ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুশকিলে আসান দরবারেই ডুবছে বিএনপি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৩:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৪৩ বার

বিএনপির একদিকে গুলশান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার চিহ্নিত সিন্ডিকেট। অন্যদিকে নয়াপল্টন কার্যালয়কে কেন্দ্র করেও রয়েছে একটি শক্তিশালী বলয়। এর বাইরেও রাজধানী কিংবা দেশের বাইরে লন্ডন, মালয়েশিয়ায় দলের প্রভাব বিস্তারকারী একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। যাদের ইশারায় কিংবা তদবিরে অনেকের কপাল খুলে আবার অনেকেরই পুড়ছে। তাই তটস্থ থাকতে হয় দলটির নিবেদিত নেতাকর্মীদের। কখন কার ওপর রোষানলের তীর ছুটে আসে। আর এই সুযোগ সুবিধাজনক স্থানে থেকে দলের তদবিরবাজ আর মৌসুমি নেতারাই ছড়ি ঘোরান দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর।

এভাবেই অভিযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, চিহ্নিত ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দল সমর্থিত ব্যবসায়ী, পেশাজীবি আর সমর্থকদের সাথেও গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। নিজেদেরকে প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে সারাদেশেই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। এরা শুধু তদবির বাণিজ্য নিয়েই ক্ষান্ত থাকছেন না খবরদারিতেও সিদ্ধহস্ত। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কারো মুখ খোলারও সাহস নেই। সিন্ডিকেটের এই চিহ্নিত সুবিধাবাদীরা রাজনৈতিক চর্চা না করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুৎসা রটনা আর অভিযোগ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ‘অমুক নেতা জিয়া পরিবারের প্রতি আনুগত্য নয়, তমুক নেতা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন’-এমন গবেষণা নিয়েই তাদের যতো ব্যস্ততা।

নেতাকর্মীরা জানান, এসব সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট বিলাসবহুল বিভিন্ন কার্যালয় গড়ে উঠেছে ঢাকার নানা স্থানে। তদবির বাণিজ্যের কারণে এসব কার্যালয়কে দলের নেতাকর্মীরা ‘দরবার শরীফ’ হিসেবেই চিনে। সিন্ডিকেট প্রধানকে পদ প্রত্যাশার আশায় মোটা অঙ্কের নজরানা দেয়ার পদ্ধতিও চালু রয়েছে এসব দরবার শরীফে।

নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবাশালী সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক কার্যালয় এমনই একটি চাওয়া পাওয়া কিংবা নেতাকর্মীদের মুশকিলে আসান দরবার হিসেবে পরিচিত। যথেষ্ট প্রভাবশালী এ কার্যালয় থেকে অনেকের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয়।

নেতাকর্মীরা আরো জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সারাদেশের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই এ কার্যালয়ে ভিড় করেন। লবিং-তদবিরে দলের হাইব্রিড নেতাদের পাশাপাশি রাজপথের মাঠ পর্যায়ের নেতারাও ধর্না দেন। অনেকে এলাকার বিবাদ মিমাংসার জন্যও তার কার্যালয়কে বেছে নেন। পদ-পদবীর জন্য আকুতির পাশাপাশি নানা সমস্যা সমাধানের জন্য কখনো কখনো এই বিকল্প অফিসটি দলের মূল অফিস থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

কেন্দ্রীয় অফিসের পূর্ব দিকে কয়েকটি ভবনের পরের ভবনে তিন কক্ষের বড় জায়গা জুড়ে বিশাল এই অফিসের অবস্থান। সেখানে আছে ছোটো-খাটো সম্মেলন কক্ষ। আছে অপেক্ষমান বিশালাকৃতির কক্ষ, নিজস্ব চেম্বার। দুপুরে সেখানে গেলে দেখা যাবে গিজগিজ করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা। সবার কাজ দলে-অঙ্গ সংগঠনে পদ পাওয়ার দৌড়ঝাঁপ।

দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের চেয়ারপার্সনের ‘গুডবুকে’ থাকায় প্রতিটি কমিটি গঠনে গয়েশ্বর রায়ের বড় ধরণের প্রভাব রয়েছে। গত বছর ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গয়েশ্বর পরিবারের মোট চারজন পদ-পদবী বাগিয়ে নিয়েছেন। তার অনুগতদের প্রায় সবাই পেয়েছেন পদ-পদবী। দলে গয়েশ্বরকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলে আসলেও দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। দলের ঢাকা মহানগর কমিটি উত্তর- দক্ষিণে দুই ভাগেই তার বলয়ের প্রভাব আরো শক্তিশালী হচ্ছে। বাকপটু এ নেতা দলের সাংগঠনিক কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিকল্পনায় দৃশ্যমান কোনো অবদান না রাখতে পারলেও সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য রেখে খালেদা জিয়া আর নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে আসছেন সবসময়ই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের পদ প্রত্যাশী এক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পর জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি। আশীর্বাদ নিতে এসেছি। এখন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী ভাইয়ের সাথে দেখা করে যাবো শাজাহান ভাইয়ের বাসায়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান। সারাদেশের জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কমিটি পূনর্গঠনের মূল দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তিনিও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের বাসা থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সকাল থেকে রাত অবধি ভিড় লেগেই থাকে তার এই ব্যাক্তিগত কার্যালয়কে ঘিরে। সারাদেশের জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরাই নন, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতারাও আসেন তার নেক নজরে থাকার জন্য।

নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এর আগে সারাদেশের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছিলো এই বাসা থেকে। ওই সময়ে তার আশাপাশে থাকা তদবিরবাজরা মনোনয়ন দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠনেও কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত না করে ঢাকায় বসে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় দলে আরো কোন্দল দেখা দিয়েছে। নিজ এলাকা নোয়াখালীতেও তিনি কাউন্সিলরদের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজের অনুসারীর মাধ্যমে কমিটি গঠন করেন।

বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে না থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা না থাকলে এবং খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আশীর্বাদ না হলেও একজনের অনুগ্রহ লাগবেই। তিনি হলেন গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা আর খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বিএনপির দৃশ্যমান আর অদৃশ্যমান শক্তির পুরোধা বলা হয়ে থাকে তাকে। দলের আগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্যাগী আর পরীক্ষিত নেতা সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামিমকে নতুন কমিটিতে সহ প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। তার এই পদাবনতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওই পদ থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন। ওই সময়ে তিনি গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার রোষানলে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন। তার মতো আরো অনেককেই তিনি কুপোকাত করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার বিশ্বস্ত কাজের বুয়া থেকে শুরু করে নিরাপত্তা কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজনকেও তার রোষানলে পড়ে সরে যেতে হয়েছে। বিপরীতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার ক্ষমতার যাদুর ছোঁয়ায় রাতারাতি নেতা বনে গেছেন অনেকেই।

সকলের আলোচনা-সমালোচনার পরও কারণে-অকারণে নিত্য সংবাদ সম্মেলন আর দফতর শাখাকে আকড়ে রেখে একধরণের বাসা-বাড়ি তৈরী করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দিনের পুরো সময়টাই তিনি কার্যালয়ে অবস্থান কনে। রাত ৯টায় চলে যান গুলশান কার্যালয়ে। সবার শেষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার নতুন প্রবণতা চালু করেছেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে রাত ২টায় সংবাদমাধ্যমে চেয়ারপারসনের নামে বিবৃতি পাঠানোর রেওয়াজ তিনিই চালু করেছেন। আর ভিন্নদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উচিৎ শিক্ষা দিতে, পুরানো খেদ মেটাতে, নিজের অযোগ্য অনুসারীদের কীভাবে পুনর্বাসন করতে হয় তার একমাত্র উদাহারনও তিনিই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুকে এবার রাজনীতির দৃশ্যপট থেকেই সরিয়ে দিয়েছেন।

একইরকমভাবে রাজধানীর উত্তরা, বাংলামটর এলাকাসহ বারিধারা, গুলশান এলাকায় একাধিক সিন্ডিকেট কার্যালয় সক্রিয় রয়েছে।

এসব বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিতে সিন্ডিকেট বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এগুলো ‘মিডিয়ার সৃষ্টি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মুশকিলে আসান দরবারেই ডুবছে বিএনপি

