ঢাকা ০৯:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুরনো চেহারায় ফিরল ভাই গিরীশ চন্দ্রের বাড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৬৫ বার

সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করে আদি রূপ ফিরে পেয়েছে পবিত্র কোরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের শতবর্ষী বাড়িটি। একই সঙ্গে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। চলতি এপ্রিল মাসেই উদ্বোধনের কথা রয়েছে বাড়িটি।

জরাজীর্ণ বাড়িটি অবৈধ দখলে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল। সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় রক্ষা পেল এই মহান মানুষটির স্মৃতিচিহ্নটি।

ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের সময়ের আবহ তৈরির জন্য বাড়িটি সাজানো হয়েছে ব্রিটিশ আমলের কাঠ ও আসবাবপত্র দিয়ে। মূল কাঠামোর সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, চুন, সুরকি ও যশোরের টালি। উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় তৈরি বিশেষ আয়তনের ইটের দেখাও মিলবে।

নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনায় ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের শতবর্ষী বাড়িটি। ২০০৮ সালে বাড়িটির মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারে অনুদান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে ভারতীয় হাইকমিশন। পরে ২০১৫ সালে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়।

এরপর বাড়িটি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেরুয়ারিতে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান পায় ঐতিহ্য অন্বেষণ।

ঐতিহ্য অন্বেষণ সূত্রে জানা গেছে, মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মেরামত ও সংরক্ষণের এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ব্রিটিশ আমলের মূল্যবান কাঠ, আসবাবপত্র ও যশোরের টালি। এ ছাড়া, ঐতিহ্য অন্বেষণের নিজ উদ্যোগে উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় তৈরি করা একটি বিশেষ আয়তনের ইটও ব্যবহার করা হয়েছে।

আদি চেহারা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গিরীশ চন্দ্রের বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে একটি জাদুঘর। এখানে তুলে ধরা হয়েছে গিরীশ চন্দ্রের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও তার লেখা বই। বাড়ির সামনে বসানো হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ আবক্ষ মূর্তি।

ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গিরিশচন্দ্রের বাড়িটির মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখতে প্রথমে ডকুমেন্টেশন করা হয়। পরে নকশা অনুযায়ী নওগাঁ ও কুড়িগ্রামের পুরাকীর্তির কাজে অভিজ্ঞ ২০-২৫ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। তারা পরম মমতায় ফুটিয়ে তুলছেন হারিয়ে যেতে বসা গিরিশ সেনের বাড়ির ঐতিহ্য।

রড-সিমেন্ট ব্যবহার না করে শুধু ইট, চুন, সুরকি ও বালি দিয়ে বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে সুফি মোস্তাফিজুর বলেন, বাড়িতে আগে যা ছিল, এখনো ঠিক তাই থাকছে। এরই মধ্যে নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এ মাসের (এপ্রিল) মধ্যেই বাড়ি ও জাদুঘরটি উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৪ সালে নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামে। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় মারা যান তিনি। ব্যক্তিজীবনে গিরীশ চন্দ্র সেন একাধারে সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদ ছিলেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক হিসেবে তিনি ‘ভাই’ খেতাবে ভূষিত হন। আরবি, ফার্সি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন এবং পবিত্র কোরআন হাদিসের প্রথম অনুবাদক হিসেবে লাভ করেন ‘মৌলভি’ খেতাব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পুরনো চেহারায় ফিরল ভাই গিরীশ চন্দ্রের বাড়ি

আপডেট টাইম : ০৬:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ এপ্রিল ২০১৭

সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করে আদি রূপ ফিরে পেয়েছে পবিত্র কোরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের শতবর্ষী বাড়িটি। একই সঙ্গে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। চলতি এপ্রিল মাসেই উদ্বোধনের কথা রয়েছে বাড়িটি।

জরাজীর্ণ বাড়িটি অবৈধ দখলে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল। সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় রক্ষা পেল এই মহান মানুষটির স্মৃতিচিহ্নটি।

ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের সময়ের আবহ তৈরির জন্য বাড়িটি সাজানো হয়েছে ব্রিটিশ আমলের কাঠ ও আসবাবপত্র দিয়ে। মূল কাঠামোর সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, চুন, সুরকি ও যশোরের টালি। উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় তৈরি বিশেষ আয়তনের ইটের দেখাও মিলবে।

নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনায় ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের শতবর্ষী বাড়িটি। ২০০৮ সালে বাড়িটির মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কারে অনুদান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে ভারতীয় হাইকমিশন। পরে ২০১৫ সালে নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য অন্বেষণের মধ্যে বাড়িটি সংরক্ষণ ও একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর নির্মাণের চুক্তি হয়।

এরপর বাড়িটি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেরুয়ারিতে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান পায় ঐতিহ্য অন্বেষণ।

ঐতিহ্য অন্বেষণ সূত্রে জানা গেছে, মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মেরামত ও সংরক্ষণের এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ব্রিটিশ আমলের মূল্যবান কাঠ, আসবাবপত্র ও যশোরের টালি। এ ছাড়া, ঐতিহ্য অন্বেষণের নিজ উদ্যোগে উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় তৈরি করা একটি বিশেষ আয়তনের ইটও ব্যবহার করা হয়েছে।

আদি চেহারা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গিরীশ চন্দ্রের বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে একটি জাদুঘর। এখানে তুলে ধরা হয়েছে গিরীশ চন্দ্রের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও তার লেখা বই। বাড়ির সামনে বসানো হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ আবক্ষ মূর্তি।

ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গিরিশচন্দ্রের বাড়িটির মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখতে প্রথমে ডকুমেন্টেশন করা হয়। পরে নকশা অনুযায়ী নওগাঁ ও কুড়িগ্রামের পুরাকীর্তির কাজে অভিজ্ঞ ২০-২৫ জন শ্রমিককে কাজে লাগানো হয়। তারা পরম মমতায় ফুটিয়ে তুলছেন হারিয়ে যেতে বসা গিরিশ সেনের বাড়ির ঐতিহ্য।

রড-সিমেন্ট ব্যবহার না করে শুধু ইট, চুন, সুরকি ও বালি দিয়ে বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে সুফি মোস্তাফিজুর বলেন, বাড়িতে আগে যা ছিল, এখনো ঠিক তাই থাকছে। এরই মধ্যে নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এ মাসের (এপ্রিল) মধ্যেই বাড়ি ও জাদুঘরটি উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৪ সালে নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামে। ১৯১০ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় মারা যান তিনি। ব্যক্তিজীবনে গিরীশ চন্দ্র সেন একাধারে সাহিত্যিক, গবেষক ও ভাষাবিদ ছিলেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক হিসেবে তিনি ‘ভাই’ খেতাবে ভূষিত হন। আরবি, ফার্সি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন এবং পবিত্র কোরআন হাদিসের প্রথম অনুবাদক হিসেবে লাভ করেন ‘মৌলভি’ খেতাব।