ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
কেন্দুয়ায় দলীয় প্রভাব কাটিয়ে জোর পূর্বক সেচ চালানোর অভিযোগ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ধারাভাষ্য প্যানেলে বাংলাদেশের আতহার তিস্তাপাড়ের মানুষের মতামত নিয়েই হবে মহাপরিকল্পনা: পরিবেশ উপদেষ্টা কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংঘর্ষ চলছে, আহত ৩০ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি কারও করুণার বিষয় নয়: তারেক রহমান চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটি চট্টগ্রামে হাসনাত-আরিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ১৬ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিতে সময় বেঁধে দিলেন ট্রাইব্যুনাল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রাইভেটকারে রহস্যজনক আগুন সুনামগঞ্জে মোবাইল মার্কেটে ৪৮ লাখ টাকার মালামাল চুরি বিএনপি সবসময় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় লড়াই করেছে: মিনু

সিলেটে পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৮:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৮৬ বার

সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসবের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা পাউবো কর্মকর্তা, ঠিদাকারদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সরজমিন বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করবেন। বোরো ধানের ‘মাতৃ এলাকা’ বলে পরিচিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকাকে অকাল বন্যা থেকে রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতি বছরই সরকার থেকে বিশেষ বরাদ্দ আসে। আর বরাদ্দের ওই কাজের শেষ সময়সীমা থাকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে
কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকায় অকাল বন্যা দেখা দেয়। মাত্র তিনদিনেই হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। সুনামগঞ্জে এবার কোনো বাঁধই কাজে আসেনি। বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। করেন বিক্ষোভও। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এবার সুনামগঞ্জে ৭৬টি বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাঁধেরই কাজ শেষ হয়েছে। হাওরের মানুষের দুর্দশার চিত্র দেখতে সোমবার সুনামগঞ্জ সফর করেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ। তিনি হেলিকপ্টারে হাওর এলাকা পরিদর্শন ছাড়াও সুনামগঞ্জের মানুষের সঙ্গে সুধী সমাবেশ করেন। আর এ সুধী সমাবেশেও স্থানীয় একাধিক এমপি হাওরের বাঁধনির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। তারা অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করান পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। এ সময় তারা পরিসংখ্যান তুলে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এবার বোরো ফসলকে বানের পানি থেকে রক্ষার জন্য ৭৬টি বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১২টি বাঁধের কাজ শুরু হয়নি বলে পাউবো কর্মকর্তারা নিজেই স্বীকার করেছেন। বাকি থাকা ৬৪টি বাঁধের কাজ হয়েছে। এমপিরা অভিযোগ করেন, প্রতিটি বাঁধের কাজ ১০ ভাগ থেকে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত হয়েছে। এ কারণে বন্যার প্রথম ধাক্কাতেই তলিয়ে যায় হাওর। আর এখন অনেক বাঁধের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেন তারা। এদিকে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সব মহল থেকে উপস্থাপনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনও কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহিম ও সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি। দুদক গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা গতকাল সিলেটে এসে পৌছেছেন। তারা সকালে সিলেটে পৌঁছে প্রথমে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমানারা বেগমের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। ওই বেঠকে তারা হাওরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর দুপুরে দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্যা যান সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাইয়ের কার্যালয়ে। সেখানে তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন। দুদক সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক শিরিন পারভিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে দুপুরে পাউবোর সিলেট অঞ্চলের প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প পরিচালক হওয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণ জরুরি ছিল। পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা দুদককে এবারের বাঁধ নির্মাণের নথিপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বৈরি আবহাওয়া থাকায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত তারা সুনামগঞ্জ যেতে পারেননি বলে জানান তিনি। এদিকে পাউবো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের প্রধান মোহাম্মদ বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। ওই টিমের সদস্য হিসেবে আমরা হাওরে বাঁধের বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে যাবো। হাওরে যাওয়ার আগে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর হিসেবে সিলেট পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি কাগজ দিয়েছেন। কিছু তথ্য বাকি আছে সেগুলো দেবেন। বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়মের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ নেবে দুদক।’ তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু খটকা লেগেছে। এর মধ্যে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ছিল প্রকল্পের মেয়াদের শেষ দিন। কিন্তু প্রকল্পগুলো কেন টেনে নেয়া হয়েছে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। সরজমিনে গেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কেন্দুয়ায় দলীয় প্রভাব কাটিয়ে জোর পূর্বক সেচ চালানোর অভিযোগ

