমন, দক্ষিণ ফ্লোরিডায় – জুনে, আরব আমিরাতে – সেপ্টেম্বরে, ক্যারাবিয়ানে – মে থেকে সেপ্টেম্বর, ভারতে – এপ্রিল থেকে জুন, অস্ট্রেলিয়ায় – ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় এখন লালে লাল হয়ে ফুটে আছে এই ফুল। শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষটি দেশের গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরের মানুষের কাছেও সমান গুরত্ব বহন করে। শখের বশে এ গাছের কদর থাকলেও; এর কাঠ তুলনামূলক দামী না হওয়া এবং ভালো কোন ব্যবহারে না আসায় বাণিজ্যিকভাবে এ গাছ বপনে আগ্রহ অনেক কম। বৃক্ষনিধনের শিকার হয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে রঙিন এই গাছ। এক সময় এগাছ হারিয়ে যাওয়ার শংকায় পরিবেশবাদীরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থেই বেশী করে কৃষ্ণচুড়া গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রকৃতিপ্রেমীরা।