আপডেট টাইম : ১১:১৩:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

বিএনপির একদিকে গুলশান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার চিহ্নিত সিন্ডিকেট। অন্যদিকে নয়াপল্টন কার্যালয়কে কেন্দ্র করেও রয়েছে একটি শক্তিশালী বলয়। এর বাইরেও রাজধানী কিংবা দেশের বাইরে লন্ডন, মালয়েশিয়ায় দলের প্রভাব বিস্তারকারী একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। যাদের ইশারায় কিংবা তদবিরে অনেকের কপাল খুলে আবার অনেকেরই পুড়ছে। তাই তটস্থ থাকতে হয় দলটির নিবেদিত নেতাকর্মীদের। কখন কার ওপর রোষানলের তীর ছুটে আসে। আর এই সুযোগ সুবিধাজনক স্থানে থেকে দলের তদবিরবাজ আর মৌসুমি নেতারাই ছড়ি ঘোরান দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর।

এভাবেই অভিযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, চিহ্নিত ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দল সমর্থিত ব্যবসায়ী, পেশাজীবি আর সমর্থকদের সাথেও গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। নিজেদেরকে প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে সারাদেশেই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। এরা শুধু তদবির বাণিজ্য নিয়েই ক্ষান্ত থাকছেন না খবরদারিতেও সিদ্ধহস্ত। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কারো মুখ খোলারও সাহস নেই। সিন্ডিকেটের এই চিহ্নিত সুবিধাবাদীরা রাজনৈতিক চর্চা না করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুৎসা রটনা আর অভিযোগ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ‘অমুক নেতা জিয়া পরিবারের প্রতি আনুগত্য নয়, তমুক নেতা দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন’-এমন গবেষণা নিয়েই তাদের যতো ব্যস্ততা।

নেতাকর্মীরা জানান, এসব সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট বিলাসবহুল বিভিন্ন কার্যালয় গড়ে উঠেছে ঢাকার নানা স্থানে। তদবির বাণিজ্যের কারণে এসব কার্যালয়কে দলের নেতাকর্মীরা ‘দরবার শরীফ’ হিসেবেই চিনে। সিন্ডিকেট প্রধানকে পদ প্রত্যাশার আশায় মোটা অঙ্কের নজরানা দেয়ার পদ্ধতিও চালু রয়েছে এসব দরবার শরীফে।

নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবাশালী সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রাজনৈতিক কার্যালয় এমনই একটি চাওয়া পাওয়া কিংবা নেতাকর্মীদের মুশকিলে আসান দরবার হিসেবে পরিচিত। যথেষ্ট প্রভাবশালী এ কার্যালয় থেকে অনেকের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হয়।

নেতাকর্মীরা আরো জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সারাদেশের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই এ কার্যালয়ে ভিড় করেন। লবিং-তদবিরে দলের হাইব্রিড নেতাদের পাশাপাশি রাজপথের মাঠ পর্যায়ের নেতারাও ধর্না দেন। অনেকে এলাকার বিবাদ মিমাংসার জন্যও তার কার্যালয়কে বেছে নেন। পদ-পদবীর জন্য আকুতির পাশাপাশি নানা সমস্যা সমাধানের জন্য কখনো কখনো এই বিকল্প অফিসটি দলের মূল অফিস থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

কেন্দ্রীয় অফিসের পূর্ব দিকে কয়েকটি ভবনের পরের ভবনে তিন কক্ষের বড় জায়গা জুড়ে বিশাল এই অফিসের অবস্থান। সেখানে আছে ছোটো-খাটো সম্মেলন কক্ষ। আছে অপেক্ষমান বিশালাকৃতির কক্ষ, নিজস্ব চেম্বার। দুপুরে সেখানে গেলে দেখা যাবে গিজগিজ করছে দেশের বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা। সবার কাজ দলে-অঙ্গ সংগঠনে পদ পাওয়ার দৌড়ঝাঁপ।

দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের চেয়ারপার্সনের ‘গুডবুকে’ থাকায় প্রতিটি কমিটি গঠনে গয়েশ্বর রায়ের বড় ধরণের প্রভাব রয়েছে। গত বছর ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে গয়েশ্বর পরিবারের মোট চারজন পদ-পদবী বাগিয়ে নিয়েছেন। তার অনুগতদের প্রায় সবাই পেয়েছেন পদ-পদবী। দলে গয়েশ্বরকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলে আসলেও দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। দলের ঢাকা মহানগর কমিটি উত্তর- দক্ষিণে দুই ভাগেই তার বলয়ের প্রভাব আরো শক্তিশালী হচ্ছে। বাকপটু এ নেতা দলের সাংগঠনিক কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিকল্পনায় দৃশ্যমান কোনো অবদান না রাখতে পারলেও সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য রেখে খালেদা জিয়া আর নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে আসছেন সবসময়ই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের পদ প্রত্যাশী এক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পর জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি। আশীর্বাদ নিতে এসেছি। এখন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী ভাইয়ের সাথে দেখা করে যাবো শাজাহান ভাইয়ের বাসায়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান। সারাদেশের জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কমিটি পূনর্গঠনের মূল দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তিনিও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের বাসা থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সকাল থেকে রাত অবধি ভিড় লেগেই থাকে তার এই ব্যাক্তিগত কার্যালয়কে ঘিরে। সারাদেশের জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরাই নন, দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতারাও আসেন তার নেক নজরে থাকার জন্য।

নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, এর আগে সারাদেশের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছিলো এই বাসা থেকে। ওই সময়ে তার আশাপাশে থাকা তদবিরবাজরা মনোনয়ন দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। জেলা পর্যায়ের কমিটি গঠনেও কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচিত না করে ঢাকায় বসে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় দলে আরো কোন্দল দেখা দিয়েছে। নিজ এলাকা নোয়াখালীতেও তিনি কাউন্সিলরদের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজের অনুসারীর মাধ্যমে কমিটি গঠন করেন।

বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে না থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা না থাকলে এবং খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আশীর্বাদ না হলেও একজনের অনুগ্রহ লাগবেই। তিনি হলেন গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা আর খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। বিএনপির দৃশ্যমান আর অদৃশ্যমান শক্তির পুরোধা বলা হয়ে থাকে তাকে। দলের আগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্যাগী আর পরীক্ষিত নেতা সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামিমকে নতুন কমিটিতে সহ প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। তার এই পদাবনতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওই পদ থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন। ওই সময়ে তিনি গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার রোষানলে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন। তার মতো আরো অনেককেই তিনি কুপোকাত করেছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার বিশ্বস্ত কাজের বুয়া থেকে শুরু করে নিরাপত্তা কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজনকেও তার রোষানলে পড়ে সরে যেতে হয়েছে। বিপরীতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার ক্ষমতার যাদুর ছোঁয়ায় রাতারাতি নেতা বনে গেছেন অনেকেই।

সকলের আলোচনা-সমালোচনার পরও কারণে-অকারণে নিত্য সংবাদ সম্মেলন আর দফতর শাখাকে আকড়ে রেখে একধরণের বাসা-বাড়ি তৈরী করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দিনের পুরো সময়টাই তিনি কার্যালয়ে অবস্থান কনে। রাত ৯টায় চলে যান গুলশান কার্যালয়ে। সবার শেষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার নতুন প্রবণতা চালু করেছেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে রাত ২টায় সংবাদমাধ্যমে চেয়ারপারসনের নামে বিবৃতি পাঠানোর রেওয়াজ তিনিই চালু করেছেন। আর ভিন্নদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে উচিৎ শিক্ষা দিতে, পুরানো খেদ মেটাতে, নিজের অযোগ্য অনুসারীদের কীভাবে পুনর্বাসন করতে হয় তার একমাত্র উদাহারনও তিনিই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুকে এবার রাজনীতির দৃশ্যপট থেকেই সরিয়ে দিয়েছেন।

একইরকমভাবে রাজধানীর উত্তরা, বাংলামটর এলাকাসহ বারিধারা, গুলশান এলাকায় একাধিক সিন্ডিকেট কার্যালয় সক্রিয় রয়েছে।

এসব বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপিতে সিন্ডিকেট বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। এগুলো ‘মিডিয়ার সৃষ্টি।’