ঢাকা ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোহনীয় প্রকৃতির নয়ানাভিরাম সিংড়া ফরেস্ট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৮৬ বার

এক সময়ে বাঘ, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণের অভায়ারণ্য ছিল গহীন অরণ্য সিংড়া ফরেস্ট। সুন্দর নিরিবিলি গাছ-গাছালির মোহনীয় প্রকৃতির নয়ানাভিরাম সিংড়া ফরেস্ট। যা দর্শনাথী, পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে।

এ বনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদী। যদিও নদীটি মরা খাল ছাড়া আর কিছু না। তবে নদীটি মাঝামাঝি সম্প্রতি একটি সেতু তৈরি হলেও খনন করা হয়নি দীর্ঘকাল ধরে। নদীটি খনন করলে এর প্রকৃত সৌন্দর্য বৃদ্ধি ছাড়াও পর্যটকদের আরও দৃষ্টি কেড়ে নেবে।

নদীর দু’পাড় দিয়ে যাবার সময় দেখতে পাবেন দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি গাছ। শাল বনের ভেতরের আগর ও বাঁশ-বেত বাগানও সকলের কাছে দর্শনীয়ও বটে। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা সিংড়ার বনাঞ্চল শালবন। তবে শাল ছাড়াও জামরুল, তরুল, শিলকড়াই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমনি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরতকি, বয়রা, আমলকি এবং বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম গাছ রয়েছে এ বনে।

এছাড়া খরগোশ, শেয়াল, সাপ, বেজি এবং শকুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গ দেখতে পাওয়া যাবে এই বনে।

প্রয়েজনীয় পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ-পানি ও পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেই সিংড়া ফরেস্ট হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় এক পর্যটন কেন্দ্র। আর এই সিংড়া ফরেস্ট হতে পারে সরকারের রাজস্ব আয়ের উৎস। তবে এর একটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প এখনও লাল ফিতায় বন্দী রয়েছে।

ব্যস্ততম শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নিরিবিলি পরিবেশে এই মৌসুমে প্রকৃতি প্রেমিকদের আনাগোনাও তাই বেড়ে যায়।

এর অবস্থান দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৪০ কি.মি. উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কি.মি.।

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে এখানে আসা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য বা পিকনিক করার জন্য এখানে আসে। নয়ন জুড়ানো এই দেশি পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া বছরের সব সময়ই পর্যটকরা আসে। ভ্রমণ পিপাসুদের থাকার জন্য রয়েছে ১টি ছোট পরিসরে রেস্টহাউজ, যদিও এখনও আধুনিকতার ছোয়া বঞ্চিত।

পিকনিক স্পট রয়েছে দুটি। বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ পিকনিক করার জন্য বিশেষ করে শীত মৌসুমে বেশি জনসমাগম ঘটে। যেন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ সময় হয়তো মনমুগ্ধ পরিবেশে মনে পড়বে সেই পুরনো দিনের গান।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সরকার জানান, গত ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউপির ৮৫৫.৫০ একর ভূমির উপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০ একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। সিংড়া মৌজার নামানুসারে বনটির নামকরণ হয়েছে সিংড়া ফরেস্ট। ১৮৮৫ সালে বনটি অধিভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বনবিভাগের অধীন বলে গেজেট প্রকাশ হয়।

এই গহীন অরণ্য ধীরে ধীরে লোকালয়ে পরিণত হতে থাকে। গাছ চুরিসহ সংরক্ষণ অভাবে গাছে-গাছালি কমে যায়। এর পরেই নতুন করে বন বিভাগ সিংড়া শাল বনের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রচষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সরকার সিংড়া ফরেস্টকে আরও গহীন অরণ্যে পরিণত করতে গত জুন থেকে ৯০ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানান। এরই মধ্যে ৩০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়া এই বনের চার পাশে আদিবাসীদের নিয়ে ৯টি বনরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই বনের মনোরম প্রাকৃতিক দেখতে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রতি দিন গড়ে ১৮০-২০০ জন। রাবার ড্যামের মাধ্যমে বারোমাস নর্ত নদীকে সজীব রাখা, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশু পার্ক তৈরি, দর্শনার্থীর বসার চেয়ার তৈরি ও সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ শুরু হলেই এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তার দাবি।

দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বনের অধিবাসীদের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সিংড়া শালবন ফিরে পাবে তার অতীত ইতিহাস।

আরডিআরএস এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলি অথবা বন রক্ষাই বলি এর জন্য বনের চারপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সক্রিয় ভূমিকার বিকল্প নাই পাশাপাশি বনবিভাগের বন্ধুসুলভ আচরণ।

সিংড়া শাল বনের হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য বন থেকে শালের ডালপাতা সংগ্রহকারী ও সকল জনসাধারণের মধ্যে গণসচেতনতা বাড়ানোসহ বন নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষে বিকল্প আয়ের অংশ হিসেবে আরডিআরএস বাংলাদেশ ৮ লক্ষ টাকার ঘূর্ণয়ামান তহবিল অনুদান হিসাবে দিয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মোহনীয় প্রকৃতির নয়ানাভিরাম সিংড়া ফরেস্ট