সিলেটে পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসব

আপডেট টাইম : ১২:১৮:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭

সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসবের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা পাউবো কর্মকর্তা, ঠিদাকারদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি সরজমিন বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করবেন। বোরো ধানের ‘মাতৃ এলাকা’ বলে পরিচিত সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকাকে অকাল বন্যা থেকে রক্ষা করতে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতি বছরই সরকার থেকে বিশেষ বরাদ্দ আসে। আর বরাদ্দের ওই কাজের শেষ সময়সীমা থাকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে
কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত মার্চ মাসের শেষ দিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকায় অকাল বন্যা দেখা দেয়। মাত্র তিনদিনেই হাওরে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। সুনামগঞ্জে এবার কোনো বাঁধই কাজে আসেনি। বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। করেন বিক্ষোভও। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এবার সুনামগঞ্জে ৭৬টি বাঁধ নির্মাণের জন্য ৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ বাঁধেরই কাজ শেষ হয়েছে। হাওরের মানুষের দুর্দশার চিত্র দেখতে সোমবার সুনামগঞ্জ সফর করেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ। তিনি হেলিকপ্টারে হাওর এলাকা পরিদর্শন ছাড়াও সুনামগঞ্জের মানুষের সঙ্গে সুধী সমাবেশ করেন। আর এ সুধী সমাবেশেও স্থানীয় একাধিক এমপি হাওরের বাঁধনির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেন। তারা অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করান পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। এ সময় তারা পরিসংখ্যান তুলে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এবার বোরো ফসলকে বানের পানি থেকে রক্ষার জন্য ৭৬টি বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১২টি বাঁধের কাজ শুরু হয়নি বলে পাউবো কর্মকর্তারা নিজেই স্বীকার করেছেন। বাকি থাকা ৬৪টি বাঁধের কাজ হয়েছে। এমপিরা অভিযোগ করেন, প্রতিটি বাঁধের কাজ ১০ ভাগ থেকে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত হয়েছে। এ কারণে বন্যার প্রথম ধাক্কাতেই তলিয়ে যায় হাওর। আর এখন অনেক বাঁধের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেন তারা। এদিকে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সব মহল থেকে উপস্থাপনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনও কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহিম ও সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি। দুদক গঠিত অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা গতকাল সিলেটে এসে পৌছেছেন। তারা সকালে সিলেটে পৌঁছে প্রথমে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমানারা বেগমের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। ওই বেঠকে তারা হাওরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর দুপুরে দুদকের অনুসন্ধান টিমের সদস্যা যান সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাইয়ের কার্যালয়ে। সেখানে তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন। দুদক সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক শিরিন পারভিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে দুপুরে পাউবোর সিলেট অঞ্চলের প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প পরিচালক হওয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণ জরুরি ছিল। পাউবোর নির্বাহী কর্মকর্তা দুদককে এবারের বাঁধ নির্মাণের নথিপত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। বৈরি আবহাওয়া থাকায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত তারা সুনামগঞ্জ যেতে পারেননি বলে জানান তিনি। এদিকে পাউবো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের প্রধান মোহাম্মদ বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। ওই টিমের সদস্য হিসেবে আমরা হাওরে বাঁধের বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে যাবো। হাওরে যাওয়ার আগে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর হিসেবে সিলেট পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বললাম। তিনি কাগজ দিয়েছেন। কিছু তথ্য বাকি আছে সেগুলো দেবেন। বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়মের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ নেবে দুদক।’ তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু খটকা লেগেছে। এর মধ্যে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ছিল প্রকল্পের মেয়াদের শেষ দিন। কিন্তু প্রকল্পগুলো কেন টেনে নেয়া হয়েছে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। সরজমিনে গেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে জানান তিনি।