আপডেট টাইম : ০৮:৪৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭

এক সময়ে বাঘ, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণের অভায়ারণ্য ছিল গহীন অরণ্য সিংড়া ফরেস্ট। সুন্দর নিরিবিলি গাছ-গাছালির মোহনীয় প্রকৃতির নয়ানাভিরাম সিংড়া ফরেস্ট। যা দর্শনাথী, পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে।

এ বনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদী। যদিও নদীটি মরা খাল ছাড়া আর কিছু না। তবে নদীটি মাঝামাঝি সম্প্রতি একটি সেতু তৈরি হলেও খনন করা হয়নি দীর্ঘকাল ধরে। নদীটি খনন করলে এর প্রকৃত সৌন্দর্য বৃদ্ধি ছাড়াও পর্যটকদের আরও দৃষ্টি কেড়ে নেবে।

নদীর দু’পাড় দিয়ে যাবার সময় দেখতে পাবেন দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি গাছ। শাল বনের ভেতরের আগর ও বাঁশ-বেত বাগানও সকলের কাছে দর্শনীয়ও বটে। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা সিংড়ার বনাঞ্চল শালবন। তবে শাল ছাড়াও জামরুল, তরুল, শিলকড়াই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমনি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরতকি, বয়রা, আমলকি এবং বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম গাছ রয়েছে এ বনে।

এছাড়া খরগোশ, শেয়াল, সাপ, বেজি এবং শকুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গ দেখতে পাওয়া যাবে এই বনে।

প্রয়েজনীয় পরিকল্পনা, বিদ্যুৎ-পানি ও পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেই সিংড়া ফরেস্ট হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় এক পর্যটন কেন্দ্র। আর এই সিংড়া ফরেস্ট হতে পারে সরকারের রাজস্ব আয়ের উৎস। তবে এর একটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প এখনও লাল ফিতায় বন্দী রয়েছে।

ব্যস্ততম শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নিরিবিলি পরিবেশে এই মৌসুমে প্রকৃতি প্রেমিকদের আনাগোনাও তাই বেড়ে যায়।

এর অবস্থান দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ৪০ কি.মি. উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কি.মি.।

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে এখানে আসা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য বা পিকনিক করার জন্য এখানে আসে। নয়ন জুড়ানো এই দেশি পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া বছরের সব সময়ই পর্যটকরা আসে। ভ্রমণ পিপাসুদের থাকার জন্য রয়েছে ১টি ছোট পরিসরে রেস্টহাউজ, যদিও এখনও আধুনিকতার ছোয়া বঞ্চিত।

পিকনিক স্পট রয়েছে দুটি। বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ পিকনিক করার জন্য বিশেষ করে শীত মৌসুমে বেশি জনসমাগম ঘটে। যেন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ সময় হয়তো মনমুগ্ধ পরিবেশে মনে পড়বে সেই পুরনো দিনের গান।

দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সরকার জানান, গত ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউপির ৮৫৫.৫০ একর ভূমির উপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০ একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। সিংড়া মৌজার নামানুসারে বনটির নামকরণ হয়েছে সিংড়া ফরেস্ট। ১৮৮৫ সালে বনটি অধিভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বনবিভাগের অধীন বলে গেজেট প্রকাশ হয়।

এই গহীন অরণ্য ধীরে ধীরে লোকালয়ে পরিণত হতে থাকে। গাছ চুরিসহ সংরক্ষণ অভাবে গাছে-গাছালি কমে যায়। এর পরেই নতুন করে বন বিভাগ সিংড়া শাল বনের জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রচষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সরকার সিংড়া ফরেস্টকে আরও গহীন অরণ্যে পরিণত করতে গত জুন থেকে ৯০ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানান। এরই মধ্যে ৩০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এছাড়া এই বনের চার পাশে আদিবাসীদের নিয়ে ৯টি বনরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই বনের মনোরম প্রাকৃতিক দেখতে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা প্রতি দিন গড়ে ১৮০-২০০ জন। রাবার ড্যামের মাধ্যমে বারোমাস নর্ত নদীকে সজীব রাখা, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশু পার্ক তৈরি, দর্শনার্থীর বসার চেয়ার তৈরি ও সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ শুরু হলেই এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তার দাবি।

দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি বনের অধিবাসীদের আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং সিংড়া শালবন ফিরে পাবে তার অতীত ইতিহাস।

আরডিআরএস এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলি অথবা বন রক্ষাই বলি এর জন্য বনের চারপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সক্রিয় ভূমিকার বিকল্প নাই পাশাপাশি বনবিভাগের বন্ধুসুলভ আচরণ।

সিংড়া শাল বনের হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য বন থেকে শালের ডালপাতা সংগ্রহকারী ও সকল জনসাধারণের মধ্যে গণসচেতনতা বাড়ানোসহ বন নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষে বিকল্প আয়ের অংশ হিসেবে আরডিআরএস বাংলাদেশ ৮ লক্ষ টাকার ঘূর্ণয়ামান তহবিল অনুদান হিসাবে দিয়েছে।